ছাদের এই দরজা থেকে মাত্র গোটা ৪-৫ হাত দূর। তালা দিয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখি, খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরা একজন আমার বিছানায়, ঝুঁকে, আমার অঙ্কের খাতার দিকে তাকিয়ে। সম্ভবত ভাবছে। কিন্তু কে? লিখছেন তন্ময় রায়
পরের দিন অঙ্ক পরীক্ষা। মেসে থাকি। ঘরে আমি ছাড়া আর একজনই। কী কারণে সে-ও নেই। একতলায় আরেকদল সিনিয়রদের বাস। ঘরের সিঁড়ির দিকের জানলা খোলাই থাকে। ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে হাওয়া নেমে আসে। বাইরের বারান্দা দিয়েও খুচরো হাওয়া। গ্রীষ্মের হাওয়া, ফলে এই একমাত্র উপায়।
গণিতের ছাত্র। একটা ইকুয়েশন মিলছে না। কিছুতেই না। অথচ কাল পরীক্ষা। এদিকে ইকুয়েশন না মিললে পরের অঙ্কে যেতে পারছি না। গোঁ ধরে গেছে। মাথা ঝিমঝিম। কয়েকবার জল খেলাম। হেঁটে-চলে বেড়ালাম ঘরের মধ্যে। তেড়ে গ্রীষ্মকাল। গায়ের ফতুয়াখানা দেওয়াল-টু-দেওয়াল তারের ওপর ফেলে দিলাম। ছাদে যাই। খোলা হাওয়া। একটা সিগারেট খেলে যদি মাথাটা কাজ করে।
আরও পড়ুন: মৃতদেহটা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি
চাপ চাপ সন্ধে। কিন্তু অন্যদিনের তুলনায় কেমন ভ্যাপসা। হয়তো মেঘ করে আছে। সারাদিন এই অঙ্কের জন্য, খেয়াল করাও হয়নি, দিনটা মেঘলা, না রোদ ঝকঝকে। আশপাশে তাকিয়ে এদিক-সেদিক উঁকি মেরে এমন কিছু দেখলাম না, যা নিয়ে কিছুক্ষণ থাকা যায়। মাথায় সেই অঙ্কটা ঘাই মারছে। বড় বড় টানে সিগারেট শেষ করলাম। মনে হল, উত্তর মিলে গেছে। একেবারে অন্য দিক থেকে ভাবছিলাম আর ব্যাপারটা মোটেই তেমন শক্ত নয়। মনের মধ্যে ইউরেকা। যাক সিগারেট-ব্রেক নিয়ে তবে কাজ হয়েছে!
ছাদের নিয়ম তালা খুলে ঢোকো। তালা বন্ধ করে এসো। ছাদের দরজা বন্ধ করতে গেলে নিচে, আমার ঘরের জানলা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায় আমার বিছানা, যে বিছানায় ছড়িয়ে রেখে এসেছি বইপত্র-অঙ্কখাতা। ছাদের এই দরজা থেকে মাত্র গোটা ৪-৫ হাত দূর। তালা দিয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখি, খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরা একজন আমার বিছানায়, ঝুঁকে, আমার অঙ্কের খাতার দিকে তাকিয়ে। সম্ভবত ভাবছে। কিন্তু কে? দরজা যদিও ভেজানো ছিল। কিন্তু কেউই তো না বলে একেবারে ঘরে ঢুকে পড়ে না কোনও দিন। জানলা দিয়ে আগে জেনে নেয়, দরকারে দু’-চাট্টে জিনিস বাড়িয়ে দেয়।
ছাদের প্রথম সিঁড়ি থেকে মাত্র দু’ধাপ নেমেছি, খানিক বিরক্তি আর মাথা গরম নিয়ে, চেঁচিয়ে বললাম: কে?
সে মাথা ঘোরাল। দেখলাম– আমি। অবিকল। বিছানায় ঝুঁকে অঙ্ক খাতার দিকে তাকিয়ে।