পৃথিবী জুড়ে বামপন্থীদের উত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে, লাতিন আমেরিকা থেকে ইউরোপে হয়ে এশিয়াতে। শ্রীলঙ্কায় বামপন্থীদের জয় অবশ্যই এই জয়রথকে গতি প্রদান করার ক্ষমতা রাখে, তবে এখনই এমনটাই ঘটবে সেটা হলপ করে বলা যায় না। জে.ভি.পি.-র মধ্যেও একাধিক সমস্যা রয়েছে এবং এখানে মনে রাখা দরকার তারাও অন্য পাঁচটি সিংহলী দলের মতোই আরও একটি দল, যারা তামিল জাতিসত্ত্বার বিরোধীই ছিল শুধু নয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সমর্থন জানিয়েছিল রাজাপক্ষ সরকারকে। তবে অন্যদিকে এও সত্য যে তামিলদের সমস্যা সমাধান, তাদের সম্মানের প্রশ্নকে একমাত্র বামপন্থীরাই পারবে সমাধান করতে।
লঙ্কার মসনদে বামেরা
স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কার রাজনীতি অতি শান্তিপূর্ণ এবং গঠনমূলক পথে এগিয়েছে– এই অপবাদ তাঁর চিরশত্রুও কোনও দিন দিতে পারবে না। বারবার সেখানে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি এবং জাত্যাভিমানের খেলা এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে সেই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে হাজারও নিরীহ মানুষ। একথা ভাবলে একটি প্রশ্ন মনের গভীরে জ্বলজ্বল করে ওঠে, কীভাবে বোঝা যায় যে, পরিবর্তন আসন্ন? হয়তো এর উত্তর একাধিক, তবে আমি নিশ্চিত যে এই একাধিক উত্তর কোথাও গিয়ে একই পথে মিশে যায়, যে পথে জন্মভূমির মাটি ও বদ্ধভূমির কাদা এক হয়ে যায়।
২০২২ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে যখন একদা জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক মাহিন্দা রাজাপক্ষকে দেশ ছেড়ে পালতে হয়, তখন সিংহভাগ বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিকরা আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা লঘু করে দেখেছে, কেউ ভাবতেই পারেনি যে দু’-বছরের মধ্যে অনুরা কুমারা দিশানায়কের নেতৃত্বে লঙ্কার মসনদে বসবে বামেরা।
২০২২-এর আন্দোলন ও বামপন্থী জাগরণ
যদিও ’২২-এর আন্দোলনে বামপন্থী দলগুলি মুখ্য ভূমিকা পালন করেনি, তবু তাঁদের উপস্থিতি আন্দোলনকে দিশা দেখাতে সাহায্য করে। বামপন্থী ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলি একটি ক্যাম্প তৈরি করে কলম্বোর ‘গোটা গো গামা’-য় এবং সেটি হয়ে ওঠে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। যদিও সমাজতান্ত্রিক অ্যাজেন্ডাগুলি (যেমন– স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার, দুর্নীতি বিরোধিতা, পুঁজির সমবণ্টন, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি) ক্রমেই আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়ার মাধ্যমে সামনে আসতে থাকে, তবু বামপন্থী দলগুলি কখনও সামনে চলে আসেনি। ফ্রন্টলাইন সমাজতান্ত্রিক পার্টির মুখপাত্র জয়াগোরা একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, তাঁরা কৌশলগত দিক থেকেই আন্দোলনে সামনে আসতে চায়নি বরং পিছন থেকে আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিল। তবে শ্রীলঙ্কার ঘাঁটা বামপন্থী ইতিহাসের কারণেই হয়তো আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারছিল না বাম দলগুলি।
শ্রীলঙ্কার বামপন্থী দলগুলি ভারতের মতোই ক্রমাগত ভাঙনের মধ্য দিয়ে গেছে। ১৯৩৫ সালে ‘লঙ্কা সম সমাজ পার্টি’ নামে প্রথম বামপন্থী পার্টির জন্ম হয়, যারা ছিল ট্রটস্কিপন্থী এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৩ সালে চালের ওপর ভরতুকি বন্ধ করার বিপক্ষে সম সমাজ পার্টির আন্দোলন গোটা দেশে সারা ফেলে দেয়। এত বড় আন্দোলন করার পরেও তাদের ১৯৭০ অবধি অপেক্ষা করতে হয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে। বৃহৎ জোটসরকারে যোগ দিয়ে সমাজতান্ত্রিক নীতিসমূহ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল, বলা বাহুল্য সেই কাজগুলি তারা জোটে থেকে সম্পূর্ণ করতে পারেনি, ফলে অচিরেই তাদের মোহভঙ্গ হয়।
১৯৭১ সালে বামপন্থী দলের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে মাওপন্থীরা এবং তৈরি হয় ‘জানাথা ভিমুক্তি পেরামুনা’, যা জে. ভি. পি. নামে পরিচিত। তারপর ধীরে ধীরে আন্দোলনের রক্তস্নাত পথ ধরে, ঠিক-ভুলের মধ্য দিয়ে জে.ভি.পি. এগিয়ে যেতে থাকে। কখনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেউইরাকে শাহাদাত বরণ করতে হয়, আবার কখনও সংসদের লোভে ডানপন্থী শক্তিকেও সমর্থন দিতে পিছুপা হয় না। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে, জে.ভি.পি. সিংহলদের দল, তাই তামিল জাতিসত্ত্বা আন্দোলনের বরাবর বিরোধী এবং কিছু অংশে নির্মমও বটে।
২০২২-এর আন্দোলনের সূচনার সময় বামপন্থী দলগুলি দুর্বল এবং বিভক্ত ছিল। আন্দোলন শুরু হয় বঞ্চনার বিপক্ষে এবং স্লোগান উঠতে থাকে ‘গোটা নিপাত যাক’, কারণ জনগণের একমাত্র দাবি ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষর পদত্যাগ। যেহেতু সেই আন্দোলনের অন্য কোনও দাবি অথবা নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ দর্শন সামনে আসছিল না, তাই অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে, গোটাবায়া-র অপসারণ এই আন্দোলনকে স্থিমিত করে দেবে। ঠিক এই সময়ে বামপন্থী দলগুলি আন্দোলনে উলেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে শুরু করে আর ক্রমেই স্লোগানের চেহারা এবং দাবিগুলি বদলে যেতে থাকে। আন্দোলনে ব্যানার, পোস্টারে দেখা যায় ‘Power to the People Beyond Parliament’, অর্থাৎ সংসদের বাইরে জনগণের হাতে ক্ষমতা চাই। এই দাবিতে কলম্বোর গণ্ডি পার হয়ে একাধিক শহরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বামপন্থী দলগুলির মধ্যে জে.ভি.পি.-র সভাগুলিতে জনগণের সমাগম হতে শুরু করে চোখে পরার মতো। অন্যদিকে আন্দোলন দমাতে না পেরে মাহিন্দা রাজাপক্ষ সরকারের সমর্থকরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা শুরু করে এবং তার ফলে আন্দোলন আরও দৃঢ় এবং বৃহৎ আকার ধারণ করে।
বামপন্থীদের উপস্থিতি আন্দোলনের গতিবেগকে বাড়িয়ে দেয় এবং রাজাপক্ষ সরকারের অপসারণ অনিবার্য হয়ে পড়ে। রাজাপক্ষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর উইকরেমেসিংহ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ করে এবং এর ফলে মধ্যবিত্তরা ধীরে ধীরে আন্দোলন থেকে সরে যায়। মধ্যবিত্তদের ভরসা ছিল যে উইকরেমেসিংহ দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে পারবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বালাসিংহামের মতে, ওই সন্ধিক্ষণে বামপন্থী দলগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তারা সেই আন্দোলনের রাশ ধরে এবং ক্রমাগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। জে.ভি.পি.-র ‘৫০ দিন আন্দোলন’, ‘১০০ দিন আন্দোলন’ কর্মসূচি জনগণের মধ্যে সাড়া ফেলে দেয়, কিন্তু তখনও কেউ আন্দাজ করতে পারেনি যে, ২০২৪-এর ভোটে তাদের সরকার তৈরি হয়ে যাবে। ইতিহাস বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, একাধিক দেশে গণআন্দোলনের ফলস্বরূপ বামপন্থীরা ক্ষমতা দখল করেছে, তবে এর ব্যতিক্রম হয়নি এমনটাও নয়।
……………………………………………………
বাংলাদেশে ব্যাপক গণআন্দোলনের ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালতে হয়। তবে এত বড় আন্দোলনের পরেও সেখানে বামপন্থীরা কোনও জায়গায় পায়নি বললেই চলে। অন্তর্কালীন যে সরকার তৈরি হয়েছে, তা আমেরিকার মদতপুষ্ঠ বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। বামপন্থীদের একটি অংশ বাংলাদেশের আন্দোলনের মধ্যে উপস্থিত থাকলেও আরও একটি অংশ হাসিনা সরকারকের সমর্থনে ছিল। তাহলে প্রশ্ন হল– আন্দোলন থাকা বামপন্থীরা কেন সুযোগ বুঝে রাশ ধরতে পারেনি শ্রীলঙ্কার মতো?
……………………………………………………
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব
পৃথিবীর আনুমানিক ২৬ শতাংশ জনসংখ্যার বসবাস এই দক্ষিণ এশিয়ায় এবং ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও এই অংশের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো এখানে দেশগুলির মধ্যে সখ্য নেই বললেই চলে। বামপন্থী রাজনীতি এই অংশে ছাপ ফেলেছে বটে, তবে তা কখনওই ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। চিনে বামপন্থী শাসন ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার সময়ও তার ব্যাপক প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তার করতে পারেনি। ভারতকে বাদ দিলে দক্ষিণ এশিয়ার সবক’টি দেশে (নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তানে) গণতন্ত্রের পরিকাঠামো দুর্বল এবং সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস রয়েছে। যদি এই দেশগুলির সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর চোখ রাখলে বোঝা যাবে যে, একাধিক দেশে গণআন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বটে, তবে তা যেসব দেশে বামপন্থীদেরই সুবিধা করে দিয়েছে এমনটা নয়। নেপালে অবশ্যই মাওবাদী আন্দোলনের ফলে রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে মোড় নিয়েছে, তবে সেই বদলের ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আমূল অর্থ-সামাজিক পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়নি। তবে রাজনীতির চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নেপালের রাজনীতিতে বামপন্থীরা আবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বিগত মার্চ মাসে একসময়ের জনপ্রিয় মাওবাদী নেতা ‘প্রচণ্ড’ নেপালি কংগ্রেসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নেপালের বামপন্থী পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করে এবং কে. পি. শর্মা অলিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশে ব্যাপক গণআন্দোলনের ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালতে হয়। তবে এত বড় আন্দোলনের পরেও সেখানে বামপন্থীরা কোনও জায়গায় পায়নি বললেই চলে। অন্তর্কালীন যে সরকার তৈরি হয়েছে, তা আমেরিকার ‘মদতপুষ্ট’ বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। বামপন্থীদের একটি অংশ বাংলাদেশের আন্দোলনের মধ্যে উপস্থিত থাকলেও আরও একটি অংশ হাসিনা সরকারকের সমর্থনে ছিল। তাহলে প্রশ্ন হল– আন্দোলন থাকা বামপন্থীরা কেন সুযোগ বুঝে রাশ ধরতে পারেনি শ্রীলঙ্কার মতো? কারণ বামপন্থীরা কোনও দিন সে অর্থে সাধারণ বাংলাদেশি মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি এবং তাই তারা জামাতের প্রভাবকে রুখে দিতেও সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে ভুটানে বামপন্থী দল থাকলেও তা নেপালিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাই ভুটানের মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তারে তারা এখনও ব্যর্থ এবং দলের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা তাদের অবস্থাকে আরও করুণ করেছে।
……………………………………………………….
আরও পড়ুন মানস ঘোষ-এর লেখা: মুক্ত স্বাধীন বুদ্ধিজীবীকুল গড়ে না তুলতে পারলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিষ্কণ্টক হবে না
………………………………………………………..
