ভারতীয় কুইয়ার জীবনের এমন সংবেদনশীল এবং গভীর ছবি বড় পর্দায় সচরাচর দেখা যায় না। বিশেষ করে মধ্যবয়সি নন-বাইনারি ব্যক্তিদের আত্ম-অন্বেষণের গল্প ভারতীয় সিনেমায় খুব বিরল। যদিও এই চরিত্রটি একটি সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি থেকে উঠে এসেছে, যেখানে ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সহজলভ্য, তা সত্ত্বেও ‘They/Them’ একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সাহসী প্রচেষ্টা।
জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে নিজেকে নতুনভাবে চিনে নেওয়া যায়। ১৭ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘দে/দেম’ (‘They/Them’) সেই সন্ধানের এক নিবিড় প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত Dialogues: Calcutta International LGBTQ Film and Video Festival-এ প্রদর্শিত এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন ফেলিয়ান (Phelian)। এটি প্রযোজনা করেছে ‘স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি’, ‘প্রত্যয় জেন্ডার কালেক্টিভ’, এবং ‘গ্যেটে ইনস্টিটিউট– ম্যাক্সমুলার ভবন’, কলকাতা।
They/Them এমন এক মধ্যবয়সি ভারতীয় ব্যক্তির গল্প, যিনি জন্মসূত্রে নারী হলেও জীবনের এই পর্যায়ে এসে আবিষ্কার করেন যে তিনি নন-বাইনারি। এই পরিচয় বুঝতে পারা বা গ্রহণ করার যাত্রা সহজ নয়। নন-বাইনারি বলতে বোঝায় এমন একটি লিঙ্গপরিচয়, যা পুরুষ বা নারীর বাইরের পরিসরে অবস্থান করে। এটি কোনও নির্দিষ্ট বাক্সে আবদ্ধ নয়, বরং পরিচয়ের এক বিস্তৃত এবং নমনীয় রূপ।
চরিত্রটিকে দেখা যায় একাকী জীবনযাপন করতে। জন্মদিনে ছাত্রছাত্রীদের শুভেচ্ছা পেলেও তাতে তার মনে কোনও পরিবর্তন আসে না। একসময় তিনি বাম্বল ডেটিং অ্যাপটি ডাউনলোড করেন। প্রোফাইল তৈরি করার সময় যখন তিনি সর্বনামের (প্রোনাউন)-এর বিকল্পগুলির সামনে আসেন, তখন they/them এবং ze/zer দেখে বিভ্রান্ত এবং কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। এদিকে, ক্যাফেতে প্রথমবারের মতো একজন নন-বাইনারি ব্যক্তিকে দেখে তার পরিচয় সম্পর্কে নতুন ভাবনা শুরু হয়। রাতে ইন্টারনেটে প্রোনাউন এবং নন-বাইনারি পরিচয় সম্পর্কে গবেষণা করেন।
এই যাত্রা তাকে শৈশবের এক স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি ছেলেদের এবং মেয়েদের বাথরুমের সামনে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে। তার মা তাকে মেয়েদের টয়লেটে নিয়ে যান, কিন্তু সেই মুহূর্তে বোঝা যায় যে এই বিভ্রান্তি তার জীবনে নতুন নয়।
…………………………………………………………….
আরও পড়ুন: কখন অন্যকে ‘না’ বলতে হবে, আর কখন নিজেকে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে– এটা জেনে ফেলাই আলোকপ্রাপ্তি
…………………………………………………………….
চলচ্চিত্রটি তার আবিষ্কারের আনন্দ এবং স্বীকৃতির গল্প। তিনি শাড়ি পরেন, যা তার ফেমিনিন এক্সপ্রেশনের অংশ, কিন্তু তার নন-বাইনারি পরিচয় সেই অভিব্যক্তিকে ছাপিয়ে যায়। ফেমিনিন বা ম্যাসকুলিন এক্সপ্রেশন এবং নন-বাইনারি পরিচয়ের সহাবস্থানকে যে স্বাভাবিকভাবে দেখানো হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভিজ্যুয়াল এবং আবহসংগীতের দিক থেকে, সিনেমাটি অত্যন্ত প্রভাবশালী। উষ্ণ রঙের ব্যবহার, আলো-ছায়ার সূক্ষ্ম সংমিশ্রণ, বিশেষ করে সেই দৃশ্য যেখানে অন্ধকার ঘরে কেবল ল্যাপটপের আলোতে চরিত্রটির মুখ আলোকিত– এগুলো এক গভীর রূপক অর্থ বহন করে। এটি দেখায় কীভাবে জ্ঞান এবং নিজের পরিচয় সম্পর্কে বোঝাপড়া চরিত্রটির জীবনে আলো জ্বালায়।
ভারতীয় কুইয়ার জীবনের এমন সংবেদনশীল এবং গভীর ছবি বড় পর্দায় সচরাচর দেখা যায় না। বিশেষ করে মধ্যবয়সি নন-বাইনারি ব্যক্তিদের আত্ম-অন্বেষণের গল্প ভারতীয় সিনেমায় খুব বিরল। যদিও এই চরিত্রটি একটি সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি থেকে উঠে এসেছে, যেখানে ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সহজলভ্য, তা সত্ত্বেও ‘They/Them’ একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সাহসী প্রচেষ্টা।
Dialogues-এর মতো উৎসবের মাধ্যমে এমন গল্পের সঙ্গে আমাদের পরিচিত হওয়া সম্ভব, যা কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের সমাজের বহুমাত্রিকতার আয়না। ‘They/Them’ আমাদের দেখিয়ে দেয় যে, আত্ম-অন্বেষণের জন্য বয়স কোনও সীমা নয়। এটি একটি নিঃশব্দ উদযাপন, যা নিজের সত্যকে স্বীকার করার সাহস জোগায়।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved