Robbar

নগরে হোক বা প্রান্তরে– হাঁটা কি কেবল একার জন্য?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 14, 2024 8:12 pm
  • Updated:November 14, 2024 8:12 pm  

একা বা মিছিলে, দিন বদলের স্বপ্নে বা নিজেকেই নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য বেড়িয়ে পড়লেই হয়! ওই তো আমাদের পাশেই নির্বাণ রহস্য নিয়ে বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী থেকে সুদূর তিব্বতের পথে হাঁটছেন অতীশ দীপঙ্কর। প্রাকবিপ্লব প্যারিসে মানব মুক্তি নিয়ে জটিল ভাবনায় ডুবে থেকে একটানা পায়চারি করছেন রুশো। তিনি বলেছেন– ‘একমাত্র হাঁটার সময়ই আমি গভীর ভাবে ভাবতে পারি। হাঁটা থামালে, ভাবনাও থেমে যায়।’ ওই তো অনতিদূরেই ফাল্গুনের মাঝামাঝি এক অপরাহ্নে,সদ্য সন্ন্যাস গ্রহণের পর পদব্রজে নীলাচল যাত্রার পথে ভাবোন্মাদ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দকে ডেকে প্রশ্ন করছেন ‘গঙ্গা কতদূর?’ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অশান্ত দিনগুলোয় ফ্রন্টলাইন থেকে বহুদূরে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে প্রৌঢ় আইনস্টাইন আর তরুণ কার্ট গোডেল ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ আলোচনা করছেন।

হিয়া মুখোপাধ্যায়

প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর ডায়বেটিসের বিরুদ্ধে রাস্তায় হাঁটেন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ! ‘ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এই ‘গ্লোবাল ডায়বেটিস ওয়াক’-এর কথা শুনলে প্রাথমিকভাবে অবশ্য কৌতুক জাগে। হাঁটা স্বাস্থ্যকর বটে– কিন্তু একদিন হেঁটে কি সুগার কমে?

১৮০২ সালের ঠিক দুপুর বারোটা নাগাদ স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ যখন গ্রেটা হলের দরজার তালা মেরে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তখন সম্ভবত ডায়বেটিসের প্রসঙ্গ তাঁর মাথায় আসেনি। কামব্রিয়ান পাহাড়ের পথ ধরে তিনি সেবার টানা ন’দিন একা হেঁটেছিলেন। পথে পড়েছিল ‘লেক ডিসট্রিক্ট’ নামে খ্যাত কুম্বারল্যান্ডের একাধিক প্রবাদপ্রতিম সরোবর আর ইংল্যান্ডের উচ্চতম পর্বত স্কাফেল। হাঁটার মাঝের বিরতিগুলোতে নিজের নোটবইতে তিনি লিখে রেখেছিলেন পথের বিবরণ, এঁকে রেখেছিলেন একাধিক ম্যাপের খসড়া। ‘কুবলা খান’-এর কবির পায়ে হাঁটা সেই পথ ধরে আজও কাব্যতীর্থে বের হন অসংখ্য কবিতাপ্রেমী।

Samuel Taylor Coleridge - Wikipedia
স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ

অবশ্য একা কোলরিজ নন, ‘লেক পোয়েটস’ বৃত্তের অধিকাংশ সদস্যরই পায়ে হেঁটে প্রকৃতিকে আবিষ্কার করার অদম্য নেশা ছিল। উনিশ শতকের শুরুতে, শিল্প বিপ্লব ঘটে যাওয়ার পর যখন প্রযুক্তি আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা ব্যাপক নগরীকরণের স্রোতে গোটা ইংল্যান্ড মজে ছিল, তখন অসময়ের এই রোমান্টিকদের ঘর ছেড়ে, শহরের ভিড় ছেড়ে প্রকৃতিতে মিশে যাওয়ার ইচ্ছে আসলে নিভৃতে নিজেকেই আবিষ্কারের তাগিদে; কবিতাযাপন আর পায়ে হাঁটা তখন সমার্থক। জনশ্রুতি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ আর তাঁর বোন ডরোথি স্রেফ পোস্ট অফিস থেকে চিঠি সংগ্রহের অছিলায় বারো মাইল পথ হাঁটতেন প্রতিদিন! নিজের জার্নালে ডরোথি লিখেছিলেন– ‘ঘরে নয় বরং যেখানে পা চালানোর সুযোগ আছে আমি সেখানেই…’

তবে কবিতার জন্য প্রকৃতির নিভৃতি আবশ্যক নয়। অন্তত শার্ল বোদলেয়ার ত্যামনটাই ভাবতেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি প্যারিসের পাথরে বাঁধানো ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বোদলেয়ার সম্ভবত সেই প্রথম শহরের আবেদন বুঝতে পেরেছিলেন। ‘দ্য পেইন্টার অফ মর্ডান লাইফ’-এর কবি শহরের দ্রুতি, চৌমাথার ভিড়ের ছন্দ, পথচারীর দু’-পাশ দিয়ে বয়ে চলা অপ্রতিরোধ্য জীবনের স্রোতকে সারাজীবন শিশুর বিস্ময়ে লক্ষ করেছেন আর সে কিসসা লিখে গেছেন। একাকিত্ব নয়, বোদলেয়ারের আর্কিটাইপাল নায়ক– ‘দ্য ফ্ল্যানুর’ বা নগর কবিয়াল নিজেকে আবিষ্কার করেছিল ‘বহু’-র আত্মায়! ‘লেহ ফ্ল্যঁর দ্যু মাল’ গ্রন্থে বর্ণিত সেই চরিত্র ‘ছন্দের খোঁজে শহরের অন্ধকার কোণগুলোয়’ হাঁটতে হাঁটতে ‘খোয়া বাঁধানো ফুটপাথে পড়ে থাকা শব্দের শরীরে হোঁচট খায়।’ সেই শুরু। তারপর তাঁর পথ ধরে কত অসংখ্য চরিত্র হেঁটে গেছে! বিশ শতকের শুরুতে আর এক বিখ্যাত ‘ফ্ল্যানুর’ জার্মান তাত্ত্বিক ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছিল শহরের সুবিশাল ইমারত আর তার নাগরিকদের ভিড় যেন– চেতনা আর অবচেতন, অতীত আর বর্তমানের সাক্ষাৎস্থল! আর তারপর বিশ শতকে বঙ্গদেশের এক মৃদুভাষী কবি যখন লেখেন– ‘এ কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা/ হেঁটে দেখতে শিখুন।’ তখন পথচলতি সে কবির আঁতসকাচের নিচে ‘কলকাতা’ নামক মেট্রোপলিস তার ভিতরে জমিয়ে রাখা যাবতীয় রহস্যকে উন্মোচন করে দেয়!

Charles Baudelaire (1821-1867) - Global Poetics Project
শার্ল বোদলেয়ার

কিন্তু নগরে হোক বা প্রান্তরে– হাঁটা কি কেবল একার জন্য? দুই পায়ে ভর করে পর্যটন কি কেবল শিল্পীর অলস আত্মবীক্ষণের মাধ্যম? বামপন্থী রাজনীতিবীদ প্যল লাফার্গ অবশ্য বিশ্বাস করতেন খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মতোই আলস্যের অধিকারও প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার! কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সে অধিকারও সৌভাগ্যবান বুর্জোয়া শ্রেণির কুক্ষীগত। আর বাদবাকি সংখ্যাগরিষ্টের বরাতে লেখা থাকে ‘কাজ, শুধু কাজ করে চলো হে প্রলেতারিয়ান–সামাজিক সম্পদ আর তার সঙ্গে নিজের দারিদ্র বাড়াতে কাজ করে যাও, কাজ করে যাও নিজের দুর্দশা বাড়াতে– এটাই পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার অভ্রান্ত স্বরূপ।’ তাঁর বিতর্কিত প্রবন্ধ ‘দ্য রাইট টু বি লেজি’-তে তিনি লেখেন ‘হে আলস্য-শিল্প ও সকল মহৎ কলার জননী, মানুষের যন্ত্রণায় শ্রুশাষার প্রলেপ হয়ে তুমি নেমে এসো!’

