NRC, CAA-এর আবহে উদ্বিগ্ন মানুষ বুঝে গিয়েছে, ‘যার কোনও দেশ নেই, তার বিদেশও নেই’। অথচ আছে থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি আঁচ করেই কী সেই অজ্ঞাতনামা লিপিকার অটোর পিঠে (চেতলা) লিখেছিলেন বাক্যটি? সত্যিই তো যার কোনও কুল নেই, দেশ নেই, সীমানা নেই, সম্বল বলতে আর কী আছে তার? আছে, আছে, আলবাত আছে। এমন জিনিস আছে যা দুনিয়ার সর্বশক্তিমান শাসকের ভাঁড়ারেও নেই! তার নিঃস্বার্থ অমলিন হাসি আছে। সে অবাধে হাসতে পারে, নিজেকে তুচ্ছ করে তুচ্ছতাকে দেখতে পারে অপলক শেষতক্! মিলান কুন্দেরাও এভাবেই হাসতেন যা গোটা পূর্ব ইউরোপে সংক্রমিত হয়েছিল।
২.
‘বাঙালী মাতেই কবি’– মোক্ষম সময়ে গুরুতর বানান ভুল সত্ত্বেও অটোলিপিটির ঝাঁঝকে অস্বীকার করার উপায় নেই। শীতকালে জঙ্গলে বাঘ দর্শনেও যেমন দর্শনার্থীর উত্তেজনার পারদ চড়তে বাধ্য, তেমনই মাঝ-পৌষের সাঁঝবেলায় উত্তর কলকাতার শহরতলি এলাকায় আচমকা ক্ষণিকের তরে (সৌজন্য: WB19 2534) এহেন অটোলিপি দর্শনে আমার বেলায়ও তার অন্যথা হয়নি। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে সোদপুরে দেখেছিলাম একেবারে শুরুতেই বলা অটোলিপিটি।
আজ আমার সংগৃহীত অটোলিপির প্রকৃতি বিচার-বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যেগে অটোচালক-সহ বাহন সংশ্লিষ্ট মানুষদের মধ্যে করা কয়েকটি সমীক্ষা এবং নানা সময়ে হওয়া আলাপ, টুকরো কথাকে পুঁজি করে এবং পর্যবেক্ষণলব্ধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, গোড়ায় উদ্ধৃত অটোলিপিটির বক্তব্য প্রায় নির্ভুল! ‘প্রায়’ শব্দটা বলতে হল অটোলিপির ভাষায় ‘Be Politically Correct’ থাকার জন্য।
কয়েকটি নমুনা পেশ করলেই বিষয়টা ‘WATER LIKE SIMPLE/ NO TENTION PEOPLE’ (WB04A-6039) হয়ে যাবে।
অটোচালকের দৃষ্টিকোণ থেকে অটো হল ‘পিচকে রানী, রাস্তাকা মজা/ আধী ঘরওয়ালী জ্যায়সা খাস্তা গজা’! লোককবিতাটি লেখা ছিল কিন্তু বাংলা হরফেই! কারও কাছে অটো হল, ‘রাস্তাকা রাজা, মুঝে মিলনা হ্যায় তো যাদবপুরমে আ জা’। রুটভেদে ‘যাদবপুর’-এর বদলে পড়বেন ‘ঘোলা’, ‘বারাসাত’, ‘ব্যান্ডেল’, ‘গড়িয়া’, ‘আরামবাগ’ কিংবা ‘শিলিগুড়ি’ ইত্যাদি। সংবেদনশীল অনুভবে, ‘এই গাড়ি আমার জান/ নামার পরে মনে মনে করবে প্রণাম’। কেউ লিখেছিলেন, ‘এ গাড়ি আমার পেয়ারকা ফুল/ ভেবো না মারচি গুল’। আবার কেউ লিখেছেন, ‘গাড়ির দুনিয়ায় Miss গাড়ি/ চড়লে তোমার গর্ব হবে ভারী’!
