দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম দূষিত শহর হওয়ার লজ্জাজনক কৃতিত্ব অর্জন করতে চলেছে। হয়তো শীঘ্রই ‘নন-অ্যাটেইনমেন্ট’ শহর হয়ে যাবে, এমনটাই দাবি ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক আগমন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অননুমোদিত ভূমি ব্যবহার, বায়োমাস এবং পুরনো যানবাহন এবং ডিজেল চালিত জেনারেটর সেটের ব্যবহার উদ্বেগ এনে দিয়েছে। পর্যটন ব্যবসা, ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা কি একবারও ভেবে দেখছেন কিছুদিন বাদে হয়তো দার্জিলিং যাওয়ার আর অবকাশই থাকবে না!
“দূরে, অদূরে তাহাদের চারিদিকে রডোডেনড্রন কুঞ্জ। উহাদের ঝোপে মাটির উপরে কোথায়ও মটরের দানার মত চূর্ণ তুষারের স্তূপ। কখনো কোথায়ও বা সদ্যঃপতিত শুভ্র তুষার দ্বারা পাহাড়ের গা আগাগোড়া ঢাকা। আর স্তরে স্তরে সজ্জিত সেই শাদা পাহাড়ের গায়ে কোন কোন স্থানে দাঁড়িয়ে রডোডেনড্রন– পেয়ারা গাছের মত তার কাণ্ডের চেহারা, লম্বা লম্বা তার পাতা। তখন তার পাতায় পাতায় আগুনের ফুলকির মত লাল ফুল ফুটে থাকে। দেখে চক্ষু দুইটী ঝলসিয়া যায়: মনে হয় শাদা পাহাড়ের গায়ে বড় বড় পান্না পাথর জ্বলছে। তারি মধ্যে, তার নিম্নে গোষ্ঠ চারকরা গান গেয়ে, শিঙা ফুঁকে গরু ভেড়া চরিয়ে বেড়ায়। উহা দিগকে তখন দেখলে আমাদের মত সভ্যতার নরম কোলে পালিত সখের পর্য্যটকদের মনে হয়,– ‘কেমন তাদের লোভনীয় জীবন। এমন সব অপূর্ব্ব দৃশ্যরাজির মধ্যে তারা হেসে, গেয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে।’ কিন্তু তারাই জানে, এ অবস্থায় তাহাদের ব্যথা– তাদের জীবনের ভার কেমন!”
১৯৪৫ সালে প্রকাশিত ‘দার্জ্জিলিং সাথী’ বইতে অনিলকৃষ্ণ সরকার দার্জিলিং (যা আজ দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় বিভক্ত) আর সেখানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপালি এবং লেপচা জনগোষ্ঠীকে এইভাবেই ব্যাখ্যা করেছিলেন। উনি আরও লিখেছিলেন গরু-ভেড়া চরানোর সঙ্গে ওরা ধান, ভুট্টা ও আলু চাষ করে। বাংলায় দার্জিলিং পর্যটন সাহিত্যে এই বইয়ের অবস্থান নিয়ে নতুন করে কিছু লেখার দরকার পড়ে না। এই নিবন্ধটি সেই চেষ্টা করবেও না। কিন্তু নিবন্ধের আগামী কয়েকটা অনুচ্ছেদ যে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার সামান্য প্রচেষ্টা করবে, তাতে ওপরের উদ্ধৃত কথাগুলি প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ।
প্রায় এক শতক ধরে ভারত লুণ্ঠন করতে করতে ক্লান্ত ব্রিটিশরা ঠিক করেছিলেন, এখানে ছুটি কাটানোর জন্য কয়েকটা হিল স্টেশন বানানো দরকার, যেখানে সুদূর ইউরোপের মতো আবহাওয়া উপভোগ করা যাবে। তৈরি হল সিমলা, দেরাদুন, নৈনিতাল, মুসৌরি, উটি, দার্জিলিং। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বার্ষিক ৩০০০ পড়ে ৬০০০ টাকা ভাতার বিনিময়ে সিকিমের রাজার থেকে পাওয়া দার্জিলিং দ্রুত পূর্ব ভারতে কর্মরত ইংরেজি বাবুদের মনপসন্দ ছুটির ঠিকানা হয়ে উঠেছিল। ইউরোপীয় স্টাইলে গড়ে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালার পাদদেশে সে যেন একটুকরো স্বর্গ, যার অপরিসীম মায়ায় বিস্মিত হয়ে ইংরেজরা ডাকনাম দিয়েছিল ‘কুইন অফ দ্য হিলস’।
