আজ ঘুড়ি উৎসব। বিশ্বকর্মার পুজো।। আনন্দ করো। আকাশে আকাশে ঘুড়িতে ভরিয়ে দাও। দেখো, আবার কোনও দুষ্টু কথা যেন লিখো না, ঘুড়িতে, কারণ ঘুড়ির কাটাকুটি আছে, কার ঘরে গিয়ে সেটা পড়বে, গোল বাঁধবে। কী দরকার? দেখো ঘুড়ির রং নিয়েও বেশি ভেবো না। জানোই তো রং বড় গোলমেলে জিনিস। দেখতে নিরীহ, কিন্তু কীসব কথা বলে। ওসব শিল্পীর স্বাধীনতার বিষয়। বড় বিষয়। আমি লাটাই নিয়ে আছি, তা নিয়ে নিশ্চিন্তে আছি।
লাটাই কার হাতে? দেবতা বিশ্বকর্মা লাটাই বানালেন যত্ন করে, কিন্তু কার জন্য? কার হাতে দিলেন? সেকথা বলে গেলেন না। মানুষ পড়ল বিপদে! লাটাই নিয়ে কুরুক্ষেত্র বেঁধে গেল। ভগবান কৃষ্ণ মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন। স্বর্গে কী হল আমি আর ভেবে করব কী? মর্ত্যে কী হচ্ছে, দেখা যাক। দেখা কি সত্যি যাবে? যায় কি না, একটু খুঁড়ে দেখা যাক।
ওই যে একটা কথা আছে না, হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে গেছে– আমি ওই খেলায় নেই। হামি গরিব আদমি আছি। হামি কুছু জানে না। সব জানে কালীপদ। ছবি আঁকতে গিয়ে, ঘরানা ধরলাম বিমূর্ততা। জলে নামলাম, কিন্তু আমার চিত্র বেণী ভিজল না। বিমূর্ততা এমন এক আঙ্গিক, যাতে হাজার বিপ্লব করা যায়, মশাল জ্বালানো যায়, কিন্তু বাইরে থেকে কেউ বুঝবে না যে, আমার হাতে মশাল আছে? অর্জুন যখন গাণ্ডিব, মানে লাটাই ত্যাগ করলেন, কৃষ্ণ তাঁর মোক্ষম চালটি দিলেন, দেখালেন, তুমি নিমিত্ত মাত্র, আমার হাতে আসল লাটাই।
আমরা শিল্পীরাও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার হাতে কে তামাক খেয়েছে, অন্ধকারে আমি দেখতে পাইনি। তামাক আমি খেয়েছি ঠিকই, বিপ্লবের ডঙ্কাও আমি বাজিয়েছি এটাও ঠিকই, কিন্তু আমার হাত খালি। সব ম্যাজিক। সব ভ্যানিশ। তাকিয়ে দেখো, কিছু কি দেখতে পাচ্ছ? পৃথিবী কত শান্ত দেখছ না! আনন্দে মুখর। কোথাও তো কিছু ঘটেনি। দেখো বিমূর্ততার আড়ালে কত গল্প কাহিনি কেমন মাখো মাখো, নরম, আবেগে ভরা, মনোমুগ্ধকর হয়ে আছে। তুমি কি কিছু বুঝতে পারছ? কিছু দেখতে পারছ? কিছু হয়নি তো তুমি দেখবে কী করে? আসলে তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে লাটাইয়ের স্বপ্ন দেখছিলে এতক্ষণ। আর আকাশ-পাতাল অলীক কথা ভেবে যাচ্ছিলে। চাট্টি খেয়েদেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ো। ভালো ভালো কথা ভেবে ঘুমোতে যাও। ভালো উন্নয়নের স্বপ্ন দেখবে। যাও, মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করো না। সুকুমার রায় পড়োনি? তাহলে হাতে রইল পেনসিল।
আমি যতক্ষণ না বলছি তুমি ঘুম থেকে উঠো না। আমি সময়মতো ঠিক ডেকে দেব। তুমি তো জানো, তোমার কত কাজ, কত দায়িত্ব। আজ ঘুড়ি উৎসব। বিশ্বকর্মার পুজো।। আনন্দ করো। আকাশে আকাশে ঘুড়িতে ভরিয়ে দাও। দেখো, আবার কোনও দুষ্টু কথা যেন লিখো না, ঘুড়িতে, কারণ ঘুড়ির কাটাকুটি আছে, কার ঘরে গিয়ে সেটা পড়বে, গোল বাঁধবে। কী দরকার? দেখো ঘুড়ির রং নিয়েও বেশি ভেবো না। জানোই তো রং বড় গোলমেলে জিনিস। দেখতে নিরীহ, কিন্তু কীসব কথা বলে। ওসব শিল্পীর স্বাধীনতার বিষয়। বড় বিষয়। আমি লাটাই নিয়ে আছি, তা নিয়ে নিশ্চিন্তে আছি।
.…………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার.ইন
………………………………………….
আমি মঞ্চে অনেক সময় কাটিয়েছি নাটক ভালোবাসি বলে নয়, নাটক আমার শিল্প শিক্ষক বলে। যে প্রাণোন্মাদনা সে আমার মধ্যে সঞ্চারিত করে, তাই আমার প্রাণভোমরা হয়ে যায়। আমি তাকে এঁকে যাই ক্রমাগত। দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর ধরে এভাবে চলেছি। কে কাকে পরিচালনা করে, তা গৌণ হয়ে যায়।
আমার সমস্ত শিল্পকর্মই একে ঘিরে। তাই আমার ছবি, আমার ক্যানভাস এক একজন অভিনেতা বনে যায়।
লেখার সঙ্গে ব্যবহৃত সমস্ত ছবিই হিরণ মিত্রর
………………………………. পড়ুন হাতে লাটাই …………………………….
অর্পণ গুপ্ত-র লেখা: আকাশের লড়াইতে দ্রাবিড় কেবলই মাটির প্রতিনিধি
শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ-এর লেখা: সুতোর দায়িত্বে অর্জুন বা যুধিষ্ঠির থাকলেও মহাভারতের লাটাইধারী কিন্তু কৃষ্ণই
রবীন্দ্রনাথ চিঠিতে নন্দলালকে লিখেছেন, ‘আমার ছবিগুলি শান্তিনিকেতন চিত্রকলার আদর্শকে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেচে’। এ কি ভারি আশ্চর্যের কথা নয়? এখানে ‘শান্তিনিকেতন চিত্রকলার আদর্শ’ বলতে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?