রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের ধর্মমহাচার্য দ্বিতীয় আলেক্সিই নিজে পৌরোহিত্যের ব্যবসায় নেমেছেন। ‘সেন্ট স্প্রিংস মিনারেল ওয়াটার’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে গির্জার স্বীকৃত জল বোতলে পুরে বাজারে ছেড়েছেন। প্রচারমাধ্যমগুলিতে তার ফলাও বিজ্ঞাপন চলছে। গত বছর প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের অনুগত সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণের পর বিধ্বস্ত পার্লামেন্ট ভবন সংস্কারের কাজ সূচনার সময় স্বস্ত্যয়ন করেছিলেন ধর্মমহাচর্য নিজে। তবে সে-অনুষ্ঠান তিনি সম্পন্ন করেন প্রধানমন্ত্রী চের্নোমিদিনের অনুরোধক্রমে, তার জন্য কোনও দক্ষিণা নেননি।
৬৯.
প্রত্যাবর্তন, বিভ্রান্তি ও বিতর্ক
আলেক্সান্দ্র সোল্জেনিৎসিনের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন রুশিদের মধ্যে বিভ্রান্তি বিতর্ক ও সমালোচনার আলোড়ন তুলেছে। লেখক তাঁর দুর্দশাগ্রস্ত দেশের অবস্থার কোনও হেরফের ঘটাতে পারলেন কি না তাই নিয়ে সন্দেহ আছে তাঁর স্বদেশবাসী রুশিদের মনে।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখকের কুড়ি বছরের নির্বাসন পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটল ২৭ মে দূরপ্রাচ্যের ভ্লাদিভস্তোকে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে। মস্কো দিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ না করে উল্টোদিক থেকে, ভ্লাদিভস্তোক হয়ে! অভিনব পরিকল্পনা! একমাত্র তাঁর মতো প্রতিভারই মাথায় খেলতে পারে!
‘নেজাভিসিমায়া গ্যাজেতা’র (স্বাধীন সংবাদপত্র) গত ২৪ মে সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় সম্পাদকীয় শিরোনামায় এই নাটকীয় ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য: ‘সোল্জেনিৎসিন সূর্যের মতো– পুবে উদিত হচ্ছেন।’ সম্পাদকীয় প্রবন্ধে এই প্রসঙ্গে বক্রোক্তি: ‘এযাবৎ রাশিয়াতে সূর্য ছাড়া আর সব কিছুই আসছিল পশ্চিম থেকে।
অভিনব পরিকল্পনার কারণ? সোল্জেনিৎসিন ৪২০০ মাইল পশ্চিমে মস্কোয় তাঁর নতুন বাড়িতে যেতে চান ধীরে ধীরে, যাওয়ার পথে রাশিয়ার বিভিন্ন জনবসতি ও সেখানকার সাধারণ অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ও দেশের অভূতপূর্ব পরিবর্তনের পরিচয় গ্রহণ করতে করতে।
পদার্থবিদ আন্দ্রেই সাখারভ্ ১৮৮৯ সালে দেশের অভ্যন্তর থেকে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত দেশের সংস্কারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, কিন্তু লেখক আলেক্সান্দ্র সোলজেনিৎসিন তখন আমেরিকার নির্জন অরণ্য প্রদেশে বসে সাহিত্যচর্চা করেছিলেন। লিখেছেন ঐতিহাসিক উপন্যাস, মাঝেমধ্যে দিয়েছেন দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ফতোয়া। এই কারণে অনেকের ক্ষোভ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
যে সমস্ত মফস্সল শহর ও গ্রামাঞ্চলে সোল্জেনিৎসিন জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, যেখানে বসে স্তালিন আমলের ‘গুলাগে’র জীবনযাত্রা নিয়ে অনেক লেখা লিখেছেন, সেখানকার লোকদের ঠিক ধারণা নেই রাশিয়ার এই মূর্তিমান মহাপুরুষটির কাছ থেকে কী আশা করার থাকতে পারে। রিয়াজানের যে হাইস্কুলে সোল্জেনিৎসিন একসময় পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন সেখানকার বর্তমান অধ্যক্ষের কথায়: ‘তিনি যদি ফিরে আসতে চান সেটা তাঁর অধিকার। তবে তাঁর সময় পার হয়ে গেছে।’
