একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির নির্মাণ কাজের ফলে বিগত এক দশকে সিকিম সমেত গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে বয়ে এসেছে বিধ্বংসী প্রলয়-প্লাবন, ধস ও ভূমিকম্প। এবং এর কারণে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পর স্থান ও তার আশপাশের গ্রাম বসতিগুলিই সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসাম-অরুণাচল প্রদেশ বর্ডারে লোয়ার সুবানসিড়ি প্রকল্পের অঞ্চলে মহাপ্লাবন, সিকিমের জংগুতে তিস্তা স্টেজ-৪ প্রকল্প স্থানে ধস এবং বন্যা, নাগাল্যান্ডের দোয়াং প্রকল্পের ফলে বন্যা এবং গত সপ্তাহে তিস্তা স্টেজ-৩র ঘটনা সেটাই প্রমাণ করেছে বারবার।
পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে শুরু হওয়া গ্যাংটকগামী দশ নম্বর জাতীয় সড়ককে কার্যত সিকিমের ‘লাইফলাইন’ বলা হয়। তিস্তার সমান্তরালে চলতে থাকা এন.এইচ-১০ সড়কপথে যেমন সিকিমের অধিবাসীদের ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে, তেমনই অসংখ্য পর্যটককে রোজ হিমালয়ের কোলে অবস্থিত রাজ্যটির লালিত্য উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।
তিস্তার বিদ্যমানতায় কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালার পাদদেশে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার ছোট-বড় পাহাড়ের গা বেয়ে এগিয়ে চলা সঙ্গিন রাস্তাটিকে ভারতের অন্যতম ‘চিত্রানুগ সড়কপথ’ বললে ভুল হবে না। শিলিগুড়ি থেকে তাই ৩-৪ ঘণ্টা লাগলেও, সিকিম এবং কালিম্পংগামী পর্যটকদের কাছে তিস্তাতীরের ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ভ্রমণ ব্যাপকভাবে উপভোগ্য। কিন্তু যে-তিস্তা এই সড়ককে ক্যামেরার প্রিয় পাত্র করে, সে-তিস্তাই মাঝেমধ্যে মারাত্মক হয়ে ওঠে এবং গিলে খায় আস্ত এন.এইচ-১০ ও তার আশপাশের গ্রাম-শহরের বসতিকে। আগে কালেভদ্রে একবার করলেও, মারণমুখী রূপধারণ তিস্তা ক্রমেই অভ্যাসে পরিণত করেছে এখন।
সিকিমবাসী এবং দার্জিলিং কালিম্পং জেলায় দশ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বসবাসকারীরা গত সপ্তাহে আবারও একবার তিস্তার বিধ্বংসী চেহারার সম্মুখীন হয়েছে। কয়েক হাজার পর্যটকও দেখেছে তাঁদের প্রিয় পাহাড় আর তিস্তা নদীর সুরম্যতার উল্টোমেরুর চিত্রটি। এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, আকস্মিক ক্লাউডবার্স্টের দরুন দক্ষিণ লোনাক হিমবাহ হ্রদ ভেঙে বন্যার ফলে তিস্তার অববাহিকায় ঘটে যাওয়া ফ্ল্যাশ ফ্লাডে আট ভারতীয় সেনা জওয়ান-সহ কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়েছে। ১৪০ জনেরও বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ। ১৪০০০ কোটি টাকার বিনিময়ে তৈরি হওয়া সিকিমের চুংথাংয়ে ১২০০ মেগাওয়াটের তিস্তা স্টেজ-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পর ৬০ মিটার উচ্চতার বাঁধ, যাকে তিস্তা কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ধুলিসাৎ করেছে, তা বাদ দিয়ে সিকিম ও দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের প্রশাসন এখনও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির সঠিক মূল্যায়ন করে উঠতে পারেনি। কিন্তু ধ্বংসলীলার যে ছবিগুলি সামনে এসেছে, সেসব দেখে নিশ্চিত বলা যায়, মিলিত সংখ্যাটি বেশ কয়েক হাজার কোটি ছাপিয়ে যাবে। অনেক বিশেষজ্ঞ ইতিমধ্যে দাবি করেছেন যে, তিস্তার এই ফ্ল্যাশ ফ্লাড ২০১৩ সালের উত্তরাখণ্ডের মহাপ্লাবন এবং এবারে হিমাচল প্রদেশে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের চেয়েও গুরুতর!
