লর্ড মেয়োর একটি ঘোড়ার পিঠে বসা ভাস্কর্যকে বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবিহীন পণ্যের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দেয়! শুধু তাই নয়, মূর্তির দাবিদার না থাকলে তাকে নিলামে তোলা হবে, এমনও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বন্দর কর্তৃপক্ষের এরকম বিজ্ঞপ্তি অবশ্যই একটি অবহেলার কাজ, তা কঠোর ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ইংরেজ সরকারের তরফে। বন্দরের সহ-সভাপতি এই গাফিলতির জন্য কমিশনারদের তরফ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এই কেলেঙ্কারি সরকারের উচ্চ মহলে বেশ কিছুটা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল।
৭.
মূর্তি নিয়ে কত বিচিত্র ঘটনা রয়েছে ইংরেজ আমলে, তা বলে শেষ করা যাবে না!
ডিসেম্বর, ১৮৭৫। কলকাতা বন্দর কমিশনার ইংরেজ সরকারের তরফ থেকে একটি বড়সড় চিঠি পেলেন। সেই চিঠি পেয়ে তো বন্দর কমিশনারের মাথায় হাত। চিঠিতে বন্দর কমিশনারকে সরকারের তরফে গত ২৪ নভেম্বর ‘কলকাতা গেজেট’-এ প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো হয়। দেখা যায়, লর্ড মেয়োর একটি ঘোড়ার পিঠে বসা ভাস্কর্যকে বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবিহীন পণ্যের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন! শুধু তাই নয়, মূর্তির দাবিদার না থাকলে তাকে নিলামে তোলা হবে, এমনও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে!
বন্দর কর্তৃপক্ষের এরকম বিজ্ঞপ্তি অবশ্যই একটি অবহেলার কাজ হিসেবে যে গণ্য করবেন ইংরেজ সরকার বাহাদুর, তা কঠোরভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হল। বন্দরের সহ-সভাপতি এই গাফিলতির জন্য কমিশনারদের তরফ থেকে দুঃখ প্রকাশ করতে তৎপর হলেন। কীভাবে এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছিল– তা ব্যাখ্যাও করতে চাইলেন। এই কেলেঙ্কারিতে সরকারের উচ্চ মহলে কিছুটা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। কারণ, এর পরের পদক্ষেপই তো ছিল মূর্তির নিলাম। তবুও বিষয়টি বুঝিয়ে-সুঝিয়ে একটি মীমাংসার জায়গায় আনা হয়।
অবশেষে, ভাস্কর্যটি নিলামে ওঠার বদলে ১ জানুয়ারি, ১৮৭৬-এ ময়দান এবং ডাফারিন রোডের কাছে উন্মোচিত হয়। ইংরেজ ভাস্কর টমাস থরনিক্রফট মেয়োর মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন। মেয়ো ছিলেন এ দেশের চতুর্থ ভাইসরয়। এর থেকেই বোঝা যায়, নিজেদের শাসকদের মূর্তির বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের ঢিলেমি একেবারেই বরদাস্ত করেনি সরকার বাহাদুর। কারণ, এতে ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হবে।
…. ভাবমূর্তি-র অন্যান্য পর্ব ….
পর্ব ৬। হাইকোর্টের থামের নকশায় প্রতিফলিত ইংরেজের ভাবমূর্তি
পর্ব ৫। ইংরেজ ভাবনার জীর্ণ স্মৃতি নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের রোমান ‘মিনার্ভা’
পর্ব ৪। ত্রিবেণী টোলের পণ্ডিত উজ্জ্বল করলেন হেস্টিংসের ভাবমূর্তি
পর্ব ৩। বঙ্গভঙ্গের ছায়া মুছতে অঙ্গমূর্তির পরিকল্পনা করেছিলেন লর্ড কার্জন
পর্ব ২। হেস্টিংসের মূর্তি আসলে অত্যাচারীরই নতুন ভাবমূর্তি
পর্ব ১। শাসককে দেবতা বানানোর অভিপ্রায়েই কলকাতায় পথে-প্রান্তরে ইংরেজরা বসিয়েছিল মূর্তি
তবে সব মধুরেরই শেষ না হয়েও শেষ হয় কখনও কখনও। দিনু ঠাকুরের জীবনের শেষভাগে একসময় এসে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি ১৯৩৩ সালে তাঁর সাধের শান্তিনিকেতন, সঙ্গীত ভবন ও সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন।