পুরুষের উপেক্ষা পেরিয়েই ফুলনের আগুন উত্তর-মধ্য ভারতের পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই এক নতুন সময়ের বার্তাবহ। উত্তর কলকাতার কোনও কোনও পাড়ার সবচেয়ে দাপুটে মহিলাকে পাড়ার লোকে ডাকত ‘ফুলন দেবী’ নামে। ‘মেয়ে তো নয়, যেন ফুলন দেবী’ গোছের কথাবার্তা কান পাতলেই শোনা যায় এখনও, তার মধ্যে রসিকতা বা তাচ্ছিল্য যদি থেকেও থাকে, তাতেও ফুলনের উত্থানের সামাজিক তাৎপর্য বদলায় না। তাই, ১৯৮৭ সালে যখন কেতন মেহতার ‘মির্চ মসালা’ মুক্তি পেল, এবং তার ক্লাইম্যাক্সে ধর্ষকামী সুবেদারকে (নাসিরুদ্দিন শাহ) সোনবাই (স্মিতা পাতিল) ও অন্য শ্রমিক মেয়েরা লঙ্কার গুঁড়ো ছুড়ে প্রতিরোধ করল, তখন ‘আক্রোশ’ দেখে ভারাক্রান্ত হওয়া সেইসব দর্শক একাংশ স্বস্তিই পেল।
৩১.
স্বাধীন ভারতের নতুন দিনের সিনেমা থেকে ভারত সরকার-পোষিত, মূলত এনএফডিসি বা ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা যে চলচ্চিত্রধারা, যাকে ‘ভারতীয় নবতরঙ্গ’ বলছি আমরা, সেই যাত্রাপথ সম্পর্কে একটি দীর্ঘ লেখা লিখেছিলেন চিদানন্দ দাশগুপ্ত, ‘ফর্ম অ্যান্ড কনটেন্ট’ শিরোলেখে। সে-লেখায় তাঁর একটি মন্তব্য উল্লেখ্য। চিদানন্দ বলছেন, নব্য ভারতীয় ছবি মূলত সংবিধানে উল্লিখিত মূল্যবোধের অনুসারী, বাণিজ্যিক, মূলধারার ছবি যা নয়। একথা ‘নয়া দৌড়’, ‘মাদার ইন্ডিয়া’-র ক্ষেত্রে যতটা সত্য, ভারতীয় নবতরঙ্গের ক্ষেত্রে ততটা কি? সাতের দশক জুড়ে যে প্রতিশোধের আখ্যানসূত্র নির্মিত হয়েছে মূলধারায়, বা যে ভিজিল্যান্টে সংস্কৃতি চারিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে ভারতীয় নবতরঙ্গের প্রতিরোধী রাজনৈতিকতার যে তফাত সূচিত হয়েছিল, তার মধ্যে সাংবিধানিক মূল্যবোধের সেই উদযাপন ছিল কি? চিদানন্দ বলছেন, আইন হাতে তুলে নেওয়ার যে সংস্কৃতি তথাকথিত মূলধারার ছবিতে বারবার উঠে এসেছে, তার সঙ্গে সমান্তরালেই চলেছে তথাকথিত অন্যধারার গতিপথ। একই সঙ্গে কুসংস্কার, নেশা ও হিংসার খুল্লমখুল্লা সমর্থন জুগিয়েছে মূলস্রোতের ভারতীয় ছবি, সেকথাও লিখেছেন চিদানন্দ। ভারতীয় নিউ ওয়েভ রাজনৈতিকভাবে বামপন্থী ঝোঁকের হওয়ায়, তা হয়তো স্বাধীনতা-উত্তর সিনেমার ‘মরালিটি’ থেকে সরে এসেছে, ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রদ্রোহও তার ভাষ্য হয়ে উঠল। আবার মূলধারার সঙ্গে সামাজিক-রাজনৈতিক অন্যায়ের পরিণতির প্রশ্নে একটা দূরত্ব ছিলই তার।
