আফ্রিকান দাবার প্রগতিতে সবচেয়ে বড় বাধা দাবাড়ু আর প্রশিক্ষকদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিজেদের মেধা আর শ্রমের ওপরে ভরসা যে কোনও ক্রীড়াবিদের মূলগত ভিত্তি। দ্বিতীয়ত, দাবার জন্য নিশ্চয়তাসম্পন্ন, থিতু পরিবেশ প্রয়োজনীয়। উন্নত পরিকাঠামো আর নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা আয়োজন এর সঙ্গেই জড়িত। ক্যামেরুন, ঘানা, নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্টের দাবা-সংস্থা ঠোক্কর খেতে খেতে এগিয়ে চলেছে। ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ সিরিজের চতুর্থ ও শেষপর্ব।
৪.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু ‘অভিজাত’ মহল্লায় ‘জিম ক্রো আইন’ বৈধ বা অবৈধভাবে লাগু ছিল। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার ঘৃণ্য আইন। হাজারো বিদ্বেষের জবাব দিয়ে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রীয় অ্যামেচার দাবায় খেতাব জিতলেন কেনেথ ক্লেটন, ১৯৬৩ সালে। দু’বছর পরে একই প্রতিযোগিতায় খেতাব জিতলেন ফ্রাঙ্ক স্ট্রিট। মাত্র ২০ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল মাস্টারের খেতাব অর্জন করলেন। মেধায়, দক্ষতায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা একতিলও পিছিয়ে নেই, প্রমাণ হতে লাগল। এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ‘ড্রাফট’ খেলায় (৮টি ফাইল ও ৮টি র্যাঙ্কবিশিষ্ট বোর্ড এবং ১২টি সমমানের ঘুঁটি; কোনও কোনও রকমফেরে ১০X১০ বোর্ড ব্যবহার হয়) অন্যতম সেরা আর্চি ওয়াটার্সের কীর্তি। ১৯৭২ সালের সেই যুগান্তকারী স্প্যাসকি বনাম ফিশার বিশ্বখেতাবি লড়াইয়ে ফিশারের সঙ্গে গিয়েছিলেন আর্চি। ড্রাফট খেলার তৎকালীন বিশ্বখেতাবজয়ী নেদারল্যান্ডসের টোন সিব্র্যান্ডসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁর। প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক টিম ক্র্যাবের বয়ান অনুযায়ী, দাবা এবং ড্রাফট দুই নিয়েই আলোচনায় মেতে উঠেছিলেন তাঁরা। আর্চির মৃত্যুর দু’দিন পরে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন লেখা হয়েছিল তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে। তার কিয়দংশ এই রকম– ‘During his Army service in World War II, Waters became interested in Spanish pool checkers, which was popular on the East Coast, particularly in black communities. Waters co-wrote two books on the subject.’