বিশ্বের সবথেকে ধনবান দেশের সবথেকে ধনবান অঞ্চলের শেষতম মুদ্রাও চুষে খেয়ে ইংরেজরা যখন দেশে ফিরব ফিরব করছে, ততদিনে অভিজাত শ্রেণির বাঙালিও দার্জিলিংয়ের প্রেমে পাগল। বোধহয় বাঙালিদের মেধা আর সম্পদ শোষণ করে সাম্রাজ্য তৈরি করা ইংরেজরা আমাদের ওপর ক্ষণিক দয়া করেই ফিরতি উপহার হিসেবে দার্জিলিং দেবে, ঠিক করেছিল। তাই হল। পশ্চিমবঙ্গের মাথায় বসিয়ে গেল দার্জিলিং। স্বাধীনতা পরবর্তীতে যত সময় পেরিয়েছে, তত রাজ্যে সর্বস্তরে বাঙালির শিরায়-উপশিরায় দার্জিলিং বাসা বেঁধেছে। আজকের গ্লোবালাইজেশনের যুগেও বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে হলে বাঙালির মনের প্রথম কল্পিত ছবি হিসাবে ভেসে ওঠে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে দার্জিলিংয়ের কোনও এক চা-বাগান।
দার্জিলিং আজ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। আর সেই গুরুদায়িত্ব বহন করতে গিয়ে একর একর অরণ্য ধ্বংস করে, একের পর এক পাহাড়ের বুক চিরে, নদ-নদীর গতিপথ আটকে দার্জিলিং আজ নিজেকে মুড়ে ফেলেছে আধুনিকতার মোড়কে। এর ফলে যেমন দার্জিলিংয়ে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের অভিজ্ঞতা, এবং ওখানে অধিবাসীদের জীবনও কিছুটা আনন্দময় হয়েছে, তেমনই উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জোরালো আঘাত বাঙালির প্রিয় পাহাড়কে ক্রমেই বিধ্বস্ত করেছে।
২০১৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকাশনায়, ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউ.এন.ই.পি.) লিখেছিল, জলবায়ু পরিবর্তন ট্যুরিজম সেক্টরে কোনও দূরবর্তী ভবিষ্যতের ঘটনা নয়, বরং বাস্তব। ইউ.এন.ই.পি. আরও লিখেছিল যে, এই সেক্টরের সমস্ত ছোট-বড় ডিসিশনকে জলবায়ু পরিবর্তন এখন প্রবলভাবে প্রভাবিত করছে। এই অবস্থায় এটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে, ভ্রমণরসিক বাঙালি সমাজে এবং পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তর পর্যটন ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের খপ্পরে পড়ে দার্জিলিংয়ের দুরবস্থা এখনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেনি।
২০১৩ সালে করা একটি সমীক্ষায় দার্জিলিং টি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার জানিয়েছিল, ১৯৯৩ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে দার্জিলিং এলাকার তাপমাত্রা ০.৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এটি উল্লেখ্য যে, এই সমীক্ষাটি করা হয়েছিল দার্জিলিং কালিম্পংয়ের পাহাড়ি অঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স ও তরাইতে, যেখানে চা চাষ হয়। এই সম্বন্ধে ২০২১ সালের আগস্টে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আই.পি.সি.সি.) দ্বারা প্রকাশিত অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট (এ.আর.) ৬-এর ওয়ার্কিং গ্রুপ ১-এর একটি রিপোর্ট আরও বলে যে, প্রাক-শিল্পায়ন যুগের গড় তাপমাত্রার তুলনায় ২১০০ সালের মধ্যে দার্জিলিং-এর গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। আই.পি.সি.সি. রিপোর্টে আরও অনুমান করা হয়েছে যে, দার্জিলিংয়ের ৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রায় ৯০ শতাংশ ২০১৫ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে ঘটবে। ১৯০০ থেকে ২০১৫-র দীর্ঘ সময়সীমা মোট তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্র ১০ শতাংশের জন্য দায়ী।
