আমাদের দেশে পণ দেওয়া নেওয়া আইনত অপরাধ হলেও সামাজিক আচার সংস্কারের নামে পণপ্রথা গভীরভাবে সমাজে গেঁথে আছে। পণ কেউ খোলাখুলি চায়, কেউ রেখেঢেকে, আবার কেউ অস্বীকার করে এই বলে যে– ‘আমরা তো কিছু চাই না, আপনারা সাজিয়ে যা ইচ্ছে দেবেন!’ কিন্তু বাস্তব হল, বিয়েতে যৌতুক এখনও ‘রীতি’ বলে ধরা হয়, আর খোলাখুলি হোক বা আড়ালে, সেটা অনেক বিয়ের মূল নিমিত্ত হয়ে দাঁড়ায়। এমনকী যেসব সম্প্রদায়ে আগে যৌতুকের প্রচলন ছিল না, তারাও এই প্রথার কবলে পড়েছে।
গ্রাফিক্স: দীপঙ্কর ভৌমিক
আমাদের দেশে আইন করে পণপ্রথা ও যৌতুক নিষিদ্ধ হয়েছে ১৯৬১ সালে। স্বাধীনতা পাওয়ার পর ১৬ বছর পেরিয়ে তবে পণ নেওয়া ও দেওয়া– দুই-ই, শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার শুরু। আরও ২২ বছর অপেক্ষার পর, দেশজুড়ে নারী আন্দোলনের চাপে পণের জন্য আত্মহত্যায় মদত দেওয়া বা হত্যা আইনি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। যদিও এই সংশোধন পণবিরোধী আইনে করা হয়নি, গৃহহিংসা বিরোধী আইনে ৪৯৮ ধারায় তা শাস্তিযোগ্য। আজ একবিংশ শতাব্দীর দুই দশক পার করেও আমাদের দেশে বছরে গড়ে ৬০০০-এরও (সূত্র: এনসিআরবি তথ্য) বেশি মেয়ে মারা যায় পণসংক্রান্ত কারণে– শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে। সেই মৃত্যুতালিকাতেই সদ্য নাম জুড়েছে ঋদ্ধন্যা আর লোগেশ্বরীর।
তামিলনাড়ুর ঋদ্ধন্যা– মাত্র ২৭ বছর বয়সি একটি মেয়ে, বিয়ের আড়াই মাসের মাথায় আত্মহত্যা করেছে। কারণ, পণের দাবিতে তার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির নিত্যদিনের শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার সে আর সহ্য করতে পারেনি। ঋদ্ধন্যার পরিবার পণ হিসেবে ৮০০ গ্রাম সোনার গয়না ও ৭০ লাখ টাকা দামের একটি ভলভো গাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও খাঁই মেটেনি ছেলের ও ছেলের পরিবারের। চেন্নাইয়ের ২৫ বছর বয়সি লোগেশ্বরী, যার বিয়ে হয়েছিল ৩৭ বছরের ই. পোন্নির সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই সোনার গয়না ও এয়ার কন্ডিশনার দেওয়ার দাবিতে পোন্নির পরিবারের সদস্যরা তাকে হেনস্তা করছিল। বিয়ের ৫ দিনের মাথায় লোগেশ্বরীও আত্মহত্যা করে।
আজও ঋদ্ধন্যা আর লোগেশ্বরীদের মতো মেয়েদের বেছে নিতে হয় পণের বিনিময়ে বিবাহিত জীবনের হেনস্তা আর মৃত্যুর মধ্যে থেকে কোনও একটা পথ।
ঋদ্ধন্যার আড়াই মাসের বিবাহিত জীবনে সে বারবার অত্যাচারের শিকার হয়ে মা-বাবার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল। কিন্তু তাঁরা নিজের মেয়েকে বলেছিলেন, ‘মানিয়ে নাও’। তার আত্মহত্যার চিঠিতে সে মা-বাবাকে বলেছে, ‘আমি মানিয়ে নিতে পারিনি। আমায় ক্ষমা করো।’ জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর তাদের কাছে লিঙ্গ-ভিত্তিক হিংসার যে সমস্ত অভিযোগ জমা পড়ে, তার মধ্যে ১৭ শতাংশ পণপ্রথা ও যৌতুক-সংক্রান্ত হেনস্তা ও হিংসার।
প্রাচীন সময় থেকে পণপ্রথার প্রচলন। বৈদিক যুগের পুঁথিতেও বিয়ের সময় মেয়েকে সম্পত্তি ও সম্পদ দেওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়– স্ত্রীধন হিসেবে বা মেয়ের মূল্য হিসেবে শুল্ক দেওয়ার আচার ছিল, যা কন্যাপণ বলা হত। মনুসংহিতায় যদিও মনু যৌতুক ও কন্যাপণের মধ্যে পার্থক্য করেন। বরপণ, অর্থাৎ ছেলের পরিবারকে যৌতুক দেওয়ার রীতিকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন। কন্যাপণ দিতে হয় এমন বিয়েকে মনু ‘অবৈধ’ বলে নিদান দেন। বরপণ ছিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে, আর কন্যাপণ অন্যদিকে বঞ্চিত জাতি-সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল।
