ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর একটি এগজিকিউটিভ অর্ডার যা এক বিশাল সংখ্যক মানুষের মনে প্রবল আশঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা এবং বিরোধিতার সৃষ্টি করেছে। তিনি ঘোষণা করেছেন, আমেরিকাতে এরপর থেকে শুধু দু’টি লিঙ্গ স্বীকৃতি পাবে–পুরুষ এবং স্ত্রী। তার বাইরে অন্য লিঙ্গ পরিচিতি বৈধ হবে না। জন্মগত লিঙ্গ পরিচিতি পরিবর্তন করা যাবে না। ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির মানুষরা, এলজিবিটিকিউপ্লাস কমুনিটির মানুষরা বহু সংগ্রামের পর খানিকটা অধিকার অর্জন করতে পেরেছেন। প্রতি পদক্ষেপে তাদের লড়াই। রাষ্ট্রপতির এরকম ঘোষণা তাদেরকে কতটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০ জানুয়ারি, ২০২৫। যেদিন সমস্ত আমেরিকায় জাতীয় ছুটির দিন ছিল মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্মদিন উপলক্ষে, আমেরিকার ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প।
তার আগের বেশ কয়েক দিন লস অ্যাঞ্জেলস শহরের কাছাকাছি বহু জায়গা শেষ হয়ে গিয়েছে বিধ্বংসী দাবানলে। এখনও নেভেনি সেই আগুন, আর ওয়াশিংটন ডিসিতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের এত নিচে নেমে গিয়েছে যে, যেখানে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের বাইরে শপথ পাঠ অনুষ্ঠান রাখা সম্ভব হল না! অনুষ্ঠান হল ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের গোল ঘরটিতে। পরিবার, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিরা, রাজনীতিবিদ, টেক জায়েন্ট কোম্পানির প্রধানদের মাঝে দাঁড়িয়ে শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প। কে ছিলেন না সেখানে? প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ক্লিনটন, বুশ, ওবামা যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন গুগলের প্রধান সুন্দর পিচাই, অ্যাপেলের প্রধান টিম কুক, মেটার প্রধান জুকারবার্গ,আমাজনের প্রধান জেফ বেজোস, ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক আরও আরও কত নাম। যেন মনে হচ্ছিল নক্ষত্রখচিত আকাশ–পৃথিবীর ভবিষ্যতের নির্ণায়করা একই মঞ্চে। ৩০ মিনিট ধরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম বক্তৃতা দিলেন ট্রাম্প। শুরুতেই ঘোষণা করলেন আগের সরকার যাই করে থাকুন না কেন, তাঁর শপথের সঙ্গেই শুরু হল ‘আমেরিকার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ’।
এই মুহূর্ত থেকে তিনি আমেরিকার নাগরিকদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবেন। আমেরিকা হবে সমস্ত দেশের ঈর্ষার আধার, এই দেশকে কোনওভাবে ‘ব্যবহৃত’ হতে দেবেন না। তিনি বলেছিলেন, তাঁর শপথ বক্তৃতাতে থাকবে শান্তি, থাকবে ঐক্য– কারণ তিনি শান্ত আর ঐক্যের প্রতিভূ হিসাবেই বেঁচে থাকবেন, কিন্তু সেটা হয়নি। বিগত সরকার কীভাবে দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একের পর এক বিরাট সংকট– সব কিছুতেই হোঁচট খেয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অবশেষে ভালো সময় এল।
নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই বেআইনি অনুপ্রবেশ ছিল ট্রাম্পের প্রচারের একটি মূল বিষয়। তাই প্রথমেই তিনি ঘোষণা করেছেন আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তে আপৎকালীন পরিস্থিতি ঘোষণা করবেন। সীমান্তে থাকবে মিলিটারি। আশ্রয়প্রার্থী অনুপ্রবেশকারীরা মেক্সিকোতেই থাকবে, তাদের সীমান্ত পেরতে দেওয়া হবে না। মেক্সিকো-সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় এসেছে ড্রাগ, কার্টেল, গ্যাং, ট্রাফিক চক্র। চরম অপরাধমূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে; এই অপরাধী অনুপ্রবেশকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে অনেক আমেরিকান। এই অপরাধীদের ‘বিদেশি সন্ত্রাসবাদী’ হিসাবে ঘোষণা করেন তিনি। এই তকমা দেওয়ার ফলে, এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমেরিকান মিলিটারি শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে। এছাড়া বেআইনিভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের নিজেদের দেশে পাঠানোর পদক্ষেপ শুরু হবে। রেফিউজি অ্যাডমিশন প্রোগ্রাম আপাতত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার ঘোষণা করেছেন। এখন আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে দক্ষিণের সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় ঢোকা যাবে না।