‘আমি জানি তুমি কে!/ তুমি চেনো আমাকে?’– আপাত নিরীহ প্রশ্নবোধক ছড়ার মধ্যে ‘আমিই সব জানি’ (WB 04A-4179) মার্কা সংস্কৃৃতি সক্রিয়। প্রগতির উল্টোদিকে হাঁটা বা প্রকৃত জ্ঞানবিরোধী অবস্থান প্রকট এই অটোছড়ায়। সমকালীন রাজনীতিতে রাজনীতিকদের মধ্যে যুক্তিবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিরোধিতা এবং পরম সহিষ্ণুতা যত কমবে, ততই এ ধরনের ছড়া ছড়াবে বাহনের গায়ে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতায় (যেখানে নিয়ম করে শোনা যায় তাঁর প্রিয়বাক্যটি, ‘নোবডি নোজ মোর দ্যান মি’ অর্থাৎ আমার থেকে বেশি কেউ জানে না) কিংবা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘হার্ভাড না হার্ড ওয়ার্ক’ কটাক্ষে তো দেখি আলোচ্য অটোলিপি বাহিত প্রবণতারই বহিঃপ্রকাশ।
‘ম্যায় হু Mr. Lal/ তুই কি জানিস *ল’– উত্তরবঙ্গের এক জেলা শহরে দেখা (২০০৮) অটোলিপির কথাই ধরা যাক। তখনও এখনকার মতো ইন্টারনেট সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠেনি। হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ইউনির্ভাসিটি জ্ঞান জলচল হয়নি। তাহলে? সভ্যতার ইতিহাস বলে, যেকোনও বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারীকে চিরকালই তাঁদের পরিশ্রমলব্ধ ও মেধার্জিত জ্ঞান সম্পর্কে অবজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অটোলিপিটির ভাষ্যে কৌমের মানসিকতার দাগ লেগেছে মাত্র। ‘*’ ব্যবহার করে প্রতীক দিয়ে কুকথা ঢাকার একটা অক্ষম প্রয়াস জারি থাকলেও তাতে লিপিকারের ভাবনার উৎস বদলায় না। অন্যত্র দেখা অটোবাক্যই বলছে, ‘লেখা কোত্ থেকে আসচে সেটিই আসল কতা’!
এক রসিক অটো-লিপিকারের স্বীকারোক্তি: ‘আমার নেই কোনও মাদকতা দোষ/ পান করি বিড়ি ফুঁকি তাতেই মোর দিল খোস।’ লক্ষণীয়: ‘পান করি’ অংশটুকু। তরল রসিকতায় পূর্ণ কবিতা: ‘তোর জানলা খোলা/ বউকে ডেকে দে ভোলা’। সুন্দরীর উদ্দেশে লেখা: ‘খিলখিলি হাসি হাসে মেয়ে/ আঁচল খসিয়ে রূপ দেখিয়ে’। আবার কখনও ‘ট্রেন্ডি লুক, ট্রেন্ডি ফ্যাশন’ (শিলিগুড়ি, ২০২২)।
সুন্দরী বন্দনায় একজন লিখছে: “লিখতে গেলে তোমার রূপের কথা মোর কলম হয় ভারি/ অল্প কথায় বলি তাই, ‘তুমিই পরমা সুন্দরী’।” হতে পারে এটা দেখেই আরেকজন তার অটোপৃষ্ঠে লিখিয়েছিলেন: ‘দেখবি পরমা সুন্দরী/পাশ দিয়ে চলে যাবে আমার টগরী’! আর যখন জানতে পারবি, তারপর থেকে ‘দেখবি-জলবি আর লুচির মতন ফুলবি’। হাত বদলে ‘লুচি’-র জায়গা নেয় ‘বেলুন’ কিংবা ‘হাতি’। শেষোক্ত দু’টি পেয়েছিলাম রাণাঘাট (২০০৯) এবং কল্যাণীতে (২০১২)।
‘দেখবি যখন এক চেয়ারে দুজন/ জানবি তারা সম্পর্কে সুজন’– অটোবাক্য মনে পড়ায় বহুল উচ্চারিত বাংলা প্রবাদের আদলে রচিত আরেক অটোলিপিকে– ‘মন বললে সুজন/ তেঁতুলপাতায় দশজন’। একই কথা আরেকজন বলছে একটু ঘুরিয়ে: ‘এক পাতে খায় দুজন/জানবি তারা প্রেমে পড়েছে দুজন’। শেষোক্ত অটোলিপি তিনটি ২০১০-এর আগেকার। তখনও ফেসবুকের দাপট শুরু হয়নি। ২০১৯-এ এসে দেখি সুসম্পর্কের সহাবস্থানকে দেখা হচ্ছে এভাবে: ‘যদি দেখিস এক Plate এ দুজন/ জানবি তারা Fb-র ধন’। রীতিমতো চাঁচাছোলা ভাষায় লেখা সম্পর্কের প্রকৃতি নিয়ে। সম্প্রতি বিরাটিনিবাসী এক সুহৃদ (নাম প্রকাশে মানা রয়েছে) শোনালেন তাঁর দেখা এই লিপির কথা: ‘কোমরে হাত কাঁধে হাত/ জানবি শালা দুটোই সেকেন্ড হাত।’ ‘সেকেন্ড হাত’(যদি নয় সেটার সম্ভাবনাই প্রবল) ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’-এর বাংলা রূপান্তর হলে অটোলিপি ‘যুগ-যুগ জিও!’ নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষণকালীন স্থায়িত্ব ও ভঙ্গুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে লিপিকারের এক নিবিড় পাঠ বলা যেতে পারে একে।
……………………………………………………………………………………………………………………….
