৭ আমাদের ভরসার পরশপাথর। ক্রিকেট দেখতে বসে ভারতীয়রা সাত-পাঁচ না ভেবে, শুধু ৭ ভেবেই ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন জয়কে। নিউমারোলজিতে বিশ্বাস না করা লোকজনও, বিশ্বাস করুন, ওই ৭ মানেই জানেন, ভারতের জয়ের সম্ভাবনা যখন ২০ শতাংশ, আর বিপক্ষ দলের ৮০, তখনও আশা হারানো অনুচিত। বিপদের বিষ-সমুদ্র পার করা লোকটা ক্রিজে এখনও আছে যে, এক মহেন্দ্র সিং ধোনি আছেন যে! ভারতবর্ষ এমনিও সংখ্যার ব্যাপারে যথেষ্ট সংবেদনশীল। ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট শূন্য (০) আবিষ্কার করেছিলেন। ৭ আমাদের আবিষ্কার নয় বটে, কিন্তু পুনরাবিষ্কার বলেও তো একটা কথা আছে। কী জানেন, এক-একটা সংখ্যার সঙ্গে আসলে হাজারো স্মৃতি মিশে থাকে। থাকে দুঃখ, আনন্দোল্লাস, স্বপ্ন ও স্বপ্ন হারানোর বেদনা। ভারতের কাছে সাত নম্বর তাই।
‘দোও ওয়াস নট বর্ন ফর ডেথ, ইমমর্ট্যাল বার্ড!’ অবিনশ্বরের বার্তা দিয়ে সেই কবেই নাইটেঙ্গলকে অমরত্ব দান করে গিয়েছেন জন কিটস। মহেন্দ্র সিং ধোনি? তিনি কি কিটসের সেই নাইটেঙ্গলের সঙ্গে সমান সাযুজ্যশীল? আলবাত, বেশক!
ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনি সাফল্যের চিরসবুজ দ্যোতক। ক্রিকেটের রঙ্গমঞ্চে পক্ষ-বিপক্ষ ক্ষত্রকুল থেকে সসম্মান-সম্ভ্রম তিনি লাভ করেছেন, বিনিময়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন আরও বেশি কিছু। সময়ের দর্পণে তা চিরস্থায়ী, অমলিন জনতার হৃদয়ে। হিমালয়সদৃশ সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেছেন যত, ক্রিকেট গ্রহে অমরত্বের দিকে অগ্রসর হয়েছেন ‘এমএস’ তত। অনির্বাণের সৌরভ লেগেছে তাঁর সিংহহৃদয়ে, জার্সির পিঠে লেখা ওই ৭ নম্বরে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: ২০২৩-এর আগে আর কোনও ক্রিকেট বিশ্বকাপ এমন ‘রাজনৈতিক’ ছিল না
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
৭ আমাদের ভরসার পরশপাথর। ক্রিকেট দেখতে বসে ভারতীয়রা সাত-পাঁচ না ভেবে, শুধু ৭ ভেবেই ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন জয়কে। নিউমারোলজিতে বিশ্বাস না করা লোকজনও, বিশ্বাস করুন, ওই ৭ মানেই জানেন, ভারতের জয়ের সম্ভাবনা যখন ২০ শতাংশ, আর বিপক্ষ দলের ৮০, তখনও আশা হারানো অনুচিত। বিপদের বিষ-সমুদ্র পার করা লোকটা ক্রিজে এখনও আছে যে, এক মহেন্দ্র সিং ধোনি আছেন যে! ভারতবর্ষ এমনিও সংখ্যার ব্যাপারে যথেষ্ট সংবেদনশীল। ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট শূন্য (০) আবিষ্কার করেছিলেন। ৭ আমাদের আবিষ্কার নয় বটে, কিন্তু পুনরাবিষ্কার বলেও তো একটা কথা আছে। কী জানেন, এক-একটা সংখ্যার সঙ্গে আসলে হাজারো স্মৃতি মিশে থাকে। থাকে দুঃখ, আনন্দোল্লাস, স্বপ্ন ও স্বপ্ন হারানোর বেদনা। ভারতের কাছে সাত নম্বর তাই। স্বপ্ন-বেদনার এক পূর্ণিমা ভেলা। যে স্বল্প পরিসর ভেলায় বছরে একবার এখনও চেপেচুপে বসে সমগ্র দেশ, আইপিএল এলে। রূপকথার সাত-সমুদ্দুরের মতো এমএস ধোনিও যে সাত দিয়ে শুরু হয়!
