‘কৃষ্ণপ্রসন্নর খেরোর খাতা’ আর ‘মৃত্যুর জবানবন্দি’ তাই আদতে পৃথক থাকতে পারে না, দু’য়ে মিলেই এক আখ্যান। যা উপন্যাসের আঙ্গিক নিয়েও পাঠকের সঙ্গে অন্যরকম মোলাকাত প্রত্যাশা করছে। প্রায় ডায়রির মতো ব্যক্তিগত লেখা আর সংবাদের মতো বাইরের লেখা, আন্তর্জালের তথ্য আর আমাদেরই চেনা লেখকদের ভাবনার কোলাজ যখন উদ্ধৃতির বহিরাগত চরিত্র ঝেড়ে ফেলে উপন্যাসের রক্তমাংসে মিশে যায়, তখন বাংলা উপন্যাসের কথনভঙ্গিই অনেকখানি প্রসার পেয়ে যায়। আর যে-লেখক ঢ্যাঁড়া পিটে বলেই দেন ‘এই বইখানির আর একটি বিশেষ পরিচয় হল: plagiarism বা কুম্ভীলকবৃত্তি অবলম্বন করে রচিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা বই’ তিনি যে ন্যারেটিভের ধারণা নিয়ে বেশ এক যুতসই খেলার ভিতর পাঠককে টেনে আনবেন, তা অনুমেয়।
যমে-মানুষে টানাটানি বলাই সমীচীন। কথাটার মধ্যে একখানা ছবি আছে– যেন, মানুষ বলছে ‘যাব না’ আর যম বলছে ‘চল ব্যাটা’– এরকম একটা মুহূর্ত। তবে এখানকার টানাটানি ঠিক ওরকম নয়। যদি যমালয়ে জীবন্ত মানুষ পৌঁছে যায়, এবং সে-মানুষ যদি নচিকেতা হন, তাহলে যমের দুয়ার প্রশ্ন-কাঁটায় ভরে ওঠাই স্বাভাবিক। ঘটল ঠিক সে’রমটাই। টানাটানি চলল মৃত্যু হিসাবে পরিচিত একটি মুহূর্ত নিয়ে।
মৃত্যু কি জীবনের অংশ? অরিন্দম চক্রবর্তী ধরিয়ে দেন দার্শনিক লুডভিহ হ্বিটগেনস্টাইনের মন্তব্য, ‘মৃত্যু জীবনের কোনও ঘটনা নয়।’ সম্ভবত সে কারণেই, মৃত্যুকে যখনই কল্পনা করে জীবন, তখন তৃতীয় সত্তা বা দর্শকের জায়গা থেকে দেখার রীতি। মানুষের আত্মা যেভাবে নিজেকে দেখে– বিভূতিভূষণ থেকে হান কাং পর্যন্ত– প্রেক্ষিত বদলালেও একই কল্পনার বিস্তার। এই কল্পনা অবশ্য ব্যক্তির সঙ্গে মৃত্যুর সম্পর্ক। যে-মৃত্যুকে মরণরসিক কবি শ্যাম সমান বলতে পারেন; বা, ‘ওগো মরণ’ বলে সম্বোধন করতে পারেন। যে-মৃত্যু আউটরাম ঘাটে সন্ধ্যার সোনালি মেঘে মিলিয়ে যাওয়া প্রার্থনা করে। সে-মৃত্যু জীবনের ঘটনা নয় বলেই কল্পনায় তার বিবিধ উদযাপন। উৎসব হোক বা কমলালেবুর করুণ মাংসের মতো উপস্থিতি, যেভাবেই হোক না কেন, মৃত্যুকে সচরাচর জীবন একটু দূর থেকেই দেখে।
এই দূর থেকে দেখাটা আর একটু ছড়িয়ে ভাবা যায়, যদি একজন মানুষ তাঁর জীবনে ক্রমাগত অন্যের মৃত্যুর সাক্ষী থেকে যান। রবীন্দ্রনাথ যেমন আত্মীয়বিয়োগ উপলব্ধি করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই, আর আমরা দেখেছি যে, সেই বেদনা তাঁর জীবন ও মৃত্যুচিন্তাকে ক্রমশ বোধের একরকম পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মরণ যে জীবনতরী বাইছে, এ-কথা অনতিক্রম্য জেনেই অমল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া-র ঋত উপলব্ধি স্পর্শ করা যায় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুভাবনাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলে। বলার কথা এখানে এই যে, প্রিয়জনের মৃত্যুতে ক্রমাগত চলতে থাকে জীবন-মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের চিন্তার নির্মাণ-বিনির্মাণ। অকালমৃত্যু আরও অন্য অভিঘাত বয়ে আনে। তা যেমন রবীন্দ্রনাথের জন্য সত্যি, অন্য যে-কারওর জন্যই।
অতএব যিনি জানলেন যে, কাকিমার ভাই খোকনমামা খুন হয়ে গিয়েছেন ভিন্নধর্মী বন্ধুদের ছুরিতে, বাঁশের সাঁকোর উপরে, মৃত্যু সম্পর্কে তিনি প্রশ্নাতুর হবেনই। এই মাত্র একটি মৃত্যু তো নয়, একজীবনে বহু জীবনের মৃত্যুর শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়, হয়তো দুর্ভাগ্যক্রমেই। ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যু একবারই। কিন্তু ব্যক্তিজীবন যখন বহুজীবনের সঙ্গে মিশে থাকে, তখন বারেবারেই ফিরে আসে মৃত্যুর ঘটনা এবং অভিজ্ঞতা। সেই মৃত্যু আসলে এক-একটি বিন্দু যা ফিরে দেখার সুযোগ করে দেয় অতীত জীবনটাকে। নাস্তি যেন খুলে দিচ্ছে অস্তির ধারণা, মরণকে দিয়ে জীবনতরী বাওয়ানোর কাজটা এভাবেও করা যেতে পারে। কৃষ্ণপ্রসন্ন তাঁর খেরোর খাতায় ঠিক সেই কাজটিই করেছেন। যমের সঙ্গে বহেসের অছিলায় তিনি জীবন আর মৃত্যুকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েই টানাটানিতে ফেলে দিয়েছেন। মৃত্যু অবধারিত। এবং একই সঙ্গে অজ্ঞেয়-রহস্যময়। কৃষ্ণপ্রসন্নর যাবতীয় যুক্তি-তক্ক মৃত্যুপর্দার ওপারে জীবনের ঘন সন্নিবেশকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। সকল জীবন প্রেমে-সচ্ছলতায়-কীর্তিতে মহিমাময় নয়। বেশিরভাগই ধুলোবালির, অকিঞ্চিৎ। তবু তো জীবন, মৃত ঘাস কিংবা মৃত মাছি তো নয়। এই যে জীবনের আকস্মিক সমাপন বিন্দু বলে মৃত্যুর দায়ী হয়ে থাকা, এটিকেই যেন সতর্ক পরখ করে দেখতে চাইছে খেরোর খাতার মৃত্যু-লিপি।
এ-পর্যন্ত ঠিকই ছিল। আত্মজীবনীর আদল আড়াল করেও কৃষ্ণপ্রসন্ন আর অজয় গুপ্ত বেশ সত্তা বদলাবদলি করে আমাদের ডুবিয়ে রেখেছিলেন জীবন-মৃত্যুর মামলাটিতে। এবার, জীবনের যাবতীয় অভিযোগের উত্তরে যখন মৃত্যুর জবানবন্দি হাতে এল, তখন যেন মৃত্যু ধারণাটিরই এযাবৎ ভাবনার পর্বান্তর। জন্ম-মৃত্যু এখানে নেচে ওঠে যুগপৎ। সভ্যতা যেন নিজের বিকাশ ও পরিণতিকে মুখোমুখি দেখতে পায় বা চায়। পুরনো কথাটি এখানে মনে করা যেতে পারে যে, মৃত্যু সমাপন নয়। সূচনা। অতএব মৃত্যু নিজেই যখন কথা বলতে শুরু করে, তখন দেখা যায় জীবন শুধু কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নেই, তার মাথা নিচু হয়ে এসেছে। সূচনা হয়েছে অন্য কথনের।
…………………………………………..
রবীন্দ্রনাথ যেমন আত্মীয়বিয়োগ উপলব্ধি করেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই, আর আমরা দেখেছি যে, সেই বেদনা তাঁর জীবন ও মৃত্যুচিন্তাকে ক্রমশ বোধের একরকম পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মরণ যে জীবনতরী বাইছে, এ-কথা অনতিক্রম্য জেনেই অমল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া-র ঋত উপলব্ধি স্পর্শ করা যায় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুভাবনাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলে। বলার কথা এখানে এই যে, প্রিয়জনের মৃত্যুতে ক্রমাগত চলতে থাকে জীবন-মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের চিন্তার নির্মাণ-বিনির্মাণ। অকালমৃত্যু আরও অন্য অভিঘাত বয়ে আনে। তা যেমন রবীন্দ্রনাথের জন্য সত্যি, অন্য যে-কারওর জন্যই।
…………………………………………..
যমরাজ সওয়াল করেছিলেন যে, ‘মৃত্যু’ একটি বিশেষ্য পদ মাত্র। দেখা যাবে, মানুষ তাকে ব্যবহার করছে মানুষেরই বিরুদ্ধে। মৃত্যু তাই এক হিসাবে জীবনের বোড়ে মাত্র। তা রাজনৈতিক, কখনও ব্যবসায়িক, কখনও পুঁজিচালিত শিশ্নদোরতন্ত্রী সভ্যতার ‘কো-ল্যাটরাল-ড্যামেজ’ মাত্র। অর্থাৎ মৃত্যু যে মৃত্যু, যা কিনা অমোঘ শাশ্বত আবহমান ইত্যাদি প্রভৃতি, তাই-ই মানুষের হাতে বস্তুত ক্রীড়নক। মানুষের সভ্যতার প্রতি প্রয়োগ করা মানুষের সবথেকে বড় অস্ত্র বোধহয় মৃত্যুই। মৃত্যু তার জবানবন্দিতে যখন সংবাদ ছেনে-ছেনে মৃত্যুময় এই পৃথিবীর নমুনা তুলে ধরেন, যা মানুষেরই রচনা– তখন আমরা থতমত খেয়ে যাই। মৃত্যুর অদৃষ্টবাদ এখানে এসে নাকচ হয়ে যায়। নিশ্চিতই মৃত্যু একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা আসবেই, যাকে রোখা যাবে না। বাস্তব নিয়মেই তা সত্যি। কিন্তু সমান্তর একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলতে থাকে, যা কিনা জীবনকে থেঁতলে দিয়ে মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। মানুষ তবে মৃত্যুকে, অমোঘ কালকে দোষ দেবে নাকি নিজেকে?
……………………………………….………………….
