জয়াদির দু’হাতে দুটো ঘড়ি। না, কোনও স্টাইল নয়। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জন্য বিদেশে থাকে তাই সেদেশের সময় মিলিয়ে আলাদা ঘড়ি। দু’হাতে সংসার সামলানোর অভিনব কৌশল। ওঁর শিল্প ও জীবন একসঙ্গে চলে। সংসার নিজের কাছে রেখে সেটাকে পরিচালনা করার প্রচেষ্টার কোনও কমতি নেই। আর ওঁর মধ্যে যেটা আরও আছে প্রচণ্ড আন্তরিকভাবে, তা হচ্ছে বাঙালিপনা। এখনও সাদা চুলেও ফিক করে ওই ঠোঁট টিপে ধন্যি মেয়ে মার্কা মুচকি হাসিটি আগলে রাখতে পেরেছেন।
১৯.
তখনও বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বইয়ে বসবাস উঠে আসেনি। ওখানে থাকাকালীন বন্ধু রঞ্জন ঘোষাল আমাদের একটা যৌথ শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করে আলিয়ঁস ফ্রাঁসেতে। আমরা বলতে দু’জন– মিলন মুখোপাধ্যায় আর আমি। মিলন মুখোপাধ্যায় লেখালেখিতেও খুব নাম করেছেন। দেশ পত্রিকায় তখন ‘মুখ চাই মুখ’ লিখে ভীষণ জনপ্রিয়। কিশোর-কিশোরীদের, বিশেষ করে কিশোরীদের দিন কাটে কীভাবে সেইটা মাথায় রেখে আমি একটা সিরিজ করে ছবি এঁকেছিলাম। একদিন এগজিবিশনের মাঝখানে বিকেল নাগাদ একজন লোক হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে হলে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, কোন কাগজপত্র আছে, মানে ক্যাটলগ, কার্ড কিছু একটা? একটা ক্যাটালগ দেওয়া হল, সেটা নিয়েই যেমন স্পিডে এসেছিল, তেমনি বেরিয়ে গেল। আশ্চর্য! ঘণ্টাখানেক বাদে আবার লোকটা ফেরত এলো এবং সঙ্গে একজন সুন্দরী ভদ্রমহিলা। কাছে আসার পর দেখে আমরা হতবাক– এ তো ধন্যি মেয়ে! মুখোমুখি জয়া ভাদুড়ি! তখনও আমরা জয়া বচ্চন বলতাম না। সেই প্রথম সামনাসামনি। অল্প খানিকক্ষণ গল্পগুজব, তারপরে দু’জনের দুটো ছবি কিনে নিয়ে চলে গেলেন।
পরের দৃশ্য মুম্বই। চাকরিতে বদলি হয়ে যখন মুম্বই এলাম তখন এখানে এসেই তো চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। রবিবারে, রাত-বিরেতে ছবি আঁকি। অফিস চলছে ছবিও। এখানে এসে কিছুদিনের মধ্যেই একটা এগজিবিশন করেছিলাম নারিমান পয়েন্টে, বাজাজ আর্ট গ্যালারিতে। মুম্বই এসে একটা নতুন সিরিজ। সেই এগজিবিশনের জন্য বচ্চন বাড়িতে ইনভাইটেশন কার্ড পাঠিয়েছিলাম। বেঙ্গালুরু থেকে উনি আমাকে মনে রেখেছিলেন এবং এসেছিলেন একা একাই, একদিন দুপুরবেলা, অনেকখানি সময় নিয়ে। দুপুরবেলা গুছিয়ে শীতে রোদ পোয়াতে পোয়াতে গল্প করার মতো, চা খেতে খেতে আমার আর মধুমিতার সঙ্গে নানা গল্প করেছিলেন। সেদিনের সেই আলাপচারিতা বা ওই গল্পে গল্পে নানা আড্ডায় দারুণভাবে মিশে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই আমরা পাকাপাকিভাবে পরিচিত হয়ে রইলাম। পেয়ে গেলাম ‘জয়াদি’ বলার অধিকার। সে এক মস্ত বড় পাওনা। অতএব অন্যান্য অনুষ্ঠান, নাচ, গান-বাজনা, ছবির এগজিবিশন, দুর্গাপুজো ইত্যাদিতে নানা জায়গায় দেখা হতে থাকল মাঝে মাঝে এবং দেখা হলেই ভিড়ের মধ্যেই চিনতে পারেন এমনই সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল।
