Robbar

জ্যোতি ঠাকুরের টেগোর হিল: পৃথিবীর প্রথম ল্যান্ড আর্ট!

Published by: Robbar Digital
  • Posted:April 3, 2025 4:42 pm
  • Updated:April 3, 2025 4:42 pm  

আজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু শতবর্ষ স্পর্শ করল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন মোরাবাদী পাহাড়কে প্রকৃতির স্পর্শ দিয়ে সজীবিত করে তুলতে, তাঁর শৈল্পিক দৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রকৃতির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সৌন্দর্য-প্রাঙ্গনগুলোকে। গঁগ্যা যেমন তাহিতি দ্বীপের প্রকৃতিতে খুঁজে পেয়েছিলেন শিল্পকলার আদিম উপাদান। তেমন প্রকৃতির কোলে, প্রকৃতির স্নেহস্পর্শেই থাকতে চেয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ; এবং নিজের অজান্তেই জন্ম দিয়েছিলেন পৃথিবীর প্রথম ‘ল্যান্ড আর্ট’-এর। তাঁর মৃত্যুদিনে ‘টেগোর হিল’ নিয়ে রোববারের বিশেষ প্রতিবেদন।

সঞ্জয় ঘোষ

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন একটি প্রান্তরের খোঁজে ছিলেন যেখানে দাঁড়ালে দু’চোখের দৃষ্টি কোথাও আটকাবে না, দিকচক্রবাল অবধি অবাধ শূন্য একটি স্পেস! সেটা তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন বোলপুরের নির্জন ভুবনডাঙায়। তাঁর পুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সেইরকমই একটি জায়গা অন্বেষণ করে শেষপর্যন্ত পৌঁছেছিলেন পাহাড় চূড়ারপরেযেখানে চারপাশে শুধু স্বচ্ছ বায়ুমণ্ডল, দৃষ্টিকে আগল দেওয়ার কেউ নেই। এই করতে গিয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ শুধু পাহাড়ের ওপর একটা বাড়ি আর একটা ব্রাহ্মমন্দিরই বানালেন না, তিনি সমস্ত পাহাড়টিকে একটি অসামান্য শিল্পরূপ দিলেন। নিজের অজান্তে তিনি পৃথিবীর প্রথমল্যান্ড আর্ট’-এর জন্ম দিলেন।

এইখানে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন একজন অসামান্য পোর্ট্রেট-শিল্পী, ভারতের প্রথম সারির বলা চলে! কৈশোর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত অজস্র পোর্ট্রেট এঁকে গিয়েছেন অসংখ্য মানুষের। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত শিল্পী রোদেনস্টাইন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আঁকা পোর্ট্রেট দেখে চমকে উঠেছিলেনরবীন্দ্রনাথকে বলেছিলেন–আমি তোমাকে গোপনে বলছি, অন্য লোকে শুনলে হয়তো বেদনা পেতে পারে, ইনিই তোমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ চিত্রী’। তিনি নিজে উপযাচক হয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ছবির অ্যালবাম ছাপিয়েছিলেন বিলেত থেকে।

ল্যান্ড আর্ট’-এর আরেক নামআর্থ আর্টবাএনভায়রনমেন্টাল আর্ট বিশ শতকের সাতের দশকে এই আর্ট ইংল্যান্ড  আমেরিকায় শুরু হয়। এই আর্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল ট্রাডিশনাল আর্ট বা আর্টের উপাদানকে অস্বীকার করা। শিল্পকলা শুধুই গ্যালারিতে সাজানো থাকবে এবং ক্রেতারা বা শিল্প ব্যবসায়ীরা তা কিনে ঘর সাজাবেন মুনাফা বৃদ্ধি করবেন ‘ল্যান্ড আর্টএর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল। পৃথিবী তার উপাদান, যেমন– পাহাড়, পাথর, মাটি, জমি, গাছপালা, জলএই সবকেই মিডিয়া হিসেবে তুলে নিলল্যান্ড আর্ট’-এর শিল্পীরা এবং তা তৈরি হতে থাকল লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে, নির্জন প্রকৃতির কোনও নিভৃত জায়গায়।