বস্তুত সাহিত্যেও তাঁর নতুন আর কিছু দেওয়ার নেই। দেশে তাঁর রচনার কাটতি এখন একেবারেই পড়তির দিকে। পেরেস্ত্রৈকার প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ফলে যে-রমরমা ছিল, এখন আর তা নেই। কালোবাজারে চড়া দরে বিক্রি হত যে-বইগুলি, এখন সেগুলিই মস্কোর অভিজাত বইয়ের দোকানের মালিকদের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে– স্টক ক্লিয়ার করতে পারলে তাঁরা বেঁচে যান। সোল্জেনিৎসিন বরাবর কড়াকড়িভাবে তাঁর গোপনীয়তা রক্ষা করে এসেছেন। দীর্ঘ রাশিয়া পরিক্রমার পর মস্কোর উপকণ্ঠবর্তী ত্রোইৎসে লিকোভাতে আশপাশের লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন উঁচু পাঁচিল-ঘেরা এক নির্জন ভবনে স্থিত হয়ে বসার পরিকল্পনা তাঁর আছে।
রাশিয়ার ইতিহাসে এধরনের সফরের আরও একটি নজির আছে– বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিক ল্যেভ তলস্তোয়ের চিরকালের জন্য গৃহত্যাগ– পিতৃপুরুষের তালুক ইয়াস্নায়া পলিয়ানা ছেড়ে চলে যাওয়া। খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখর থেকে বিস্মৃতির অন্তরালে। সোল্জেনিৎসিনের যাত্রা বিপরীতমুখী)– বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে– ত্রোইৎসে লিকোভেতে নিজের অর্জিত তালুকে।
কোনও উঁচু পাঁচিল ছিল না কাউন্ট তত্ত্বয়ের জমিদারির চারধারে। ত্রোইৎসেলিকোভোর আশপাশের সাধারণ গ্রামবাসীরা এই প্রাচীরকে খুব একটা সুনজরে দেখছে না। চেহারায় রুশ ধ্রুপদী সাহিত্যিক ফিয়োদর দস্তইয়েভ্স্কির সঙ্গে আপাতসাদৃশ্য রক্ষা করে চলেন তিনি। কিন্তু দু’জনের মধ্যে এর বেশি মিল খুঁজতে যাওয়া বাতুলতা।
সোল্জেনিৎসিনের প্রত্যাবর্তন আগ্রহ জাগাবে সম্ভবত সীমিত গণ্ডির মধ্যে– প্রধানত বুদ্ধিজীবী মহলে। সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের এ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই।
মস্কো ২৫.০৭.১৯৯৪
রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দীর্ঘ সাত সপ্তাহ দেশ পরিক্রমার পর গত ২১ জুলাই মস্কোয় পদার্পণ করলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আলেক্সান্দ্র সোল্জেনিৎসিন। দীর্ঘ কুড়ি বছর বাধ্য হয়ে নির্বাসনে কাটানোর পর সেদিন সন্ধ্যায় মস্কোর ইয়ারস্লাভ্ল স্টেশনে হাজার খানেক জনতার হর্ষ ও বিদ্রুপ মেশানো সমবেত ধ্বনির মধ্যে ট্রেনের কামরা থেকে লেখক যখন অবতরণ করলেন, তারপর থেকেই নতুন করে শুরু হয়ে যায় তাঁর ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা।
ইয়ারস্লাভ্ল রেলস্টেশনে সেদিন তিল-ধারণের ঠাঁই ছিল না একথা বললে অতিশয়োক্তি হবে। ইয়ারস্লাভ্ল রেলস্টেশন এবং সংলগ্ন আরও দু’টি রেলস্টেশনের কৌতূহলী যাত্রীরা, বিক্ষোভকারী কিছু কট্টরপন্থী দেশপ্রেমী, সাংবাদিকদের একটা বিরাট দল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মস্কোর মেয়র থেকে শুরু করে বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী ও গণতন্ত্রীদের প্রতিনিধিরা।
বাইরে তখন প্রবল বর্ষণ। প্রাঙ্গণে সাময়িকভাবে তৈরি মঞ্চের আশপাশে স্বাগত ও ধিক্কার ধ্বনি লেখা পোস্টার, অভ্যর্থনাকারী ও বিক্ষোভকারী জনতা। বৃষ্টির জলে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে হাতে লেখা পোস্টার: ‘রাশিয়া ৪ অক্টোবরের রক্তে স্নাত’। লেখকের কণ্ঠস্বর মাঝে মাঝে ডুবে যাচ্ছে ‘শেম শেম’ ধিক্কার ধ্বনিতে।
ইয়ারস্লাভ্ল্ রেলস্টেশনের দালানের মাথায় এখনও চোখে পড়ে পুরনো প্রতীকচিহ্ন কাস্তে-হাতুড়ি, আর চারটি অক্ষর– ‘ইউ. এস. এস. আর’। পার্লামেন্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ অনুযায়ী ঐতিহাসিক ইমারতের গা থেকে পুরনো প্রতীকচিহ্ন সরানো যাবে না। লেখক দেখলেন অতীতের স্মৃতিভার নিয়ে বেঁচে আছে রাশিয়া।
ফেলো কড়ি, মাখো তেল
মস্কো, ২০ অক্টোবর, ১৯৯৪
ফেলো কড়ি, মাখো তেল– রাশিয়ায় আজ গির্জার এই মন্ত্র। ‘আমরা গাড়ির জন্য স্বস্ত্যয়ন করি’– মস্কোর ভোল্গোগ্রাদ সড়কের ওপর বিশাল গাড়িনির্মাণ কারখানা ও তৎসংলগ্ন পুরোনো গাড়ির বাজারের অনতিদূরে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে ঝুলছে সাইনবোর্ড।
রাস্তার ধারে দিব্যি ব্যাবসা ফেঁদেছেন রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার জনৈক ফাদার, ধূপধুনো জ্বালিয়ে মন্ত্র পাঠ করতে করতে পবিত্র বারি ছিটোচ্ছেন গাড়ির ওপর। দক্ষিণা ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার রুবল– ১৫ থেকে ২৫ ডলার। নির্ভর করছে গাড়ির মার্কার ওপর।
দূরপাল্লার কোনও কোনও গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসের সামনের কাচের ওপর স্তালিনের প্রতিকৃতি আটকানো অব্যাহত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে সাতের দশকের শেষদিকে– নিঃস্তালিনীকরণের অত বছর পরেও। চিনে ট্যাক্সিতে ওই জায়গায় থাকে মাও জে দং-এর প্রতিকৃতি। আমাদের দেশে মা কালী ভরসা।
কিন্তু আজকের রাশিয়ায় গাড়ি চালকদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, গাড়ি চুরির সংখ্যা এবং রাস্তায় খানাখন্দ যে পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ওরকম রক্ষাকবচে কোনও কাজ হবে না। তারা তাই নিরাপত্তার জন্য ঈশ্বরের দ্বারস্থ হচ্ছেন দক্ষিণার বিনিময়ে।
অর্থোডক্স চার্চের কোনও কোনও মুখপাত্রের ভাষায়, ‘বাস্তুপূজা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, এমনকী গাড়ির জন্য স্বস্ত্যয়নের অধিকার ও ঐতিহ্য যাজকদের আছে। তবে যে কোনও স্বস্ত্যয়ন ও আশীর্বাদের জন্য অর্থ আদায় করা আমাদের ঐতিহ্যে নেই।’ কারও কারও যুক্তি: ‘বহু গির্জার সংস্কারের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থ দরকার। আমরা যখন কোনও দোকান বা ক্যাসিনোর জন্য স্বস্ত্যয়ন করি এবং মালিক যদি বলেন টাকা নেই তা বিশ্বাস করা হবে নেহাতই বোকামি।’
রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের ধর্মমহাচার্য দ্বিতীয় আলেক্সিই নিজে পৌরোহিত্যের ব্যবসায় নেমেছেন। ‘সেন্ট স্প্রিংস মিনারেল ওয়াটার’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে গির্জার স্বীকৃত জল বোতলে পুরে বাজারে ছেড়েছেন। প্রচারমাধ্যমগুলিতে তার ফলাও বিজ্ঞাপন চলছে। গত বছর প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের অনুগত সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণের পর বিধ্বস্ত পার্লামেন্ট ভবন সংস্কারের কাজ সূচনার সময় স্বস্ত্যয়ন করেছিলেন ধর্মমহাচর্য নিজে। তবে সে-অনুষ্ঠান তিনি সম্পন্ন করেন প্রধানমন্ত্রী চের্নোমিদিনের অনুরোধক্রমে, তার জন্য কোনও দক্ষিণা নেননি।
দীর্ঘ সত্তর বছর সরকারি নিরীশ্বরবাদের পর গির্জার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে বাস্তুপূজা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, বার এমনকী ক্যাসিনোর জন্য স্বস্ত্যয়নও জোর বিকোচ্ছে এই বাজারে। মাঝে মাঝে গড়িয়ে যাচ্ছে হাস্যকর পর্যায়ে। সম্প্রতি দূরদর্শনে প্রচারিত এক সংবাদে প্রকাশ, দূরপ্রাচ্যের কোনও এক শহরে জনৈক ধর্মযাজক অত্যুৎসাহবশত সেখানকার সেক্স শপ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে স্বস্ত্যয়ন করেছেন।