দার্জিলিংয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার দার্জিলিংয়ের চা শিল্প। ‘দার্জিলিং টি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ তাদের একটি সমীক্ষায় জানিয়েছিল, ১৯৯২ এবং ২০০২ সালের তুলনায় ২০১২ সালে চা উৎপাদনে যথাক্রমে ৪১.৯৭% এবং ৩০.৯% ঘাটতি হয়েছিল। চা একটি বৃষ্টি-নির্ভর ফসল, যা বিভিন্ন পরিবেশগত কারণ, যেমন মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাত এবং তার বিতরণ, তাপমাত্রা এবং সৌর বিকিরণ দ্বারা প্রধানত প্রভাবিত হয়। এর ফলে চা-বাগানে কর্মরত অসংখ্য মানুষদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই দেশের সবচেয়ে কম বেতনের শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম।
দার্জিলিংয়ের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান লক্ষণ বৃষ্টিপাতের অসমানতা এবং অল্প সময়ের মধ্যে প্রচণ্ড তীব্রতায় বৃষ্টি। অল্প সময়ে জোরে বৃষ্টিপাতের ঘটনা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই বেড়েছে শুষ্ক দিনের সংখ্যা। দার্জিলিং অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে তাদের গবেষণায়, নেদারল্যান্ডসের মাস্ট্রিচট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পারভীন কুমার এবং ক্রিস্টোফার ব্রুস্টার জানিয়েছেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে প্রবল বর্ষার ফলে দার্জিলিংয়ের উপরের দিকের অঞ্চলগুলোয় ল্যান্ডস্লাইড এবং তরাই অঞ্চলে ফ্ল্যাশ ফ্লাডের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে।’
লন্ডনের কিংস কলেজের ডক্টরাল প্রার্থী শ্রেয়সী চৌধুরী ২০২১ সালে লিখেছিলেন, ‘১৮৯৯ সাল থেকে হিমালয়ের এই অংশে ল্যান্ডস্লাইড লক্ষ্য করা গেলেও স্থানীয় বসিন্দাদের বিশ্বাস যে ১৯৭০ সাল থেকে প্রতি বছর বর্ষার সঙ্গে সঙ্গে ল্যান্ডস্লাইডের ঘটনা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।’ এর জন্য ওরা দায়ী করেছিলেন দার্জিলিংয়ের পরিবর্তিত আবহাওয়া, ব্যর্থ ডিসাস্টার রিস্ক রিডাকশনের পরিকল্পনা, লোকাল কনস্ট্রাকশনের লবিবাজি এবং সরকারের অনাবশ্যক নগরায়নকে।
কনস্ট্রাকশনের এবং নগরায়নের ক্ষেত্রে আমাদের ধারণা অবশ্য দার্জিলিং ও কালিম্পং শহরে বহুতল হোটেল, ক্যাফে, রেস্তরাঁ এবং শপিং কমপ্লেক্সে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এগুলি অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ, তবে এগুলিই একমাত্র এবং প্রধান কারণ নয়। কনস্ট্রাকশনের ব্যাপারে বলতে হলে অবশ্যই নাম নিতে হয় দার্জিলিং অঞ্চলের ভূমিকম্পর প্রবণতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তিস্তা নদী এবং ওর শাখা-প্রশাখার ওপর তৈরি হওয়া একের পর এক ছোট-বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির। এই অঞ্চলটিকে সিসমিক জোনিং ম্যাপে ‘হাই রিস্ক সিসমিক জোন IV’ হিসাবে মার্ক করা হয়েছে। এটা মাথায় রেখে ২০০০ সালে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক কমিটি এখানের নদ-নদীগুলিতে কোনওরকম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করতে বারণ করেছিল। কমিটির একজন সদস্য সতর্ক করেছিলেন যে, তিস্তা নদী ও তার উপনদীতে একাধিক বাঁধের উপস্থিতি ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতে পারে।
সেসব তোয়াক্কা না করে দার্জিলিং-কালিম্পং জেলা মিলিয়ে আজ এক ডজনেরও বেশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু আছে এবং আগামী দিনে আরও কয়েকটি বানানোর পরিকল্পনা রাজ্য এবং কেন্দ্র দুই সরকারের রয়েছে। এছাড়াও দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে তিস্তা লাগোয়া পাহাড় ফাটিয়ে তৈরি হচ্ছে সেবক-রংপো রেল প্রকল্প। সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিমল খাওয়াস ২০১৬ সালে নিজের একটি পেপারে লিখেছিলেন, এই অঞ্চলে এত ভারী নির্মাণ কাজের ফলে যেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রবণতা বেড়েছে, তেমনই স্থানীয় অধিবাসী এবং আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। দার্জিলিং ও তাঁর চারিদিকের ইকোসিস্টেম কতটা নশ্বর, সেটা বোঝাতে উনি উদাহরণ সমেত বলেছিলেন ২০১১ সালে সিকিমে ভূমিকম্পের ফলে ১০০ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিংয়েও ল্যান্ডস্লাইড ঘটেছিল।