এই প্রসঙ্গে একটু অন্যমার্গের একটি ছবির কথা বলতেই হয়, ১৯৮৩ সালের ‘জানে ভি দো ইয়ারো’। কুন্দন শাহর এই রাজনৈতিক কমেডি নিউ ওয়েভ ও মূলধারার মধ্যে সূত্রধরের কাজ করেছিল। রামরথযাত্রা শুরু হওয়ার কিছু আগেই সেই ছবিতে হিন্দু ধর্ম নিয়ে যে তামাশা, তা সাবলীলভাবেই পৌঁছেছিল দর্শকের কাছে। আন্তোনিওনি-র ‘ব্লো আপ’-এর সঙ্গে এই ছবি যেন খোলা চিঠিতে কথোপকথন। প্রতিরোধের ছবির বিপরীতে এই ছবি যে স্যাটায়ারের জন্ম দিয়েছিল, তা অভূতপূর্ব! বলিউডের ধারকাছ না মাড়ানো, এমনকী, নিউ ওয়েভের সঙ্গেও তেমন ভাল বোঝাপড়া না থাকা এক বামপন্থী নেতা এই ছবি দেখেছিলেন দু’বার, নিউ এম্পায়ারে। এই আটের দশকেই ‘থোরাসা রোমানি না হো যায়ে’ বা ‘পুষ্পক’-এর মতো কমেডিও এই দুই ধারার মধ্যস্থতা করল, যার পোশাকি নাম ছিল ‘মিডল রোড’।
১৯৮০ সালে গোবিন্দ নিহালনির ‘আক্রোশ’ মুক্তি পাওয়ার পরে একাংশের বামমনস্ক দর্শক আলোড়িত হয়েছিল। সাতের দশক জুড়ে মৃণাল সেনের মতো পরিচালকদের ছবিতে যে দ্রোহকালের প্রতিবিম্ব ছিল, তার অভিঘাত ছিল অন্যতর। ‘আক্রোশ’ এক অন্য চেতনা আনল বাংলার অন্যধারার দর্শকমানসে। দিনমজুর লহন্যা ভিখুর (ওম পুরী) নিয়তি তাকে শেষত অপরাধী করে তুলল বটে, কিন্তু স্ত্রী নাগির (স্মিতা পাতিল) ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তি সে দিতে পারল না জুলুমবাজ মালিককে। বরং সে হত্যা করল তার বোনকে, ওই একই নিয়তি থেকে বাঁচানোর জন্য, বাবার শেষকৃত্যর জন্য শ্মশানে দাঁড়িয়ে। মিথ্যে মামলায় ফাঁসা ভিখুর হয়ে লড়া উকিল ভাস্কর কুলকার্নি (নাসিরুদ্দিন শাহ) এই ঘটনাক্রমের সাক্ষী রইল মূলত। দলিত সংকট তখনও স্পষ্ট নয় বঙ্গজনের কাছে। কিন্তু নারী নির্যাতনের অন্ধকারটা সেই ছবিতে এতটাই দগদগে, শোষক-শোষিত দ্বান্দ্বিকতা এতটাই চোখে দেখার মতো স্পষ্ট, তা ‘ইন্টারভিউ’ বা ‘পদাতিক’-এর মতো তাত্ত্বিক কোনও ভাবনা-পরিসরের জন্ম দেয় না, বরং বাস্তবতার করাল অবয়বটা নিয়েই ভাবিয়ে তোলে। এই ছবিতে ভারতের সমষ্টিগত অচেতনের নায়ক নেই, যে উদ্ধার করবে নায়িকাকে। এই ছবির নায়কের কোনও হ্যামারশিয়াও নেই। ‘সুবর্ণরেখা’-র সীতার মতোই এই ছবিতে আত্মঘাতের যন্ত্রণাই আদত প্রতিরোধ। কিন্তু ছবিফেরত কফি হাউসের আড্ডায় প্রশ্ন উঠল, ‘ভিখুর যখন হাতিয়ার ছিল, যখন ও শেষমেশ খুনটাই করল, তখন কেন নিজের বোনকে মারল? আসল ক্রিমিনালকে কেন নয়?’