বাংলাতেও ব্রাহ্মণ্যবাদী এই আচারের প্রভাব ছিল। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে কৌলিন্যপ্রথার প্রবর্তন হয়। সেই সময় কুলীন ব্রাহ্মণদের বহুবিবাহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণের ইতিবৃত্তের খোঁজ পাওয়া যায় পুরনো সাহিত্যেও। ১৮৯০ সালে বিশিষ্ট নাট্যকার রামকৃষ্ণ রায়ের ‘লোভেন্দ্র গবেন্দ্র প্রহসন’-এ সমাজে কৌলিন্যপ্রথার কদর্যতা বোঝানোর প্রেক্ষাপটে একটি গান ছিল–
এক এক ছেলে দশ হাজারে
বেচব কসে বে’র বাজারে
মেয়ের বাবার দফা রফা
ভিটেয় ঘুঘু চরিয়ে দেব
আমি ব্রাহ্মণ পরিবারে বড় হয়েছি। ফলে ‘পণ’ শব্দটা আমার কাছে অচেনা নয়। পরিবারের পুরুষরা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই আমাদের বাড়িতে পণ নেওয়া বা দেওয়াকে অপরাধ হিসেবে দেখার চল ছিল। তবে বৃহত্তর পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের পরিসরে পণ দেওয়া-নেওয়া হত– তা আমি চোখে দেখেছি। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে শুনতাম, কার ছেলে বিয়ে করে কত সোনা-টাকা পণ পেল, তার বড়াইয়ের গল্প। আমার গায়ের রং কালো আর শরীরের গঠন চওড়া– ফলে আমার বিয়ে ‘দেওয়া’ যে একটা কঠিন কাজ হবে, তা বহুবার শুনেছি। একবার এক আত্মীয়া বলেছিলেন, ‘এখন তো প্রেমের যুগ, নিজের পছন্দে কাউকে খুঁজে নিস, না হলে তোর বর খুঁজতে গিয়ে তোর বাবাকে দেনায় পড়তে হবে।’
কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে বিয়ে হওয়া মানে জাতে ওঠা। এহেন উচ্চজাতের ‘সুবিধা’কে পুঁজি করে কুলীন ব্রাহ্মণরা বিয়ের সময় কনের বাড়ি থেকে পণ নেওয়া, অর্থাৎ সম্পদ হাতানোকে সামাজিক রীতিতে পর্যবসিত করে। কারণ ব্রাহ্মণরা যা করবে, তাই বিধান। যদিও সোনাদানা, গাড়ি, সম্পত্তি ভোগের রীতিতে ব্রাহ্মণ মেয়েদের ভাগ নেই। তা শুধু পুরুষদের জন্যই সংরক্ষিত। এই পণপ্রথার প্রত্যক্ষ শিকার মেয়েরাই, তবু পিতৃতন্ত্রের নিয়মে লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলে এই রীতি এগিয়ে নিয়ে চলেছে। উচ্চবর্ণের ধনী পরিবারগুলোর সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পণের বড় ভূমিকা আছে। যত ধনী ও উচ্চবর্ণের পরিবার, পণের চাহিদা তত বেশি।
আমাদের দেশে পণ দেওয়া-নেওয়া আইনত অপরাধ হলেও সামাজিক আচার সংস্কারের নামে পণপ্রথা গভীরভাবে সমাজে গেঁথে আছে। পণ কেউ খোলাখুলি চায়, কেউ রেখেঢেকে, আবার কেউ অস্বীকার করে এই বলে যে– ‘আমরা তো কিছু চাই না, আপনারা সাজিয়ে যা ইচ্ছে দেবেন!’ কিন্তু বাস্তব হল, বিয়েতে যৌতুক এখনও ‘রীতি’ বলে ধরা হয়, আর খোলাখুলি হোক বা আড়ালে, সেটা অনেক বিয়ের মূল নিমিত্ত হয়ে দাঁড়ায়। এমনকী যেসব সম্প্রদায়ে আগে যৌতুকের প্রচলন ছিল না, তারাও এই প্রথার কবলে পড়েছে। গরিব/নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো মেয়ের ভবিষ্যৎ আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজের জমি বাড়ি বন্দক রেখে কিংবা বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকার পণ দিচ্ছে– এটা আজও ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে ভারতের বাস্তবতা। ইসলামে দেনমোহর দেওয়ার রীতি, আদিবাসী সমাজে কন্যাপণের রীতি ছিল। এই সম্পত্তি বা সম্পদ মেয়েটির ভবিষ্যতে বিশেষত স্বামীর অবর্তমানে মেয়েটির ভরণপোষণে কাজে লাগবে এই উদ্দ্যেশ্যে দেওয়া হত। কিন্তু বিয়েতে পুরুষকে ও পুরুষের পরিবারকে পণ দেওয়ার চল, তা স্পষ্টতই ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির অংশ, যা বিয়ের সময় সম্পদ বা উপহার আদান-প্রদানের অন্যান্য আচারকে গ্রাস করে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রধান সামাজিক রীতি হয়ে উঠেছে।