বাঁধ নির্মাণ, প্রাকৃতিক নদী নিষ্কাশনের ওঠানামা এবং বদ্ধ টানেলের মাধ্যমে নদীর গতিমুখ পরিবর্তনের ফলে তিস্তার ইকোলজি ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। তিস্তা এবং ওর উপনদীগুলি ভূগর্ভস্থ জলের স্তরকে কৃষির জন্য উপযোগী রাখে এবং পাহাড়ে নিজের চারপাশে জলের ঝরনাগুলিকেও প্রভাবিত করে। পাহাড়ে এই ঝরনাই পানীয় জলের প্রধান উৎস। কিন্তু অগণিত নির্মাণ কাজের কারণে সেগুলির আশপাশের ঝরনা থেকে যে জল বের হয়, তা আর মানুষ বা পশুপাখিদের পানযোগ্য হয় না এবং চাষের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায় না, কারণ কংক্রিট ও অন্যান্য রাসায়নিক জল মিশে যাচ্ছে। এর ফলে দার্জিলিং কালিম্পংয়ে পানীয় জলের সংকট এখন চিরস্থায়ী।
নিবন্ধটি শেষ করার আগে এটা উল্লেখ করা জরুরি যে, দার্জিলিং খুব দ্রুতই হয়তো পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম দূষিত শহর হওয়ার লজ্জাজনক কৃতিত্ব অর্জন করবে। পরিবেশ দূষণ পরিমাপের ক্ষেত্রে যে ‘পিএম১০’ মাত্রার (ধুলো এবং ধোঁয়ায় পাওয়া খুব ছোট দূষক কণা) বিচার করা হয়, সেই নিরিখে দার্জিলিং শীঘ্রই ‘নন-অ্যাটেইনমেন্ট’ শহর হয়ে যাবে, এমনটাই দাবি করছে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা। বাড়তি দূষণ আটকাতে না পারলে আর কয়েক বছরের মধ্যেই দার্জিলিংয়ে গড়ে ‘পিএম১০’-এর মাত্রা ভারতীয় মানদণ্ডের অনেক ওপরে থাকতে শুরু করবে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, গ্রীষ্মকালে যানবাহনের, বিশেষ করে পর্যটনে ব্যবহৃতযানবাহনের ফলে কার্বন নির্গমণ দার্জিলিংয়ে ৯০% ‘পিএম১০’-এর কারণ। শীতকালীন ‘পিএম১০’-এর জন্য ৮০% দায়ী জৈববস্তু পোড়ানো। গবেষকরা দার্জিলিংয়ে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক আগমন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অননুমোদিত ভূমি ব্যবহার, বায়োমাস এবং দহন কার্যক্রম এবং পুরনো যানবাহন এবং ডিজেল চালিত জেনারেটর সেটের ব্যবহার সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন আর তার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন আজকের পৃথিবীর সব থেকে বড় সত্যি। কেউ বিশ্বাস নাই করতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকটা মনুষ্যজীবন আজ ক্লাইমেট চেঞ্জের দ্বারা কোনও না কোনও ভাবে প্রভাবিত। কিন্তু এটাও সত্যি যে, পরিবেশগতভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে দার্জিলিংয়ের বাসিন্দারা আরও বেশি বিপদে। তাদের চিরাচরিত জীবনযাত্রা এবং জীবিকা উপার্জনের পদ্ধতিগুলি একের পর এক ধ্বংসের মুখে। ওদের আর্থ-সামাজিক সম্বল বলতে এখন শুধুই পর্যটন শিল্প। কিন্তু সমতল থেকে যাওয়া পর্যটকরা ক্লাইমেট চেঞ্জের আঘাতে আক্রান্ত পৃথিবীর ব্যাপারে অবিদিত। ভ্রমণ রসিক বাঙালি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে, অফবিট লোকেশন এক্সপ্লোর করতে, ট্রেক করতে, রিভার রাফটিং এবং প্যারাগ্লাইডিং করতে এতই মত্ত যে, বুঝতে পারছে না তাঁর প্রিয় দার্জিলিং একটু একটু করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।