এই যে প্রতিশোধস্পৃহা, এর জন্ম তো আদতে দিয়েছে মূলধারাই। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাও তো শোষিতের অসহায়তায় শেষ হয়ে যেতে পারে না। কিন্তু উৎপাদন বাড়ানোর মতো কোনও সমাধান নয়, শ্যাম বেনেগালের ‘অঙ্কুর’-এর শেষ দৃশ্যে জানলায় ইট ছুড়ে বাচ্চাটির পালানোর যে দৃশ্য, তার মতো প্রতিরোধের বয়ানে শেষ হবে ছবি, এমনটাও তো সম্ভব। ‘আক্রোশ’ সেই সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতায় শেষ হয় না। কিন্তু এই ছবির ঠিক এক বছর পর দেশ কেঁপে উঠল যে ঘটনায়, তা এই ছবির ক্লাইম্যাক্সের একেবারে বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে। পুরুষ ডাকাতদের মুক্তাঞ্চল যে চম্বল, যেখানে যাপনের অন্য নাম ছিল ত্রাস, সেখানে নয়া দস্যুরানি হয়ে উঠলেন নিম্নবর্গের ফুলন মালহা, ১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের বেহমাইতে । উচ্চবর্গের বাবুরাম তাঁকে রক্ষিতা করে রাখতে চেয়েছিল। সেখান থেকে গুর্জররা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়, এবং তারপর ২২ জন মিলে ধর্ষণ করে ফুলনকে। তার প্রতিশোধ ফুলন নেন সেই ২২ জনকে হত্যা করে, সম্পূর্ণ নিজের বাহিনী বানিয়ে, কোনও পুরুষ ডাকাতের সাহায্য ছাড়াই। হয়ে ওঠেন ফুলন দেবী, অচিরেই। সেসময় ‘পরিবর্তন’ সংবাদপত্রর হয়ে দিব্যজ্যোতি বসু ও সৌগত রায় বর্মন যান কলকাতা থেকে, ১৯৮৩ সালে, ফুলন দেবীর সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে। ফুলন প্রথমেই গিয়েছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ মালখান সিংয়ের থেকে সাহায্য নিতে। মালখান তাঁকে ফিরিয়ে দেন রূঢ়ভাবে। গোয়ালিয়র জেলে যখন প্রথমে মালখান সিংয়ের সঙ্গে দেখা হয় কলকাতার দুই সাংবাদিকের, তিনি হেসে উড়িয়ে দেন ফুলন দেবীর প্রতাপ। ‘ও লেড়কি বহুত ফালতু হ্যায়। ক্যায়সে চম্বল কি রানি বন গিয়া কৌন জানে,’ এই ছিল তাঁর উক্তি। তারপর ফুলন দেবীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে তিনি যখন জানতে পারেন, তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে এসেছে দু’জন সাংবাদিক, তখন তাঁর সপাট, ধারালো উত্তর ছিল, ‘ম্যায় ক্যায়া রেন্ডি হুঁ? মেরে বারে মে গরম গরম কাহানি লিখোগে?’ (তথ্যসূত্র: চম্বল লাইভ, সৌগত রায় বর্মন।)
পুরুষের উপেক্ষা পেরিয়েই ফুলনের এই আগুন উত্তর-মধ্য ভারতের পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই এক নতুন সময়ের বার্তাবহ। যদিও পরবর্তীতে ফুলনের রাজনীতিতে আসা এবং অজানিত দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত হওয়ার পর সেই অধ্যায়ে দাঁড়ি পড়ে। কিন্তু ফুলনের এই আলোড়ন ফেলা ঘটনার প্রভাব ছিল মারাত্মক। উত্তর কলকাতার কোনও কোনও পাড়ার সবচেয়ে দাপুটে মহিলাকে পাড়ার