নার্স থেকে শুরু করে স্থপতি, নির্মাণকর্মী থেকে হাউসকিপার, শিকারি– কে নেই পিঁপড়ে সভ্যতায়। পাশাপাশি, সেখানে আছে সীমান্ত সমস্যা, যার জেরে প্রতিবেশী কলোনির সঙ্গে মাঝে মাঝেই বাঁধে ভয়ানক যুদ্ধ! প্রতিপক্ষ কলোনির দুর্বল পিঁপড়েদের তুলে এনে ক্রীতদাস বানিয়ে রাখার চলও আছে এই সমাজে। তবে একটা ব্যাপারে ওরা খুব সজাগ। কেউ যেন অভুক্ত না থাকে। রোটি-কাপড়া-মকানের গ্যারান্টি পিঁপড়ে সমাজের ম্যানিফেস্টোতে বরাবরই আছে। মাটির নীচে এভাবে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে সরকার চলে টের পেয়েছেন কখনও! ভাবুন ভাবুন।
দেশে একটা নতুন পিঁপড়ে আবিষ্কার হয়েছে, শুনেছেন? না, না। আমি ভোট বাজারে নেতায়-নেতায় কুটুস কামড়ের কথা বলছি না। সত্যিকারের পিঁপড়ে। ১৯০২ সালের পর এই প্রথম ভারতে নতুন কোনও প্রজাতির পিঁপড়ে আবিষ্কার। কিছুদিন আগে ড. ধর্মরাজন-এর নেতৃত্বে বেঙ্গালুরুর ‘অত্রী’ নামের এক সংস্থা অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং পার্বত্য অঞ্চলের জীব-বৈচিত্র পর্যালোচনা করার প্রকল্প হাতে নেয়। এই ‘সিয়াং এক্সপেডিশন’-এর হাত ধরেই বিজ্ঞানীরা হঠাৎ এক গাছের কোটরে চকচকে ‘মেটালিক’ নীল রঙের নতুন এই প্রজাতির পিঁপড়ে দেখতে পান। তাঁরা ওই পিঁপড়ের নাম দিয়েছেন ‘পারাপারাট্রেচিনা নীলা’। আয়তন দু’মিলিমিটারেরও কম। পৃথিবীর ১২ হাজার পিঁপড়ের প্রজাতির তালিকায় আর একটি প্রজাতি যুক্ত হল। তা বেশ। তবে আমার কাছে এ আবিষ্কারের পটভূমিটি বেশি চমকপ্রদ লেগেছে।
গত শতকের গোড়ার দিকে ভারত-চিন সীমান্ত-লাগোয়া আসামের পার্বত্য অঞ্চলের ‘আবোর’ উপজাতির মানুষরা নোয়েল উইলিয়ামসন নামের এক সাহেবকে মেরে ফেলে। সাহেব সাদিয়া ও লখিমপুর জেলার অ্যাসিস্টেন্ট পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন। আবোরদের শায়েস্তা করতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সিয়াং নদীর ধার বরাবর ১৩০ কিমি উপত্যকা জুড়ে ১৯১১-’১২ সালে ‘আবোর এক্সপেডিশন’ চালায়। এই দমন-পীড়ন অভিযানে সেনাবাহিনীর সঙ্গী হন একদল জীববিজ্ঞানীও। তাঁদের নেতৃত্ব দেন স্ট্যানলি কেম্প এবং মি. হগার্ট। তাঁদের উদ্দেশ্য অবশ্য আলাদা। তাঁরা সিয়াং উপত্যকার যাবতীয় গাছপালা, জীবজন্তু, পোকামাকড়, এককথায় জীব-বৈচিত্রর অনুপঙ্খ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন। ভারতীয় জাদুঘরের তথ্যভাণ্ডারে জমা আছে সে রিপোর্ট, বেশ কয়েক খণ্ডে। কোনও দমন-অভিযান যে এমন সফল ‘বৈজ্ঞানিক অভিযান’ হয়ে উঠবে, তা কে ভেবেছিল!
