নোবেল কমিটির ঘোষণায় ছিল, হান কাং পুরস্কার পাচ্ছেন, ‘For her intense poetic prose that confronts historical traumas and exposes the fragility of human life.’ বস্তুত, কাব্যগুণ সত্যিই তাঁর গদ্যের বড় সম্পদ। ‘The White Book’ যেমন আত্মজীবনীমূলক গদ্য হয়েও আদতে কবিতাই। বইটি শুরু হচ্ছে হান কাং-এর তৈরি করা একটা তালিকা দিয়ে– ‘In the spring, when I decided to write about white things, the first thing I did was to make a list.’ তারপর পরপর আসছে, Salt, Snow, Ice, Moon, Rice, Waves জাতীয় শব্দ। এই জায়গায় হান কাং দূরপ্রাচ্যের প্রাচীন নারী-সাহিত্যিকদের যথার্থ উত্তরসূরি।
সুইডিশ অ্যাকাডেমির তরফ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ান লেখিকা হান কাং-কে ফোন করেছিলেন জেনি রিডেন। অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তাঁর লেখালেখি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কিছু কিছু। সেই ইন্টারভিউ-এর অডিও ফাইল শুনতে শুনতে যেটা সবচেয়ে বেশি দাগ কাটছিল, সেটা হান কাং-এর বাচনভঙ্গি।
জেনি রিডেনের উত্তেজিত, উচ্ছ্বসিত স্বরের উত্তরে হান কাং আশ্চর্য রকম শান্ত, সংযত। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ভারী নম্র ভঙ্গিতে, এমনকী, আনন্দের প্রকাশটুকুও যেন নিচু তারে বাঁধা। স্মিতভঙ্গিতে বলছেন, সুখবর যখন পৌঁছয়, তিনি তাঁর পুত্রের সঙ্গে বসে নৈশাহার করছিলেন। ‘কীভাবে এই পুরস্কারপ্রাপ্তিকে সেলিব্রেট করবেন?’ উত্তরে হান কাং বলেন– “After this phone call I’d like to have tea – I don’t drink – I’m going to have tea with my son.”
ঠিক যেন বৌদ্ধধর্মের সেই প্রবাদ– ‘নির্বাণলাভের আগে কাঠ কাটো, জল টেনে আনো/ নির্বাণলাভের পরে কাঠ কাটো, জল টেনে আনো।’ নির্বাণ যেমন সাধুদের অন্তিম লক্ষ্য, তেমনই নোবেল পুরস্কারকে যদি সাহিত্যসাধনার সেই তুঙ্গ মুহূর্ত ভাবি– দেখাই যাচ্ছে, হান কাং-কে সেই প্রাপ্তি খুব বেশি বিচলিত করতে পারেনি।
একটু ভেবে দেখলে বুঝতে পারি, এই নিরাসক্তির বীজ রয়েছে তাঁর উপন্যাসগুলিতেও। রয়েছে আপাত নিরুত্তাপ বর্ণনাভঙ্গি। অথচ, শব্দ ব্যবহারে, দৃশ্য নির্মাণে এমন কিছু আছে যা ক্রমশ পাঠককে জড়িয়ে নিতে থাকে সর্পিল পাকে। একটা-দুটো তীক্ষ্ণধার বাক্য নয়, ঘটনার দ্রুতগতি উত্থানপতন নয়, বরং এক ধীর লয়ে বয়ে চলা গদ্যপ্রবাহ তাঁর উপন্যাসরীতির প্রাণ। সেখানে চরিত্ররা প্রায়শই স্থানবদল করে কথক হিসেবে, ফলে একই ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে নেওয়া যায় খানিকটা ‘রাশোমন’ সিনেমার মতো। তাঁর বেশিরভাগ উপন্যাসেই চরিত্রসংখ্যা খুব অল্প। কিন্তু নানা দিক থেকে আলো পড়ায় প্রত্যেকটি চরিত্র ভীষণ রকম ত্রিমাত্রিক ও স্পর্শযোগ্য।
‘দ্য ভেজিটারিয়ান’ সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত উপন্যাস হান কাং-এর। এই উপন্যাস শুরু হচ্ছে এক পুরুষের বয়ানে। “Before my wife turned vegetarian, I’d always thought of her as completely unremarkable in every way”– এই বাক্যটি দিয়ে শুরু হচ্ছে বই। একজন নিতান্ত আটপৌরে সাধারণ গৃহবধূ, ইয়োং হে একদিন হঠাৎ ঘোষণা করলেন, তিনি আমিষ খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ ব্যাখ্যা করলেন না কিছু, যুক্তি দিলেন না– শুধু অস্ফুটে বললেন, ‘একটা স্বপ্ন দেখেছি।’ কী সেই স্বপ্ন? স্পষ্ট বললেন না কাউকে– শুধু ঘনিয়ে উঠল নানারকম ঝড়। কোরিয়ান সমাজ যেহেতু প্রবলভাবে আমিশাষী, ইয়োং হে-র মা-বাবা-স্বামী সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন তাকে ‘শোধরানোর’ জন্য। এরপর কথক হিসেবে এলেন যথাক্রমে ইয়োং হে-র জামাইবাবু ও দিদি। উঠে এল অদ্ভুত কিছু পরত– সাংসারিক জটিলতা, অবদমিত কাম, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও শিল্পচেতনার সংঘাত। শেষে, যখন অসুস্থ ইয়োং হে এমনকী, পরিধানের কাপড়টুকুও গায়ে রাখতে চাইছে না, দাবি করছে যে সে আসলে মানুষ নয় আর, সে একটি গাছে পরিবর্তিত হচ্ছে– তার দিদি ক্রমশ মেনে নিচ্ছে সেই ভবিতব্য। এ যেন আরেক মেটামরফোসিসের গল্প, কিন্তু ঠিক কাফকাসুলভ নয়। নাগরিক কুটিলতা আর উপকথাসুলভ সারল্য, দুইয়ের সংঘাতে তৈরি হওয়া এক নতুনতর টেক্সট।
এক পরিচ্ছেদ থেকে অন্য পরিচ্ছেদে যেতে কথক বদলে যাওয়ার এই কৌশল কোরিয়ান গদ্যসাহিত্যে নতুন, এমন নয়। ২০০৯ সালে বেরনো বিপুল জনপ্রিয় কোরিয়ান উপন্যাস, লেখিকা কিউং সুক শিন-এর ‘প্লিজ লুক আফটার মম’-এ-ও একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্য এসেছিলেন পরপর, কথক হয়ে। সেটি ও ‘দ্য ভেজিটারিয়ান’– দুই উপন্যাসেই কেন্দ্রীয় চরিত্র এক সাধারণ নারী। কিন্তু বিষয় ও ট্রিটমেন্ট সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। কিউং সুক শিনের জনপ্রিয়তার চাবিকাঠি তাঁর মেদহীন টানটান গদ্য। আর হান কাং আদ্যন্ত কাব্যিক, ইয়োং হে-র স্বগত উচ্চারণ কিংবা স্বপ্নদৃশ্যের বুননে তিনি কবিতাই লিখেছেন আদতে।
………………………………………….
প্রাচ্যের অন্য অনেক দেশের মতোই পুরনো কোরিয়ান সমাজে মেয়েদের স্থান ছিল অনেকটাই নিগড়বদ্ধ, সেখান থেকে আজকের ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণায় পৌঁছতে গেলে যে-রক্তক্ষরণ অনিবার্য, তার দাগ বহন করছে হান কাং-এর নারীচরিত্ররা প্রায় প্রত্যেকে। ঠিক এর তুলনায় কিছু হয়তো এই মুহূর্তের পাশ্চাত্য সাহিত্যে আসা কঠিন । আসলে কোরিয়ান এই সমাজ দুটো বিপরীতমুখী প্লেটের সংঘর্ষে তৈরি হওয়া নবীন পর্বতের মতো অস্থিতিশীল, সদা কম্পমান।
………………………………………….