আর একটি অত্যন্ত বিতর্কিত ঘোষণা করেন যে, বেআইনি ভাবে বসবাসকারী মা-বাবার সন্তানরা আমেরিকায় জন্মালে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। আমেরিকার মাটিতে জন্মালে ‘জন্মগত অধিকার’ বিষয়টিকে তিনি বেআইনি ঘোষণা করতে চান। এই জন্মগত অধিকারের থেকে যে নাগরিকত্ব পাওয়া, সেটা আমেরিকায় ‘কমন ল’ হিসাবে প্রথমে, পরে আমেরিকার সংবিধানের ১৪তম অ্যামেন্ডমেন্ট দ্বারা সংরক্ষিত। তিনি এই অধিকার আর রাখতে দেবেন না বলে স্থির করেছেন। তাঁর প্রথমদিনে সই করা কয়েকটি এগজিকিউটিভ অর্ডারের মধ্যে এগুলি অন্যতম।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরদিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প সই করে ফেলেছেন আরও বেশ কয়েকটি এগজিকিউটিভ অর্ডার। তার মধ্যে প্রথম ২০২০ সালে ৬ জানুয়ারি তাঁর সমর্থকরা ক্যাপিটল বিল্ডিং আক্রমণ করার পর যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, বিচার চলছে বা সাজা হয়েছে– তেমন প্রায় সাড়ে বারোশো মানুষকে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে মার্জনা করে দিয়েছেন। তাঁর মতে, শাস্তিযোগ্য তেমন কোনও অপরাধ তারা করেনি। এদের মধ্যে ১৪ জন আছে, যারা চরমপন্থী এবং ওই দিন পুলিশদের আহত করেছিল।
……………………………………………..
বেআইনি ভাবে বসবাসকারী মা-বাবার সন্তানরা আমেরিকায় জন্মালে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। আমেরিকার মাটিতে জন্মালে ‘জন্মগত অধিকার’ বিষয়টিকে তিনি বেআইনি ঘোষণা করতে চান। এই জন্মগত অধিকারের থেকে যে নাগরিকত্ব পাওয়া, সেটা আমেরিকায় ‘কমন ল’ হিসাবে প্রথমে, পরে আমেরিকার সংবিধানের ১৪তম অ্যামেন্ডমেন্ট দ্বারা সংরক্ষিত। তিনি এই অধিকার আর রাখতে দেবেন না বলে স্থির করেছেন।
……………………………………………..
এছাড়া রাষ্ট্রপতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যারিস ক্লাইমেট কনভেনশন থেকে আমেরিকাকে বের করে আনার পক্ষে সই করেছেন। তার প্রথম টার্মেও তিনি একই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তাই এই সিদ্ধান্তে তেমন কোনও চমক নেই। যেটা চমকপ্রদ, তাঁর প্রথম বক্তৃতাতেই তিনি আমেরিকায় ন্যাশনাল এনার্জি এমার্জেন্সি ঘোষণা করছেন। ‘ড্রিল বেবি ড্রিল’– অর্থাৎ, মাটি খুঁড়ে বের করে আনা হবে তেল। আর সেই তরল সোনার আধিপত্যে আবার আমেরিকা হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরে পাবে। জীবাশ্মজনিত জ্বালানি ব্যবহার করার যে পৃথিবীব্যাপী প্রচেষ্টা, তাতে আমেরিকার ভূমিকা আগামী চার বছরে কী হবে, স্পষ্ট করে দিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বাইডেন ২০৩০ সালের মধ্যে আমেরিকার ৫০ শতাংশ গাড়ি ইলেকট্রিক হতে হবে বলে যে লক্ষ্য স্থির করেন, সেই সিদ্ধান্ত ‘বেআইনি’ ঘোষণা করেন। ন্যাশনাল এনার্জি এমার্জেন্সি ঘোষণা করে তিনি এই তেল, কয়লা উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করতে পারেন।
এছাড়াও তিনি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন থেকেও আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার এগজিকিউটিভ অর্ডার দিয়েছেন। কোভিড অতিমারীর সময় ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন’-এর ভূমিকা নিয়ে তিনি কঠোর সমালোচনা করেন। চিনের বিরুদ্ধে অতিমারী শুরু করার জন্য কোনও রকম পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন হু-র বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যথেষ্ট আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, কারণ ১৯৬টি দেশ সদস্য হলেও আমেরিকা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের এক পঞ্চমাংশ বাজেট বহন করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর একটি এগজিকিউটিভ অর্ডার যা এক বিশাল সংখ্যক মানুষের মনে প্রবল আশঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা এবং বিরোধিতার সৃষ্টি করেছে। তিনি ঘোষণা করেছেন, আমেরিকাতে এরপর থেকে শুধু দু’টি লিঙ্গ স্বীকৃতি পাবে–পুরুষ এবং স্ত্রী। তার বাইরে অন্য লিঙ্গ পরিচিতি বৈধ হবে না। জন্মগত লিঙ্গ পরিচিতি পরিবর্তন করা যাবে না। ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির মানুষরা, এলজিবিটিকিউপ্লাস কমুনিটির মানুষরা বহু সংগ্রামের পর খানিকটা অধিকার অর্জন করতে পেরেছেন। প্রতি পদক্ষেপে তাদের লড়াই। রাষ্ট্রপতির এরকম ঘোষণা তাদেরকে কতটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এলজিবিটিকিউপ্লাস হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেন, এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে সর্বশক্তি দিয়ে।
ঠিক একরকম ভয়ের সঞ্চার হয়েছে যারা বৈধ বা অবৈধ বিদেশিদের মধ্যেও। ট্রাম্পের শপথগ্রহণের প্রথম প্রার্থনা সভায় এই সম্মিলিত অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা প্রতিধ্বনিত হল ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথিড্রালের বিশপ মারিয়ান এডগার বুজের কণ্ঠে। প্রার্থনার পর ট্রাম্পের চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় রাষ্ট্রপতি লক্ষ লক্ষ মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করেছে আর আপনি নিজে বলেছেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ আছে আপনার ওপর, সেই ঈশ্বরের নামে আমি আপনাকে অনুরোধ করব আপনি দেশের সেই মানুষগুলোর ওপর করুণাপ্রবণ হোন, যারা আজ এই মুহূর্তে খুব ভয়ের মধ্যে আছে। তাদের মধ্যে আছে গে, লেসবিয়ান, ট্রান্সজেন্ডার বাচ্চারা তাদের ডেমোক্র্যাটিক, রিপাবলিকান বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিবার। আর আছে মানুষ যারা আমাদের ফসল তোলে, আমাদের অফিস বিল্ডিং পরিষ্কার করে, পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করে, মিট প্যাকিং ফার্মে, যারা রেস্টুরেন্টে আমাদের বাসন মাজে, রাত্রের শিফটে হসপিটালে কাজ করে, তাদের আইনি অথবা বৈধ কাগজপত্র নেই– কিন্তু সেই বেশির ভাগ মানুষই ক্রিমিনাল নয়। এদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভয়ে অস্থির, মা বাবাকে তাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে। অনেক নিজের দেশের যুদ্ধক্ষেত্রে আহত বা আসন্ন মৃত্যুর থেকে পালানো মানুষ আশ্রয় নেয় এই দেশে– তাদের ওপরে সদয় হোন।’
বিশপের এই আর্তি কোথায় পৌঁছল? রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বিশপের সম্বন্ধে বলেন, ‘তিনি সম্পূর্ণ বামপন্থী, ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন, আমেরিকানরা যাদের হিংসার শিকার, সেই অনুপ্রবেশকারীদের তিনি সমর্থন করছেন এবং বিশপের প্রার্থনানুষ্ঠান বেশ নিচু মানের, একঘেয়ে, তিনি অত্যন্ত অনুচিত মন্তব্য করেছেন।’ রাষ্ট্রপতির সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে বিশপ বাডিকে কুৎসিতভাবে আক্রমণ করছেন এবং তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হচ্ছে।
এই টলমল সময়ে ঈশ্বরের প্রতিনিধির এই শুভচিন্তা, এই প্রচেষ্টা– বিশ্বাসের প্রদীপটুকু জ্বলিয়ে রাখল।
……………………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………….
অশোক ঘোষ মনে করতেন, ট্রাম আন্দোলন কলকাতার হকারদের একটি রাজনৈতিক চেতনা জুগিয়েছিল। এই আন্দোলন ছিল ছাত্র, শিক্ষক, কেরানি, হকার, আর উদ্বাস্তুদের লড়াই। আর ট্রাম-ডিপো মানেই হকার। এইসব দোকানেই আন্দোলনকারীদের আড্ডা বসত। দেশ-বিদেশের নানা ধরনের কথা আলোচনা হত। সকালে হয়তো কোনও এক চায়ের দোকানে জটলা পাকিয়ে খবরের কাগজ পড়া হত।
‘রবীন্দ্র-চিত্রকলা: রবীন্দ্রসাহিত্যের পটভূমিকা’ বইটির একটি জাপানি অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। একটি চিঠিতে সোমেন্দ্রনাথ আমাকে জানিয়েছিলেন সেই কথা, যে, Sea Mail-এ নাকি সেই বই আসছে। এলে আমার জন্যও একটি কপি থাকবে। সে-বই নিশ্চয়ই ট্যাংরা এলাকার পাগলাডাঙায় আমাদের লাইব্রেরিতে খুঁজলে পাওয়া যাবে।