Robbar

একঝলকে যা দেখলাম ওর মুখটা বিবর্ণ, ফ্যাকাসে

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 9, 2023 8:15 pm
  • Updated:November 9, 2023 8:15 pm  

দিদিমণিকে বললাম, তৃণার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। অভিমান মাখানো সুরে আরও বললাম, ‘ডাকলাম, কিন্তু চিনল না।’ দিদিমণি আমার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘তুই ভুল দেখেছিস।’ অনেক বছর আগের ঘটে যাওয়া এক ঘটনা জানাচ্ছেন বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য

আহা, কী ভাল গান গায় মেয়েটি!

দেখেছিলাম গানের ইশকুলে। দিদিমণির গানের ইশকুল। কী নাম ওর? জানলাম– তৃণা। বেশ নাম। দেখতেও চমৎকার। আমার সঙ্গেই মাধ্যমিক দেবে। ক্লাস শেষে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতাম ওর সঙ্গে। যদিও তৃণা বলেছিল, গানই ওর কেরিয়ার। এক-দু’বার দিদিমণির বাড়ির ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ডুয়েটও গেয়েছি। শেষ দেখা হয়েছিল মাধ্যমিকের কয়েক মাস আগে, গানের পরীক্ষার দিন। তারপর দীর্ঘ দীর্ঘদিন আর দেখা নেই। তখন তো মোবাইল নামক বস্তুটিই ছিল না। সোশাল মিডিয়া তো দূর কি বাত! তবু মনের অন্তরালে চমৎকার গান করা ওই মেয়েটির নাম কীভাবে যেন অক্ষত ছিল।

তখন কলেজে পড়ি। এক ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় টিউশন সেরে বাড়ি ফিরছি, একটা পুরনো মোকামের পাশ ঘেঁষে। মেঘলা দিন। আবছা আবছায়া চারপাশ। বেশ শীত। স্ট্রিট লাইট জ্বলছে। আমার উল্টোদিক থেকে দেখলাম, একটা রিকশা আসছে। রিকশায় একলা একটা মেয়ে বসে। সামনাসামনি আসতেই চমকে উঠলাম! প্রায় বছর তিনের আড়াল কাটিয়ে, কুয়াশা কাটিয়ে, কত গানের স্বরলিপি কাটিয়ে তৃণা, আমার বাল্যবন্ধু, আসছে!

আরও পড়ুন: আমার ঘরের সেই হঠাৎ অতিথি

বেজায় উত্তেজিত আমি। হব না-ই বা কেন! এত্তকাল পর। নাম ধরে ডাকলাম। একবার তাকাল কি তাকাল না, ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না। রিকশাটা দ্রুত আমাকে ছাড়িয়ে গেল। মনে হল, তৃণা পাথর হয়ে বসেছিল। আমার ডাকে নিরুত্তর থাকবে, এমনটাই যেন ভেবে রেখেছিল আগে থেকেই। আমি কি ভুল করেছিলাম কিছু? একঝলকে যা দেখলাম ওর মুখটা খানিক বিবর্ণ, ফ্যাকাসে।

হপ্তাখানেক পর এক অনুষ্ঠানে গিয়ে হঠাৎ দেখা গানের দিদিমণির সঙ্গে। যাঁর কাছে তৃণা আর আমি গান শিখতাম। দিদিমণিকে বললাম, তৃণার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। অভিমান মাখানো সুরে আরও বললাম, ‘ডাকলাম, কিন্তু চিনল না।’
দিদিমণি আমার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘তুই ভুল দেখেছিস।’
আমি পাল্টা বললাম, ‘কী যে বলেন! ভুল হবে কেন! তৃণাকে চিনব না?’

আরও পড়ুন: মৃতদেহটা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি

দিদিমণির মুখের রংটা কেমন বদলে গেল। ‘তুই আসলে জানিস না। তৃণা আর বেঁচে নেই। মাধ্যমিকের পরই ও আত্মহত্যা করেছিল। আগুন দিয়েছিল গায়ে। দু’সপ্তাহ হাসপাতালে থেকে মারা যায়।’

কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম, শীতের পড়ন্ত বিকেলে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে!

প্রচ্ছদের ছবি: অর্ঘ্য চৌধুরী