লোকে ডাকত ‘ফুলন দেবী’ নামে। ‘মেয়ে তো নয়, যেন ফুলন দেবী’ গোছের কথাবার্তা কান পাতলেই শোনা যায় এখনও, তার মধ্যে আদতে রসিকতা বা তাচ্ছিল্য যদি থেকেও থাকে, তাতেও ফুলনের উত্থানের সামাজিক তাৎপর্য বদলায় না। আর তাই, ১৯৮৭ সালে যখন কেতন মেহতার ‘মির্চ মসালা’ মুক্তি পেল, এবং তার ক্লাইম্যাক্সে ধর্ষকামী সুবেদারকে (নাসিরুদ্দিন শাহ) সোনবাই (স্মিতা পাতিল) ও অন্য শ্রমিক মেয়েরা লঙ্কার গুঁড়ো ছুড়ে প্রতিরোধ করল, তখন ‘আক্রোশ’ দেখে ভারাক্রান্ত হওয়া সেইসব দর্শকের একাংশ স্বস্তিই পেল। ‘মির্চ মসালা’ যদিও সেই মিডল রোডের আওতাতেই পড়ল সমালোচকদের বক্তব্যমাফিক, কিন্তু এই ছবির প্রতিটি পরতই নবতরঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলে।
এই প্রশ্ন থেকেই এক অন্যতর প্রস্থানে যাওয়া যায়। ১৯৮৯ সালের ‘ফিল্মফেয়ার’ পত্রিকার নভেম্বর সংখ্যার শিরোনাম ছিল, ‘রেইন (Reign) অফ সেক্স স্টারস’। তার ভূমিকায় লেখা হয়েছিল, ভারতীয় দর্শকের কাছে ‘সেক্স’ এখন আর কোনও অপরিচিত বিষয় নয়। কিন্তু ‘বাউন্সি ওয়াক’, ‘ফর্টি ইঞ্চ বাস্টলাইন’, ‘এক্সপোজড থাই’ একসময় পর্যন্ত ‘ভ্যাম্পিশ’ বা খলনায়িকাসুলভ বলে বিবেচিত হত। সময় বদলাল শ্রীদেবী, নলিনী জয়ন্ত, মুমতাজ থেকে রেখার হাত ধরে। মধুবালা থেকে সাধনা, নূতন বা মলিনা দেবীর সাহসী হওয়া যেখানে ব্যতিক্রম ছিল তাঁদের ইমেজের নিরিখে। শর্মিলা ঠাকুর, জিনাতরা তা বদলেছিলেন। শ্রীদেবী ছাড়াও, ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘তেজাব’ দেখল যারা, তাদের কাছে তথাকথিত সৌন্দর্য ও যৌন আবেদনের অভিধানে ‘মাধুরী দীক্ষিত’ নামটাও প্রবেশ করল। ফিল্মফেয়ারের ওই সংখ্যাতেই ‘ইয়েস্টারডে টুডে’ শিরোনামে সেই পরিবর্তন দেখানো হল। একই সঙ্গে নায়িকাদের স্বল্পবাসকে এই সংখ্যায় চেনানো হচ্ছে ‘ব্র্যান্ড নুড’ নামে। তবে সবচেয়ে আগ্রহব্যঞ্জক যা, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতী পুরুষদের প্রশ্ন করা হচ্ছে, কোন কোন নায়িকাকে তাঁরা ডেট করতে চান। উত্তরে মকবুল ফিদা হুসেন প্রাচীন নায়িকা যমুনার পাশাপাশি নামোল্লেখ করছেন শ্রীদেবীর। বলছেন, ‘শ্রীদেবী তো কামাল কর রহি হ্যায়।’ নিজের স্টুডিওতে ‘ডেট’-এও ডাকছেন তাঁকে। আবার অবসরপ্রাপ্ত জাস্টিস ভক্তভর লেন্টিন বলছেন দেবিকা রানির কথা। ‘আই থিংক উই উইল স্টপ অ্যাট দ্যাট’, ঠিক এর পরের মন্তব্য। এক সময়ের দুঁদে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা দত্তা সামন্ত বলছেন, স্মিতা পাতিল। সঙ্গে তাঁর বিষণ্ণ উক্তি, ‘ডেট-ভেট ছোড়ো। আব ও নেহি রহা, কেয়া বোলে তুমকো?’ বিশ্বজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট টিমের সদস্য সন্দীপ পাটিল বলছেন, রেখাকে তিনি ডেট করতে চাইতেন, এখন (পত্রিকা প্রকাশকালে) ভয় পান। ওঁর এই আতঙ্কের কারণ যদিও স্পষ্ট নয়। আবার হাজি মস্তানের সহচর করিম লালা, যাঁর সঙ্গে নব্য মাফিয়া ও তখন মুম্বইয়ের নিচতলার একচ্ছত্র শাসক হয়ে ওঠা দাউদ ইব্রাহিমের দলের সংঘর্ষে উত্তাল বাণিজ্যনগরী, তাঁর বক্তব্য, ওয়াহিদা রহমানকে তিনি বাড়িতে ডেকে চারকোলের থালায় পাঠানি সুখাদ্য রেঁধে খাওয়াতে চান। অনিল কাপুর আবার সোফিয়া লরেনের নাম বলছেন, আমজাদ খান নিজের মা ছাড়া কারও কথা ভাবতে চান না, ঋষি কাপুর আবার সোজা দ্য ভিঞ্চি-র মোনালিসাকে স্বপ্নের নায়িকা বলে দাবি করছেন।
একদিকে নারীর লড়াকু জাগরণ, অন্যদিকে যৌন স্বাধীনতার বয়ান তৈরি হওয়ার মধ্যে মেল গেজ বা পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায়, কীভাবে বদলাচ্ছে, এই বয়ানগুলো তার পরিচায়ক। অনিল কাপুর, ঋষি কাপুররা পরিষ্কার মিথ্যে বলছেন, কারণ তখন একজন উঠতি, একজন সুপ্রতিষ্ঠিত তারকা। এই নানা বদলের মধ্যে নব্বই চলে এসেছিল। বিশ্বায়ন কড়া নাড়ছিল দরজায়। গ্লাসনস্ত-পেরেস্ত্রোইকার ছোঁয়াচে বদলাচ্ছিল সোভিয়েত, অবশেষে সাত দশকের সংঘ ভাঙল। টলে গেল বিশ্বব্যবস্থা। ১৯৯১ সালে ভারতে গ্যাট চুক্তি সই হল। ‘৯৩ সালের এপ্রিল মাসে ‘স্টার অ্যান্ড স্টাইল’-এর একটি সংখ্যায় পূজা ভাট, অনু আগরওয়ালদের মতো নায়িকাদের বলা হচ্ছে, ‘বোহেমিয়ান বেবস’, ‘কুল চার্মার্স’, এবং বলা হচ্ছে, ‘দে রিফিউজ টু বি এক্সপ্লয়টেড’। অনু আগরওয়াল একথাও বলছেন, আমার জীবনে অনেকেই ‘স্ক্যান্ডালাস’ অনেক কিছু খুঁজে পান, কিন্তু আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমি নিজের টার্মসে বাঁচব। এই মুক্ত চেতনার পাশাপাশিই কিন্তু ওই সংখ্যার প্রচ্ছদকাহিনি দিব্যা ভারতীর রহস্যজনক মৃত্যু, অনেকেরই সন্দেহ, যার মূলে ছিল দাউদ ইব্রাহিম, যার কাছে নাকি ততদিনে নাড়া বাঁধা হয়ে গেছে বলিউডের। প্রসঙ্গত, এই ‘৯৩ সালেই কুখ্যাত মুম্বই বিস্ফোরণ, যদিও সে কিসসায় পরে আসা যাবে।
আর ঠিক এর পরের বছর শেখর কাপুর মালা সেনের সমনামী বই থেকে বানালেন ফুলন দেবীর বায়োপিক ‘ব্যান্ডিট কুইন’, নামচরিত্রে হাড়কাঁপানো অভিনয় করলেন সীমা বিশ্বাস, বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলল সেই ছবি। এনএফডিসি জমানা ফুরিয়েছে ততদিনে, এই ছবি নব্বই পরবর্তী অন্যধারার বলিউডের অংশ হয়ে উঠল, যা নিউ ওয়েভের উত্তরাধিকার বহন করে হয়তো, কিন্তু ভাষায় বা আঙ্গিকে নয়। ফুলন দেবী তখনও জীবিত।
…পড়ুন জনতা সিনেমাহল-এর অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ২৯। ‘ক্যায়ামত’ না আসুক, বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ঠিক বুঝেছে এসটিডি বুথ, একা অ্যান্টেনা
পর্ব ২৮। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের দিন জনশূন্য কলকাতায় পকেটমারি
পর্ব ২৭। মাস্টারমশাইরা কি আজও কিচ্ছু না দেখেই থাকবে?