The Right to Be Lazy by Paul Lafargue | Goodreads

তাই ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’ গেয়ে উঠতে গেলেও হাঁটতে হয় বইকি! সমষ্টিতে। মিছিলের পায়ে পা মিলিয়ে। তখনও ‘রাস্তাই একমাত্র রাস্তা’! আর সে যৌথ হাঁটারও সুদীর্ঘ ইতিহাস! মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডে কেন্ট থেকে এসেক্স হয়ে লন্ডন অবধি হেঁটে যাওয়া বিক্ষুব্ধ কৃষকদের মিছিল থেকে বাস্তিল দুর্গের সামনে ‘স্বাধীনতা সাম্য আর মৈত্রী’-র দাবিতে এক হওয়া ক্ষিপ্ত জনতার ভিড় পর্যন্ত! মাও সে তুঙের ছ’-হাজার মাইল ব্যপ্ত দুনিয়া কাঁপানো ‘লং মার্চ’ থেকে মাত্র ক’বছর আগের ভারতের প্রতিটি কোণে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া ‘সিএএ-এনআরসি’ বিরোধী একাধিক মহামিছিল পর্যন্ত! এমনকী, যূথবদ্ধ মিছিল শুধু নয়, এলোমেলো পথহাঁটাও কখনও কখনও রাজনৈতিক হাতিয়ার। আজ থেকে ঠিক এক দশক আগে সমাজতাত্ত্বিক শিল্পা ফাডকে, সাংবাদিক সমীরা খান এবং স্থপতি শিল্পা রানাডে তাদের যৌথভাবে লেখা ‘ওয়াই লয়টার’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘মেয়েরা অকারণে রাস্তায় হাঁটে না। যদিও শহরের রাস্তায় ছেলেদের হামেশাই ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। অকারণ হাঁটতে হাঁটতে পুরুষ হয়তো পানের দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট কেনে কিংবা পার্কের বেঞ্চে খানিক বিশ্রাম নেয়। হয়তো দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকে অথবা ফুটপাথের দোকান থেকে কেনা চায়ে চুমুক দেয়। এমনকী, ইচ্ছে হলে গভীর রাতেও সে হেঁটে বেড়াতে পারে। মেয়েরা পারে না। কারণ সমাজের একটা অলিখিত ধারণা আছে যে, অকারণে রাস্তায় ঘোরা মেয়েরা সুবিধার নয়। সে হয় পাগলী, নয়তো খারাপ মেয়ে নয়তো সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক।

The Long March | Definition, Reason & Map | Study.com
মাও সে তুঙের লং মার্চ

এসব কথা অবশ্য কেউই প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেন না। কিন্তু প্রতিটা বাচ্চা মেয়েই এটা শিখে বড় হয় যে সিধে ঘর থেকে স্কুল, স্কুল থেকে অফিস, অফিস থেকে বান্ধবী অথবা আত্মীয়র বাড়ি, একটা ‘নিরাপদ’ জায়গা থেকে আর একটায় হেঁটে যাওয়া ছাড়া রাস্তা তার জন্য নয়।

In pictures: Anti-CAA protests gather fresh momentum as India ...
ভারতের ‘সিএএ-এনআরসি’ বিরোধী মহামিছিল

তিন বছরের গবেষণালব্ধ সে বইতে লেখিকারা দাবি করেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অকারণে রাস্তায় হাঁটার অধিকার আছে। ‘ওয়াই লয়টার’ আজ প্রায় নারীবাদী রাজনীতির ম্যানিফেস্টো হিসেবে গণ্য হয়। তাই প্রকাশ্য রাজপথে দিল্লিতে নির্ভয়ার গণধর্ষণ ও হত্যার মতো বীভৎস অপরাধ ঘটে যাওয়ার পরও মুম্বইয়ের দেবিনা কাপুর আর নেহা সিং-এর মতো মেয়েরা নিয়মিত রাস্তায় নামেন। দল বেঁধে হেঁটে মেয়েদের এই পথ দখল করার প্রয়াসের নামও তারা দিয়েছেন ‘ওয়াই লয়টার ক্যাম্পেইন’। মুম্বইয়ের পর দিল্লি বা চেন্নাইয়ের মতো শহরেও এভাবে রাস্তা দখলের ছোট ছোট বৃত্ত তৈরি হয়েছে। আর মাত্র ক’দিন আগেই কর্মক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ রাজনৈতিক ধর্ষণ আর হত্যার প্রতিবাদে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মেয়েরা রাজপথের দখল নিয়েছে সারারাত ধরে। কল্লোলিনীর প্রতিটি অলিগলি মেয়েদের সমবেত চিৎকারে বেজে উঠেছে– ‘তিলোত্তমা ভয় নাই/ রাজপথ ছাড়ি নাই।’

Why Loiter? (PB) : Phadke,Shilpa; Khan,Sameera & Ranade,Shi ...

