Robbar

মহিলা ভোটে নির্ধারিত হবে মার্কিন মুলুকের মসনদে কে?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 5, 2024 6:21 pm
  • Updated:November 5, 2024 6:21 pm  

প্রাক নির্বাচনী পোলগুলোতে এই বিষয়টা উঠে এসেছে যে, ভোটারদের মধ্যে মহিলা-পুরুষ স্পষ্ট বিভেদরেখা আছে। কমলা হ্যারিসের সমর্থক ৫৫% মহিলা, অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে ৫৪% পুরুষ। এছাড়া ডেমোগ্রাফি হিসাবেও ভোটাররা কোন প্রার্থীকে সমর্থন করছেন, তা এগিয়ে-পিছিয়ে দিতে পারে প্রার্থীদের। যেমন ল্যাটিনো ভোটাররা যারা আগের বেশিরভাগ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করেছেন, বাড়তে থাকা জিনিসের দাম, বাড়িভাড়া, অন্যান্য খরচ তাদেরকে খানিকটা ঝুঁকিয়ে দিয়েছে ট্রাম্পের দিকে। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা কতটা ভোট দেবেন হ্যারিসকে? যদিও শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন হ্যারিস, বিশেষত কলেজ-শিক্ষিতদের মধ্যে।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

২০২৪-এর নভেম্বরের শুরুতে পৌঁছেছি আমরা। বস্টনের শহরতলির হাওয়ায় হেমন্ত শেষের হলদে লাল মরচে রঙা পাতারা উড়ে বেড়াচ্ছে, আর মানুষের মনে ঘুরছে প্রশ্ন, কী হবে এই আসন্ন নির্বাচনে?

Election 2024: Donald Trump, Kamala Harris Polls and Odds - Newsweek : r/2024elections

ম্যাসাচুসেটস, আমার রাজ্য ব্লু স্টেট, অর্থাৎ, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক। তাই এই রাজ্যে কমলা হ্যারিস ইলেকটোরাল ভোট পাবেন, তা আমরা জানি। আমেরিকাতে পপুলার ভোট অর্থাৎ, প্রার্থী কতজন মানুষের ভোট পাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জেতেন না, আমেরিকায় ইলেকটোরাল ভোট নামে একটি জটিল পদ্ধতি আছে– কোন রাজ্যের কতগুলি ইলেকটোরাল ভোট, তার ওপর নির্ভর করে প্রার্থী কতগুলো ভোট সেই রাজ্য থেকে পাচ্ছেন, নির্ভর করে সেনেটরদের সংখ্যা আর কংগ্রেশনাল ডেলিগেশনে কতজন প্রতিনিধি আছে, তার ওপরে।

তাই নির্বাচন পদ্ধতিতে সমস্ত রাজ্যের গুরুত্ব এক হয় না। যেমন আকারে আমার পার্শ্ববর্তী রাজ্য নিউ হ্যাম্পশায়ার অনেক বড়, কিন্তু জনসংখ্যায় অনেক কম, তাই আমার রাজ্য ম্যাসাচুসেটসের ইলেকটোরাল ভোটসংখ্যা ১১, কিন্তু নিউ হ্যাম্পশায়ারের চার। তার ওপর কোনও কোনও রাজ্য নীল– যেখান থেকে ডেমোক্র্যাটরা জিতবেন, আর কোনও কোনও রাজ্য লাল– যেখান থেকে রিপাবলিকানরা জিতবেন, তা মোটামুটি আগে থেকেই নির্ধারিত। এখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পাখির চোখের মতো কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে সাতটি রাজ্যে, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকরা বিভক্ত। যেগুলিকে বলা হয় সুইং স্টেট। অর্থাৎ, তারা দোলাচলে কার দিকে ঝুঁকবেন, তা আগে থেকে আন্দাজ করা শক্ত। এই রাজ্যগুলির মধ্যে আছে মিশিগান, পেনসেলভেনিয়া, উইসকনসিন, নেভাডা, জর্জিয়া, আরিজোনা, নর্থ ক্যারোলিনা। ফলে এই রাজ্যগুলির মানুষদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কী মতামত, তাদের আগের কার্যক্রম, সাফল্য, তারা এই রাজ্যগুলির মানুষের কোনও বিশেষ সমস্যার সমাধানে কী পরিকল্পনা করছেন– এই সমস্ত কিছুর ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনে কী ফল হতে চলেছে।

The stock market is entering the most volatile period of the 2024 ...

২০২৪ সালের নির্বাচনের যাত্রাপথটাও বেশ জটিল। বাড়তে থাকা জিনিসের দামে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমতে থাকা ক্ষোভ, ২০২৩-এর শেষ থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত, ইজরায়েলের বিধ্বংসী প্যালেস্টাইন আক্রমণ এবং এই সংঘাতে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে দেশজোড়া ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ, সীমান্তে বাড়তে থাকা শরণার্থী এবং তাদের চাপ একটু একটু করে রাজ্যগুলিতে ছড়ানো– এরকম আরও অনেক বিষয়ে মানুষের নির্বাচন বিষয়ক মতামত ভিন্নমুখী করে দিয়েছে। এছাড়া ট্রাম্প, বাইডেনের প্রথম বিতর্কের পর, বয়সের কারণে বাইডেনের নড়বড়ে অবস্থান– ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। এরপর ট্রাম্প নির্বাচন ক্যাম্পেনে, বন্দুকবাজের গুলির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তাকে নির্বাচনে বেশ খানিকটা এগিয়ে দিয়েছিল। উপরাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিসের রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত হওয়ার পর নির্বাচনে সত্যিকারের একটা প্রতিযোগী দৌড় শুরু হয়।