পর্ব ২৬। ‘হাওয়া হাওয়াই’য়ের আপত্তি জোটেনি কিন্তু ‘উরি উরি বাবা’ নাকি অপসংস্কৃতি
পর্ব ২৫। চুল কাটলেই মাথার পিছনে জ্যোতির মতো বাজবে ‘শান’-এর গান!
পর্ব ২৪। মরণোত্তর উত্তমকুমার হয়ে উঠলেন সিরিয়াল কিলার
পর্ব ২৩। স্কুল পালানো ছেলেটা শহিদ হলে টিকিট কাউন্টার, ব্ল্যাকাররা তা টের পেত
পর্ব ২২। ক্যাবলা অমল পালেকরের চোস্ত প্রেমিক হয়ে ওঠাও দর্শকেরই জয়
পর্ব ২১। বন্দুকধারী জিনাতকে ছাপিয়ে প্রতিরোধের মুখ হয়ে উঠলেন স্মিতা পাতিল
পর্ব ২০। হকার, হোটেল, হল! যে কলকাতার মন ছিল অনেকটা বড়
পর্ব ১৯। দেওয়ালে সাঁটা পোস্টারে আঁকা মধুবালাকে দেখে মুগ্ধ হত স্কুলপড়ুয়া মেয়েরাও
পর্ব ১৮। পানশালায় তখন ‘কহি দূর যব’ বেজে উঠলে কান্নায় ভেঙে পড়ত পেঁচো মাতাল
পর্ব ১৭। গানই ভেঙেছিল দেশজোড়া সিনেমাহলের সীমান্ত
পর্ব ১৬। পুলিশের কাছেও ‘আইকনিক’ ছিল গব্বরের ডায়লগ
পর্ব ১৫। ‘শোলে’-র চোরডাকাতরা এল কোথা থেকে?
পর্ব ১৪। ‘শোলে’-তে কি ভারত আরও আদিম হয়ে উঠল না?
পর্ব ১৩। ‘জঞ্জির’ দেখে ছেলেটা ঠিক করেছিল, প্রতিশোধ নেবে
পর্ব ১২। ‘মেরে পাস মা হ্যায়?’-এর রহস্যটা কী?
পর্ব ১১। ইন্দ্রজাল কমিকস-এর গ্রামীণ নায়ক বাহাদুর পাল্পে এসে রংচঙে হল
পর্ব ১০। দু’টাকা পঁচিশের টিকিটে জমে হিরোইনের অজানা ফ্যানের স্মৃতি
পর্ব ৯। খান্না সিনেমায় নাকি পৌরাণিক সিনেমা চলছে
পর্ব ৮। পাড়াতুতো ট্র্যাজেডিতে মিলে গেলেন উত্তমকুমার আর রাজেশ খান্না
পর্ব ৭। পাড়ার রবিদা কেঁদেছিল ‘কাটি পতঙ্গ’ আর ‘দিওয়ার’ দেখে, সাক্ষী ছিল পাড়ার মেয়েরা
পর্ব ৬। যে কলকাতায় পুলিশ-পকেটমার মিলেমিশে গেছে, সেখানে দেব আনন্দ আর নতুন করে কী শিরশিরানি দেবেন?
পর্ব ৫। হিন্দি ছবির পাপ ও একটি অ্যাডাল্ট বাড়ির গল্প
পর্ব ৪। দেব আনন্দ, একটি বোমা ও অন্ধকারে হাত ধরতে চাওয়ারা
পর্ব ৩। অন্ধকারে ঢাকা পড়ল কান্না থেকে নিষিদ্ধ স্বপ্ন!
পর্ব ২। ‘জিনা ইঁয়াহা মরনা ইঁয়াহা’ উত্তর কলকাতার কবিতা হল না কেন?
পর্ব ১। সিনেমা হলে সন্ত্রাস ও জনগণমন-র দলিল