কখনও কখনও একা নয় সঙ্গে দলবলও থাকত এমনও হয়েছে। জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে আমার একটা বড় করে শো চলছিল, জীবনানন্দ দাশের কবিতার মেজাজ নিয়ে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ শিরোনামে। বড় সাইজের জলরঙের কাজ। এগজিবিশনের ক্যাটালগ ইত্যাদি লেখার কাজটা যত্ন করে করেছিল নানক গাঙ্গুলি। সেখানে জয়াদি এসেছিলেন, একা নয় সঙ্গে এনেছিলেন আমার ভীষণ প্রিয় একজন সুন্দরী অভিনেত্রী, সোনালি বেন্দ্রে-কে। ঠিক যেন মা দুর্গা এসেছেন সঙ্গে কন্যা সরস্বতীকে নিয়ে। ফিল্মে যত সুন্দর দেখতে, সামনাসামনি তার চেয়ে আরও অনেক গুণ। মুখে একটি মৃদু হাসি সবসময় আটকে আছে যেন। জয়াদিকে দেখেছি দলবল বা বেশি মানুষের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন এবং একটা লিড করার প্রবণতা। আমাদেরও তো মজা, ওঁর আশপাশের অনেক নামীদামি মানুষ, গুণী মানুষদের সঙ্গে আলাপ হয়ে যেত সেই সুবাদে।
আর একবার জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য’ এই শিরোনামে প্রীতীশ নন্দীর একটা নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়। সেই শোয়ে অমিতদা মানে অমিতাভ বচ্চন এবং জয়াদি– দু’জনেই এসেছিলেন। শোয়ের ফাঁকে একসময় আমরা গ্যালারির লাগোয়া রেস্তোরাঁ ‘সামোভার’-এ চা খেয়েছিলাম। প্রীতীশদা, রিনাদি, অমিতদা, জয়াদির সঙ্গে বসে চা আর শিঙাড়া খাওয়ার কথা কখনও ভোলা যাবে না। আর একটা ব্যাপারও কখনও ভোলা যাবে না, সেটা হল জয়াদির দু’হাতে দুটো ঘড়ি। না, কোনও স্টাইল নয়। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জন্য বিদেশে থাকে তাই সেদেশের সময় মিলিয়ে আলাদা ঘড়ি। দু’হাতে সংসার সামলানোর অভিনব কৌশল। ওঁর শিল্প ও জীবন একসঙ্গে চলে।
সংসার সামলানোর কথাই যখন উঠল তখন বলি, ঘরের কাজের যাবতীয় খুঁটিনাটি নিজের হাতেই রাখতে চান জয়াদি। একবার অসাধারণ একটা অনুষ্ঠান করলেন পুরোটা নিজে। অমিতদাকে গোপন করে বা বলতে গেলে ওঁকে অবাক করে দিতেই সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন। আমন্ত্রণ, আহ্বান, আপ্যায়নের একটা চিরকালীন শ্রেষ্ঠ উদাহরণ সবার কাছে। বছর ২২ আগের কথা। পোস্টে একটা চিঠি পেলাম। মাঝারি মাপের চৌকো মেরুন রঙের খাম। চেহারাতে বিয়ের কার্ড নয়, কোনও বড় মাপের অনুষ্ঠান বা বিশেষ আর্ট এগজিবিশন মনে হচ্ছে না। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বা ছোটখাটো বিবাহবার্ষিকী মার্কা কিছু আন্দাজ করলাম। খুললাম। এমন সোজা এবং সংক্ষিপ্ত নিমন্ত্রণের ভাষা জীবনে দেখিনি।
জয়া বচ্চন অ্যান্ড অমর সিং করডিয়ালি ইনভাইট মিস্টার অ্যান্ড মিসেস সমীর মণ্ডল টু সেলিব্রেট দ্য সিক্টিয়েথ বার্থডে অফ অমিতাভ বচ্চন। স্থান, কাল– বলরুম, জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল, জুহু, মুম্বই। শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০০২। নিচের দিকে একটা লাইন– নিরাপত্তার জন্য কার্ডটি সঙ্গে রাখবেন।