এ ইতিহাস হয়তো চাপা-ই পড়ে থাকত যদি না নতুন উদ্দীপনায় ড. ধর্মরাজনের দলবল আবার ওমুখো হতেন। একশো বছর পার করে কেমন আছে সিয়াং-এর প্রাকৃতিক পরিবেশ, তার জীববৈচিত্র? সেই খোঁজেই আরও একবার ‘সিয়াং এক্সপেডিশন’। এবার দেখা গেল সিয়াং হারিয়েছে অনেক কিছুই। আধুনিকতা কেড়ে নিয়েছে তার দুর্গমতা, তার নিটোল নিখাদ বন্যতা। কমেছে জীববৈচিত্র। তবু যাই হোক, পড়ে পাওয়া নীল পিঁপড়ে মান রেখেছে সিয়াং-এর।
………………………………………………………………
ওরা লড়াকু জাত। নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল। জমি দখলের লড়াই লেগেই থাকে। কিন্তু বিপদ যদি বাইরে থেকে আসে, তবে ওরা এককাট্টা হয়ে রুখে দাঁড়ায়। প্রয়োজনে শরীর থেকে হাওয়ায় বিষ ছড়ায়। ওদের প্রতিরক্ষা দপ্তরে আছে অনেক সৈনিক, আকস্মিক আক্রমণ ঠেকাতে যারা তটস্থ থাকে। ওরা সাংকেতিক ভাষায় কথা বলে। বিদ্যুৎ গতিতে নিজেদের মধ্যে খবর চালাচালি করে! ওদের সোশাল মিডিয়া আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
………………………………………………………………
আপনি পিঁপড়ে বিশেষ পছন্দ করেন না, জানি। কেনই-বা করবেন! কোন উপকারে লাগে ওটি! বরং ওদের উৎপাতে কম-বেশি সবাই বিরক্ত হই। কিন্তু পিঁপড়ে নিয়ে মাতামাতি করার লোকের অভাব নেই। নেই নেই করে এ যাবৎ গোটা দশেক ডকুমেন্টরি ছবি হয়েছে পিঁপড়েদের নিয়ে। ২০১৩ সালে ড. জর্জ ম্যাকগেভিন এবং প্রফেসর অ্যাডাম হার্ট তৈরি করলেন এক অসাধারণ ডকুমেন্টরি, ‘প্ল্যানেট অ্যান্ট: লাইফ ইনসাইড কলোনি’। বিস্ময়কর এই ডকুমেন্টরি আপনাকে তাজ্জব করে দেবে! মাইক্রোস্কোপ এবং টাইম ল্যাপ্স ক্যামেরায় ধরা আছে পিঁপড়েদের সামগ্রিক সমাজব্যবস্থা। ওরা মাটির নিচে সুড়ঙ্গ কেটে গড়ে তোলে কলোনি। কী নেই সেখানে! রাস্তাঘাট, বাগান, নার্সারি, মায় কবরস্থানও আছে। আছে শ্রম বিভাজন, আছে জাত-পাত, রানি-তোষণও আছে। এমনকী, বন্যার পরে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ভাসমান শালতিও বানিয়ে ফেলে তারা। এই অতিক্ষুদ্র পতঙ্গটি কীভাবে তাদের যাবতীয় চাহিদার সহজ সমাধান বের করে যৌথযাপনের সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে, ভাবলে অবাক হতে হয়।
তারও আগে ২০০৪ সালে বার্ট হলডব্লার বানালেন ‘‘অ্যান্টস: নেচার’স সিক্রেট পাওয়ার’’। পিঁপড়ে-প্রেমী ও বিশেষজ্ঞ বলে বিশ্বজোড়া খ্যাতি তাঁর। সারা পৃথিবী চষে বেড়ান পিঁপড়েদের কাণ্ডকারখানা বুঝতে। রাখঢাক না করে তিনি বলেই দিলেন: এ পৃথিবী শাসন করে পিঁপড়ে। ওরা আকারে নেহাত ছোট বলে আমরা মানুষেরা এখনও বুক ফুলিয়ে সেরা জীবের বড়াই করে