এই প্রসঙ্গেই আমার জীবনে পণপ্রথার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কয়েকটা ব্যক্তিগত কথা বলি।
রুকসানার সঙ্গে আমার আলাপ বছর দশেক আগে। সমাজকর্মী হিসেবে সে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাল্যবিবাহ আর শিশুশ্রম রোখার কাজ করত। কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় মাইক্রোফিন্যান্সের ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়ে রুকসানা। উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে গিয়ে পড়ে সুদখোর মহাজনের ফাঁদে। ঋণমুক্তির আন্দোলন চলাকালীন, তার সঙ্গে সুখ-দুঃখের গল্প হতে হতে সে ভাগ করে নিয়েছিল তার ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা। সেই সময় কুণ্ঠা জড়ানো গলায় বলেছিল, এই ঋণের বোঝার বেশিরভাগটাই তার বিয়ের সময় পণ দেওয়ার খরচের ভার। ভালোবেসে বিয়ে করার সময় ছেলের পরিবার সোনা আর দামি বাইকের দাবি তোলে। রুকসানার বাবা গরিব কৃষক। তাই পণ দিতে না পারলে বিয়েটা ভেঙে যাবে– ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়েই সে নিজেই পণের টাকা জোগাড় করতে ঋণ নেয়।
আমার কলেজের সহপাঠী পায়েল। ধনী মারোয়ারি পরিবারের মেয়ে। পরিবারের নিয়ম এতটাই কঠোর ছিল যে, কলেজ শেষ করেই সে সোজা বাড়ি চলে যেত– বাড়ির বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর অনুমতি ছিল না। আমরা কম্পিউটার সায়েন্স পড়তাম। কোড লেখায় ওর দারুণ দক্ষতা ছিল। মাসে মাসে ওর মা ওকে নামীদামি পার্লারে নিয়ে যেতেন ত্বকচর্চার জন্য।
বিয়ের দেখাশোনার জন্য মেয়েকে তৈরি করে রাখতেন মা। পায়েল পরিবারের মতের বাইরে গিয়ে মাস্টার্স করেছিল। সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ পেতে সে মরিয়া ছিল, কারণ তা না হলে ওকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হত। ওর বাড়ির লোক বলত, ওর বিয়ে আর পণের খরচ অনেক– যা তাঁরা জমিয়ে রেখেছেন। ফলে ওর উচ্চশিক্ষার খরচ তাঁরা আর দেবেন না।
ছোটবেলায় আলমারিতে যত্ন করে রাখা মায়ের একটা কালো চুড়িদারের ওপর আমার খুব লোভ ছিল। কৈশোরে পৌঁছে সেটা পরার জন্য মাকে খুব পীড়াপীড়ি করতাম। কিন্তু মা দিতেন না। নিজেও পরতেন না। অনেক পরে মা বলেছিলেন, ওই চুড়িদারটা ওঁর ছেলেবেলার বান্ধবীর স্মৃতি। বিয়ে করে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়ার আগে, নীতামাসি আর মা নিজেদের প্রিয় জামা অদল-বদল করেন। তারপর আর মায়ের সঙ্গে নীতামাসির কখনও দেখা হয়নি। বেশ কয়েক বছর পরে খবর আসে নীতামাসি আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তাঁর বাড়ির টাকা ছিল– যাকে বলে সম্ভ্রান্ত পরিবার। আরও ধনী পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। নীতামাসি শ্যামবর্ণা ছিলেন বলে পণ হিসেবে ধার্য হয় বিশাল অঙ্কের সোনা-দানা-নগদ। সবাই জানত, নীতামাসির বর আর শ্বশুরবাড়ির লোকজন আরও পণের জন্য অত্যাচার করত, আর তারাই নীতামাসিকে পুড়িয়ে মেরেছে। কিন্তু কোনও পুলিশ কেস হয়নি।