পাকিস্তানে বামপন্থী দলের অবস্থাও তথৈবচ। যদিও তাঁদের শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে কিছু কাজ রয়েছে বটে, কিন্তু তা কখনওই যথেষ্ট নয় পাকিস্তানের মতো দিব্যতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতা দখল করতে। সর্বোপরি পাকিস্তানের সেনা হল ক্ষমতার শেষকথা এবং তাদের মধ্যে ইসলাম এবং আমেরিকা– দুয়ের প্রভাব এত ব্যাপক মাত্রায় রয়েছে যে তারা বামপন্থীদের কোনও মতেই ক্ষমতার চারপাশে ঘেঁষতে দেয় না। একসময় আফগানিস্তানে বামপন্থী দলের উপস্থিতি ছিল, তবে সেসব আজ অতীত। এখন সেখানে তালিবান শাসন এবং ধ্বংস ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। অন্যদিকে মালদ্বীপে কোনও বামপন্থী দলের উপস্থিতি এখনও চোখে পরেনি, তবে চিনা বামপন্থী দলের প্রতিনিধিদের সেখানে নিত্য যাতায়াত রয়েছে।
ভারতে একাধিক বামপন্থী দল রয়েছে বটে, তবে ক্রমেই তাদের ক্ষমতা ক্ষীয়মাণ এবং তুলনামূলক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং একাধিক বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত তাদের এখন এই ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়েছে। সাম্প্রতিককালে অতি-ডানপন্থী শক্তির উত্থানের পর থেকে একাধিক গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে, কখনও সেই আন্দোলন এসেছে কৃষকদের থেকে, কখনও সংখ্যালঘু, আবার কখনও নিম্নবিত্তদের থেকেও। কোনও নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাগরিক সমাজের আন্দোলনও ব্যাপক দানা বেঁধেছে। বামপন্থীরা এই আন্দোলনগুলিতে উপস্থিত রয়েছে বটে, তবে কখনও নিজেদের হাতে রাশ তুলে নিতে পারেনি। একাধিক প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বামপন্থীদের ক্ষমতা দখল করার স্বপ্ন ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবে রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কোনও শব্দ হয় না– এটা ভুলে গেলে চলবে না। তবে শ্রীলঙ্কায় বামপন্থী দলের ক্ষমতা দখল দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলবে, তা অচিরেই আন্দাজ করা যায়।
ভারতের প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কা
বিজেপি সরকার শ্রীলঙ্কায় বামপন্থীদের বিজয়ে খুব আপ্লুত হবে, এমনটা কেউ মনে করে না। তবে কূটনীতির এক নিজস্ব নকশা রয়েছে এবং সব গণতান্ত্রিক সরকার তা মেনে চলতে চায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের আমন্ত্রণে দিল্লি এসে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করে দিশানায়াকে এবং সে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দুই তরফেই জানানোর হয়। ভারত দিশানায়াকে জয়ের আগেই তাঁকে এই বন্ধুত্বের বার্তা দিতে চেয়েছিল কারণ শ্রীলঙ্কায় চিনের প্রভাব নিয়ে ভারত গভীরভাবে চিন্তিত। আমার ধারণা যে, ভারত সরকার মনে করে শ্রীলঙ্কায় বামপন্থীদের ক্ষমতা দখলের নেপথ্যে চিনের হাত রয়েছে। এমনিতেও দিশানায়াকে চিনের খুব ‘ঘনিষ্ট’ বলে পরিচিত। ভারত মহাসাগরে চিনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় দিল্লি এবং তার জন্য শ্রীলঙ্কা সঙ্গে সুসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে তামিল জনগণের সমস্যার সমাধানও একটা আলোচনার বিষয়ে হতে পারে আগামিদিনে। তবে এখন ভারতকে ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করতে হবে, এবং অপেক্ষা করতে হবে কোনদিকে দিশানায়াকে তাঁর সরকারকে নিয়ে যায়।
………………………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
………………………………………………..
এই মুহূর্তে, পৃথিবী জুড়ে বামপন্থীদের উত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে, লাতিন আমেরিকা থেকে ইউরোপে হয়ে এশিয়াতে। শ্রীলঙ্কায় বামপন্থীদের জয় অবশ্যই এই জয়রথকে গতি প্রদান করার ক্ষমতা রাখে, তবে এখনই এমনটাই ঘটবে সেটা হলপ করে বলা যায় না। জে.ভি.পি.-র মধ্যেও একাধিক সমস্যা রয়েছে এবং এখানে মনে রাখা দরকার তারাও অন্য পাঁচটি সিংহলী দলের মতোই আরও একটি দল, যারা তামিল জাতিসত্তার বিরোধীই ছিল শুধু নয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সমর্থন জানিয়েছিল রাজাপক্ষ সরকারকে। তবে অন্যদিকে এ-ও সত্য যে তামিলদের সমস্যা সমাধান, তাদের সম্মানের প্রশ্নকে একমাত্র বামপন্থীরাই পারবে সমাধান করতে। শ্রীলঙ্কার মানুষ আই.ম.এফ.-এর ঋণের দাসত্ব থেকে মুক্তি চায়, তারা শান্তি, উন্নতি এবং উন্নত পরিকাঠামোর দিকে তাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তাই তারা ভরসা রেখেছে বামপন্থীদের ওপর। কারণ বামপন্থীরাই বারবার বলে এসেছে ‘another world is possible.’ (অন্য পৃথিবী সম্ভব)।