সময়মতো পৌঁছে গেলাম জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট। নির্দিষ্ট গন্তব্যের প্রথম গেট। এখানে একটা খেলা চলছে। রাজকীয় ঢঙে সাজানো বিশাল হোটেলের সঙ্গে ভীষণ বেমানান, নাটকের প্রপ মার্কা একটি কাঠের গেট। গেট তো নয়, একখানা ফ্রেম। ওইটার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে সবাইকে। লম্বায় চওড়ায় যা সাইজ তাতে বেশির ভাগ লোকের মাথায় ঠেকে যাবে। ফ্রেমের দু’দিকের কাঠ দুটো মাটিতে রাখা ইঞ্চি ছয়েক উঁচু একটি শক্ত বেদির গায়ে পেরেক দিয়ে সাঁটা। ফ্রেমের গায়ে পেঁচিয়ে কিছু তার, নিচে নেমে মাটি বেয়ে চলে গিয়েছে একপাশের দেওয়ালের দিকে। এখানেই ভিতরে ঢোকার গতি যাচ্ছে কমে। নিচে তাকিয়ে ছ’ইঞ্চির স্টেপ নিতে ওপরে মাথায় ঠোক্কর। সুন্দরীদের মাথার সুউচ্চ খোঁপার ওপর মুক্তো বসানো রূপোর কাঁটা বাঁচাতে নির্দেশ দিচ্ছে কেউ কেউ পাশ থেকে। সুরক্ষার নামে মজার খেলা। মনে হল, সবার জাতপাত, গুণাগুণ, উঁচু নিচু ভুলিয়ে দেওয়ার বৈতরণী। ওপারে অপার আনন্দ। দেখতে পাচ্ছি আহ্বায়ক তিনজন। দু’জন নাতিদীর্ঘ, অতিদীর্ঘ এক। পেরিয়ে গেলেই গালে গাল ঠেকিয়ে আদর করে, কারও বা পিঠ চাপড়ে, করজোড়ে অথবা করমর্দনে ভুলিয়ে দিচ্ছে এই ফ্রেম পাসিং। এই তিনজন মোটামুটি আমন্ত্রিতদের চেনা। জয়া বচ্চন, বিগ বি-র অর্ধাঙ্গিনী। অমর সিং, উত্তরপ্রদেশের নামকরা রাজনীতিবিদ এবং সুব্রত রায়, সাহারা পরিবারের কর্ণধার।
অমিতাভ বচ্চনের ৬০ বছরের জন্মদিন বলে কথা! লোকের ভিড়ে কাছ থেকে দেখা তো হবেই না মানুষটার সঙ্গে, সেটা নিশ্চিত। তারকার হাট। সিনেমা, গান বাজনা, নাটক, রাজনীতি, খেলা। শিল্প, সাহিত্য। আর আছে সাংবাদিক, শিল্পপতি, ধনকুবের। হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা একশ’য় একশ’ দশ। বরং এই বৈতরণীর পারেই কত না উজ্জ্বল মানুষের সান্নিধ্য। মন বলছে যাদের দেখতে চাও এখানেই দেখে নাও। ভিতরে গিয়ে চান্স পাবে না। ভিড়ে সবাই একাকার।
একটু এগিয়ে দ্বিতীয় গেট। সে গেটে আহ্বায়ক দু’জন তরুণ-তরুণী। অভিষেক বচ্চন আর করিশ্মা কাপুর। এরপর ডাইনে-বাঁয়ে আরও দুটো গেট। প্রথমে কোনটায় যেতে হবে তারই নির্দেশ দিতে এই দুই প্রাণোচ্ছ্বল তরুণ-তরুণী। বাঁ-দিকে বাঁক নিতেই তৃতীয় গেট। ভিতরে হাজার মানিক। গানবাজনার আওয়াজ। গানের জগতের কে নেই সেখানে! রিয়াল গেটটুগেদার। হুল্লোড়। উপচে পড়া হল। হাসি, কলকাকলি, খাদ্য-পানীয়, এক সব পেয়েছির দেশ। ভাবলাম এরই ভিড়ে কোথাও হারিয়ে আছেন বিগ বি।
গেটে ফোটোগ্রাফের লোক, গিফট কে নিচ্ছে, এসো ভিতরে এসো, এনজয় করো বলার জন্য, হাতে হাত মিলিয়ে আহ্বান করার কে, সে দিকে নজর নেই। ঢোকার কয়েক পা আগে থেকে বারবার চোখ চলে যাচ্ছে হলের মধ্যে। যাকে একটু কাছ থেকে দেখব, হাত ছুঁয়ে ধন্য হব বলে আসা কোথায় সেই মধ্যমণি। সঙ্গে এনেছিলাম উপহার, আমার আঁকা বিগ বি-র কমবয়সি মুখ। রঙিন কাগজে আলতো করে মোড়া, সুরক্ষাবিধি মানতে যখন তখন খুলতে হতে পারে। আমাদের অন্যমনস্কতার ফাঁকে হাত থেকে উপহার নিয়ে, করমর্দন করে ভিতরে ঢোকার অনুরোধ। চমকে চোখ চলে এল লং শট থেকে ক্লোজ আপ-এ। করমর্দনে আমার হাতটা আটকে আছে। স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন এই গেটে। সব ভয় ভাবনার অবসান ঘটিয়ে, সবারই আশা পূরণ।
অনুষ্ঠানের ক’দিন পরে বাড়িতে এল ঢাউস একখানি বই।
মলাটে বইটার কোনও নাম নেই। ছবি। বিগ ক্লোজ আপে বিগ বি।
ভিতরের পাতায়,
টু বি অর নট টু বি
অমিতাভ বচ্চন
খালিদ মহম্মদ
আ গিফ্ট ফ্রম জয়া বচ্চন
পরের সাদা পাতায় কালি কলমে লেখা এবং সাক্ষর।
টু সমীর মণ্ডল উইথ লাভ অ্যান্ড এ্যাডমিরেশন
অমিতাভ বচ্চন, ১৭ অক্টোবর ২০০২
আবার চিঠি। অক্টোবর ২৫, ২০০২। যার একটি লাইন– তোমাদের ভালবাসা না পেলে তো মুশকিল হত আমাদের খুশি আর আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার। ‘উইদাউট ইওর লাভ, ইট উড হ্যাব বিন ডিফিকাল্ট টু শেয়ার আওয়ার ডিলাইট অ্যান্ড হ্যাপিনেস’। নিচে কলমের নীল কালিতে অসাধারণ সুন্দর হাতের লেখা– তোমার মূল্যবান ছবিখানির জন্য ধন্যবাদ।
এরও ক’দিন পর এল আরও একটা খাম, যার মধ্যে দুটো ফটোগ্রাফ। আনন্দের গেটে ঢোকার আগে আমি আর মধুমিতার সামনে দাঁড়িয়ে মোড়ক খুলে হাসিমুখে আমাদের উপহারের ছবিটি দেখছেন অমিতাভ বচ্চন।
অমিতাভ বচ্চনের ৭০ বছরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত ছিলাম। সে উৎসবের আয়োজন হয়েছিল মুম্বইয়ের ফিল্ম সিটিতে। খুব বড় করে এবং অন্য স্টাইলে। সেবারেও জয়াদি আয়োজন করলেন এক বিশাল চিত্র প্রদর্শনীর, যাতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ৭০ জন শিল্পীদের দিয়ে আঁকা, বিগ বি-কে নিয়ে ‘বি সেভেন্টি’ এই শিরোনামে। এ দুটোর বিস্তারিত কাহিনি পরে শোনাব।
জয়াদি বাংলা বলতে ভীষণ ভালোবাসেন। ভারি সুন্দর উচ্চারণে সে বাংলা। বাংলাটাকে কখনও বিপত্তারণ হিসেবে কাজে লাগাতেন যেমন, তেমন সেটাই কখনও হয়ে উঠত বিপদ। দু’-একটা ঘটনার কথা বলি এখানে।
একবার আমাদের অফিস, নেহেরু সায়েন্স সেন্টারে উনি এসেছেন। বেজায় ভিড় এবং অটোগ্রাফের খাতা হাতে লম্বা লাইন। মুখে হাসিটি বজায় রেখে, অটোগ্রাফ দিতে দিতে মুখ না তুলে আমাকে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘প্রশান্তদার সঙ্গে দেখা হল, উনি পাটনা থেকে কাল বোম্বে এসেছেন, আপনার সঙ্গে কথা হয়েছে?’ আমার জিজ্ঞাসাসূচক মুখ। ভিড়ে যেন শুনতে পাচ্ছি না ভাবটা করে এবার বললেন, ‘প্রশান্তদা এসেছেন সেটা বড় কথা নয়, আসলে এই যে কাজটা আমি করছি, এই কাজটা আমাকে অনর্গল করতে হবে, সময় চলে যাচ্ছে অনেক। আপনি একটা কোন ছুতো করে, কোন একটা কাজের বাহানায় এখান থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারেন আমাকে?’ কী সুন্দর সাজানো ডায়লগ বললেন, ঠিক যেন ছোট্ট একটা সিনেমা!
