Robbar

মুম্বইয়ের জাতীয় স্তরে দাদাগিরি কমলেও, নিজেদের দলে কি তা কমেছে?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:April 9, 2025 5:18 pm
  • Updated:April 11, 2025 12:55 pm  

ক্রিকেটে মুম্বইয়ের দাদাগিরি আজকের নয়। বর্তমানে আইপিএল-এ তিলক বর্মার মতো তরুণ খেলোয়াড়কে ‘দাদাগিরি’ করেই মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয়। যুক্তি এই যে, তিলকের তেমন ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। একজন তরুণ ক্রিকেটারের প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের কি আস্থা রাখা অনুচিত ছিল? যদি তিলকের জায়গা অন্য কোনও সিনিয়র প্লেয়ার থাকত, তাহলে কি এমনটা হতে পারত?    

প্রসেনজিৎ দত্ত

তিনিই ঈশ্বর। একমাত্র ঈশ্বর। তিনিই এটা করতে পারেন। পরিভাষার একটা শব্দবন্ধ। ডিভাইন জাস্টিস। হয়তো তাঁরই বিচারে একদা রাজারও হয় ফকিরের দশা। ধরা যাক, সে রাজার নাম মুম্বই। ভাববেন, এটা তো নিছক জায়গার নাম। রঙিন দুনিয়ার চাবি সেখানে। কীভাবে একটা জায়গার নামে ব্যাকরণের ভাষায় কর্তার নাম হতে পারে! উত্তর হল, সব পারে। যেভাবে ওয়াশিংটন কারওর নাম হতে পারে… যাই হোক, প্রসঙ্গে আসি। বাকি সব নিপাত যাক। রংচঙে দুনিয়া, বলিউড, গ্ল্যামার ইত্যাদি ইত্যাদি সব। থাকুক শুধু ক্রিকেট, ক্রিকেট এবং ক্রিকেট।

এ লেখার স্রোত ক্রিকেটের দিকেই। বলা ভালো, ক্রিকেটের একটা বিশেষ কিসসার দিকে। কী সেই কিসসা? রিটায়ার্ড আউট। সম্প্রতি যা নিয়ে ডামাডোল। এই চর্চার মধ্যে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। পাতি বাংলায় ‘ক্যাচাল’। তবে, এর জেরে সমালোচকরা বিতর্কানুশীলনে তাল ঠুকছেন। তাঁরা ভাবছেন, এর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণে আরেকটু বেশি নিউজ প্রিন্ট খরচ হবে। ড্যাশবোর্ডেরও খানিক জায়গা ভরবে। সব মিলিয়ে কর্তব্যবোধ ও ন্যায়ের মহিমাকে ভাবনায় রেখে তাঁরা একটু কড়া হবেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া এবং ম্যানেজমেন্টের প্রতি। কেন তুলে নেওয়া হয়েছিল তিলক বর্মাকে? তিনি কি নিজেই রিটায়ার্ড আউট হয়েছেন? অথবা এর নেপথ্যে কি রয়েছে কোনও ‘শকুনির ষড়যন্ত্র’ বা ‘দাদাগিরি’? প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তর! দুরূহ, ঠিক কোনও কষ্টকল্পিত বিষম বস্তুর মতো।

Tilak Varma retired out in chase against LSG | Cricbuzz.com
বিষণ্ণ তিলক বর্মা

পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হেরে এমনিতেই বিপর্যস্ত তারা। পয়েন্ট টেবিলেও ভদ্রস্থ জায়গায় নেই। কিন্তু এখনও সেই আলোচনা থামেনি। তাদের বিপক্ষে লখনউ সুপার জায়ান্টস। আর সেই ম্যাচে লক্ষ্যের এত কাছে গিয়েও গোমড়া মুখে ফিরে আসতে হয়েছে। কেন তাদের হেরে যেতে হল? চলছে কাটাছেঁড়া। এই চর্চার মধ্যেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। রান তাড়া করার সময় আচমকাই ‘অবসর’ তিলক বর্মার। কেন এরকম অদ্ভুত সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন উঠছে হার্দিকের নেতৃত্ব নিয়ে। তাদের কোচ মহেলা জয়বর্ধনেও বা বাদ যাবেন কেন! এদিকে ক্যামেরা চলে গিয়েছে ডাগআউটে বসে থাকা বিমূঢ় সূর্যকুমার যাদবের দিকে। ব্যস, আর যায় কোথা! নড়েচড়ে বসেছেন লেখিয়ারা। নেটিজেনরাও বা বাদ যাবেন কেন! ভিডিও ভাইরাল করতে তাঁদের ভূমিকাও যে কম নয়। ভিডিওয় কী দেখা গেল? দেখা গেল, হতভম্ব সূর্যকুমারকে। তিনি বেশ অখুশিও। এমনকী, মুম্বই কোচ স্বয়ং এসে সূর্যকে রিটায়ার্ড আউটের ব্যাপারটা বোঝান। এরপর তিলকের পরিবর্তে নামেন স্ট্যান্টনার। লখনউয়ের ২০৩ তাড়া করতে নেমে মুম্বইকে দারুণ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন সূর্য এবং নমন ধীর। এক প্রান্তে লড়ছিলেন হার্দিক। কিন্তু অন্য প্রান্তে তথৈবচ তিলক। ২৩ বলে ২৫ রান ছিল যাঁর ব্যাটের সম্বল। ক্রিজে মোটেও অবলীলায় দেখা যায়নি তাঁকে। ওই সময় জয়ের জন্য দরকার ৭ বলে ২৪। যদিও এত সবের পরেও ম্যাচ জয়ের মুখ দেখেনি তারা। অধিনায়ক হার্দিক এবং মুম্বই ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকেই।

IPL: Mahela Jayawardene urges MI fans to support Hardik Pandya
মাহেলা জয়বর্ধনে এবং হার্দিক পান্ডিয়া

কী বন্ধু, কোনও গন্ধ পেলেন? শুরুতেই বলা হয়েছিল ‘ডিভাইন জাস্টিস’। তবে ঐশ্বরিক বিচারের চেয়েও একে বলা ভালো ঐশ্বরিক প্রহার। একটা সময় ভারতীয় ক্রিকেট বলতেই বোঝাত মুম্বইকে। তাদের রনজি টিমই যেন ভারতীয় দল। সেখান থেকে কোন ছোটবেলায় ‘মুম্বই লবি’ এই শব্দজোড়া শেখা। তাদের অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনেই চলত ভারতীয় ক্রিকেট। পক্ষের লোকেরা বলবেন, তো কী! মুম্বইয়ের প্রোডাকশন দেখুন, প্রমাণ পাবেন। বিপক্ষের তার্কিকরা বলবেন, সেই প্রোডাকশনে শান দিতে গিয়ে তো অন্য রাজ্যকে ভোঁতা করেছেন… তার বেলা? বেলা গড়িয়ে সহস্রাব্দ বদলেছে। ভারতীয় ক্রিকেট সৌরভময় হয়েছে। কাছিম গতিতে হলেও ভারতীয় ক্রিকেট থেকে লবিবাজি কমেছে। কিন্তু যেখানকার লবি নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই দলের মধ্যে যদি লবি থাকে! লবি রয়েছে বলেই তো রোহিতের জায়গায় হার্দিককে যখন ক্যাপ্টেন করা হল, তখন সেই হার্দিকই হয়ে গেলেন মুজলিম। তাঁকে সইতে হল অপমান। হতে হল গ্লানির ভাগীদারও। লবি আছে বলেই তো যশস্বী জয়সওয়াল মুম্বইয়ের ঘরোয়া দল ছেড়ে গোয়ার পথে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে উচ্ছৃঙ্খলতার অভিযোগ… তবুও কোনও প্রমাণিত সত্য নয়।

Tilak Varma deserves praise for the coming-of-age, matching-winning knock | Cricket News - The Indian Express
তিলক বর্মা কি আত্মবিশ্বাস হারাবেন? উঠছে প্রশ্ন

এতেও তো চিঁড়ে ভেজেনি। ভিজবেও না। তাই তিলকের রিটায়ার্ড আউট নিয়ে চর্চা চলবে। হয়তো দলটার নাম মুম্বই বলেই এত চর্চা। আর সেই চর্চা টেনে এনেছে ২৪ বছর আগের এক আন্তর্জাতিক ম্যাচের কথা। বাংলাদেশ ম্যাচে দেড়শো করার পর রিটায়ার্ড আউট হয়েছিলেন এখনকার মুম্বই কোচ জয়বর্ধনে। ২০২২ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাচক্রে সেই ম্যাচটিও ছিল লখনউয়ের সঙ্গে। ২০২৩ আইপিএলে অনুরূপ ঘটনা ঘটে দু’বার। সেক্ষেত্রে রিটায়ার্ড আউট হয়েছিলেন যথাক্রমে পাঞ্জাব কিংসের অথর্ব তাইদে এবং গুজরাট টাইটান্সের সাই সুদর্শন রিটায়ার্ড। তাঁদের নিয়ে কিন্তু তেমন চর্চা নেই। হ্যাঁ, দলটার নাম মুম্বই। জাতীয় স্তরে দাদাগিরি কমলেও নিজেদের দলে কি তা কমেছে? মনে হয় না। তাই হয়তো তাদের দিকে ছুটে আসছে সমালোচনার বাণ। টি-টোয়েন্টি আসলেই চার-ছয়ের খেলা। সেখানে ১০৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাটিং করলে (সেদিন তিলকের তাই ছিল) আপনার হয়ে কেউ কি ব্যাট করবে? এই যুক্তিতেই ভর করে আউট না হয়ে অথচ আউট হয়ে তিলকের ডাগআউট যাত্রা। কেউ কি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারতেন, তিলক বাকি বলগুলিতে গোটা তিনেক ছক্কা হাঁকাতেন না!