কাজেই পায়ে হাঁটার ব্যকরণ ক্যালাইডোস্কোপের মতোই বহুমাত্রিক। কিন্তু কীভাবে হাঁটতে শুরু করেছিলাম আমরা? চার পা থেকে দু’-পায়ে হাঁটা, কথা বলা আর আত্মচেতনাই তো বিবর্তনে মানুষকে বাদবাকির থেকে বহু আলোকবর্ষ এগিয়ে দিয়েছে! প্রায় কয়েক শতক গুহামানব হয়ে অপেক্ষা করার পর প্রকৃতির আজব খেয়ালে, মানবমস্তিষ্কে ঘটে চলা এক আশ্চর্য মিউটেশনে হোমো সেপিয়েন্স নামক স্পিসিসটি আত্মসচেতন হয়ে পড়েছিল। আর তারপর প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগে, নতুন একটা জীবনের খোঁজে গুহা ছেড়ে পায়ে হেঁটে সে বেরিয়ে পড়েছিল। আফ্রিকা থেকে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের পূর্বজরা তারপর ছড়িয়ে পড়েছিল সবক’টা মহাদেশে। আর হাঁটতে হাঁটতেই ধীরে ধীরে সেই ভবঘুরে ‘মানুষের মতো’ প্রাণীরা পুরোদস্তুর ‘মানুষ’ হয়ে উঠেছিল। কাজেই মানবসভ্যতার ইতিহাসকে পায়ে হাঁটার ইতিহাস বললেও বোধহয় বিশেষ অত্যুক্তি করা হবে না! এরপর গঙ্গা দিয়ে কত জল…!

মুম্বাইয়ের কৃষক লং মার্চ

১৯৯১ সালে ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্ট ফর অল’ বা টাফিসার উদ্যোগে অজস্র মানুষ অক্টোবর মাসের প্রথম রবিবারে একসঙ্গে হেঁটে প্রথম ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াকিং ডে’ পালন করেন। তারপর তিন দশক সেই ট্র‍্যাডিশন বজায় রাখার পর কোভিড ১৯-এর কঠিন দিনগুলোয় টাফিসা প্রথমবার গোটা পৃথিবী জুড়ে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এক রিলে হাঁটার কর্মসূচি নেয়। ১৬০টি দেশের লক্ষাধিক মানুষ সেবার স্রেফ একসঙ্গে পথ হেঁটে বিশ্বাস জুগিয়েছিলেন আখেরে আমরা কেউ একা নই! টাফিসার নিজস্ব বয়ানে ‘বিশ্বজোড়া প্যান্ডেমিকে বিপর্যস্ত পৃথিবীতে আমাদের মনে হয়েছিলো আমাদের সবার এক হয়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’

অথবা, একে অন্যের পাশে হাঁটা উচিত বললেও ভুল হবে না। সে হাঁটার কতই না উপলক্ষ্য! দুনিয়া ওলটপালট করা বিপ্লব থেকে ডায়াবেটিস সচেতনতা! অথবা স্রেফ অকারণেই শিল্পী প্যল ক্লি-র ভাষায় ‘‘আ ওয়াক ফর ওয়াক’স সেক’’৷

Paul Klee's Ages of Influence | David Zwirner
পল ক্লি

কাজেই একা বা মিছিলে, দিন বদলের স্বপ্নে বা নিজেকেই নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য বেড়িয়ে পড়লেই হয়! ওই তো আমাদের পাশেই নির্বাণ রহস্য নিয়ে বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী থেকে সুদূর তিব্বতের পথে হাঁটছেন অতীশ দীপঙ্কর। প্রাকবিপ্লব প্যারিসে মানব মুক্তি নিয়ে জটিল ভাবনায় ডুবে থেকে একটানা পায়চারি করছেন রুশো। তাঁর কনফেশনসে তিনি ইতিমধ্যেই স্বীকার করে ফেলেছেন– ‘একমাত্র হাঁটার সময়ই আমি গভীর ভাবে ভাবতে পারি। হাঁটা থামালে, ভাবনাও থেমে যায়।’ ওই তো অনতিদূরেই ফাল্গুনের মাঝামাঝি এক অপরাহ্নে,সদ্য সন্ন্যাস গ্রহণের পর পদব্রজে নীলাচল যাত্রার পথে ভাবোন্মাদ শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দকে ডেকে প্রশ্ন করছেন ‘গঙ্গা কতদূর?’ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অশান্ত দিনগুলোয় ফ্রন্টলাইন থেকে বহুদূরে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে পাশাপাশি পথ হাঁটতে হাঁটতে প্রৌঢ় আইনস্টাইন আর তরুণ কার্ট গোডেল ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ আলোচনা করছেন।

This may contain: two people walking down a path in the grass with trees in the backgroud
আইনস্টাইন ও কার্ট গোডেল

কাজেই চলুন হেঁটে আসা যাক। নির্বাণ বা এলডোরাডোর খোঁজে নয়, স্রেফ হাঁটার জন্যই। ভাবনা মিলুক বা না মিলুক। বিপ্লব আসুক বা না আসুক। সুগার কমুক বা না কমুক।

দেড় লক্ষ বছর ধরে আমরা কেউই তো আর একা হাঁটছি না!