কমলা হ্যারিস নির্বাচনে যোগদান করার পর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই নির্বাচনে নির্ণায়ক হিসাবে উঠে আসে সেটা হল, মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার। মহিলাদের এই সাংবিধানিক অধিকার যা বিখ্যাত ‘রো ভার্সেস ওয়েড’ মামলার মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত হয়, সুপ্রিম কোর্ট সেটাকে নাকচ করে, রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে রাজ্যগুলির হাতে দিয়ে দেয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, আমেরিকায় কোনও মহিলা যে কোনও কারণে গর্ভপাত বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তিনি কোন রাজ্যে বাস করেন তার ওপর। মহিলাদের অধিকার এভাবে সংকুচিত করার প্রভাব পড়ে ২০২২ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে। কমলা হ্যারিস রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে মহিলাদের এই অধিকার ফিরে পাওয়া প্রাধান্য পাবে, এমন আশা প্রতিফলিত হচ্ছে মহিলা ভোটারদের মধ্যে।

US election 2024 result exit poll: US election 2024 result ...
কমলা হ্যারিস

এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, প্রাক নির্বাচনী পোলগুলোতে এই বিষয়টা উঠে এসেছে যে, ভোটারদের মধ্যে মহিলা-পুরুষ স্পষ্ট বিভেদরেখা আছে। কমলা হ্যারিসের সমর্থক ৫৫% মহিলা, অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে ৫৪% পুরুষ। এছাড়া ডেমোগ্রাফি হিসাবেও ভোটাররা কোন প্রার্থীকে সমর্থন করছেন, তা এগিয়ে-পিছিয়ে দিতে পারে প্রার্থীদের। যেমন ল্যাটিনো ভোটাররা যারা আগে বেশিরভাগ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করেছেন, বাড়তে থাকা জিনিসের দাম, বাড়িভাড়া, অন্যান্য খরচ তাদের খানিকটা ঝুঁকিয়ে দিয়েছে ট্রাম্পের দিকে। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা কতটা ভোট দেবেন হ্যারিসকে? যদিও শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন হ্যারিস, বিশেষত কলেজ-শিক্ষিতদের মধ্যে।

পোল অনুযায়ী, সিনিয়র সিটিজেনদের মধ্যেও অনেক বছর পর এগিয়ে আছেন হ্যারিস। আবার অন্যদিকে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়স্কদের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল ২০২০ নির্বাচনে বাইডেনকে জেতানোর পিছনে। এবার তারা হ্যারিসকে সমর্থন করবে? গ্রামে থাকা মানুষজন একইভাবে ট্রাম্পকে আর শহরতলির মানুষ হ্যারিসকে সমর্থন করবে? এরকম বিভিন্ন ধরনের ডেমোগ্রাফি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে। বিশেষত সুইং স্টেটগুলিতে।

US election 2024: Should Indian immigrants worry if Trump is ...
ডোনাল্ড ট্রাম্প

নির্বাচনের আগের রবিবারের ৫৩৮ নামের বিখ্যাত সংস্থার পোল বলছে, জাতীয় স্তরে হ্যারিস ০.১%-এ এগিয়ে আছেন, যার অর্থ– লড়াই এখন অসম্ভব হাড্ডাহাড্ডি। সুইং স্টেটগুলিতে আরিজোনা, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, নেভাডায় ট্রাম্প খুব কম মার্জিনে এগিয়ে আর মিশিগান এবং উইসকনসিনে হ্যারিস। অর্থাৎ, প্রত্যেকটি রাজ্যে ফলাফল যে কোনওদিকে যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে বলা যেতেই পারে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রায় সমস্ত জাতীয় এবং রাজ্য স্তরের পোল হিলারি ক্লিনটনকে অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিল, ফলে ক্লিনটন ক্যাম্পেনের পক্ষেও নির্বাচনের ফল অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। ২০২০-তেও সুইং স্টেটগুলিতে প্রায় তিন শতাংশ মার্জিনে বেশিরভাগ পোলের ভবিষদ্বাণী মেলেনি। তাই পোল বিষয়ে, বিশেষত মিডিয়াগুলির করা পোলে সাধারণ মানুষের বেশ খানিকটা সন্দেহ আছে। তবে এবারের পোলে দুই নির্বাচনী প্রার্থী এতটাই কাছাকাছি যে, নির্বাচন পরবর্তীতে পোলদের দোষারোপ করার কোনও জায়গা নেই। আর একটি বিষয় এবারের নির্বাচনে বেশ উল্লেখযোগ্য, যেহেতু এখন নির্বাচনের আগেই নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে বা ডাকযোগে ভোট দেওয়া যায়, তাই বহু ভোটার নির্বাচনের দিনের আগেই নিজের ভোট দিয়ে ফেলেছেন। নির্বাচনের আগের শনিবার পর্যন্ত ৭৪ মিলিয়ন মানুষ ভোট দিয়ে দিয়েছেন, যা ২০২০ সালের মূল ভোটারদের ৪৭ শতাংশ। সুইং স্টেটগুলোতে নর্থ ক্যারোলিনা এবং আরিজোনাতে অর্ধেকের বেশি মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছেন, জর্জিয়াতে ভোট দিয়েছেন ইতিমধ্যে আট মিলিয়ন ভোটার। অতিমারী বছরের ট্রেন্ড পরের নির্বাচনে বেশ ভালোভাবে চালু আছে।

এই পরিস্থিতিতে বলা যায়, নির্বাচনের প্রার্থীদের ভাগ্য বেশ খানিকটা নির্ধারিত হয়ে গেছে। বাকিটা এখন সময়ের অপেক্ষা।

…………………………………………………..

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

…………………………………………………..