ঈষৎ ইরোটিক রঙ্গ-রসিকতাও দেখা যায় ছড়ার আদলে অটোপৃষ্ঠে। নমুনা: ‘দুধ চা লাল চা যে খাবে যেটা/বিয়ের পর খাবো শুধুই তোমারটা’ (বেহালা, ২০০৪); ‘তুমি আমার নেশা, আমি তোমার নেশা/ কখনো কোরো না এটাকে ভালোবাসার পেশা’ (শ্যামবাজার, ২০০৬); ‘শাশুড়ী জামাই অমর/ দুইজনেতে খুলল মাইয়ার কবর’ (অবৈধ প্রেমের ইঙ্গিতবাহীর দর্শন পাই ২০০১-এ শিয়ালদায়); ‘রঙ্গ করতে দরকার আমায়/রঙ্গ শেষ হলে বোয়ের দোরগোড়ায়’ (২০০৯, সোনারপুর) ইত্যাদি।
……………………………………………………………………………………………………………………….
‘ভালোবাসা কারে কয়/ সেকি কেবলই টাকাময়?’– একালের অর্থসর্বস্ব প্রেমের অভিনয়কেই মনে পড়ায় আরেকবার। সমমনস্ক আরেক লিপিকারও লিখে গেছেন: ‘প্রেম যখন চিনল টাকা/ ভালোবাসা নিমেষে হলো ফাঁকা’। অর্থসর্বস্ব মেকি প্রেম সম্পর্কে মূল্যায়ন করার প্রয়াস: ‘When U fall in Love/Actually u fall in sea of money’. সমধর্মী আরও কয়েকটি অটোলিপি: ‘Love এ লাভ নেই/ বলে টাকা দেখে ভালোবাসে যারাই’; ‘যারা বলে I Love u/ দুদিন পরে উল্টে যায় সে u’ (দুর্ধর্ষ উইট-এর নমুনা); ‘প্রথম বিয়েতে হাত পাকায় যারা/দ্বিতীয় বিয়েটা তাদের আগে থেকেই ঠিক করা’ (এ এক অসুস্থ সামাজিক ব্যাধির ইঙ্গিত); “Don’t fall in Love/ভালোবাসাতেই আসল লাভ” (এখানে প্রেমে পড়ার আগে ভেবেচিন্তে নিজের চাহিদা ও মন বুঝে অন্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি সুচারুভাবে বলা হয়েছে); ‘অটোর সাথে প্রেম করো/প্রেম কো অটো মৎ করো’ (নৈহাটি; বিশ্বাস একজনের উপর রাখার পাশাপাশি প্রেমকে ছাড়া গরুর মতো ছাড়তে মানাও করা হচ্ছে); ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়া/পকেটে টাকা নেই বলে/ তোমার বাবা কি দেবে না মোর সাথে বিয়া!’ (এ এক বিষম কঠিন প্রশ্ন)।
ঈষৎ ইরোটিক রঙ্গ-রসিকতাও দেখা যায় ছড়ার আদলে অটোপৃষ্ঠে। নমুনা: ‘দুধ চা লাল চা যে খাবে যেটা/বিয়ের পর খাবো শুধুই তোমারটা’ (বেহালা, ২০০৪); ‘তুমি আমার নেশা, আমি তোমার নেশা/ কখনো কোরো না এটাকে ভালোবাসার পেশা’ (শ্যামবাজার, ২০০৬); ‘শাশুড়ী জামাই অমর/ দুইজনেতে খুলল মাইয়ার কবর’ (অবৈধ প্রেমের ইঙ্গিতবাহীর দর্শন পাই ২০০১-এ শিয়ালদায়); ‘রঙ্গ করতে দরকার আমায়/রঙ্গ শেষ হলে বোয়ের দোরগোড়ায়’ (২০০৯, সোনারপুর) ইত্যাদি।