পড়তে পারেন অন্য লেখাও: হিচকক থেকে শান্তিগোপাল, বৈচিত্রে ভরপুর চৌরঙ্গীর উৎসব সংখ্যা
……………………………………………………………
‘কৃষ্ণপ্রসন্নর খেরোর খাতা’ আর ‘মৃত্যুর জবানবন্দি’ তাই আদতে পৃথক থাকতে পারে না, দু’য়ে মিলেই এক আখ্যান। যা উপন্যাসের আঙ্গিক নিয়েও পাঠকের সঙ্গে অন্যরকম মোলাকাত প্রত্যাশা করছে। প্রায় ডায়রির মতো ব্যক্তিগত লেখা আর সংবাদের মতো বাইরের লেখা, আন্তর্জালের তথ্য আর আমাদেরই চেনা লেখকদের ভাবনার কোলাজ যখন উদ্ধৃতির বহিরাগত চরিত্র ঝেড়ে ফেলে উপন্যাসের রক্তমাংসে মিশে যায়, তখন বাংলা উপন্যাসের কথনভঙ্গিই অনেকখানি প্রসার পেয়ে যায়। আর যে-লেখক ঢ্যাঁড়া পিটে বলেই দেন ‘এই বইখানির আর একটি বিশেষ পরিচয় হল: plagiarism বা কুম্ভীলকবৃত্তি অবলম্বন করে রচিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা বই’ তিনি যে ন্যারেটিভের ধারণা নিয়ে বেশ এক যুতসই খেলার ভিতর পাঠককে টেনে আনবেন, তা অনুমেয়। সেখানে কোনওরকম ভুলচুক নেই। এই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যে-কথাটি ছড়িয়ে থাকে তা হল– অখিল ক্ষুধায় এই সভ্যতা কি নিজেই নিজেকে খাবে? ক্ষুধাই মৃত্যু– বলে আমাদের বেদ। এই ধারাবাহিক মৃত্যুর দিকে টেনে আনা তাহলে রাজনৈতিক অভিসন্ধি, এবং তা থেকে ফিরে দাঁড়ানো তাহলে মানুষের রাজনীতি! এরকম এক ভাবনার দিকেই পাঠক পৌঁছতে থাকবেন ক্রমশ। এবং নিজের দিকে তাকিয়েই যেন বলে উঠবেন, জীবন থাকতে মানুষ জীবনের এই সত্যি ঠিক কবে বুঝে উঠতে পারবে? উপন্যাস অতএব এক জ্যান্ত প্রশ্নচিহ্ন হয়েই পাঠকের সঙ্গে থেকে যেতে চায়, সম্ভবত আমৃত্যু।
[ রোববার ডিজিটালের সম্পাদকীয় দপ্তরে একটি নতুন নিয়ম চালু হয়েছে: আলোচকের কথাবার্তা বইয়ের ভিতর অন্তত এক রাত রেখে দেওয়া। নইলে বইয়ের পিছনে তাকে নিয়ে কথাবার্তা চালানো মোটে সভ্য ব্যাপার হতে পারে না। উপরের লিখিত অংশটিও রেখে দেওয়া হয়েছিল ‘অবভাস’ প্রকাশিত অজয় গুপ্তের লেখা ‘কৃষ্ণপ্রসন্নর খেরোর খাতা এবং মৃত্যুর জবানবন্দি’ বইটির ভিতর। পরদিন এসে হাতে পাওয়া গেল বইয়ের জবানবন্দি। দু’য়ে মিলে তবে পূর্ণতা পায় আলোচনা, বাকিটা অতএব– ]
……………………………………………………………….
পড়তে পারেন অন্য লেখাও: তোমার কবিতার ঘোরগ্রস্ত খেলার পুতুল নই কেউ আমরা
…………………………………………………………………..
আহ্লাদই হয়। আমার ভিতর বলার মতো অনেক কিছুই আলোচনার চোখে পড়েছে। সবটা নয়। তা হওয়া সম্ভবও নয়, জানি। তাহলে বই আর বই-আলোচনার কোনও ফারাক থাকত না, চাল আর চালকুমড়োর সুকুমারীয় প্রবাদ চিরকালীন। দেখতে পাচ্ছি, আলোচনা অরিন্দম চক্রবর্তীর শরণ নিয়েছে। যে পর্যন্ত এগিয়েছে আর একটু এগোলে দেখতে পেত, এই সময়ের অন্যতম সক্রিয় দার্শনিক শোক-দুঃখ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মহাভারতের শান্তিপর্বের প্রজ্ঞাবতী বিহঙ্গ-জননী পূজনীর কথা বলেছেন। সেই পাখি মা বলছেন, ‘কেবল যারা দুঃখ ঠিক করে টের পেয়ে জানেনি তারাই সভার মধ্যে বসে কথা দিয়ে দুঃখ বোঝবার চেষ্টা করে।’ অর্থাৎ শোক যদি শুধুই ব্যক্তিগত হয়, তাহলে তা ছোট পরিসরে আটকা পড়ে যায়। অতএব অরিন্দম মনে করিয়ে দিচ্ছেন পল ভ্যালেরি-র কথা, What is of value for one person only, has no value. জীবন-মৃত্যুর বহেসটিকে, যা আলোচনা উল্লেখ করেছে, তাকে আমি তাই এক সর্বজনীনতায় পৌঁছে দিতে চেয়েছি। যেখানে ‘আমি’ নেই। সম্মিলিত জীবন আর সম্মিলিত মৃত্যুর ভিতর গভীর খেলা করছে আমাদের ইতিহাস। আমাদের অধোগতির ইতিবৃত্ত; জীবনবিমুখ আমাদের জীবনের ছদ্মবেশ; আমাদের আত্মঘাতী আমিসর্বস্বতা; এই আমি-র থেকে মুক্তি দিতেই জীবন-মৃত্যুর কথাগুলো আমাকে পাড়তে হয়েছে।
আলোচনা খেয়াল করে দেখতে পারত যে, গোড়ার দিকে যে সব মৃত্যুর অভিজ্ঞতা তা ‘আমি’র (যদি ধরে নেওয়া হয় আমি আসলে লেখক) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ক্রমশ আখ্যান সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। তা সাহিত্য, সংবাদ, ইতিহাস ছুঁয়ে এক বৃহত্তর প্রেক্ষায় নিজেকে হাজির করতে চাইছে। একার কান্নার হয়তো গুরুত্ব আছে। তবে, বই হিসাবে আমি আসলে এক সমবেত যন্ত্রণার দিকে এগোতেই চাইছিলাম। মৃত্যুর অমোঘতার দোহাই দিয়ে মানুষ, মানুষেরই বিপক্ষে জীবনঘাতী ষড়যন্ত্র রচনা করে চলেছে ক্রমশ। ব্যক্তিগত মৃত্যু থেকে ইতিহাসে ফেলে মৃত্যুকে এক চলমান ঐতিহাসিক ঘটনা হিসাবে তা-ই দেখতে চাইছিলাম। সন্দেহ নেই, প্রসারিত অর্থে রাজনীতির কথাই আমি বলতে চেয়েছি এসবের ভিতর। মৃত্যু নামক অদৃষ্টবাদের যে জন্মদাগ আমাদের সঙ্গী, তাকে অস্বীকার না করেই তার ভিতর থেকে ভাববাদের পদাবলি আমি নাকচ করছিলাম। গাঁথতে চাইছিলাম কার্যকারণ সূত্রে। আর সেই সূত্রেই ব্যক্তির ইতিহাস থেকে সমষ্টির ইতিহাসের স্থানাঙ্কে আমাকে তুলে আনতে হয়েছে আখ্যনকে। আলোচনা সে-প্রসঙ্গ খানিক খানিক ছুঁয়েছে।
আর একটা কথা, এই অবকাশে একবার প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্যকে মনে করি। রাজনৈতিক উপন্যাসের স্বারূপ্য সন্ধানের আলোচনায়, একেবারে গোড়ার দিকেই টমাস মানের এক বীজগর্ভ উক্তি তিনি সকলকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন– ‘আমাদের সময়ে মানুষের নিয়তি তার তাৎপর্য খুলে দেয় রাজনীতির ভাষায়।’ আমার ধারণা, মৃত্যুর নিয়তি নিয়ে আমার যে-প্রকল্প এবং সেখানে রাজনীতির ভাষায় খুলে যাওয়া তাৎপর্য, রসিক পাঠক নিশ্চিতই বিশদে খেয়াল করবেন, বিস্তারে অনুধাবন করবেন। যেমন আলোচনা খানিক করার চেষ্টা করেছে।
এটুকুই।
কৃষ্ণপ্রসন্নর খেরোর খাতা এবং
মৃত্যুর জবানবন্দি
অজয় গুপ্ত
অবভাস
৫২৫ টাকা