ধর্মব্যবসায়ের প্রসারিত ক্ষেত্র
মস্কো ১৮ মার্চ, ১৯৯৫
রাশিয়ার বায়ুসেনাবাহিনী অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধ বিমানে ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে। লেনিন মিউজিয়াম ইতিমধ্যে এক ইলেকট্রনিক ডিলারকে ঘরভাড়া দিয়েছে। এবারে রুশ অর্থোডক্স চার্চের ব্যবসায়ে লিপ্ত হওয়ার পালা। শুধু জনসাধারণের অর্থানুকূল্যে চার্চ চলে না, ধনীরাও খুব একটা হাতের মুঠি খুলছে না।
অফিসের জন্য বোতলের জলের নিয়মিত সরবরাহ চাই? চারতারা হোটেলের ঘর বুক করতে হবে? আপনি কি আইকন কিনতে চান, বা মস্কোর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চান? এমন একটি প্রতিষ্ঠান আছে যা আপনাকে এই সমস্ত ব্যাপারেই সাহায্য করতে পারে। খুবই উঁচু মহলে, সর্বোচ্চ মহলে এই প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ আছে। এই সংস্থার নাম রুশ অর্থোডক্স চার্চ। পেরেস্ত্রৈকা পর্বের কঠোর বাস্তবতার মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য চার্চকে নতুন পথের সন্ধান করতে হচ্ছে।
এছাড়া চার্চের সামনে পড়ে রয়েছে এক বিশাল কর্মভার– নিরীশ্বরবাদী সোভিয়েত শাসনের সময় যে হাজার হাজার গির্জা ধ্বংস হয়েছে বা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থেকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, সেগুলির পুনরুদ্ধার ও সংস্কারসাধন– এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ কোথা থেকে আসবে?
গির্জার আয়ের একটি সম্ভাবনাময় উৎস ‘আশা ও পরিত্রাণ’ নামে একটি যৌথ সংস্থা, যা প্রৌঢ় ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর তাদের ফ্ল্যাটের উত্তরাধিকার লাভের শর্তে তাদের আশ্রয়, সেবাশুশ্রূষা ও মোটামুটি অঙ্কের একটা পেনশনের সংস্থান করে। ধর্মমহাপরিষদ এই কোম্পানির অর্ধেক শেয়ারের মালিক, বাকি অর্ধেকের মালিক সরকার। ফ্ল্যাটের আকার ও অবস্থান এবং তার মালিকের বয়সের অনুপাতে কোম্পানি পেনশন নির্ধারণ করে থাকে– মালিকের বাঁচার সম্ভাবনা যত বেশি, পেনশনের পরিমাণও তত কমে যায়। কোম্পানির অধিকর্তা ইগর গ্রিগরিয়ানের কথায়: ‘খরচ ওঠানোর জন্য’ এইভাবে লব্ধ ফ্ল্যাটগুলির কিছু ভাড়া দেওয়া হবে অথবা বিক্রি করা হবে, কিছু ‘ধর্মমহাপরিষদ’কে দেওয়া হতে পারে, লভ্যাংশ কোম্পানির দাতব্য কর্মসূচি সম্প্রসারণের জন্য ফের লগ্নি করা হবে।
বিপ্লবের পরে, বিভিন্ন গির্জা এবং গির্জার সংলগ্ন যে সমস্ত দালান অধিকার করে সরকার ফ্ল্যাট আর সরাইখানায় পরিণত করে এতদিন ভাড়া দিয়ে আসছিল এখন দেশজুড়ে সেগুলি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি মরিয়া হয়ে উঠেছে। একমাত্র মস্কো শহরেই এরকম আটশো দালান আছে। গির্জা সেগুলি তাদের অধিকারভুক্ত করে অফিস হিসেবে ভাড়া দিয়ে টাকা তুলতে পারে। ফাদার ইয়েরোমিনের যুক্তি– ‘গির্জা তো আর একমাত্র মোমবাতির ওপর ভরসা করে টিকে থাকতে পারে না।’
কৈশোরে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের জামালপুরের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছিল রং-তুলি কাগজ, কাঠের বোর্ড আর তামার পাতের মাথাওয়ালা খানকতক বোর্ড পিন। যখন মায়ের হাতে ট্রাঙ্ক, বিছানা, বাসনকোসনের বোঝা, তখনও তাঁর আশ্রয় ওই রং-তুলি। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় বাড়িতে যেখানে পড়তে বসতেন, তার মুখোমুখি জানলাটি চিরকালের জন্য বন্ধ করে নিজের আঁকা দুটো ছবি সেঁটে দিয়ে যান।