‘হিউম্যান অ্যাক্টস’ তাঁর সবচেয়ে ডার্ক উপন্যাসের একটি। এর পটভূমি বাস্তব ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত, লেখিকার নিজের শৈশবও জড়িয়ে আছে এর মধ্যে। দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৮০ সালে যায় চুন-দু-হোয়ান নামে এক মিলিটারি ডিকটেটরের হাতে। বিরোধী নেতাদের জেলে পোরা হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় সব বিশ্ববিদ্যালয়। মে মাসে গোয়াংজু শহরে ছাত্রদের নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু হল, সেনাবাহিনী গুলি চালাতে থাকল নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর। গোয়াংজুতে জন্মানো হান কাং-এর বয়স তখন ন’বছর।
সেই দুঃস্বপ্নের দিন উঠে এসেছে ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’-এ। দং হো নামে এক কিশোরের বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকত দুই ভাইবোন, তারা আচমকা নিখোঁজ, সম্ভবত সৈন্যদের গুলিতে আহত বা নিহত। সেই বন্ধুকে খুঁজতে গিয়ে দং হো এসে দাঁড়িয়েছে আরও কয়েকজন ছেলেমেয়ের সামনে, যারা বেওয়ারিশ মৃতদেহগুলির পরিচর্যা করছে। ‘এক বন্ধুকে খুঁজছি’-র উত্তরে তারা বলছে, ‘এখানে দেখা করার কথা ছিল তোমাদের?’ দং হো অস্বস্তি নিয়ে বলছে, ‘না, হয়তো ও-ও…’
তারা উত্তরে বলছে, ‘বুঝতে পেরেছি। দ্যাখো, এখানে আছে কি না।’
পাঠক মুহূর্তে বুঝে যাচ্ছে, জীবিত বন্ধুকে নয়, আসলে মৃত বন্ধুকে খুঁজতে এসেছে কিশোরটি। আর দং হো পরপর দেখছে ২০টিরও বেশি শবদেহর মুখ। চিনতে চাইছে, তার মধ্যে নিখোঁজ বন্ধু জোং-দে আছে কি না। তারপর সে নিজেও ভিড়ে গেল ওই শব-পরিচর্যাকারীদের দলে। অদ্ভুত ঠান্ডা স্বরে হান কাং বর্ণনা দিয়ে গেছেন– কীভাবে ওই ছেলেমেয়েরা মুখ ধুয়ে দিচ্ছে শবের, আঁচড়ে দিচ্ছে চুল, প্লাস্টিকে মুড়ে দিচ্ছে শরীর। তারপর খাতায় লিখে রাখছে আনুমানিক বয়স, পরনের কাপড়-জুতোর বর্ণনা। প্রস্তুত রাখছে, যাতে শোকগ্রস্ত বাড়ির লোকরা খোঁজ করতে এলে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া যায় দেহটি।
ওদিকে গুঞ্জন, শহরে আবার ফেরত আসছে সৈন্যদল। চলতে পারে গুলি। দং হো-র উৎকণ্ঠিত মা ডাক পাঠাচ্ছেন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার। ছেলে আশ্বস্ত করছে, রাতের খাওয়ার আগেই ফিরে যাবে ঠিক।
………………………………………………..
আরও পড়ুন নোবেলজয়ী হান কাং-কে নিয়ে লেখা: কদর্য ক্লেদাক্ত পৃথিবীর নন্দনতত্ত্ব হান কাং রচনা করেন নিরীহ সব খেলনাবাটি দিয়ে
………………………………………………..
সে ফেরা কি হল? দং হো-র সেদিনের সঙ্গীদেরই বা কী হল তারপর? আবারও উপন্যাস এগিয়েছে অ-সরলরৈখিক গতিতে, কথক হিসেবে পরপর আসছে দং হো, তার মৃত বন্ধু, তার শবপরিচর্যার সঙ্গীরা, তার মা, এবং সবশেষে লেখক স্বয়ং। সময়রেখা যাতায়াত করেছে ১৯৮০-র গোয়াংজু থেকে বর্তমানের কোরিয়ায়। এতগুলো উজ্জ্বল তরুণ প্রাণ কীভাবে বিসর্জন হয়েছিল সেদিন, যারা বেঁচে গেছিল, তাদের সে বাঁচাও কেমন মৃত্যুতুল্য ছিল– তার দলিল এই উপন্যাস।
এমনকী, এই উপন্যাসেও গলার স্বর চড়াননি কোথাও হান কাং। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদবাক্যও লেখেননি। শুধু, নির্বিকার ভঙ্গিতে বর্ণনা দিয়ে গেছেন যন্ত্রণাদীর্ণ দিনগুলির, যেন নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা সেসব। অথচ সে বর্ণনা সরাসরি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় পাঠককে, তার পক্ষে আর নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব হয় না।
‘কনভ্যালেসেন্স’ একটি কৃশকায় বই হান কাং-এর। একটি মেয়ে, পা মচকে যাওয়ায় এক কোরিয়ান ভেষজ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করতে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর করা আকুপাংচার পায়ে রীতিমতো ক্ষত তৈরি করে দেয়। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার দ্বারস্থ হয়ে মেয়েটি যখন সেরে উঠতে চাইছে, দেখা যাচ্ছে তার আরোগ্যের সাধনা শুধু শরীরের নয়, মনেরও। সেই মনে অনেক অন্ধকার কুঠুরি, মেয়েটির দিদির সঙ্গে সম্পর্ক, পারস্পরিক অসূয়া, দূরত্ব– সব মিলিয়ে সেই ক্ষতচিহ্ন পায়ের ওই যন্ত্রণার মতই তীব্র, তীক্ষ্ণ। এই বইয়েরই শেষে ‘critical acclaim’ নামে একটি অংশে সমালোচক উ-চান-জে লিখছেন হান কাং-এর লেখনী সম্পর্কে, ‘Her characters are those who suffer from all the ills of the world, those who are deeply hurt. Delving deeply into their wounds, Han asks and explores why existence has to be such an affliction.’ এটাও কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে, একমাত্র ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’-এ যন্ত্রণার এই উৎসমুখ খুব প্রত্যক্ষ। বাকি সব গল্প-উপন্যাসে ক্ষতচিহ্নরা এসেছে ভারী নিঃশব্দে, সম্পর্কের সূক্ষ্মতম টানাপোড়েনের জায়গা থেকে। সে সম্পর্ক সবসময় যে দু’টি মানুষের, তা নয়– মানুষের সঙ্গে পৃথিবীর কিংবা মানুষের সঙ্গে সময়ের টানাপোড়েনও বটে।
শুধু কি হতাশার কথা লেখেন হান কাং? না তো! ‘গ্রিক লেসনস’ উপন্যাসে আছে সদ্য মা-কে হারানো, ডিভোর্সের লড়াইতে সন্তানের কাস্টডি হারানো এক তরুণীর কথা, যার গলার স্বর চলে গেছে আচমকা। বিপ্রতীপে আছেন তার গ্রিকভাষার শিক্ষক, যিনি হারিয়ে ফেলছেন দৃষ্টিশক্তি। দুই অসম্পূর্ণ মানুষ ধীরে ধীরে হয়ে উঠছেন একে অন্যের পরিপূরক, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এ তাঁদের যৌথ অভিযাত্রা।
নোবেল কমিটির ঘোষণায় ছিল, হান কাং পুরস্কার পাচ্ছেন, ‘For her intense poetic prose that confronts historical traumas and exposes the fragility of human life.’ বস্তুত, কাব্যগুণ সত্যিই তাঁর গদ্যের বড় সম্পদ। ‘The White Book’ যেমন আত্মজীবনীমূলক গদ্য হয়েও আদতে কবিতাই। বইটি শুরু হচ্ছে হান কাং-এর তৈরি করা একটা তালিকা দিয়ে– ‘In the spring, when I decided to write about white things, the first thing I did was to make a list.’ তারপর পরপর আসছে, Salt, Snow, Ice, Moon, Rice, Waves জাতীয় শব্দ। এই জায়গায় হান কাং দূরপ্রাচ্যের প্রাচীন নারী-সাহিত্যিকদের যথার্থ উত্তরসূরি। সহস্র বছর আগেকার জাপানি বিদুষী সেই শোনাগন এমনই সব তালিকা বানাতেন যে!
তারপর সেই শব্দগুলি তুলে নিয়ে ছোট ছোট গদ্যাংশ বুনেছেন হান কাং। লিখছেন, “On cold mornings, that first white cloud of escaping breath is proof of we are living. Proof of our bodies’ warmth”, কিংবা ‘White steam rises from the bowl of just-cooked rice, and she sits in front of it as though at prayer.’ নিজের জীবনের ছোট ছোট টুকরোগুলোকে সাদা রঙের এমন সব ফ্রেমে ধরেছেন হান কাং। নিজের সঙ্গে ভারি ব্যক্তিগত সংলাপ সে-সব এবং কবিতার মতোই দ্যুতিময়।
কবিতা ছড়িয়ে আছে পরোক্ষে, হান কাং-এর লেখালেখির সর্বত্র। ছড়িয়ে আছে বাস্তবতা আর পরাবাস্তবতার এক গাঢ় সংমিশ্রণ। ‘দ্য ভেজিটারিয়ান’-এ যেমন সবরকম হিংসার ঊর্ধ্বে উঠতে চাওয়া ইয়োং হে-র চরিত্রটি স্বপ্নের ভেতর ভাবে– ‘I like my breasts, nothing can be killed by them. Hand, foot, tongue, gaze, all weapons from which nothing is safe. But not my breasts.’ ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’-এ জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো কিশোরটি যেমন ভাবছে, ‘How long do souls linger by the side of their bodies? Do they really flutter away like some kind of bird? Is that what trembles the edges of the candle flame?’
সাহিত্যগুণের নিরিখে কি হান কাং-ই যোগ্যতম মানুষ, নোবেল পুরস্কারের জন্য, এই সময়ে? এক কথায় নিশ্চয়ই উত্তর হয় না এর। প্রতিবারই নোবেল প্রাইজ ঘোষণার আগে অনেক নামই উঠে আসে, যাঁরা প্রত্যেকেই নিজগুণে অনন্য। কিন্তু কোরিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী সাহিত্যিক হিসেবে ( প্রসঙ্গত, এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী নারী-সাহিত্যিকও তিনি) হান কাং দাগ কেটে যাবেন, তার একটা বড় কারণ তাঁর লেখারা এক ক্রান্তিকালের, এক যুগসন্ধির সন্তান।
পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায় প্রাচ্যের দেশগুলি (তা ভারতই হোক বা কোরিয়া) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে অনেকটাই অ-সমসত্ত্ব। একদিকে পুরনো সংস্কার, পুরনো ধ্যানধারণা, অন্যদিকে পাশ্চাত্য প্রভাব, দুই দিক মিলিয়ে এ সমাজ সতত দ্বিধান্বিত ও সতত পরিবর্তনশীল। হান কাং-এর লেখাতেও তাই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি আর আধুনিক মেডিকাল সায়েন্স একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয় (কনভ্যালেসেন্স), একজনের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যর বোধের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে তার পারিবারিক কাঠামো (দ্য ভেজিটারিয়ান)। আসে চিরাচরিত সংস্কৃতিতে প্রাচীন চৈনিক লিপি অনুশীলনের কথা (হিউম্যান অ্যাক্টস), আবার কসমেটিক সার্জারি করে চোখ বড় করার জন্য বোনকে দিদির পরামর্শও (কনভ্যালেসেন্স)। আসে সামরিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ পথরেখা (হিউম্যান অ্যাক্টস)।
বস্তুত, প্রাচ্যের অন্য অনেক দেশের মতোই পুরনো কোরিয়ান সমাজে মেয়েদের স্থান ছিল অনেকটাই নিগড়বদ্ধ, সেখান থেকে আজকের ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণায় পৌঁছতে গেলে যে-রক্তক্ষরণ অনিবার্য, তার দাগ বহন করছে হান কাং-এর নারীচরিত্ররা প্রায় প্রত্যেকে। ঠিক এর তুলনায় কিছু হয়তো এই মুহূর্তের পাশ্চাত্য সাহিত্যে আসা কঠিন । আসলে কোরিয়ান এই সমাজ দুটো বিপরীতমুখী প্লেটের সংঘর্ষে তৈরি হওয়া নবীন পর্বতের মতো অস্থিতিশীল, সদা কম্পমান।
হান কাং-এর শান্ত, পরিশীলিত বাচনভঙ্গির তলা দিয়ে সেই ভূ-কম্পন বিশ্বপাঠকের কাছে পৌঁছে যায় ঠিকই, এবং লাভা উদগিরণ করে নিশ্চুপে।
…………………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………………