২২ গজ ছাড়ার সময় যে ক্রোধের পাহাড় নিয়ে তেড়ে গেলেন দুই ফিল্ড আম্পায়ারের দিকে, যে ভঙ্গিমায় প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে বারবার ঘাড় বেঁকিয়ে রোষানলে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন আউট-যন্ত্রণার, কিংবা ক্লাবহাউসের সামনে আছাড় মারলেন হাতের ব্যাটটাকে, হাতের ঝটকায় উল্টে দিলেন বিন-বক্স। তাতে তৃপ্ত ইডেনে এই ক্রিকেট-সত্য প্রমাণিত, সেই চেনা বিরাট হারিয়ে যাননি। তিনি ফিরেছেন, স্বমহিমায়।
বিরাট কোহলির সঙ্গে দুই ‘রা’-এর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এক, রান। আরেকটা– রাগ।
ইদানীং রাগের ব্যাপারে রা কাড়তেন না কোহলি। রবিবার কাড়লেন। ‘বিতর্কিত’ বিমারে শেষমেশ তাঁর ধ্যানভঙ্গ হল। ইডেনে এ-ও এক ধরনের কামব্যাক বটে, তবে সে নিয়ে আলোচনা খুব হবে বলে মনে হয় না।
হেঁয়ালি ছেড়ে একটু ঝেড়ে কাশা যাক।
ব্যাপারটা হল, বিরাট কোহলি আর সেই আগের মতো রাগ করেন না। মানে, সেই ‘অ্যাংরি ইয়ংম্যান’ মার্কা গরগরে রাগ, যে রাগের অনলে পুড়ে ছাই হয়ে যেত মিচেল জনসন, ডেভিড ওয়ার্নারদের নেকড়েসুলভ ‘স্লেজিং’, নুয়ে পড়ত শাহিন শাহ আফ্রিদিদের ‘সুইং’ সাধনার স্বপ্নমঞ্জিলগুলো। যে রাগ চোখে চোখ রেখে বুঝে নিত ২২ গজের যাবতীয় হিসেব-নিকেশ, তোয়াক্কা করত না প্রতিপক্ষকে। রানের অগ্নিবর্ষণে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যেত বিপক্ষের যাবতীয় অস্মিতা। সে সৌরভ হলেও যা, গম্ভীর হলেও তাই। বিরাট কোহলি মানেই যেন ছিল রাগ, উষ্মার এক অবিরাম প্রতীক।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিরাট ক্রমশ বদলেছেন। রান আর রেকর্ডের এক একটা শৃঙ্গ পেরিয়ে তিনি যেন বোধি লাভ করেছেন। শান্ত হয়েছেন। হয়েছেন বলেই তাঁর চোখের কোনায় আজকাল কড়া চাহনি থাকে না, বদলে থাকে মিষ্ট হাসি। অক্লেশে তাই জড়িয়ে ধরেন গৌতম গম্ভীরকে। ভুলিয়ে দেন বিগত দশকের যাবতীয় বৈরিতা। মাঠের ভিতরের ছবিগুলো যেন দমকা বাতাসের মতো বলে দিয়ে যায়, এই বিরাট সেই বিরাট নয়। দিব্য হাসছেন, পক্ষ-বিপক্ষ ভেদাভেদ না করে মজা করছেন, হাসিঠাট্টায় মেতে আছেন। দেখলে নিশ্চিত মনে হবে, কোহলি বদলে গিয়েছেন একদম।
এত পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। সেই চেনা সমীকরণ ধরেই মেপে যাওয়া যাচ্ছিল বিরাট কোহলিকে। কিন্তু রবিবারের দহনক্লিষ্ট সন্ধ্যা দেখাল ‘কিং’ কোহলি আছেন স্বমেজাজেই। সেই চেনা রাগ, সেই আগুনখেকো মেজাজ। যে খরতাপে কলকাতার দহনজ্বালা নেহাতই শিশু, পুড়ে খাক হয়ে যেতে পারে মুখোমুখো দাঁড়ানো যে-কেউ। আসলে আরসিবি-কেকেআর ম্যাচ মানেই যেন বাড়তি কিছু। আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত সেসব বিষম বস্তুর আনাগোনা। আসলে তেলে-জলে যে মিলমিশ হয় না। বিরাট-জাগরণে সেটাই যেন প্রমাণিত।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিরাট ক্রমশ বদলেছেন। রান আর রেকর্ডের এক একটা শৃঙ্গ পেরিয়ে তিনি যেন বোধি লাভ করেছেন। শান্ত হয়েছেন। হয়েছেন বলেই তাঁর চোখের কোনায় আজকাল কড়া চাহনি থাকে না, বদলে থাকে মিষ্ট হাসি। অক্লেশে তাই জড়িয়ে ধরেন গৌতম গম্ভীরকে। ভুলিয়ে দেন বিগত দশকের যাবতীয় বৈরিতা। মাঠের ভিতরের ছবিগুলো যেন দমকা বাতাসের মতো বলে দিয়ে যায়, এই বিরাট সেই বিরাট নয়। দিব্য হাসছেন, পক্ষ-বিপক্ষ ভেদাভেদ না করে মজা করছেন, হাসিঠাট্টায় মেতে আছেন। দেখলে নিশ্চিত মনে হবে, কোহলি বদলে গিয়েছেন একদম।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
এ-জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য হর্ষিত রানারও। না, দীর্ঘদেহী নাইট বোলার উইকেটপ্রাপ্তিতে নতুন করে ফ্লাইং-কিস ছুঁড়ে তাল ঠোকেননি। বরং তার চেয়ে করেছেন ঢের বেশি কিছু। বারুদে আগুন সংযোজন করেছেন। পুরনো বিরাটকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটজনতাকে, একচান্সে। কোমর ছাপিয়ে যাওয়া তাঁর ওই ‘বিমার’ (ক্রিকেট আইন, আম্পায়াররা যাই বলুন) শুধু হতচকিত করে দেয়নি কোহলিকে, আউটের দক্ষিণদুয়ার দেখায়নি শুধু, পাশাপাশি ধক্ করে ধ্যানভগ্ন ঘটিয়েছে চিরচেনা ‘অ্যাংরি’ বিরাটের। তবু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হর্ষিতের ওপর রোষানল বর্ষিত হয়নি, তিনি তাঁর কাজ করেছেন। আর আম্পায়াররা করেছেন তাঁদের কাজ, ক্রিকেট আইন মেনে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: আম্পায়ার সেই নিঃস্ব প্রজাতি যারা ক্রিকেটকে শুধু দিল, পেল না কিছুই
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আর তারপর নন্দনকাননে যেটা ঘটেছে, সেটাই ম্যাচের ‘বটম লাইন’ (পরিশেষে কেকেআর জিতলেও)। বিরাট জেগেছেন। ২২ গজ ছাড়ার সময় যে ক্রোধের পাহাড় নিয়ে তেড়ে গেলেন দুই ফিল্ড আম্পায়ারের দিকে, যে ভঙ্গিমায় প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে বারবার ঘাড় বেঁকিয়ে রোষানলে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন আউট-যন্ত্রণার, কিংবা ক্লাবহাউসের সামনে আছাড় মারলেন বিশ্বস্ত ব্যাটটাকে, হাতের ঝটকায় উল্টে দিলেন বিন-বক্স, তাতে তৃপ্ত ইডেনে এই ক্রিকেট-সত্য প্রমাণিত, সেই চেনা বিরাট হারিয়ে যাননি। তিনি ফিরেছেন, স্বমহিমায়।
এবার সেই বিরাট-প্রত্যাবর্তনের যাপনপালা। হে ক্রিকেটপিয়াসু জনতা, আপনারা কী করবেন? বিরাটকে ‘অন্যায্য’ বিমার দেওয়া নিয়ে কাঠগড়ায় তুলবেন হর্ষিতকে? মুণ্ডুপাত করবেন জনৈক বিনোদ সেসান-অক্ষয় তত্রে নামক ফিল্ড আম্পায়ারদের কিংবা থার্ড আম্পায়ার মাইকেল গঘের? নাকি কৃতিত্ব দেবেন তাঁদের, চেনা বিরাটকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, উদযাপন করবেন ভিসুভিয়াসের মতো জেগে ওঠা কোহলির পরশুরামসুলভ ক্ষাত্রতেজের?
‘চয়েজ ইজ ইয়োর্স’!