Robbar

একলা চলো-য় জুড়ল না ভারত, জোটে জুড়ে থাকা কি শিখবেন রাহুল?

Published by: Robbar Digital
  • Posted:December 4, 2023 4:49 pm
  • Updated:December 4, 2023 4:49 pm  

যে জোটশক্তি হতে পারত অমিত, তাকে সীমিত হয়ে থাকতে হল অপরিণামদর্শিতার কারণেই। রাজনীতি বয়ে যাওয়া নদী। আর কে না জানে, এক নদীতে দু’বার স্নান করা যায় না। একই ভুল বারবার করে যাওয়ারও তাই কোনও অর্থ হয় না। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আলাদা। তা মোকাবিলার রণকৌশলও পৃথক। রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া শিক্ষানবিশও জানে সেকথা। যে জোটশক্তি প্রত্যাঘাত হানতে পারে, তাকে অগ্রাহ্য করা আর যাই হোক, কুশলী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হতে পারে না।

অরিঞ্জয় বোস

ভারত ঘুরলেন। ভারত জুড়লেন। ছড়িয়ে দিতে চাইলেন ভালোবাসা। তবু, রাজনীতির বিন্দুগুলোকে জুড়তে আর পারলেন কোথায়! তিন রাজ্যে নিদারুণ পরাজয়। তার মধ্যে দুই রাজ্য আবার সরকারে থেকেও হাতছাড়া। জনতার রায় মেনে নিয়েছেন। তবু, জনতার প্রত্যাশা কি টের পেয়েছিলেন! বোধহয় না। তাহলে এমন হারের হাহাকারের মুখে পড়তে হত না কংগ্রেসকে। দেশ দেখেছে, যিনি ভারত জুড়বেন পণ করেছেন, তিনি গেহলট আর পাইলটের কলমুখর হাত এক লক্ষ্যে জুড়তে পারছেন না। ভরসা কী করে থাকবে! প্রত্যাশিতভাবে থাকেওনি।

Actor-turned-politician Kamal Haasan, family members of freedom fighters and top Congress leaders are expected to join Rahul Gandhi in the Delhi leg of his Bharat Jodo Yatra on Saturday
রাহুল গান্ধী, ভারত জোড়ো যাত্রা

দেশের রাজনীতি সম্ভবত যে খাতে বইতে চাইছে, সেই হৃদস্পন্দন অধরাই থেকে যাচ্ছে। সম্মুখসমর ভালো। তবে যুদ্ধ শুধু জাতীয় দলের অস্মিতাই চায় না, চায় কৌশল। সেখানেই যেন নিদারুণ কার্পণ্য চোখে পড়ে। রাজস্থানে সমাজবাদী পার্টির বাড়িয়ে দেওয়া হাত প্রত্যাখ্যান। ছত্তিশগড়ে আম-আদমি পার্টি সহযোদ্ধা হতে চেয়েও ফিরল খালি হাতে। স্টালিনের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিতেও আপত্তির পাহাড়। বাংলায় প্রতিদিন প্রদেশ কংগ্রেস আক্রমণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কে যে প্রকৃত প্রতিপক্ষ– তাই-ই স্থির করে ওঠা সম্ভব হল না। অথচ প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর লক্ষ্য একেবারে স্পষ্ট। ২০২৪ নির্বাচন পাখির চোখ করে জয়ের ঘুঁটি সাজাতে সে পরিশ্রমও করছে। ফলও মিলেছে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, কিন্তু বিশ্বাস বস্তুটি অর্জন করা চাট্টিখানি কথা নয়। যে পারে, সে পারে। সেই জায়গাও খোলা ছিল। অথচ বন্ধুর সংজ্ঞায় দ্বিধামুখর ধোঁয়াশা আর কাটানো গেল না কিছুতেই। যে জোটশক্তি হতে পারত অমিত, তাকে সীমিত হয়ে থাকতে হল অপরিণামদর্শিতার কারণেই। রাজনীতি বয়ে যাওয়া নদী। আর কে না জানে, এক নদীতে দু’বার স্নান করা যায় না। একই ভুল বারবার করে যাওয়ারও তাই কোনও অর্থ হয় না। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আলাদা। তা মোকাবিলার রণকৌশলও পৃথক। রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া শিক্ষানবিশও জানে সেকথা। যে জোটশক্তি প্রত্যাঘাত হানতে পারে, তাকে অগ্রাহ্য করা আর যাই হোক, কুশলী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হতে পারে না। নির্বাচনী হার সাময়িক, কিন্তু রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরাজয় দীর্ঘকালীন। সেই বিচক্ষণতা আয়ত্ত করতে না পারলে, দেশের জন্য শুধুমাত্র ভালোবাসার ফেরিওয়ালা হওয়া যথেষ্ট নয়।

অথচ সম্ভাবনা তো আছেই। পোড়খাওয়া ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁরা এই লড়াইয়ের মন্ত্রগুপ্তি জানেন। নিজের রাজ্যে তাঁরা তা প্রমাণও করে দিয়েছেন। গুণীর কাছে নত হওয়া দোষের নয়। বিশেষত লক্ষ্য যখন এক। ভারত জোড়া যাঁর লক্ষ্য, হাতে হাত রেখে জুড়ে জুড়ে থাকতে তাঁর তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথচ তা হচ্ছে, সেটিই বোধহয় প্রকৃত পরাজয়। নির্বাচনের ফলাফল তা স্পষ্ট করে দেখায় না। তবু সবই স্পষ্ট দেশের কাছে।

একলা চলো নীতি ভালো, যদি পথ তৈরি করে নেওয়া যায়। তবে পথিক, পথ হারালে চলাই যে থেমে যায়।

রাহুল গান্ধী, দলের হারের অন্তর্তদন্ত নয় হবে, নিজের নৈতিক পরাজয়ের অন্তর-তদন্তও কি জরুরি নয়! ভেবে দেখার সময় এখনও আসেনি!