আর একবার কোন প্রদর্শনীতে এসেছেন উনি চিফ গেস্ট হিসেবে। আমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল আর ভিড়ের এক পাশে দাঁড়িয়ে বাংলায় কথা বলতে বলতে ভুলেই গেলেন যে, উনি কী কাজের জন্য এসেছেন। অদ্ভুতভাবে পরের দিন সকালবেলা খবরের কাগজে দেখলাম আমাদের নাম করে লিখে দিয়েছে, বাঙালিরা বাংলায় কথা বলতে পেলে আশপাশের মানুষের আর খেয়ালই রাখে না। বাংলা কথা বলার আনন্দে দু’জনেই বদনামের ভাগী হলাম।
উপসংহারে দেখা যাচ্ছে, জয়া বচ্চনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে ‘সংসার’ শব্দটা কিন্তু বারবার এসে যাচ্ছে যে কোনও আলোচনাতেই। মানে সংসার করার প্রবল ইচ্ছা। হাতে নিয়ে, সংসার নিজের কাছে রেখে সেটাকে পরিচালনা করার প্রচেষ্টার কোনও কমতি নেই। আর ওঁর মধ্যে যেটা আরও আছে প্রচণ্ড আন্তরিকভাবে, তা হচ্ছে বাঙালিপনা। এখনও সাদা চুলেও ফিক করে ওই ঠোঁট টিপে ধন্যি মেয়ে মার্কা মুচকি হাসিটি আগলে রাখতে পেরেছেন। দেখলেই কেমন মাসি, পিসি, দিদি, বউদির কথাই মনে হয়। ঘরোয়া এবং ঘরণী– সহজ শব্দ দুটো বিশাল মাপের জয়াদির জন্য তোলা রইল।
… পড়ুন ‘মুখ ও মণ্ডল’-এর অন্যান্য পর্ব …
পর্ব ১৮: সিদ্ধার্থ যত না বিজ্ঞানী তার চেয়ে অনেক বেশি কল্পনা-জগতের কবি
পর্ব ১৭: ডানহাত দিয়ে প্রতিমার বাঁ-চোখ, বাঁ-হাত দিয়ে ডানচোখ আঁকতেন ফণীজ্যাঠা
পর্ব ১৬: আমার কাছে আঁকা শেখার প্রথম দিন নার্ভাস হয়ে গেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ভি. পি. সিং
পর্ব ১৫: শঙ্করলাল ভট্টাচার্য শিল্পীদের মনের গভীরে প্রবেশপথ বাতলেছিলেন, তৈরি করেছিলেন ‘বারোয়ারি ডায়রি’
পর্ব ১৪: নাটককে পৃথ্বী থিয়েটারের বাইরে নিয়ে এসে খোলা মাঠে আয়োজন করেছিল সঞ্জনা কাপুর
পর্ব ১৩: চেষ্টা করবি গুরুকে টপকে যাওয়ার, বলেছিলেন আমার মাইম-গুরু যোগেশ দত্ত
পর্ব ১২: আমার শিল্প ও বিজ্ঞানের তর্কাতর্কি সামলাতেন সমরদাই
পর্ব ১১: ছবি না আঁকলে আমি ম্যাজিশিয়ান হতাম, মন পড়ে বলে দিয়েছিলেন পি. সি. সরকার জুনিয়র
পর্ব ১০: তাঁর গান নিয়ে ছবি আঁকা যায় কি না, দেখার ইচ্ছা ছিল ভূপেনদার
পর্ব ৯: পত্র-পত্রিকার মাস্টহেড নিয়ে ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন বিপুলদা
পর্ব ৮: সৌমিত্রদার হাতে কাজ নেই, তাই পরিকল্পনাহীন পাড়া বেড়ানো হল আমাদের
পর্ব ৭: ঘোড়াদৌড়ের মাঠে ফ্যাশন প্যারেড চালু করেছিলেন মরিন ওয়াড়িয়া, হেঁটেছিলেন ঐশ্বর্য রাইও
পর্ব ৬: একাগ্রতাকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ধরিয়ে দিয়েছিলেন গুরু গোবিন্দন কুট্টি
পর্ব ৫: কলকাতা সহজে জয় করা যায় না, হুসেন অনেকটা পেরেছিলেন
পর্ব ৪: যে পারে সে এমনি পারে শুকনো ডালে ফুল ফোটাতে, বলতেন চণ্ডী লাহিড়ী
পর্ব ৩: সহজ আর সত্যই শিল্পীর আশ্রয়, বলতেন পরিতোষ সেন
পর্ব ২: সব ছবি একদিন বের করে উঠোনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম, বলেছিলেন অতুল বসু
পর্ব ১: শুধু ছবি আঁকা নয়, একই রিকশায় বসে পেশাদারি দর-দস্তুরও আমাকে শিখিয়েছিলেন সুনীল পাল