কোনও পেশাই ছোটো নয়, এমনকী, তা অটো চালানো হলেও নয়। এই বার্তাই সাধারণ মানুষ বিশেষত অটোযাত্রীদের উদ্দেশে দেওয়ার প্রয়াস এই ছড়ার মধ্য দিয়ে: ‘অটো চালাই যারা তারা নই ফেলটুস/অটো চালাই যারা তারাও চালানোতে পাশ’।
অটোচালকের প্রতি অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কোনও কোনও যাত্রী চালকের পেশার সঙ্গে তার বাহনের উল্লেখ পূর্বক (ইঙ্গিতটা থাকে পরিবহনের দুনিয়ায় দলিত আকারে ছোটর প্রতি) কটূক্তি করে থাকেন। এহেন ব্যঙ্গের হাত থেকে নিস্তার পাননি বর্তমানে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্ভরযোগ্য পেশার মহম্মদ সিরাজও। আইপিএলে একটা মরশুমে ভাল খেলতে না পারায় তাঁকে শুনতে হয়েছিল যে ক্রিকেট ছেড়ে বাবার সঙ্গে গিয়ে অটো চালাও। এই ঘটনার কথা জানা গেছে খোদ সিরাজের মুখ থেকে।
‘দিনের শেষে ভূতের দেশে/ সব রঙেরাই যাচ্ছে মিশে’– আমাদের দেশে চলমান স্বার্থকীর্ণ রাজনীতির কথা মনে পড়ায় ছড়ার ছন্দে এই অটোলিপিটি। দেশসেবা, জনসেবা অলীক কল্পনাসম। দলমত নির্বিশেষে কে কত লুটেপুটে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে পারে– চলছে যেন তারই প্রতিযোগিতা! ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু সাধারণ চালচিত্র এটাই। ২০০৮-এর মার্চে পূর্ব ঢালুয়ায় (কলকাতা) দেখা একটা অটোলিপি মনে পড়ায় তৎকালীন রাজ্য সরকারের শরিক দলবিশেষের নিত্য ভণ্ডামির দুঃসহ স্মৃতিকে। অটোলিপির দুনিয়ায় যা বিরল ও ব্যতিক্রমী: (এ নিয়ে বিস্তৃত রয়েছে আমার ‘বাহনলিপি’ বইতে): ‘বেঁচে থাকো/ খেটে খাও/দাদাগীরী/ছেড়ে দাও’।
ঢাকের বোল নিখুঁতভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে এই অটোকাব্যে : ‘ঢ্যামম কুড়কুড় ঢ্যাম কুড়াকুড় কুড়ুর কুড়ুর তাক/ টাক ডুমাডুম টাক ডুমাডুম বাজছে মোদের ঢাক’। দীপাবলির মেজাজ কোনোওটায়: ‘তুমিই কাজী, ফাটাও তবে আতসবাজী’। শব্দদূষণের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই দু-লাইন: ‘রাস্তায় শব্দের জ্বালায় ভাইরে/ শব্দদূষণে মারা যাইরে।’
পরিবেশ সচেতনতা সম্পর্কিত বেশ কিছু ছড়াও পাওয়া গেছে। যদিও অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় তা যথেষ্ট কম। দু’-চারটে নমুনা শেষ করা যাক: ‘গাছ লাগাও গাছ বাঁচাও/ নইলে তোমার কবর খোঁড়াও’; জলসংরক্ষণ সম্পর্কে ‘জল ধরো জল ভরো/ ভবিষ্যতের রাস্তা গড়ো’; প্লাস্টিক-বিরোধী অভিযানে শামিল হতে একটা অটোলিপিকেই দেখেছি (বান্দোয়ান, পুরুলিয়া, ২০১২)– ‘প্লাস্টিকের