ড্রাফটের পাশাপাশি দাবাতেও সুনাম অর্জন করেছিলেন আর্চি। কুখ্যাত ‘জিম ক্রো আইন’-এর বাধা ভেঙে মার্শাল দাবা ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন তিনি। বালক ববি ফিশারের অনুশীলন-সঙ্গী ছিলেন আর্চি। ‘সার্চিং ফর ববি ফিশার’ (১৯৯৩) চলচ্চিত্রে প্রোটাগনিস্ট জোশুয়া নামক বালকের সঙ্গে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে দাবা-অনুশীলন করতে দেখা যায়– জোশুয়ার সঙ্গে নিয়মিত খেলে খেলে তার কৌশলগুলিকে আরও শাণিত করে তুলতেন ‘ভিনি’ নামের সেই যুবক। আর্চির সঙ্গে ভিনির সাদৃশ্য অনেক। আগের পর্বে আফ্রো-কিউবান দাবাড়ু রোহেলিও ওর্তেগার কথা আলোচনা করেছি। মেধা ও শ্রমের নিরন্তর অনুশীলনে তিনি ছয়ের দশকে কিউবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠেছিলেন।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
কোবেসের উত্থানের সময় দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবিদ্বেষের অন্ধকারের (অ্যাপার্থাইড) মধ্যে দিয়ে টালমাটাল হয়ে এগোচ্ছিল। ক্রিকেট থেকে দাবা, সবেতেই তার ছাপ স্পষ্ট। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে দাবা প্রতিযোগিতায় খেলতে যাওয়ার সময় জনৈক নচ্ছার শ্বেতাঙ্গ কোবেস আর তাঁর বাবাকে ট্রেন থেকে নেমে যেতে বলেন। প্রতিযোগিতা-স্থলের পাশে একটি ছোট পুকুরে প্রতিযোগী শিশু দাবাড়ুরা যখন জলে নেমে আনন্দ করছে, তখন আরেক বদমাশ শ্বেতাঙ্গ এসে কোবেসকে জল থেকে তুলে দেন, ‘একজন কেফারকে জলে নামার অনুমতি পেলে শহরের অন্য কেফাররা সাহস পেয়ে যাবে।’ কোবেসকে তাড়িয়ে ফিরেছে এসব আতঙ্ক। কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে জন্মানোর জন্য যখন-তখন পুলিশি তাড়ায় পালাতে হত। শ্বেতাঙ্গ ক্ষমতাবানরা ইচ্ছেমতো অত্যাচার করত তাঁদের এলাকায় এসে। কোবেস বাঁচার পথ খুঁজেছেন দাবাতেই।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
কিউবাতেই ১৮৬২ সালে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল। তৎকালীন বিশ্বসেরা দাবাড়ু পল মরফি কিউবার অভিজাত দাবাপ্রেমীদের আমন্ত্রণে হাভানায় গেছিলেন। ফেলিক্স সিক্র, দু-বুশে, ভিনসেন্ট মেদিনা, ফ্রান্সেস্কো ফেসারের মতো অভিজাতরা (যাঁদের বেশিরভাগের পেশা ছিল দাসব্যবসা ও মহাজনি) কমিটি গড়েছিল মরফিকে সংবর্ধনা দিতে। দু-বুশের বাড়িতে মরফি খেলেছিলেন একজন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ‘ক্রীতদাস’-এর বিরুদ্ধে। হোসে মারিয়া সিক্র। ফেলিক্স সিক্র নামক স্পেনীয় শ্বেতাঙ্গর বাড়ির ভৃত্য হোসে মারিয়া এতটাই ভাল খেলতেন যে, তাঁর খেলা দেখে মরফি তাঁর বিরুদ্ধে খেলতে রাজি হন। ফেলিক্স সেসময় কিউবার সেরা দাবাড়ুদের একজন বিবেচিত হতেন। নিজের বিনোদনের স্বার্থেই হয়তো হোসে মারিয়াকে দাবা শিখিয়েছিলেন ফেলিক্স; আর, হোসে মারিয়া দাসজীবনের বহু বঞ্চনা সয়েও নামমাত্র সুযোগ পেয়ে নিজের মেধার প্রমাণ রেখেছিলেন। মরফি সেসময়ের বহু নামীদামি দাবাড়ুর বিরুদ্ধে চোখ বেঁধে (অর্থাৎ বোর্ড না দেখে মুখে মুখে দান বলে) দাবা খেলতেন, হোসে মারিয়ার বিরুদ্ধেও তেমনই খেলেছিলেন। মরফির স্বভাবসিদ্ধ আক্রমণাত্মক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা সাজিয়েছিলেন হোসে, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি (গেমটি দাবার ডেটাবেসে আছে)। একজন কৃষ্ণাঙ্গ ‘ক্রীতদাস’ শ্রেষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ দাবাড়ুর বিরুদ্ধে খেলছেন– সেই সময়ে এটা অবিশ্বাস্য বাস্তব! হোসে মারিয়ার খেলার ব্যাপারটি ফেলিক্স, দু-বুশে, ফ্রান্সেস্কো ছাড়া কেউ জানতেন না। প্রায় তিন দশক পরে নুমা প্রেতি এক দাবা-পত্রিকায় এই বিশেষ গেমের উল্লেখ করেছিলেন।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র প্রথম পর্ব: দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া ষোলো বছরের থিওফিলাস দেখে দেখে শিখেছিলেন দাবা
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
জামাইকার মরিস অ্যাশলে ১৯৯৯ সালে প্রথম আফ্রো-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ গ্র্যান্ডমাস্টারের সম্মান অর্জন করেন। ১২ বছর বয়সে তাঁর পরিবার জামাইকা থেকে ব্রুকলিনে চলে এসেছিল। পরিবারে দাবা-খেলার কোনও ইতিহাসও ছিল না। ব্ল্যাক বিয়ার দাবা ক্লাবে নিয়মিত অনুশীলন, দাবার গুরুত্বপূর্ণ বইপত্র পড়া এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিতে সাফল্য অর্জন। খুব সহজ যাত্রা নয়, কারণ কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি চোরা বিদ্বেষ সাত-আটের দশকেও ছিল যুক্তরাষ্ট্রে এবং পূর্বজ গ্র্যান্ডমাস্টারদের কাছে দাবার প্রশিক্ষণ নেওয়ার আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রথমদিকে মরিসের ছিল না। ম্যানহাটনের যে মার্শাল দাবা ক্লাবে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হত না, সেই দাবা ক্লাব আয়োজিত অভিজাত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলেন মরিস। নিরন্তর পরিশ্রম এবং হাল না-ছাড়া মানসিকতার জন্যই বহু সংকট পেরিয়ে ২৭ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টার হলেন মরিস। তারপর রুজি-রোজগারের জন্য দাবার ধারাভাষ্যকার হওয়া, ‘মট হল এলিমেন্টারি’ ও হার্লেম দাবাস্কুলের প্রশিক্ষকের চাকরি ইত্যাদি করে নিজের খেলা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। আবার খেলায় ফিরলেন কাসপারভ বনাম ডিপ-ব্লু ম্যাচের ধারাভাষ্য দেওয়ার পরে। টানা দু’বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধানুশীলনের পরে গ্র্যান্ডমাস্টার– ১৯৯৯-এ। গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার গড় বয়সের থেকে অনেকটাই বেশি। কিন্তু মরিস বিশ্বদাবায় এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সমস্ত বিদ্বেষের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, উন্নাসিকতার বিরুদ্ধে মরিস অ্যাশলে এক যোগ্য জবাব।
মরিস অ্যাশলে (সাদা) বনাম আলেকজান্ডার শাবালভ (কালো)
1.e4 e6 2.d4 d5 3.exd5 exd5 4.c4 Nf6 5.Nc3 Bb4 6.Bd3 c5 7.Ne2 Nc6 8.cxd5 Nxd5 9.dxc5 Bg4 10.O-O Bxc3 11.bxc3 Nxc3 12.Qc2 Bxe2 13.Re1 Qd4 14.Bb2 O-O-O 15.Bf5+ Kc7 16.Bxc3 Bd3 17.Qc1 Qc4 18.Re4 Nd4 19.Qf4+ Kc6 20.Bxd4 Rd5 21.Bxg7 Qxc5 22.Rc1 1-0
ফ্রেঞ্চ প্রতিরক্ষা বেছে নিয়েছিলেন শাবালভ। এক্সচেঞ্জ ভেরিয়শনে ঢুকে মাঝ-ছক খোলা রেখে খেলার নীতি বেছে নিয়েছিলেন মরিস। মরিস এই গেমে কৌশলগত নৈপুণ্যে বাজিমাত করেন। নিউ ইয়র্কের এই প্রতিযোগিতায় খেতাব জিতেছিলেন মরিস। কিছু আগেই ‘সার্চিং ফর ববি ফিশার’ চলচ্চিত্রের জোশুয়া নামের যে বালকের কথা উল্লেখ করেছিলাম, সেই বিস্ময় বালক জোশুয়া ওয়াৎজকিন এই প্রতিযোগিতায় চতুর্থ হয়েছিল।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র দ্বিতীয় পর্ব: মন্ত্রী হতে আমি আসিনি, হয় দাবা খেলব, নয় ভেনেজুয়েলায় বিপ্লব আনব– বলেছিলেন চে গেভারা
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
“I’ve been taught you go after what you want– I want to be a symbol of achievement for blacks. I’ll make it, you’ll see”– Baraka Shabazz.
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বাধ্যত যুক্তরাষ্ট্র বা দক্ষিণ আমেরিকার দেশে অভিবাসী হয়েছিলেন কেউ, কিংবা কারও পরিবার স্বচ্ছলতা ও সুযোগের আশায় চলে গেছিল। তাঁদের কৃতিত্বের বিচ্ছুরণে আলোকিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশ। আফ্রিকা মহাদেশের নিজস্ব দাবায় খুব কিছু উন্নতি হয়েছে কী? কেনেথ টেরেন্স সলমন আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার, যিনি দীর্ঘদিন সাউথ আফ্রিকায় থেকে এবং দাবাচর্চা করে নিজেকে আন্তর্জাতিক মাস্টার পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন। কেনেথের ফিডে-রেটিং ২৫০০ ছোঁয়নি (গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাবের অন্যতম শর্ত) কিন্তু আফ্রিকান চেস চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার জন্য গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেছেন। ২০১২ সালে নাথান জেফেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দু’টি দারুণ আত্মপ্রত্যয়ী কথা বলেছিলেন কেনেথ। ‘আপনার জীবিকা কী?’ উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি পেশাদার দাবাড়ু, এটাই আমার জীবিকা’। দাবা মানচিত্রে ৩০ নম্বরে থাকা দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে এই বাক্যটি বলার তাৎপর্য আলাদা। আর বলেছিলেন যে, ‘শত প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা সত্ত্বেও হার স্বীকার করা যাবে না এবং ধৈর্য রাখতেই হবে।’ আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার পরেই অবশ্য একটা তেল-কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় কেনেথ ইউরোপের প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সামর্থ পান। তার দেড় বছরের মধ্যে কেনেথকে ইতালিতে চলে যেতে হয় আরও বড় প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশ নেওয়ার জন্য।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র তৃতীয় পর্ব: দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া ষোলো বছরের থিওফিলাস দেখে দেখে শিখেছিলেন দাবা
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক মানের দাবা প্রতিযোগিতা এবং অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ পরিকাঠামোর অভাব। কেনেথ নিজেও বারবার স্বীকার করেছেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট ও রাগবির তুলনায় দাবার গুরুত্ব কম। সরকারি উদ্যোগও যথাযথ নয়। ফলে অনেক প্রতিভাবান দাবাড়ু হারিয়ে গেছেন। ওয়াতু কোবেস, দিও সলোমন, ডেভিড গ্লুকম্যান, জর্জ মিশেলেকিসের মতো দাবাড়ু প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারেননি। কোবেস নয়ের দশকের শুরুতে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান দাবাড়ু হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার খেতাব অর্জন। ১৯৯২ থেকে ২০১৮ অবধি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দাবা-ওলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ। কোবেসের উত্থানের সময় দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবিদ্বেষের অন্ধকারের (অ্যাপার্থাইড) মধ্য দিয়ে টালমাটাল হয়ে এগোচ্ছিল। ক্রিকেট থেকে দাবা, সবেতেই তার ছাপ স্পষ্ট। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে দাবা প্রতিযোগিতায় খেলতে যাওয়ার সময় জনৈক নচ্ছার শ্বেতাঙ্গ কোবেস আর তাঁর বাবাকে ট্রেন থেকে নেমে যেতে বলেন। প্রতিযোগিতা-স্থলের পাশে একটি ছোট পুকুরে প্রতিযোগী শিশু দাবাড়ুরা যখন জলে নেমে আনন্দ করছে, তখন আরেক বদমাশ শ্বেতাঙ্গ এসে কোবেসকে জল থেকে তুলে দেন, ‘একজন কেফারকে জলে নামার অনুমতি পেলে শহরের অন্য কেফাররা সাহস পেয়ে যাবে।’ কোবেসকে তাড়িয়ে ফিরেছে এসব আতঙ্ক। কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে জন্মানোর জন্য যখন-তখন পুলিশি তাড়ায় পালাতে হত। শ্বেতাঙ্গ ক্ষমতাবানরা ইচ্ছেমতো অত্যাচার করত তাঁদের এলাকায় এসে। কোবেস বাঁচার পথ খুঁজেছেন দাবাতেই। ১৯৯০ সালে কোবেসের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে জার্মানিতে গিয়ে থাকার এবং দাবার প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন লুডেক পাকমান। লুডেক পাকমান চেকস্লোভাকিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার, চে গেভারা ও ফিদেল কাস্ত্রোর বন্ধু এবং কমিউনিস্ট। ১৯৫২-’৬৬ একটানা দাবা-ওলিম্পিয়াডে চেকস্লোভাকিয়া দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তবে জার্মানির দাবাজীবন কোবেসকে ‘মুক্তির স্বাদ’ দিতে পারেনি। সেখানকার চোরা বর্ণবিদ্বেষ, ইশকুলপাঠ্য ইতিহাস এবং বৈষম্যমূলক শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার কোবেসের মানসিক আতঙ্ক কিছুমাত্র কমাতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে, রাশিয়ায় যেখানেই খেলতে গেছেন, সুপ্ত বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য বা ইঙ্গিত আঁচ করে আহত হয়েছেন। কোবেস লিখছেন, নয়ের দশকের শেষে রাশিয়ার একটি প্রতিযোগিতায় এক বাচ্চা দাবাড়ু তাঁকে দেখিয়ে নিজের মাকে বলে ‘লুক, আ মাঙ্কি!’ মর্মাহত কোবেস লেখেন, “এরকম পরিস্থিতিতে এইরকম কথা শোনার পরে সুস্থ মেজাজে দাবা খেলা যায়? আমার বারবার মনে হত, ‘এখানে আমি কী করছি?’ ইউরোপের অধিকাংশের মানসিকতা এই যে, আফ্রিকার মানুষজন দুর্বল, নির্বোধ, মেধাহীন এবং অনুন্নত।”
কলম্বিয়ার পন্টাস কার্লসোনের অভিজ্ঞতা কোবেসের অভিজ্ঞতার অনুরূপ। ইশকুলপাঠ্য বইয়ে বারবার ‘নিগ্রো’ শব্দটি পড়তে কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সীমান্তে ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ পরিচয়ের জন্য অপমানিত হতে হতে তাঁর বিবমিষা জাগত। দাবার বোর্ড, নিজের ১৬টা পিস-পনের আক্রমণ সাজানোর মধ্য দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন পন্টাস। বলেছেনও সে-কথা, ‘এসব অপমানজনক আচরণ দেখলে আমার রাগ বেড়ে যায়, তার পরের গেমে ২০-২৫ দানের মধ্যে বিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে দিই।’ কয়েক দশক আগে বারাকা সাবাজ যুক্তরাষ্ট্রে একইরকম বিদ্বেষের সম্মুখীন হতেন। কৃষ্ণাঙ্গ, তদুপরি মেয়ে। শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা পাত্তা দিতে চাননি। ‘ধুর, একে এক্ষুনি হারিয়ে দেব’, ‘এ খেলতে পারে নাকি?’ ইত্যাদি কথা কিংবা প্রতিপক্ষ দাবাড়ু মুখের ওপর সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে– বারাকা এসবের জবাব দিতেন বোর্ডে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিস্ময় প্রতিভা’ কিংবা ‘মেয়ে ফিশার’ ইত্যাদি নামে ডাকা হত তাঁকে। হয়তো অত বিদ্বেষ আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ার পাহাড়প্রমাণ চাপেই হঠাৎ হারিয়ে গেলেন বারাকা। নিঃশব্দে নক্ষত্র খসে পড়ল। ওয়াতু কোবেস দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে এসেছিলেন বহু বছর হয়ে গেল। দাবার প্রশিক্ষণ দেন প্রতিভাবান দাবাড়ুদের। আফ্রিকা মহাদেশের দাবাড়ুরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন, তাঁরা ভাবেন যে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের দাবাড়ুরা উচ্চদক্ষতার– ইতিহাসজাত বর্জ্যসম এই ধারণাটিই মহাদেশের দাবার অগ্রগতির সবচেয়ে বড় শত্রু। ওয়াতু কোবেসের দাবামেধার ঝলক দেখা যাবে নিচের এই গেমটিতে। ২০০১-’০২ সালের ফিডে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি খেলেছিলেন হাঙ্গেরির পিটার লেকোর বিরুদ্ধে–
২৩ নম্বর দানে কোবেস সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন এক্সচেঞ্জ স্যাক্রিফাইস করার, অর্থাৎ নিজের রুক খেতে দিয়ে বিপক্ষের বিশপটি মারা। তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি পন জিতলেন। আর নিজের সাদা বিশপটিকে সক্রিয় করলেন। লেকোর মতো সুপারগ্র্যান্ডমাস্টারের বিরুদ্ধে এই সামান্য ক্ষতিপূরণকে পিষে পিষে জয়ের দিকে এগোনো সহজ কাজ না। ৪০ নম্বর দানে সাদা তিনটি পনের একটা শক্তিশালী শৃঙ্খল তৈরি করল b3-c4-d5 স্কোয়ারগুলিতে। আর, ওই সাদা বিশপটি কোবেসের ভয়ঙ্করতম অস্ত্র হয়ে উঠল ক্রমশ। লেকোর প্রতি-আক্রমণের সম্ভাবনাগুলিকে ভোঁতা করে দিতে দিতে নিজের c-file ও d-file এর অপ্রতিরোধ্য দু’টি পনকে (passed pawns) কুইন বানানোর লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া– কোবেস অসাধ্য সাধন করলেন। ৫৯ নম্বর দানে নতিস্বীকার করেছিলেন পিটার লেকো।
দু’জন দাবাড়ুর উল্লেখ করে আপাতত বিরতি নেওয়া যাক। মিশরের ফারিদ বাস্তা সোহেইর। ১৯৯৩ সালে ৩৬ বছর বয়সে মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জন করেছিলেন। ৪৫ বছর বয়সে, যখন ক্রীড়াবিদরা, বিশেষত মহিলা ক্রীড়াবিদরা অবসরে চলে যান, তখন ফারিদা আফ্রিকান উইমেন্স চেস চ্যাম্পিয়নশিপে রানার-আপ হয়ে মহিলা বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন করেছেন। মোট ছ’বার দাবা-ওলিম্পিয়াডের মহিলা বিভাগে ইজিপ্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, শেষবার ২০১০ সালে, ৫৩ বছর বয়সে। ইজিপ্ট তার পরে অন্য মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার ও আন্তর্জাতিক মাস্টার পেয়েছে, কিন্তু ফারিদ সোহেইর পরবর্তী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক।
পার্পিচুয়াল ওগবিয়োয়ো। নাইজেরিয়ার মাইদুগুরিতে জন্ম। কিন্তু জন্মের তিন বছরের মধ্যেই বাবা-মার সঙ্গে বাধ্যত পালিয়েছিলেন জন্মভিটে ছেড়ে। ধর্মীয় অসন্তোষ। পাড়া-প্রতিবেশ পুড়ে যাচ্ছিল। মায়ের কাপড়ের দোকানে বসে সেলাই করার ফাঁকে ফাঁকে পড়া আর দাবাচর্চা পার্পিচুয়ালের। আশপাশে দাবাখেলার পরিবেশ নেই, স্থানীয় পরিচিতরা কেউ দাবা খেলতে জানত না। অপেক্ষা করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত। ২০১৮ সালে দাবা-ওলিম্পিয়াডে নাইজেরিয়ার হয়ে খেলেছেন। ২০২১ এবং ২০২২ সালে পরপর দু’বার নাইজেরিয়ার জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতা জিতেছেন। তবুও তাঁর আক্ষেপ নাইজেরিয়ার দাবায় ভালো স্পনসর নেই। পুরুষতন্ত্রের বাধা, বর্ণবিদ্বেষের আঘাত দুই-ই সহ্য করেছেন পার্পিচুয়াল। অনটনের সঙ্গে লড়ে ফিডে-রেটিং ১৯১০-এ পৌঁছেছিলেন। দাবার সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন অনেক বাকি জেনেও নাইজেরিয়া ছেড়ে যাননি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য নিজের গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জনের পাশাপাশি ’প্রোমোটিং কুইন’ নামে দাবা অ্যাকাডেমি খোলা। আরও মহিলা দাবাড়ু উঠে আসুক, দাবার মধ্য দিয়ে জীবনের সাফল্য খুঁজে পাক তারা– এটাই পার্পিচুয়ালের উদ্দেশ্য।
‘Chess has been a great way to meet people and it has helped me to develop the confidence to go into many other intellectual areas.’– Frank Street.
খেলোয়াড়কে ঝুঁকি নিতেই হয়। খেলার মাঠে বা খেলার বোর্ডে শুধু না, জীবনেও ঝুঁকি নিতে হয়। আর, এই ঝুঁকি নেওয়া, বিশেষত দাবায় মোটেই ভাগ্যের ওপরে নির্ভরশীল না। আর্থ-সামাজিক অবস্থান, ব্যক্তিগত স্থিতি-সংকট এবং খেলোয়াড়ের অনুশীলনজাত দক্ষতার ওপরে ঝুঁকির ফলাফল নির্ভর করে। দাবাকেই একমাত্র পেশা হিসেবে বাছার সিদ্ধান্তে ইউরোপীয় দাবাড়ু ও আফ্রিকান দাবাড়ুর ঝুঁকির পরিমাণ বদলে যায়। তবু, দাবাকে ভালোবেসে অনেকেই পেশাদার দাবাড়ু বা প্রশিক্ষক হতে চান। তারপরও ‘সাফল্য’ খুব সহজ না, অনেক পিন আর ডিসকভার্ড অ্যাটাকের বিপদ পেরতে হয়। আফ্রিকান দাবার প্রগতিতে সবচেয়ে বড় বাধা দাবাড়ু আর প্রশিক্ষকদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিজেদের মেধা আর শ্রমের ওপরে ভরসা যে কোনও ক্রীড়াবিদের মূলগত ভিত্তি। দ্বিতীয়ত, দাবার জন্য নিশ্চয়তাসম্পন্ন, থিতু পরিবেশ প্রয়োজনীয়। উন্নত পরিকাঠামো আর নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা আয়োজন এর সঙ্গেই জড়িত। ক্যামেরুন, ঘানা, নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্টের দাবা-সংস্থা ঠোক্কর খেতে খেতে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু, এগিয়ে চলেছে। ডেবোরাহ এবিম্বো-এরে কুইকপেনের মতো নতুন প্রজন্মের অনন্ত সম্ভাবনাময় দাবাড়ুরা উঠে আসছেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে নাইজেরিয়ার মহিলা দাবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। তাঁর বর্তমান ফিডে-রেটিং ১৯০০। আরও অনেক দূর যাবেন। আর, ডেবোরাহ-রা যতদূর যাবেন, ততদূর উত্তরণ হবে সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের দাবার। বহুশতকব্যাপী লাঞ্ছনার জবাব তৈরি হবে। কিছু টাটকা পরিসংখ্যান থাক, আফ্রিকা মহাদেশের দাবার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রগতির হদিশ পেতে–
আফ্রিকা মহাদেশে গ্র্যান্ডমাস্টারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইজিপ্টে। ৫ জন। আর ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ১৪ জন। দক্ষিণ আফ্রিকায় সলোমন এখনও একমাত্র গ্র্যান্ডমাস্টার। আইএমের সংখ্যা ৭। তবে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত দু’জন গ্র্যান্ডমাস্টার তৈরি হতে পারেন। জিম্বাবোয়ের মোট ৪ জন আইএম। এই দেশের দাবাড়ুদের গড় রেটিংও বেশ উন্নত। নিয়মিত দাবা প্রতিযোগিতা সুফল এনে দিয়েছে। ইথিওপিয়ায় বর্তমানে সর্বোচ্চ ফিডে-রেটিং আয়দাগনুহেম আবেরার– ২১২০। ঘানাতে ফিডে-রেটিং থাকা দাবাড়ুর মোট সংখ্যা ৬১। আইএম একজন। আইভরি কোস্টে মোট ৪৫ জন দাবাড়ুর ফিডে রেটিং আছে। সর্বোচ্চ নিকোলাস কোগানের– ২০৭০। লিবিয়ায় মোট ৯৯ জন দাবাড়ু রেটিং পেয়েছেন, সর্বোচ্চ রেটিং হুসেইন আসাব্রির– ২২০২। মরক্কোর প্রথম এবং একমাত্র গ্র্যান্ডমাস্টার হিশাম হামদৌশি। আইএমের সংখ্যা ৫ জন। নাইজেরিয়াতে ৬ জন মাত্র ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার থাকলেও, গড় রেটিং আফ্রিকার অন্য দেশগুলির তুলনায় ভালো। সেনেগালে মাত্র ১০ জন দাবাড়ুর ফিডে রেটিং আছে, সর্বোচ্চ রেটিং টমাস বোদিন-হুলিনের– ১৮১২।
মহিলা দাবাড়ুদের পরিসংখ্যানে ইজিপ্ট সবচেয়ে আগে রয়েছে। ৪ জন মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার এবং ৫ জন মহিলা আইএম। দক্ষিণ আফ্রিকাও অনেকটা এগিয়ে। একজন মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার এবং ১৩ জন মহিলা আইএম। জিম্বাবোয়েতে শতাধিক ফিডে-রেটিংপ্রাপ্ত মহিলা দাবাড়ু আছেন। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এঁদের অধিকাংশের জন্ম ২০০০ সালের পরে। অর্থাৎ অনতিবিলম্বে খেতাবধারীর সংখ্যা বাড়তে পারে। অ্যাঙ্গোলায় মোট ৫৪ জন ফিডে-নিবন্ধীকৃত মহিলা দাবাড়ু আছেন, সর্বোচ্চ ফিডে-রেটিং ফ্লোরা আফোন্সোর– ২০৫০। ঘানায় ফিডে-রেটিংপ্রাপ্ত মহিলা দাবাড়ুর সংখ্যা ১৫, এঁদের প্রায় সকলেরই জন্ম ১৯৯০-র পরে। আইভরি কোস্টে আছেন ৭ জন, এঁদের সবার জন্ম ২০০০ সালের পরে। উপর্যুক্ত দেশগুলির সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দাবাসংস্থাগুলি আন্তরিক হলে কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বদাবার মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল হবে আফ্রিকা মহাদেশের খ্যাতি।
তথ্যঋণ
দ্য চেসড্রাম, চেস-ডট-কম, গ্রাউন্ডআপ, চেসহাব, চেসগেমস এবং ফিডের ওয়েবসাইট
আর্চি ওয়াটার্স পেপার্স
চেস প্রবলেমস- থিওফিলুস থম্পসন
ফিডের সাম্প্রতিক রেটিং তালিকা
……………………………………………………………………………….সমাপ্ত………………………………………………………………………..