Robbar

ঘরোয়া ক্রিকেটকে গুরুত্ব না দিলে রোহিতদের দুর্দশা ঘুচবে না

Published by: Robbar Digital
  • Posted:January 17, 2025 8:30 pm
  • Updated:January 17, 2025 8:50 pm  

ঘরোয়া ক্রিকেটকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, যেমনটা সৌরভ-লক্ষ্মণদের সময় হত? এ জন্য দায়ী বোর্ড কর্তাদের অদূরদর্শিতা এবং অস্বচ্ছতা। তা না হলে, ঘরের মাঠে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভরাডুবি ঘটে না, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি হাতছাড়া হয় না টিম ইন্ডিয়ার। আমাদের দেশে ঘরোয়া ক্রিকেট, বিশেষ করে রনজি মরশুম, সেই চেনা ক্ষেত্র যেখানে পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে সুযোগ পায় ক্রিকেটাররা। অথচ বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স উপেক্ষিত।

সৌরাশিস লাহিড়ী

‘পারফরম্যান্স শুড বি দ্য প্যারামিটার।’ ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে দু’-চার কথা বলার আগেই কেন এমন চরম বার্তা? পাঠক, প্রশ্ন করতেই পারেন। তার ব্যাখ্যায় ঢোকার আগে দু’জনের নাম না নিয়ে পারছি না। একজন ভিভিএস লক্ষ্মণ। অপরজন? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

ভিভিএস প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায় আসি। ২০০৫ সালে ভারতীয় দল থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যখন অন্যায় ভাবে বাদ দেওয়া হয়, সেই কঠিন সময়ে আমরা খুব কাছ থেকে দাদাকে দেখেছি। আমরা অর্থাৎ, লক্ষ্মীরতন শুক্লা, রণদেব (বসু) এবং আমি– এই তিনজন ছিলাম দাদার কঠিন সময়ের নিত্যসঙ্গী। ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের জন্য সেসময় ঘরোয়া ক্রিকেটকেই ‘পাখির চোখ’ করেছিল দাদা। আমার মনে আছে, লাহলিতে বোলিং সহায়ক পিচে হরিয়ানার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মরশুমে দলীপ ট্রফিতে টার্নিং উইকেটে টিম স্ট্রাগল করছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সেই উইকেটে‌ও উত্তরাঞ্চলের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিল। এমনকী, জোহানেসবার্গে প্রত্যাবর্তন টেস্টেও টিমমেটরা যখন বাউন্সি উইকেটে কুলকিনারা করতে পারছে না, সেখানেও দাদার প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৫১ টেস্টে ফারাক গড়ে দিয়েছিল।

Sourav Ganguly shows immense concentration during his unbeaten 51 | ESPNcricinfo.com
জোহানেসবার্গে সৌরভ গাঙ্গুলির ৫১ রানের ইনিংস

পরিসংখ্যান মিথ্যা কথা বলে না। সৌরভ-প্রসঙ্গ এই কারণেই উল্লেখ করলাম, কারণ, পারফরম্যান্সের কোন‌ও বিকল্প হয় না। তুমি যত বড় ক্রিকেটার‌ই হ‌ও, পারফরম্যান্স করে নিজের জায়গা করে নিতে হবে। আর এখানেই ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রয়োজনীয়তা বারবার চোখে পড়ে।

ঘরোয়া ক্রিকেট সেই মঞ্চ যেখান থেকে সেরা ট্যালেন্ট উঠে আসে। আবার এটা সেই মঞ্চ যেখানে নিজের ফর্ম এবং ধারাবাহিকতাকে যাচাই করা যায়। শুরুতেই ভিভিএস লক্ষ্মণের কথা উল্লেখ করেছিলাম। একটা ঘটনা এপ্রসঙ্গে মনে পড়ছে। নির্বাচকমণ্ডলী একটা সময় ভিভিএসকে ভারতীয় দলে ওপেনিং-এ চাইছিল। কিন্তু লক্ষ্মণ সেই পজিশনে মোটেই স্বচ্ছন্দ বোধ করছিল না। বাধ্য হয়ে ভিভিএস নির্বাচক কমিটিকে জানায় যে, সে মিডল অর্ডারে খেলতে চায়। এবং জাতীয় নির্বাচকদের আপত্তি সত্ত্বেও ঘরোয়া ক্রিকেটে স্টেট টিমের হয়ে ভিভিএস মিডল অর্ডারেই খেলে। শুধু তাই নয়, ১০ ম্যাচে করে ১১টি শতরান করে। যার মধ্যে একটা ত্রিপল আর দুটো ডবল সেঞ্চুরি। নির্বাচকরা এরপর আর ভিভিএসকে ওপেনিং-এ খেলানোর ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেনি।

VVS Laxman on playing his first hometown Test | ESPNcricinfo
ভিভিএস লক্ষ্মণ

আসলে দিনের শেষে পারফরম্যান্স‌ই শেষ কথা, এটা একবার নয়, বারবার শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণরা প্রমাণ করেছে। আর সেটা প্রমাণ করেছে ঘরোয়া ক্রিকেটের কষ্টিপাথরে নিজেকে যাচাই করে। মুশকিল হল, এই সহজ সত্যটা বুঝতে পারছে না ভারতীয় দলের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই। দুঃখের বিষয়, তাদের মধ্যে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো সিনিয়র ক্রিকেটার‌ও রয়েছে, যাদের পারফরম্যান্সের ওপর ভারতীয় দলের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভরশীল।

Vignettes from Sachin's farewell domestic match | Photo Gallery
শচীনের ‘ঘরোয়া’ ফেয়ারওয়েল

সমস্যা কোথায় হচ্ছে? ঘরোয়া ক্রিকেটকে তারা কেন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, যেমনটা সৌরভ-লক্ষ্মণরা দিতেন? তার জন্য অধিকাংশে দায়ী বোর্ড কর্তাদের অদূরদর্শিতা এবং অস্বচ্ছতা। তা না হলে, ঘরের মাঠে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভরাডুবি ঘটে না, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি হাতছাড়া হয় না টিম ইন্ডিয়ার। আমাদের দেশে ঘরোয়া ক্রিকেট, বিশেষ করে রনজি মরশুম, সেই চেনা ক্ষেত্র যেখানে পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে সুযোগ পায় ক্রিকেটাররা। অথচ বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স উপেক্ষিত। মায়াঙ্ক আগার‌ওয়াল, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, করুণ নায়াররা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স করেও ভারতীয় টেস্ট দলে জায়গা পাচ্ছে না। মুকেশ কুমারের মতো বোলার ধারাবাহিকতা দেখালেও তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। বদলে কে সুযোগ পাচ্ছে? হর্ষিত রানা! যার কি না ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা নামমাত্র। পরিচিতি বলতে আইপিএলে ভালো পারফরম্যান্স। তাহলে ভারতীয় দলে সুযোগের মাপকাঠি কি? ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স? নাকি আইপিএল?

Mukesh seals Bengal's first Ranji Trophy final in 13 years - Sportstar
রনজিতে বিধ্বংসী মুকেশ কুমার

ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, আইপিএলে পারফরম্যান্সের নিরিখে ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দল নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু একদিনের দল কিংবা টেস্ট স্কোয়াড কখনও নয়। টি-টোয়েন্টির চার বলের খেলা দেখে ভারতীয় টেস্ট বা ওয়ান ডে টিম গড়লে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। আর সেটাই এখন হচ্ছে। ঘরে-বাইরে যেকোন‌ও বিপক্ষের সামনে নাস্তানাবুদ হচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। আর তাতেই হ‌ইচ‌ই পড়ে গিয়েছে। বোর্ড পরিস্থিতি সামাল দিতে কড়া অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু সেটাও ধন্ধে ভরা! রোহিত-বিরাটের মতো সিনিয়রের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা উচিত বলে দাবি উঠছে। কিন্তু বোর্ডের তরফে এই বার্তা তাদের দেওয়া হচ্ছে না, রনজিতে খেললেই হবে না, পারফর্ম করতে হবে। করলে তবেই ভারতীয় দলে সুযোগ মিলবে। রোহিত, বিরাটরা রনজিতে খেলতে নামল, অথচ ব্যাটে রান পেল না। তা সত্ত্বেও ভারতীয় দলে তাদের নেওয়া হল, তা হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রয়োজনীয়তা অর্থহীন হয়ে যাবে। পারফরম্যান্স মাপকাঠি হলে ভারতীয় দলের প্রথম এগারোয় অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সরফরাজ খান, রিকি ভুঁইদের সুযোগ পাওয়া উচিত‌ কিন্তু তা হচ্ছে কই! ভুলে গেলে চলবে না টেস্ট হল ক্রিকেটের আসল পরীক্ষা। সেটা মোটেই টি-টোয়েন্টির মতো ৪-৫ বলের খেলা নয় যে, অ্যাগ্রেসিভ ব্যাটিং করলাম, বা একটা দারুণ ওভার করলাম, আর ম্যাচ ঘুরে গেল। টেস্ট ক্রিকেটারের ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়, তার ক্রিকেটীয় নৈপুণ্যের পরীক্ষা নেয়, সেই পরীক্ষায় আমরা চেতেশ্বর পূজারাকে সফল হতে দেখেছি, আজিঙ্কা রাহানে, হনুমা বিহারীকে সফল হতে দেখেছি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলেই তাদের উত্থান। সেই মেন্টালিটির প্লেয়ার এখন ভারতীয় দলে কোথায়!