সঙ্গো ত্যাগ কোরো/ মোদের পৃথিবীকে সুন্দর কোরো’। সুচারু মনের পরিশীলিত ভাবনার পরিচয় বহন করছে এরকম কয়েকটি অটোলিপি : ‘সুখী গৃহকোণ/ খোঁজে দুটি মন’; ‘একটি ডাক: সপনো আঁক/ বুঝবি তখন কোথায় ফাঁকি আর ফাঁক’; ‘বাংলা আমার রবীন্দ্রনাথ, বাংলা আমার নজরুল/ বাংলা মায়ের সুখ-দুঃখে ফোটা দুটি কোমল ফুল’ (আনোয়ার শাহ রোড, ২০১১); ‘আমরা যাবো পাটশালাতে/ অলস সময় কাটাবো না আর আটচালাতে’ (রামনগর, পূর্ব মেদিনীপুর, ২০০৭)।
‘ভাই বাইক, বেকার করো প্যাঁপো/ তোর কী emergency আছে/ তাইলে ক্যানো খ্যাঁপো?’ (পাশে মুচকি হাসিমুখের ছবি)। রাসবিহারী মোড়ে অটোলিপিটি দেখামাত্র (২০০৯) স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছিল প্রয়াত ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদার-এর ‘বাইক-অটো/ বৃথাই চটো’ শীর্ষক ছড়ার এই লাইন ক’টি: ‘অটো বললে, বাইক/ তুই কি রাজার পাইক?/ কানের কাছে ভট-ভট-ভট/বাজাস শুধুই মাইক?’ এভাবে চাকার বড়াই ঔদ্ধত্যের ফানুসে পিন ফুটিয়ে থাকে অটোলিপি।
অটোকাব্যের কোটায় রয়ে গেল অনেক কিছুই। তবু দুটি অটোলিপির কথা না বললে স্বস্তি নেই।
NRC, CAA-এর আবহে উদ্বিগ্ন মানুষ বুঝে গিয়েছে, ‘যার কোনও দেশ নেই, তার বিদেশও নেই’। অথচ আছে থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি আঁচ করেই কী সেই অজ্ঞাতনামা লিপিকার অটোর পিঠে (চেতলা) লিখেছিলেন বাক্যটি? সত্যিই তো যার কোনও কুল নেই, দেশ নেই, সীমানা নেই, সম্বল বলতে আর কী আছে তার? আছে, আছে, আলবাত আছে। এমন জিনিস আছে যা দুনিয়ার সর্বশক্তিমান শাসকের ভাঁড়ারেও নেই! তার নিঃস্বার্থ অমলিন হাসি আছে। সে অবাধে হাসতে পারে, নিজেকে তুচ্ছ করে তুচ্ছতাকে দেখতে পারে অপলক শেষতক্! মিলান কুন্দেরাও এভাবেই হাসতেন যা গোটা পূর্ব ইউরোপে সংক্রমিত হয়েছিল।
প্রশ্নটা হল, অটোকবিয়ালরা কী ‘তুাম ডালে আাম খালে/দেখা হবে মরণ কালে?’ (গড়িয়া, এপ্রিল ২০২৪; বানান বিপর্যয় ‘তুমি’, ‘আমি’ হুক খুলে গেছে। ঠিক যেভাবে ‘বঞ্চিৎ’-র হুক খুলে তা অশ্লীল হয়ে যায়) জাতীয় লেখা লিখে নিরাপদ দূরত্বে থেকে ‘সেফ গেম খেলবে?’ (সৌজন্য: WB04 3917) নাকি, গতানুগতিক নগরের বাইরে কুন্দেরার মতো হাসির মহানগর গড়ে তোলার প্রয়াস চালাবে?
………………………………………………………………………………………………………………………………………….
পডুন অটোবায়োগ্রাফির প্রথম পর্ব: * ক্ষয় হলেই সব্বোনাশ!