অনেকে ভাবেন, পণপ্রথা রোখার উপায় মেয়েদের শিক্ষা ও উপার্জনক্ষম করে তোলা। আমি মনে করি, এটা আংশিক সত্য। কারণ মেয়েরা শিক্ষিত আর উপার্জনক্ষম হলেও, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে প্রোথিত বিধি-নিয়মের বাইরে জীবন বাঁচা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তার সঙ্গে আছে আইনের প্রয়োগে গাফিলতি। পণসংক্রান্ত হত্যার মামলায় শাস্তির হার দেখলেই বোঝা যায়– অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হয় না।
এই পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো বিয়ে ও সন্তান জন্ম দেওয়াকেই মেয়েদের জীবনের একমাত্র সার্থকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে– ফলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষিত বা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও, তাদের সম্মান আর মূল্য বাঁধা থাকে সংসার ও সন্তান পালনের মধ্যে।
২০১৭ সালে আইআইটি দিল্লির পিএইচডি স্কলার মঞ্জুলা দেবকের মৃত্যু এই বাস্তবতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করা একজন গবেষকও যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ি ও স্বামীর হেনস্তার শিকার হয়ে শেষপর্যন্ত মারা যান। ওদের দাবি ছিল, মঞ্জুলা নিজের বাবার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা এনে দিক, যাতে তার স্বামী ব্যবসা শুরু করতে পারে। ‘ওরা চাইত, মঞ্জুলা পিএইচডি ভুলে বরোদায় গিয়ে সংসার সামলাক’– মিডিয়ার সামনে তীব্র আক্ষেপে বলেছিলেন তার বাবা।
যৌতুক বা পণ পাত্রের জন্য নির্ধারিত মূল্য– পাত্র এখানে একরকম নগদ পুঁজির উৎস। পিতৃতন্ত্রের নিয়মে সমাজে ক্ষমতার বিন্যাস লিঙ্গ-ভিত্তিক ও অসম। ফলে এখানে প্রচলিত পণ্য-ক্রেতার নিয়ম খাটে না। পাত্রের ওপর ‘ক্রেতা’– অর্থাৎ কনের পরিবারের– কোনও মালিকানা থাকে না। বরং যৌতুক বা পণ শ্বশুরবাড়ির কাছে একধরনের ভোগ্য মূলধনে পরিণত হয়।
এই ধারণার ভিত লিঙ্গ-ভিত্তিক শ্রমবিভাজন এবং নারী-পুরুষের শ্রমের ‘মূল্য’-র পার্থক্যের ওপর দাঁড়িয়ে। এটি আসলে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে, যেখানে পুরুষ উপার্জন করবে, নিরাপত্তা দেবে; আর নারী পালন-পোষণ করবে এবং তার পুনরুৎপাদনমূলক শ্রম পুরুষের শ্রমের অধীন থাকবে। লিঙ্গ-ভিত্তিক শ্রমের বিভাজন, সন্তানধারণের নিয়ন্ত্রণ এবং নারীর শ্রমশক্তি– এই সব কিছুই পুঁজিবাদী পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তথাকথিত ‘আদর্শ’ ব্যক্তি, অর্থাৎ পুরুষের মালিকানাভুক্ত।
তাই ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের শেখানো হয়, মানিয়ে নিতে– ফলে অনেক মেয়েই শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের পরও আরোপিত দায়িত্ববোধ থেকে বা সমাজে একঘরে হয়ে যাওয়ার বা কলঙ্কের ভয় সংসার ছাড়েন না আবার অনেকের কাছে কোথাও যাওয়ার রাস্তা থাকে না।
পণপ্রথাকে রুখতে চাই এমন সমাজ ও পরিসর, যেখানে মেয়েদের জীবন তার আনুগত্যের চেয়ে বেশি দামি। মেয়েদের স্বার্থকতা সংসার নয়– সে নিজে ঠিক করে। যেখানে নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে বাঁচার চাহিদাকে মেয়েদের দুর্বলতা নয়, অধিকার হিসেবে গণ্য হয়। যেখানে মেয়েরা মা, বোন, স্ত্রী-এর পরিচয়ের বাইরে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ।
……………………………….
ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার ডিজিটাল
……………………………….