আইপিএলের আবির্ভাব লগ্ন থেকে এই টুর্নামেন্টে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলছেন কোহলি। দিনলিপির হিসেবে পাক্কা সতেরো বছর। এই সতেরো বছরের দেশের সরকার বদলেছে, কোভিড নামক অতিমারি এসেছে, কিন্তু মহাকালের অমোঘসত্যের মতো ধ্রবক হয়ে রয়েছে বিরাটের আইপিএল-অভিসম্পাতটুকু। না, এই সতেরো বছরে একবারও আইপিএল ট্রফিটা জেতা হয়নি বিরাট কোহলির।
‘বাল্যপ্রণয়ে কোন অভিসম্পাত আছে।’ ক্রিকেট কী বস্তু, সাহিত্যসম্রাট বোধহয় তা চাক্ষুষ করেননি। আইপিএল তো সেখানে ‘সুদূর নীহারিকা’। ‘টাইম মেশিন’ কিংবা অন্তর্দৃষ্টি– দু’য়ের কোনওটির মাধ্যমে যদি দেখতে পেতেন, তাহলে ঋষি বঙ্কিম নিশ্চয় নিজবচনে পরিবর্তন ঘটিয়ে বলতেন– ‘বিরাটের আইপিএল জয়ে বুঝি কোনও অভিসম্পাত আছে।’
ক্রিকেট বলুন, ফুটবল, স্পোর্টসে সাফল্যই শেষ কথা। বিশ্বফুটবলের দিকে তাকান। দেখবেন, লিওনেল মেসির পৃথিবীটা কত সমধুর হয়ে গিয়েছে ২০২২-এর ১৮ ডিসেম্বর রাতের পর থেকে। তফাত গড়ে দিয়েছে ওই বিশ্বকাপ ট্রফিটা। যা এই গ্রহে তাঁর আছে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নেই। সাফল্যের মণিকাঞ্চন-যোগ পর্তুগিজ মহাতারকার কপালে কম জোটেনি, তবু বিশ্বকাপ যেন সেই বৈদূর্যমণি, যা শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক। সেই প্রাপ্তিযোগে মেসি পূর্ণশশী, রোনাল্ডো মেঘে ঢাকা তারা। আজও।
বিরাট কোহলিকেও সেই পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে। অন্তত আইপিএলের মানদণ্ডে তো বটেই। কেরিয়ারের প্রত্যুষ লগ্নে বিশ্বকাপ জয়ের রাজযোগ ছিল কোহলির কপালে। অধিনায়করূপে অনূর্ধ্ব পর্যায়ে বিশ্বসেরার শিরোপা জিতেছেন। তারপর ২০১১-র বিশ্বকাপ। সেই সাফল্যে বিরাট-মহিমা যত না প্রচারিত, তারচেয়ে বরং বেশি প্রতিষ্ঠিত সত্য– শচীন নামক ক্রিকেট-উপাসকের মোক্ষলাভ। তারপর সময় গড়িয়েছে। ক্রিকেট মহাকাশে ক্রমশ ব্যপ্তিলাভ করেছে কোহলির ক্রিকেট-ছায়া। বড় থেকে বিরাট হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে এশিয়া কাপের আসরেও সাফল্য এসেছে। কিন্তু পরিপূর্ণতা আসেনি। আসেনি কারণ বরাবরের মতো অধরা থেকেছে আইপিএলের শিরোপা জয়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বিশ্বকাপ জেতেননি। আরেক রোনাল্ডো ‘দ্য ফেনোমেনন’ কখনও জেতেননি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। দিয়েগো মারাদোনা নামক ফুটবল-বিস্ময় কখনও হাতে তুলে ধরেননি শতাব্দীপ্রাচীন কোপা আমেরিকার ট্রফিটা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতা হয়নি বর্গ-ম্যাকেনরোর। সাম্প্রাস সাফল্যের মধ্যগগনে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি রোলাঁ গারোঁয়। ইভান লেন্ডলের অধরা থেকে গিয়েছে ঐতিহ্যের উইম্বলডন। বিরাট, আপনার আইপিএল-অধ্যায় না হয় বিয়োগান্তকই হল, ক্ষতি কি!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আইপিএলের আবির্ভাব লগ্ন থেকে এই টুর্নামেন্টে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলছেন কোহলি। দিনলিপির হিসেবে পাক্কা সতেরো বছর। এই সতেরো বছরের দেশের সরকার বদলেছে, কোভিড নামক অতিমারি এসেছে, কিন্তু মহাকালের অমোঘসত্যের মতো ধ্রবক হয়ে রয়েছে বিরাটের আইপিএল-অভিসম্পাতটুকু। না, এই সতেরো বছরে একবারও আইপিএল ট্রফিটা জেতা হয়নি বিরাট কোহলির। একটিবারের জন্যও নয়। প্রতিবার নতুন উদ্যমের অলোকসামান্য বিচ্ছুরণ ঠিকরে বেরিয়েছে তাঁর ব্যাট থেকে। রেকর্ডের নতুন শিখর স্পর্শ করেছেন। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন বাইশ গজে। কিন্তু বছরের পর বছর ধ্রুবপদের মতো ফিরে ফিরে এসেছে নিদারুণ ব্যর্থতা, আরও কঠোর কঠিন হয়ে। প্রতিবার শূন্যতাকে বুকে জড়িয়ে সজলচক্ষে ওই সবুজ-রঙ্গমঞ্চ ত্যাগ করে আসতে হয়েছে বিরাট-রাজাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্তব্ধ-হৃদয়ে সেই নিষ্ক্রমণ দেখেছে কোহলি অনুরাগীরা। ট্রলের বিষকরবী ছুঁড়েছে বিরাট-বিদ্বেষীরা। সাক্ষী আইপিএলবিশ্ব।