বিশ্বকাপজয়ী ভারত অধিনায়কের সেই ৭ নম্বর জার্সি ভারতীয় বোর্ডের স্বীকৃতিদানে অমরত্বের বেদিতে আসন আভ করেছে। ভবিষ্যতে ভারতীয় দলের কেউ আর গায়ে চাপাবেন না ধোনির ৭ নম্বর, এক অকুণ্ঠ সম্মাননায়। আসলে ধোনি আর সাত নম্বর যে একে-অপরের পরিপূরক। এই মহাবিশ্বের মহাকালের মাঝে যেমন সাত সমুদ্র, সাত মহাদেশের সহাবস্থান। নিশিপদ্মের মতো যেমন রাতের আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডলের অবলোকন। যেমন করে মানবসভ্যতার বুকে সপ্তম আশ্চর্যের চিরস্থায়িত্ব।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: পা নিয়ে যত পাঁয়তারা
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ক্রিকেটবিশ্বে ধোনির ৭ নম্বর জার্সি তারই সমতুল্য। যে জার্সি স্বপ্নের দীপ জ্বেলেছিল একদা ভারতীয় ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে। বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপা জয়ের সঙ্গে তাঁর ফিনিশার হয়ে ওঠা, ভারতবাসীর কাছে ছিল দীপ্ত বিশ্বাসের মতো। যেখানে ‘আনহোনি কো হোনি’ করা ছিল ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর মজ্জাগত। স্থিতধী চিত্তে কত যে বৈতরণি ‘থালা’ পার করেছেন, তা জীবনখাতার হিসাবের ঊর্ধ্বে। আইপিএলও সেই মহাত্মার স্বপ্নযাত্রার সাক্ষী থেকেছে মুগ্ধনেত্রে।
কল্পতরুর মতোই ধোনি নিজের ক্রিকেট প্রাচুর্যের লয়-ক্ষয় ঘটিয়েছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন কি কিছু? নামমাত্র। ২০১৯-এ বিশ্বকাপ নিষ্ক্রমণের সঙ্গে ভারতীয় জার্সিকে বিদায় জানিয়েছেন এমএসডি। তার চার বছর পেরিয়ে ২০২৩-এর উপান্তে ধোনির ঘামরক্ত সিক্ত ৭ নম্বর জার্সিকে অবসরের স্বীকৃতি দানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে ভারতীয় বোর্ড। সেটাই বড় কথা!
আসলে অনালোচিত ছোট্ট শহর থেকে যাঁর উত্থান, টিকিট পরীক্ষকের নিশ্চিত জীবন ছেড়ে ক্রিকেটের গাণ্ডীব হাতে তুলে নেওয়া, তিনি এসবের প্রত্যাশামুখী হবেন না, ঋষিসুলভ ঔদার্য নিয়ে নিজের যাত্রাপথ রচনা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। বোর্ড প্রদত্ত সম্মানের তোয়াক্কা না করে আগে, বহু আগে লিখবেন স্ব-রচিত অমরত্বের কাহিনি, তাঁর পিঠের সাত নম্বর জায়গা করে নেবে জনমানসের রাজসিংহাসনে। নিজ গুণে, নিজ ক্ষমতায়, নিজ জ্যোতিতে। আকাশের সপ্তর্ষি মণ্ডলের মতো তিনিও যে এক রাজা, জাগতিক মায়া-মোহের আকাশ ছাড়িয়ে ওঠা এক ঋষিসুলভ রাজা।