শিল্পী রবার্ট স্মিথসনের করা উটাতে ‘স্পাইরাল জেটি’ (২০০৫)

ল্যান্ড আর্ট’ আন্দোলন চাইছিল শিল্পকে বাজারজাত করার সমস্ত অপচেষ্টার বিরোধিতা করতে এবং সেই সঙ্গে নাগরিক সভ্যতার সমস্ত আড়ম্বরকে পরিহার করতে। শিল্পকে তাঁরা নিয়ে যেতে চাইছিলেনমাটির কাছাকাছি এর পেছনে লুকিয়ে ছিল আধ্যাত্মিক এক চেতনা; এবং শেষপর্যন্ত, পৃথিবীকেই মানুষের পরম একান্ত আশ্রয় হিসেবে পরিণত করা। এমন কাজের একটি চমৎকার উদাহরণ– ল্যান্ড আর্টের প্রখ্যাত শিল্পী রবার্ট স্মিথসনের করা উটাতেস্পাইরাল জেটি’ (২০০৫) কিংবা ব্রাজিলের সাও পাওলোতে শিল্পী মিল্টন বেকেরার করাল্যান্ড আর্ট মেটেওরাইট’ (১৯৮৫)

CDN media
শিল্পী মিল্টন বেকেরার ‘ল্যান্ড আর্ট মেটেওরাইট’

এইল্যান্ড আর্ট’-এর ধারণার সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরটেগোর হিলবাশান্তিধামতৈরীর সমস্ত পরিকল্পনার অভিমুখ যে কী অসামান্যভাবে মিলে যাচ্ছে! জ্যোতিরিন্দ্রনাথ আর্ট স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু কখনও পেশাদার শিল্পী হননি। তিনি পোর্ট্রেট আঁকায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, কিন্তু কখনও প্রদর্শনী করার কথা ভাবেননি, এমনকী কোনওদিন কোনও অ্যালবামও বের করেননি। রবীন্দ্রনাথ যখন রোদেনস্টাইনের অ্যালবাম বের করার প্রস্তাব তাঁর সামনে রাখছেন, তিনি প্রথমে খুব দ্বিধান্বিত ছিলেন। পরে রবীন্দ্রনাথের পীড়াপীড়িতে তিনি অ্যালবাম বার করতে সম্মত হন। শিল্পকলার দক্ষতা তাঁর হাতে যথেষ্ট থাকলেও, ছবি আঁকাকে ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহার করা তাঁর মানসিকতার বাইরে ছিল।

প্রথম জীবনে তাঁর মতো উদ্যমী পুরুষ সেসময় খুব কম ছিল তাঁর লেখা নাটক মঞ্চে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল, যেমনসরোজিনী সংগীতে তাঁর ব্যুৎপত্তি এত গভীর ছিল যে তিনিই দ্বিজেন্দ্রলাল ঠাকুরের পরে প্রথম বাংলা স্বরলিপির কাঠামো নির্মাণ করলেন। রবীন্দ্রনাথের সংগীতচেতনার উন্মেষের এক অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন তিনি। বাংলায় প্রথমসঙ্গীত সমাজতাঁর  হাতেই সৃষ্টি, কিন্তু পরে সেখানকার দলাদলি, রাজনীতি তাঁকে সেখান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। স্বদেশী চেতনা তাঁকে জাহাজের ব্যবসায় নামতে প্রেরণা দেয়। অনেক লোকসানের পরেও তিনি চেয়েছিলেন কলকাতা থেকে পূর্ববঙ্গের জল-পরিভ্রমণ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। স্ত্রী কাদম্বরীকেও তিনি অকালে হারিয়েছিলেন।

উইলিয়াম রোদেনস্টাইন ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

পরবর্তীকালে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্যে বেশ কয়েকবার রাঁচিতে যেতে হয়েছিল তাঁকে। স্থির করেছিলেন শেষ জীবনটা সেখানেই কাটাবেন– প্রকৃতির সান্নিধ্যে, নিবিড় নির্জনতায়; এবং অদ্ভূত এই যে প্রথমদিকে তিনি কেবল জমির খোঁজ করলেও, শেষপর্যন্ত মোরাবাদী পাহাড়টিকে কিনে ফেলছেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের শিল্পীমানস কিন্তু সেখানে শুধু বাড়ি বানাচ্ছেন না। সমগ্র পাহাড়টাই তখন তাঁরল্যান্ড আর্ট’-এর উন্মুক্ত মি়ডিয়া। জোড়াসাঁকোর নাগরিক কোলাহলকে তিনি তখন অনেকটাই পিছনে ফেলে এসেছেনপাহাড়ের প্রকৃতিকে তিনি সাজিয়ে নিতে চাইছেন এক অপূর্ব শিল্পকর্ম হিসেবে এবং অবশ্যই সেই শিল্প, যা কোনও বাণিজ্যিক বিক্রয়যোগ্য বস্তুপিণ্ড নয়। রাঁচির মূল শহর থেকে অনেকটা দূরে, উপকণ্ঠে, এই পাহাড় হয়ে উঠবে তাঁর আধ্যাত্মিক চেতনা বিকাশের এক উন্মুক্ত আশ্রয়স্থলমনের অগোচরে তিনি এইভাবে নির্মাণ করে যাচ্ছেন পৃথিবীর প্রথমল্যান্ড আর্ট’!

ল্যান্ড আর্ট তৈরি হয় প্রকৃতির কোনও ল্যান্ডস্কেপকে খোদাই করে বা তার সঙ্গে প্রকৃতিরই কোনও উপাদান জুড়ে জুড়ে। এইভাবে প্রকৃতিকে বিনির্মাণ করে গড়ে ওঠে একনতুন প্রকৃতি’! এবং তা হয় প্রকৃতিকে কোনওভাবে ধ্বংস না করে, তার কোনও অংশকে উৎপাটিত না করে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথওমোরাবাদীপাহাড়কে সেইভাবে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন এক অভিনব শিল্পকর্ম রূপে। পাহাড়ের গা দিয়ে যে সিঁড়িগুলো ওপরে উঠে গেছে– তারা যেন ঘুরে ঘুরে পাহাড়টাকেই ঘনিষ্ঠভাবে আলিঙ্গন করছে; তা কিন্তু কোনওভাবেই পাহাড়কে ক্ষয় করছে না, তাকে আঘাত করছে না পাহাড়ের সমস্ত বৃক্ষদের, শাখা-প্রশাখা ও গুল্মদের পাহাড়ের অংশ হিসেবেই রেখে দিতে চেয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ– যাতে পাহাড়ের প্রকৃতি, পাহাড়ের পরিবেশ কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পাহাড়ের ওপরে তাঁর যে গৃহ, আর নীচে তিনটি বাংলো– তা-ও যেন পাহাড়েরই অংশ রূপে জেগে আছে; কোনওভাবেই পাহাড়কে অবনত করে নিজেকে সোচ্চারে ঘোষণা করছে না। আর পাহাড়ের একেবারেপরের শৃঙ্গে যে মন্দির– তার চারপাশে থাম, ওপরে একখানা ত্রিকোণ চূড়া, তা-ও যেন খুব বিনয়ের সঙ্গে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। তার ভেতরের চারপাশ পুরো খোলাএক অনন্ত স্পেসের দ্যোতক যেন। এক অপূর্ব শিল্পকর্ম– এই মন্দির, তার জ্যামিতিক ফর্ম– যেন আধুনিক আর্টের উজ্জ্বল এক উদাহরণ।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘টেগোর হিল’

জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরজীবনস্মৃতিযিনি লিখেছিলেন, সেই বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় শান্তিধাম’-এর বর্ণনা এরকম পাই– “সেখানে ছোটো ছোটো পুষ্পতরুগুলির তলদেশে সমাকার শ্বেত উপলখণ্ডগুলি আলিপনার ন্যায় সজ্জিত, লতাগুলি উদ্যান মধ্যে, প্রাচীন গাত্রে বৃক্ষকাণ্ডে সংলগ্ননানাবিধ পুষ্পলতার বিচিত্র গন্ধে বর্ণে পুষ্পবাটিকাটি তপোবনের মত সুন্দর, পবিত্র এবং মনোরম। ফটকের উপরে ধ্যানীবুদ্ধের একটি মর্মরমূর্তি প্রতিষ্ঠিত … শান্তিধামের আরো দুটি জিনিস উল্লেখ্য। প্রথমটি একটি গুহা। গুহাটি কৃত্রিম নয়। যে পাহাড়ের ওপরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বাড়ি, তাহার পশ্চিমদিকে কয়েকটি প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাথর এমনভাবে আছে যে, তাহা দ্বারা আপনাআপনিই নিচে একটি ভীষণ গহ্বর সৃষ্ট হইয়াছে। গুহার ভিতরে স্থান নিতান্ত কম নয়। সাতআট জন লোক অনয়াসে সেখানে বসিয়া শুইয়া স্বচ্ছন্দে আলাপ করিতে পারে। সম্প্রতি তাহার ভিতরটি বাঁধাইয়া আরও আরামপ্রদ করা হইয়াছে। বেশ পরিষ্কার, অন্ধকারও নয়। উপরে নিচে পাশে চারিদিকে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড কালো কালো পাথর। গুহার ভিতরে বসিলে মনে হয় যেন গিরিপ্রস্তরময়ী ধরণীর কোলে বসিয়াছি। তার পাথরগুলির গায়ে ঠেস দিলে বা স্পর্শ করিলে মনে হয় মূর্তিমতী পৃথিবীকেই যেন স্পর্শ করিতেছি। দ্বিতীয় একটি লতামণ্ডপ। ঠিক এই গুহার নিচে, পাহাড়টির গায়েই এই মণ্ডপটি যেন আঁকা। মণ্ডপটি সমতল ক্ষেত্রভূমি হইতে একটু উচ্চে অবস্থিত। মণ্ডপের তলাটি বেশ শানবাঁধানো– ‘বেঞ্চিগাথা। উপরের ছাদে একটি মঞ্চ রচিত হইয়াছে। তাহাতেই লতাগাছটিকে তুলিকা দেওয়া হইয়াছিল। এখন সেই লতাডালে মঞ্চটি একেবারে আচ্ছন্ন।”

এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন পাহাড়টিকে প্রকৃতির স্পর্শ দিয়েই সজীবিত করে তুলতে, তিনি শুধু তাঁর শৈল্পিক দৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রকৃতির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সৌন্দর্য-প্রাঙ্গনগুলোকে। শিল্পী পল গঁগ্যা যেমন তাহিতি দ্বীপের প্রকৃতিতে খুঁজে পেয়েছিলেন শিল্পকলার আদিম সব উপাদান। তেমন প্রকৃতির কোলে প্রকৃতির স্নেহস্পর্শেই থাকতে চেয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। এবং অজান্তেই ভারতবর্ষের পরিবেশ আন্দোলনকেও শুরু করে দিয়েছিলেন।

টেগোর হিল: টপ ভিউ

ল্যান্ড আর্ট’-এর জনক হয়েও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কিন্তু প্রকৃতি থেকে মানুষকে, পশুপাখিকে বাদ দেননি। কুকুর, বানররা ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। আর অবশ্যই মানুষ! রাঁচির আশেপাশের মানুষজন, এমনকি আদিবাসীদের নিয়েই তিনি দিন কাটাতেনতাঁদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন তিনি। হেনরি ম্যুর যেমন বলেছিলেন– ‘Art Should be successful if there is some human elements within it’। জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরশান্তিধামতাই শুধুল্যান্ড আর্টনয়। তা যেন এক শ্রেষ্ঠল্যান্ড এণ্ড লিভিং আর্ট 

যেসব শিল্পীরা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ষাটসত্তর বছর পরে পৃথিবীতেল্যান্ড আর্ট’-এর উদ্ভাবনা করেছিলেন, তাঁরা জানতে পারলে হয়তো রোদেনস্টাইনের মতোই জ্যোতিরিন্দ্রনাথকেল্যান্ড আর্ট’-এর জনক আখ্যা দিয়ে যেতে পারতেন!

……………………………….

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

……………………………….