পরিসংখ্যান বলছে, আইপিএলে এযাবৎ তিনবার ফাইনাল খেলেছে আরসিবি। ২০০৯, ২০১১ কিংবা ২০১৬– কোনওবারই ট্রফি জিততে পারেনি বেঙ্গালুরুর আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২০১৬-তে বিরাটের স্বপ্নের ফর্মকে সঙ্গী করেও না। এবারও সেই চেনা ছন্দেই ছিলেন কোহলি। আইপিএল গ্রহে তিনিই প্রথম বাসিন্দা, যাঁর নামের পাশে ৮০০০ প্লাস রান। হারের গ্লানিতে ঝুঁকে পড়া মাথায় ম্যাচ শেষেও যে কমলা-ক্যাপটা শোভা পাচ্ছিল বিরাটের, তা বলে দিয়ে যাচ্ছিল চলতি আইপিএলে ১৫ ম্যাচে ৭৪১ রান এসেছে কোহলির ব্যাট থেকে। তাঁর ধারেকাছে নেই কেউ। এমন বিক্রমের পরেও আইপিএল ট্রফি জয়ের স্বপ্নভঙ্গ ঘটা বিরাটের প্রাপ্য ছিল না। ম্যাচ শেষে নতমস্তকে উইকেট বেল ফেলে দেওয়া বিরাটের নিষ্ক্রমণ তাই বড্ড কষ্টদায়ক, হৃদয়বিদারক ডাগআউটে রুমালের আড়ালে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলা কোহলির সন্তপ্ত মুখাবয়ব। অথচ এক ম্যাচ আগেই চেন্নাই-জয় করে আবেগ-থমিত উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখা গিয়েছিল বিরাটকে। গ্যালারি দেখেছিল বিরাট-পত্নী অনুষ্কার কান্না। টানা জয়ে ট্রফি জয়ের স্বপ্নটা যখন দানা বাঁধতে শুরু করেছিল একটু একটু করে তখন সেই স্বপ্নউড়ানের এমন করুণ অবতরণ ঘটবে, তা কে জানত!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: চুনী-পিকের মতো ভারতীয় ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছে সুনীল
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
তাই বাস্তবের ধুলোমাটি ঝেড়ে স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই, বিরাট আদপে রক্তমাংসের একজন মানুষ। আবেগবিবর্জিত ক্রিকেটক্ষত্রিয় নন। মাঠে তাঁর আগ্রাসন যতটা মায়াবী, অসহায় মুখটাও ততটাই বাস্তবধর্মী। কি বা করবেন বিরাট? ক্রিকেট ব্যক্তিপূজার নৈবেদ্য গ্রহণ করে বটে, কিন্তু আদপে খেলাটা তো ‘টিমগেম’। সেই খেলায় বিরাট সম্মিলিত আরসিবির চেয়ে অনেক এগিয়ে সঞ্জু-যশস্বীদের রাজস্থান। তাই সাফল্যের তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও বিষাদসিন্ধু পান করা ছাড়া উপায় নেই কোহলির। ‘নেমেসিস’ ছাড়া একে আর কি বা বলবেন বিরাট?
ইতিহাস সাক্ষী, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বিশ্বকাপ জেতেননি। আরেক রোনাল্ডো ‘দ্য ফেনোমেনন’ কখনও জেতেননি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। দিয়েগো মারাদোনা নামক ফুটবল-বিস্ময় কখনও হাতে তুলে ধরেননি শতাব্দীপ্রাচীন কোপা আমেরিকার ট্রফিটা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতা হয়নি বর্গ-ম্যাকেনরোর। সাম্প্রাস সাফল্যের মধ্যগগনে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি রোলাঁ গারোঁয়। ইভান লেন্ডলের অধরা থেকে গিয়েছে ঐতিহ্যের উইম্বলডন। বিরাট, আপনার আইপিএল-অধ্যায় না হয় বিয়োগান্তকই হল, ক্ষতি কি!
বীরভূমের লেখক-গবেষকেরা মনে করেন, বীরভূমের লাভপুরের কাছে দেবী ফুল্লরাতেই সেই পীঠের অধিষ্ঠান আবার বর্ধমানের গবেষকেরা দাবি করেন, ঈশানী নদীর বাঁকে বর্ধমানের দক্ষিণডিহিতেই দেবীর ওষ্ঠপাত ঘটেছিল। তবে ভক্তদের কাছে দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র এবং অলৌকিক শক্তি দুই জায়গাতেই বর্তমান।