এক বাঙালি বাড়ি আসবে বলে দু’রকমের মাছ রেঁধেছিলেন নানা পাটেকর
Published by: Robbar Digital
Posted on: June 10, 2024 8:41 pm
Updated: June 10, 2024 8:41 pm
নানা একদিন ডেকেছিলেন বাড়িতে। গিয়েছিলাম। স্ক্রিপ্ট নিয়েই আলোচনা। একজন বিখ্যাত পরিচালকের নাম বললেন নানা। তিনি খানিক আগেই নানার বাড়িতে ছিলেন। আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, আপনি তো তাঁর ছবিতে অভিনয় করেছেন, দেখেছি।’ নানা তখন খুব মজার একটা গল্প বললেন। বললেন, ‘‘এসেছিল, আমরা আলোচনাও করছিলাম, একটা সময় বললাম, ‘চা খাবে?’ ও বলল, ‘হ্যাঁ।’ আমি ওকে রান্নাঘর কোথায় বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, ‘যাও তো, দুটো চা করে নিয়ে এসো তো দেখি।’
সঞ্জীত চৌধুরী
১৭.
২০০৬ সাল। ক’দিন ধরে প্রীতীশ নন্দী কমিউনিকেশন (পিএনসি) মালিক বা সিইও-এর সঙ্গে আড্ডা চলছিল। এই নানাবিধ আড্ডার মধ্যে আমার ছবি করাটাও ছিল একটা বিষয়। ‘পিএনসি’ ততদিনে বেশ কিছু ছবি করে ফেলেছে। তার মধ্যে ‘কাঁটে’– অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্ত, সুনীল শেট্টিরা। এছাড়াও ‘হাজারো খোয়াইশ’, ‘চামেলি’, ‘সুর’-এর মতো জনপ্রিয় কিছু ছবি। প্রীতীশকে একটা স্ক্রিপ্ট শোনাচ্ছিলাম আমি। গল্পটা ছিল একজন পুরুষকে কেন্দ্র করে। প্রীতীশ জানতে চাইল, ‘লোকটা কে?’ আমি বললাম, ‘লিখেছি শুধু, কাস্টটা এখনও ভেবে উঠিনি।’ প্রীতীশ বলল, ‘নানা?’ আমি বললাম, ‘হতেই পারে!’
প্রীতীশ নানাকে ফোন করল তক্ষুনি! ফোনে সামান্য কথাবার্তার পর জানাল, নানা তখন মুম্বইতে নেই, রয়েছেন পুনেতে। পরের দিনই গেলাম সেখানে, নানার সঙ্গে দেখা করতে। প্রীতীশ বলেছিল, নানার বাড়ি ফিল্ম ইনস্টিটিউটের কাছেই, লাগোয়া বাড়িই বলা চলে। তাই খুঁজে পেতে মোটেই অসুবিধে হয়নি।
আমার অদ্ভুত লাগল, নানা কথা বলছিলেন একেবারে ডায়লগ বলার মতো করে। যেমনটা সিনেমায় এতকাল দেখে এসেছি। তার মানে, সিনেমার জন্য নানা নিজেকে বদলে নেননি। এভাবেই তিনি কথা বলেন!
‘পিএনসি থেকে মেল করা মেটিরিয়ালগুলো পড়েছেন?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘‘না। তুমি বাঙালি শুনে আজ দু’রকম মাছ রান্না করলাম।’’ আমরা লাঞ্চ খেলাম। স্ক্রিপ্টটা শোনালাম। গল্পটা নিয়ে আলোচনা হল। স্টোরি আউটলাইন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ছিল। নানা জিনিস যোগ-বিয়োগ করা চলল গল্প জুড়ে।
বিকেলের দিকে, দেখলাম, নানা বসে আছেন চুপ করে। আকাশ দেখছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কি ছবি তুলতে পারি?’ নানা ‘হ্যাঁ’ বললেন। আমি ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে লাগলাম। তখন আমি প্রায় সবসময়ই ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতাম।
পরে, নানার সঙ্গে মুম্বইতেও একাধিকবার দেখা করেছি। অনেকবার কথা বলেছি। একটা সময় বুঝতে পারলাম, আমার এই ছবিটা আর হবে না, আমিও পুরোদস্তুর মাথা গলিয়ে দিয়েছি বিজ্ঞাপনের কাজে। বেজায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি সেসব নিয়ে। ফলে, আর যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি।’
কিন্তু শুধু ওই একবারই না। নানা আরও একদিন ডেকেছিলেন বাড়িতে। গিয়েছিলাম। আলোচনা ছিল স্ক্রিপ্ট নিয়েই। একজন বিখ্যাত পরিচালকের নাম বললেন নানা। তিনি খানিক আগেই নাকি নানার বাড়িতে ছিলেন।
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, আপনি তো তাঁর ছবিতে অভিনয় করেছেন, দেখেছি।’
নানা তখন খুব মজার একটা গল্প বললেন। বললেন, ‘‘এসেছিল, আমরা আলোচনাও করছিলাম, একটা সময় বললাম, ‘চা খাবে?’ ও বলল, ‘হ্যাঁ।’ আমি ওকে রান্নাঘর কোথায় বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, ‘যাও তো, দুটো চা করে নিয়ে এসো তো দেখি।’
‘তারপর, চা খেলেন?’ আমি জানতে চাইলাম।
‘আরে! সে বলল যে, ‘আমি তো চা বানাতে পারি না।’
‘তখন?’
‘ওকে খুব বকলাম। বললাম, তোমার মাকে ফোন করো।’
‘তারপর? মায়ের সঙ্গে কথা বললেন?’
……………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………….
‘ও তখন বলল, না, মানে ওই… শেষমেশ খুব কিন্তু কিন্তু করে ওর মাকে ফোন করল।’
‘আমি ফোন ধরে বললাম– তোমার ছেলে ডিরেক্টর, এত ভালো ছবি বানায়, এত চমৎকার লোক, কিন্তু তুমি ওকে ছবিই বানাতে শিখিয়েছ, চা বানাতে শেখাওনি! তাহলে আর কী হল!’