১৯২৫-এ আলাস্কার নোম নামে একটা শহর ডিপথেরিয়ার কবলে পড়ে। মহামারী শুরু হয়। সেই সময় ডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে বরফাকীর্ণ পথে গুন্নার ক্যাসেন নামক এক অভিযাত্রীর (পরিভাষায় এদের বলা হয় ‘মাসার’, যা আজকের ডেলিভারি বয়-এর সমতুল্য) নেতৃত্বে সাড়ে পাঁচদিন ধরে রিলে পদ্ধতিতে স্লেজে করে ৬৭৪ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিষেধক পৌঁছনো হয় নোম শহরে। মহামারী রোধ করেছিল বাল্টো নামের একটা কুকুরের নেতৃত্বে ১৫০টি স্লেজ কুকুর। ব্রোঞ্জমূর্তি বসানো হয়েছে তার। নিউইয়র্কে।
৭.
কালভৈরবের বাহন কুকুর।
সৃষ্টি, স্থিতি আর প্রলয়, এই তিনটি কাজের জন্য নির্ধারিত দেবতারা হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর মহেশ্বর। কালভৈরব ওই মহেশ্বরেরই এক রূপ। সময়, অর্থাৎ কাল-এর সংহারকারী ভৈরব। তার বাহন একটি কুকুর।
যদিও মানবসমাজে কুকুর ‘ধ্বংসের কারণ’ বলে কখনই বিবেচিত নয়। বরং এই কুকুরই হল প্রাণীদের মধ্যে প্রথম, যারা মানুষের বশ্যতা স্বীকার করেছিল। প্রায় ১৪,০০০ বছর আগে। তখনও আমরা কৃষিকাজ রপ্ত করে উঠতে পারিনি। কুকুর নেকড়ে থেকে উদ্ভুত প্রজাতি। স্তন্যপায়ী, প্রখর ঘ্রাণশক্তি, ৪২টি দাঁত ও বলিষ্ঠ চোয়ালের অধিকারী চারপেয়ে সারমেয়।
পুরাণে দত্তাত্রেয়, যিনি বিষ্ণুর অবতার, তারও বাহন চারটি কুকুর। মনে করা হয় যে, এরা চার বেদের রক্ষক।
কুকুর প্রভুভক্তির পরাকাষ্ঠা। সে পথ চেনায়, দুর্গম পথে সঙ্গ দেয়, যেমনটা দিয়েছিল মহাপ্রস্থানের পথে যুধিষ্ঠিরদের। তারপর মানুষের হাতে পড়ে সে মহাকাশেও পাড়ি দিয়ে দেয়।
আজ যে পথে সুনীতা উইলিয়ামসরা যাতায়াত করছেন, প্রাণীদের মধ্যে সেই পথের প্রথম যাত্রী ‘লাইকা’ নামের এক মিশ্র প্রজাতির কুকুর। সেসময় তার বয়স ছিল দুই বছর। ছয় কিলোগ্রাম ওজনের রাশিয়ার এই রাস্তার কুকুরটিই প্রথম মহাকাশযাত্রী। পৃথিবীর কক্ষপথে স্পুটনিক-২-এর সওয়ার হয়ে সে যাত্রা করে ৩ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে। ফিরে আর আসেনি সে! স্পুটনিকও ধ্বংস হয়ে যায় ফেরার পথে ১৪ এপ্রিল, ১৯৫৮-তে। শোনা যায় যে, মহাশূন্যে যাত্রার কিছুকাল পরে প্রবল তাপ আর প্যানিকে তার মৃত্যু ঘটেছিল। এই ইতিহাস বড়ই নির্মম! লাইকারা ভোল পালটে ধর্মঠাকুর হয়ে যায় না। ওসব মহাভারতে আছে। বাস্তবে এই প্রাণোৎসর্গ চিরকাল মহান করে রাখবে ওই দু’বছরের সারমেয়টিকে।
যেমন হয়ে আছে বাল্টো নামের আরেকটা কুকুর।
১৯২৫-এ আলাস্কার নোম নামে একটা শহর ডিপথেরিয়ার কবলে পড়ে। মহামারী শুরু হয়। সেই সময় ডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে বরফাকীর্ণ পথে গুন্নার ক্যাসেন নামক এক অভিযাত্রীর (পরিভাষায় এদের বলা হয় ‘মাসার’, যা আজকের ডেলিভারি বয়-এর সমতুল্য) নেতৃত্বে সাড়ে পাঁচদিন ধরে রিলে পদ্ধতিতে স্লেজে করে ৬৭৪ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিষেধক পৌঁছনো হয় নোম শহরে। মহামারী রোধ করেছিল বাল্টো নামের একটা কুকুরের নেতৃত্বে ১৫০টি স্লেজ কুকুর। ব্রোঞ্জমূর্তি বসানো হয়েছে তার। নিউইয়র্কে। ভাস্কর ফ্রেডরিক রথ ১৯২৫ সালে তা গড়ে দিয়েছিলেন।
আমুন্ডসেনের অ্যান্টার্কটিকা অভিযানের প্ল্যান করা হয়েছিল ৯৭টি স্লেজ কুকুরের বাহিনীকে কেন্দ্র করে।
সম্রাট আকবরের প্রিয় কুকুরের নাম ছিল মাহুয়া। আর বিখ্যাত ভারতপ্রেমিক জিম করবেটের কুকুর ছিল রবিন। তাঁর বহু রোমাঞ্চকর শিকার কাহিনিতে এই রবিনের উল্লেখ পাই।
পিকাসোর প্রিয় ড্যাশহাউন্ড কুকুরের নাম লাম্প। শিল্পী জ্যাকসন পোলকের একটি টেরিয়ার প্রজাতির কুকুর ছিল।
এসব সত্যিকারের ঘটনার থেকে মনে হয়, ঠাকুরের চেয়ে মানুষের বাহন হিসাবেই কুকুর বেশি জনপ্রিয়। কালভৈরবকে তার বাহন কুকুর সংহারের পথ দেখায়নি, তা নিশ্চিত।
… পড়ুন বাহনকাহন-এর অন্যান্য পর্ব …
৬. বিশ্বকর্মার বাহন, রাজারও বাহন
৩. বাহন বিড়ালের ভার লাঘব করতে হয়েছিল স্বয়ং ঠাকুরকেই
১. মন্দিরের লাগোয়া তার আসন, তার কানে মনের বাসনা জানালে সরাসরি পৌঁছে যায় বাবার কাছে
প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায় আমৃত্যু দেব সাহিত্য কুটীরের বার্ষিকীগুলিতে ঘনাদার ছবি এঁকে গেছেন। মাঝে দু’বছর বলাইবন্ধু রায় ঘনাদার ছবি আঁকেন কিন্তু তিনি সম্পূর্ণভআবে প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুসারী। তাঁর ঘনাদার চুল সমকালীন অভ্যাস অনুযায়ীই সম্ভবত, ঘাড়ের কাছে নির্মমভাবে চাঁছা। পরের দিকে প্রায় সর্বত্রই অজিত গুপ্তর প্রভাব প্রকট। শিল্পীরা নিজস্ব কল্পনা অনুযায়ী সেই চেহারাকেই ঘষে মেজে নিয়েছেন। বিমল দাস, সুবোধ দাশগুপ্ত, নারায়ণ দেবনাথ, ধীরেন বল প্রমুখ যশস্বী শিল্পীরাও ঘনাদা অলংকরণ করেছেন বিভিন্ন সময়ে, নিজের মতো করে।