বেড়াচ্ছি। নিজের ওজনের ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেশি ওজন মুখে নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে যায় ওরা। কাচের সিলিং-এও মাথা উল্টো করে তরতরিরে চলতে পারে। মেরুপ্রদেশের কনকনে ঠান্ডা থেকে ক্রান্তীয় গরম, কোথায় পিঁপড়ে নেই! যেখানেই থাকে, ওরা কলোনি গড়ে জোট বেঁধে থাকে। এখনও পর্যন্ত ওদের সবচেয়ে বড় কলোনির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে জাপানে ২৭০ একর জায়গার ওপর (না, নিচে!) ৩০৬ মিলিয়ন পিঁপড়ে নিয়ে গড়া এই কলোনিতে শুধু রানি-ই আছে এক মিলিয়ন। ভাবা যায়! হলডব্লার সবচেয়ে যুদ্ধবাজ জীবের তকমা দিয়েছেন পিঁপড়েকেই। ওরা লড়াকু জাত। নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল। জমি দখলের লড়াই লেগেই থাকে। কিন্তু বিপদ যদি বাইরে থেকে আসে, তবে ওরা এককাট্টা হয়ে রুখে দাঁড়ায়। প্রয়োজনে শরীর থেকে হাওয়ায় বিষ ছড়ায়। ওদের প্রতিরক্ষা দপ্তরে আছে অনেক সৈনিক, আকস্মিক আক্রমণ ঠেকাতে যারা তটস্থ থাকে। ওরা সাংকেতিক ভাষায় কথা বলে। বিদ্যুৎ গতিতে নিজেদের মধ্যে খবর চালাচালি করে! ওদের সোশাল মিডিয়া আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে ডেভিড এ্যটেনবরোর ‘লাইফ ইন দ্য আন্ডারগ্রোথ’ বলছে, পিঁপড়েরা ঝগড়ুটে হলে কী হবে, এমনিতে বেশ সামাজিক। অন্য কীটপতঙ্গের সঙ্গে বেশ সখ্যের সম্পর্ক তাদের।
সুসেন ফয়জিক এবং ওলাফ ফ্রিশ-এর লেখা ‘এম্পায়ার অ্যান্টস’ পড়লে চোখ কপালে উঠবে! পিঁপড়েদের শহরে নাকি আছে সুপরিকল্পিত রাস্তা, চোখ-ধাঁধানো বাড়ি, দালান, আছে চাষের খেত, পশুখামার। নিকাশি ব্যবস্থা থেকে ঘরে শীতাতপ ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা– সব কিছুই আপনার আমার শহরের মতো। ওরা রোজ নিয়ম করে কাজে যায়। বেকারত্বের বালাই নেই। নার্স থেকে শুরু করে স্থপতি, নির্মাণকর্মী থেকে হাউসকিপার, শিকারি– কে নেই পিঁপড়ে সভ্যতায়। পাশাপাশি, সেখানে আছে সীমান্ত সমস্যা, যার জেরে প্রতিবেশী কলোনির সঙ্গে মাঝে মাঝেই বাঁধে ভয়ানক যুদ্ধ! প্রতিপক্ষ কলোনির দুর্বল পিঁপড়েদের তুলে এনে ক্রীতদাস বানিয়ে রাখার চলও আছে এই সমাজে। তবে একটা ব্যাপারে ওরা খুব সজাগ। কেউ যেন অভুক্ত না থাকে। রোটি-কাপড়া-মকানের গ্যারান্টি পিঁপড়ে সমাজের ম্যানিফেস্টোতে বরাবরই আছে। মাটির নিচে এভাবে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে সরকার চলে টের পেয়েছেন কখনও! ভাবুন ভাবুন।
হুমায়ূন আহমেদের ‘পিঁপড়া’ গল্পটা মনে পড়ে? ডাক্তার নূরুল আফসারের চেম্বারে চিকিৎসার জন্য এসেছে মকবুল হোসেন। কিন্তু রোগটা কী, সেটা বলতে তার দ্বিধা। ডাক্তারবাবু ভাবছেন নিশ্চয়ই কোনও গোপন রোগ, তাই বলতে লজ্জা। অনেক ধমকধামকের পর মকবুল বলে, তার রোগ, তাকে ‘পিঁপড়ায় কামড়ায়’। কোনও এক জায়গায় বসে থাকলেই পিঁপড়া এসে ধরে। ‘রোগটা যদি সারায়ে দেন’, ডাক্তারবাবুর কাছে অনুনয় করে মকবুল। পির-ফকির, তাবিজ, ঝাড়-ফুক, সব রকম আধি-ভৌতিক চিকিৎসাই বৃথা গেছে। ‘আপনি কি রসগোল্লার হাঁড়ি নাকি যে পিঁপড়া ছেঁকে ধরবে!… এটা কোনো রোগ না। আমি এমন কোনো রোগের কথা জানিনা যে রোগে দুনিয়ার পিঁপড়া এসে কামড়ায়। অসুখটা আপনার মনের। আমি সাইকিয়াট্রিস্টের ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি…’। নূরুল সাহেব বাক্যটা শেষ করার আগেই এক অদ্ভুত দৃশ্যে তার চোখ আটকে গেল। টেবিলের ওপর রাখা মকবুলের ডানহাতের দিকে তিনসারি লাল পিঁপড়ে এগোচ্ছে। নিচু হয়ে দেখলেন দু’সারি পিঁপড়ে এগোচ্ছে তার পায়ের দিকে। ‘বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসতে পারিরা স্যার।… রাতে ঘুমাইতে পারিনা। নাকের ভিতর দিয়া পিঁপড়া ঢুকে যায়।… নদীর মাঝখানে নৌকা নিয়ে কয়েকদিন ছিলাম। চাইর দিনের দিন পিঁপড়া ধরল।’ মকবুলের রোগের কথায় বিভ্রান্ত ডাক্তারবাবু তাকে পরদিন আসতে বলে চেম্বার থেকে বেরতে যাবেন এমন সময় যে ঘটনা ঘটল তার জন্য নূরুল সাহেব মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি দেখলেন, ‘‘মকবুল হিংস্র ভঙ্গিতে লাফিয়ে লাফিয়ে, পা ঘসে ঘসে পিঁপড়ে মারার চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে সে হুমড়ি খেয়ে পড়ল টেবিলে, দুহাতে পিষে ফেলল পিঁপড়ের সারি। মুখে হিস হিস শব্দ করছে এবং নিচু গলায় বলছে ‘হারামজাদা, হারামজাদা’!’’ কিছুক্ষণের জন্য হলেও সে যেন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন মৌসুমী ভট্টাচার্য্য-র লেখা: তারা ঝিলমিল স্বপ্ন মিছিল
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
একগ্লাস ঠান্ডা জল খেয়ে মকবুল এবার ডাক্তারবাবুকে জানায় তার কৃতকর্মের কথা। দেদার টাকা এবং ভূ-সম্পত্তির মালিক মকবুল বলে, ‘টাকা পয়সা, ক্ষমতা এইসব বেশি থাকলে মানুষের স্বভাব চরিত্র ঠিক থাকে না। আমারো ঠিক ছিল না।’ মকবুল নিজে মুখেই কবুল করে, সে তার এক আত্মীয়ের মেয়েকে ধর্ষণ করে। লোকলজ্জা থেকে বাঁচতে, সেই রাতেই মেয়েকে ইঁদুর-মারা বিষ খাইয়ে তার মা নিজেও আত্মঘাতী হন। এবার তো থানা-পুলিশ হবে। বিপদ বুঝে পানসি নিয়ে পনেরো মাইল দূরে থানায় গিয়ে হাজির হয় মকবুল। দারোগা সাহেবকে পাঁচহাজার টাকা নজরানা দিয়ে সে যাত্রা বাঁচার ব্যাবস্থা করে ফেলে সে। কিন্তু এক ডাকাতির তদন্তে ব্যস্ত থাকায় দারোগাবাবুকে নিয়ে বাড়িতে আসতে তিন দিন লেগে যায় মকবুলের। বাড়ি ফিরে সে দেখে লাখ লাখ লাল পিঁপড়েতে ঢাকা পড়ে গেছে দুটো লাশ। ‘যেন লাল চাদর। মুখ হাত পা কিছুই দেখার উপায় নাই।… আমি একটা সিগারেট ধরাইলাম। সিগারেটের আগুন ফেলার সাথে সাথে মেয়েটির শরীরের সবগুলি পিঁপড়া নড়ল। মনে হল যেন একটা বড় ঢেউ উঠল।… তারপর অবাক হয়ে দেখি সবগুলি পিঁপড়া আমার দিকে আসতেছে। আমি দৌড় দিয়ে বাইরে আসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে পিঁপড়াগুলি বাইরে আসল। মনে হইল আমারে খুঁজতেছে। সেই থাইক্যা শুরু।’
কী বলবেন? বিবেকের দংশন? হিমু সাহেবের মকবুলরা তো বাস্তবের মাটিতে আজও দাপিয়ে বেড়ায়। পিঁপড়ে কি কামড়ায় না? ভয় হয় না, লাল পিঁপড়ের চাদরে ঢেকে যাওয়ার? ‘হয় হয় জানতি পার না।’ বাদ দিন, ওসব মকবুলরা ভাববে। আমরা বরং ভাবি, পিঁপড়েরা সত্যি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে কি না। সময় থাকতে ওদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্ট্র্যাটেজিগুলো একটু নাড়াচাড়া করে দেখবেন নাকি, মানুষের খাপে খাপ খাচ্ছে কি না? রাজতন্ত্রই বলুন আর গণতন্ত্রই বলুন, তলে তলে কুটুসতন্ত্র কিন্তু বরাবরই ছিল। আজ কুটুসরা অনেক বেশি শক্তিশালী।
কবি অমিয় চক্রবর্তীর মতো ‘আহা পিঁপড়ে ছোট পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুক’ বলে ওদের খাটো করবেন না। সংখ্যাটা একবার খেয়াল করুন। একটা পিঁপড়ের গড় দৈর্ঘ্য এক সেন্টিমিটার ধরলেও, পৃথিবীর সব পিঁপড়েকে সারি দিয়ে দাঁড় করালে সেই লাইন পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত ৩৪৪ বার ঘুরে আসবে। প্রতিটি মানুষের সাপেক্ষে এক মিলিয়ন পিঁপড়ে বাস করে এই পৃথিবীতে। যে গতিতে আমরা প্রকৃতি ধ্বংস করছি কতদিন আর মাটির নিচে থাকবে, থাকতে পারবে ওরা! কালে-দিনে হয়তো পিঁপড়ে সভ্যতার উত্থান হবে মাটির ওপর। রাজতন্ত্র, ধনতন্ত্র, গণতন্ত্র সব এক হাঁড়িতে পাকিয়ে পৃথিবী জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হবে কুটুসতন্ত্র! কল্পনা করুন, ৫৪৩ জন পিঁপড়ে সেদিন দিল্লির পার্লামেন্টে! হয় লাল বা কালো। সিয়াং-এর নীল পিঁপড়েরা হয়তো তখনও নির্দল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে নীলদের নিয়ে টানাটানি করবে লাল আর কালোরা। মকবুলরা সেঁদিয়ে যাবে পরিত্যক্ত কোনও পিঁপড়ের গর্তে! নাহ্! মিষ্টি খাওয়া এবার কমাতেই হবে।