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা বলা আজ ভীষণ জরুরি। বাইরে থেকে যাওয়া পর্যটক সমেত ওই অঞ্চলের বেশিরভাগ অধিবাসীরাও হয়তো তিস্তার এই প্রাণান্তকর রূপের জন্য পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করবে যা বড় জোর অর্ধসত্য। তিস্তায় এবারের ফ্ল্যাশ ফ্লাড মানবসৃষ্ট এবং এটা নিয়ে কোনও রকমের দ্বিচারিতা পোষণ করা উচিত নয়। কেন এই কথা বলছি? বলছি কারণ তিস্তার উপর একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং বাঁধ বানানোর ফলে তিস্তা আজ অনেক দিন ধরে অভিহত। তিস্তার অববাহিকায় আশপাশের পাহাড়ে চলতে থাকা উন্নয়নের স্বার্থে বিস্ফোরণ ও খননের মতো ক্রিয়াকলাপগুলিও নদীটির আরোগ্যে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এর সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং উষ্ণায়নের সাম্প্রতিক প্রভাবগুলি।
নয়ের দশক থেকে কেন্দ্রে বহুবার সরকার বদলে গেলেও উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্রহ্মপুত্র নদী ব্যবস্থায় বিশাল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার প্রতি নব্য উদার ভারতীয় অর্থনীতিতে আইন-প্রণয়নকারীদের আকুল আকাঙ্ক্ষা অটুট থেকেছে। উত্তর-পূর্বকে ভবিষ্যতের পাওয়ার হাউস বলে দাগিয়ে দেওয়া থেকে ‘লুক নর্থ-ইস্ট’ পলিসি, সবেতেই ওই অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার প্রতি ভরত সরকারের অভিলাষের ঝলক পাওয়া গিয়েছে বারবার। সেই মতোই তৈরি হয়েছে নীতি ও আইনি ব্যবস্থা। উত্তর-পূর্বে ৫৮০০০ মেগাওয়াটেরও বেশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এটা জানানোর পর ওই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে কয়েকটি বিশালাকার প্রকল্প। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে পরিকল্পনা রয়েছে আরও অনেকগুলির।
ব্রহ্মপুত্র নদী ব্যবস্থায় ব্রহ্মপুত্রর পর তিস্তা সব থেকে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নদী হওয়ার দরুন ওর কপালও লেগেছে উন্নয়নের দাগ। সিকিমের চুংথাংয়ে লাচেন চু এবং লাচুং চু নামে দু’টি নদীর সঙ্গমে জন্ম নেওয়া তিস্তা নদীর অববাহিকার উপরের দিকটি বেশিরভাগই সিকিম এবং দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে কেন্দ্র ও দুই রাজ্যের সরকার মিলে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দ্বারা ৬৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোনাক হিমবাহ হ্রদ ভেঙে প্রবল গতিতে নেমে আসা বরফগলা জল, পাথর, বোল্ডার, কাদামাটি ওর বুক চিরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে অবধি ১৪০০০ কোটির তিস্তা স্টেজ-৩ প্রকল্পকেই এই সিদ্ধান্তের সব থেকে ইতিবাচক ফলাফল হিসেবে প্রচার করা হত। যতই হোক, এখনও অবধি সিকিমের এবং তিস্তার বুকে বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বলে কথা! কিন্তু এক মুহূর্তে ওর ৬০ মিটারের বাঁধকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে তিস্তা আজ ভারতের উত্তর-পূর্বে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পর নীতি নির্ধারণ ও সদিচ্ছাকে কয়েকটি গম্ভীর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির নির্মাণ কাজের ফলে বিগত এক দশকে সিকিম সমেত গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে বয়ে এসেছে বিধ্বংসী প্রলয়-প্লাবন, ধস ও ভূমিকম্প। এবং এর কারণে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পর স্থান ও তার আশপাশের গ্রাম বসতিগুলিই সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসাম-অরুণাচল প্রদেশ বর্ডারে লোয়ার সুবানসিড়ি প্রকল্পের অঞ্চলে মহাপ্লাবন, সিকিমের জংগুতে তিস্তা স্টেজ-৪ প্রকল্প স্থানে ধস এবং বন্যা, নাগাল্যান্ডের দোয়াং প্রকল্পের ফলে বন্যা এবং গত সপ্তাহে তিস্তা স্টেজ-৩র ঘটনা সেটাই প্রমাণ করেছে বারবার। এই প্রসঙ্গে বরিষ্ঠ সাংবাদিক আনন্দ শঙ্কর, যিনি দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের জলবিদ্যুৎ সেক্টরকে কভার করেছেন, সম্প্রতি ‘দ্য কুইন্ট’-এ লিখেছেন যে, ব্রহ্মপুত্র তিস্তা সমেত উত্তর-পূর্ব ভারতে নদ-নদীগুলির জলস্তর এবং বন্যা-সংক্রান্ত ঐতিহাসিক তথ্যর অভাবে ওই অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ পরিকল্পনায় প্রথম থেকেই একটা বড় ঘাটতির উপস্থিতি লক্ষণীয়। এই ঘাটতি থেকে জন্ম নেওয়া সমস্যাগুলির সমাধান করার বদলে সরকার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডার সেগুলিকে উপেক্ষা করাই শ্রেয় মনে করেছেন। সার্বিক অজ্ঞানতার ফলেই তিস্তা স্টেজ-৩-র ৬০ মিটারের বাঁধটি ‘আন্ডার-ইঞ্জিনিয়ারড’ ছিল, এমনটাই দাবি করেছেন আনন্দ শঙ্কর।
ভারী বর্ষা এবং প্রচণ্ড বন্যা পরিস্থিতিতে তিস্তায় কত পরিমাণ জল বয়ে যায়, সেসবের ঐতিহাসিক তথ্য হাতে না থাকায়, বন্যার জল নিষ্কাশনের জরুরি স্পিলওয়েগুলি অত্যন্ত ছোট তৈরি করা হয়েছিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর একটি রিপোর্ট জানিয়েছে, হিমবাহ হ্রদ ভেঙে বন্যার ফলে প্রায় ১৫০০০ কিউবিক মিটার জল প্রতি সেকেন্ডে বয়ে যায়। সেখানে তিস্তা স্টেজ-৩-র স্পিলওয়েগুলির জল নিষ্কাশনের ক্ষমতা ছিল মাত্র ৭০০০ কিউবিক মিটার প্রতি সেকেন্ড। ইসরো দ্বারা প্রকাশিত রিমোট সেন্সিং ডাটা অনুযায়ী, দক্ষিণ লোনাক হ্রদ থেকে ১০০ হেক্টরেরও বেশি জল তিস্তা স্টেজ-৩ দিয়ে বয়ে গিয়েছে, যার স্টোরেজ ফ্যাসিলিটির পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ছিল মাত্র ৬.৫ হেক্টর। একইরকম ভাবে ঐতিহাসিক তথ্যের অভাবে আসাম-অরুণাচল প্রদেশ বর্ডারে নির্মাণাধীন লোয়ার সুবানসিড়ি প্রকল্পর বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় কফার ড্যামটি ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বর্ষাকালে তিনবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু যখন যথাযথ তথ্য সহজলভ্য, তাও আবার এমন তথ্য যা আগাম সংকটের জানান দেয়, তখনও কি সরকার প্রশাসন এবং জলবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে? না। উষ্ণায়নের ফলে লোনাক হিমবাহ গলতে থাকার দরুন দক্ষিণ লোনাক হ্রদ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এমন তথ্য থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে নিরাপদে জল নির্গমনের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ছয়ের দশকে হিমালয়ের হিমবাহ অধ্যয়নরত বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছিলেন যে, লোনাক হিমবাহ দ্রুত গলতে শুরু করেছে এবং তার ফলে দুটো হ্রদের জন্ম হয়েছে: উত্তর লোনক হ্রদ ও দক্ষিণ লোনক হ্রদ। নয়ের দশকে স্যাটেলাইট চিত্র জানান দিয়েছিল, হ্রদ দু’টি ক্রমেই বৃহত্তর হয়ে উঠছে। ২০০৫ সালে তিস্তা অববাহিকার বহন ক্ষমতা স্টাডির জন্য তৈরি করা পরিবেশ মন্ত্রকের স্টিয়ারিং কমিটিও সতর্ক করেছিল, হিমবাহ গলে হ্রদ এবং ধ্বংসাবশেষের শঙ্কু উত্তর সিকিমে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। জাতিসংঘের ‘অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন’ দ্বারা পরিচালিত একটি প্ল্যাটফর্মও ২০১৯ সালে জানিয়েছিল যে, উত্তর-পূর্ব ভারতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কান্ডারিরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিগুলিকে ক্রমশ উপেক্ষা করে চলেছে৷
‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুমান করেছে যে, অক্টোবরের ৩ তারিখ নেপালে পরপর ভূমিকম্পর ঘটনাগুলোও দক্ষিণ হিমবাহ হ্রদের ভাঙন এবং ওর উপর ক্লাউডবার্স্টের ‘ট্রিগার’ হয়ে থাকতে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত না হলেও, এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সিকিম এবং দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলগুলিকে সিসমিক জোনিং ম্যাপে হাই রিস্ক সিসমিক জোন ‘IV’ হিসেবে মার্ক করা হয়েছে। ভঙ্গুরপ্রবণ হওয়ার ফলে দূরদূরান্তে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পও এখানে বিপর্যয়ের কারণ হয়ে থাকে। সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিমল খাওয়াস ২০১৬ সালে নিজের একটি গবেষণাপত্রে জানিয়েছিলেন যে, ২০১১ সালে সিকিমে ভূমিকম্পের ফলে ১০০ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিংয়েও ল্যান্ডস্লাইডের ঘটনা ঘটেছিল।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সব সময় ছোট বড় আন্দোলন বিক্ষোভ চলতেই থাকে। বেশিরভাগ আন্দোলন গড়ে ওঠে জল-জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ দ্বারা। তবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপেক্ষা করার মতোই, সরকার প্রশাসন ও জলবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনগুলিকেও পাত্তা না দিয়ে নিজেদের কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু গত সপ্তাহের ঘটনার পর সিকিমেরই জংগু শহরে চলতে থাকা লেপচা জনগোষ্ঠীর আন্দোলনকে আর উপেক্ষা করার অবকাশ নেই। বিগত ২০ বছর ধরে তাঁরা তিস্তা স্টেজ-৪ প্রকল্পের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। প্রকল্পের কাজের জন্য বনভূমির প্রয়োজনীয়তার ফলে বনাধীকার আইনের আওতায় অঞ্চলের প্রত্যেকটি গ্রামের গ্রাম সভা থেকে সম্মতি নিতে হবে সরকারকে। বারবার স্থানীয়দের কাছে প্রত্যাখানের পরও সরকার পক্ষ ওদের তর্কে পরাভূত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিস্তার বুকে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ও উষ্ণায়নের প্রভাবকে উপেক্ষা করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুললে কি নেতিবাচক পরিণতি হতে পারে, বহু বছর ধরে তিস্তা স্টেজ-৫ প্রকল্পও জানান দিয়ে চলেছে। জাতিসংঘের ‘অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন’ দ্বারা পরিচালিত প্ল্যাটফর্মটি নিজেদের একটি নিবন্ধে জানিয়েছিল, মধ্য সিকিমের ৫১০ মেগাওয়াট তিস্তা স্টেজ-৫ প্রকল্প থেকে জল নির্গমনের কারণে ওর আশপাশে বসবাসকারীরা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকের বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে, ভূমি ধসের ঘটনা বেড়েছে এবং কৃষি জমিতেও ক্ষয়ক্ষতি লক্ষণীয়। গত সপ্তাহের ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কারণে স্টেজ-৫ প্রকল্পটি আবারও বিস্তীর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টেজ-৫-এর প্রভাবগুলিকে অবজ্ঞা করা গেলেও, স্টেজ-৩-র ধ্বংসকরণের হাড়হিম করা ছবি ভিডিওগুলি চোখে আঙুল দিয়ে বলে দিচ্ছে যে, তিস্তার বুকে জলবিদ্যুৎ পরিকল্পনায় আমূল পরিবর্তন না ঘটলে ভবিষ্যতে সিকিম এবং দার্জিলিং-কালিম্পংকে আবারও এর’ম মারণমুখী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে।