‘শিল্প ও শিল্পীকথা’ বইটি পড়তে বসে প্রথম যে কথাটি উপলব্ধি হয়, শিল্পসৃষ্টি যেমন সহজ কাজ নয়, অনেকগুলো শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম ও অনুশীলনের স্তর পেরিয়ে সেখানে পৌঁছনো যায়, তেমনই শিল্পের রসাস্বাদন করা বা প্রকৃত শিল্পরসিক হয়ে ওঠার পথও খুব সহজ, মসৃণ নয়।
ঋত্বিক ঘটক একবার একান্ত সাক্ষাৎকারে কোনও একটি প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন– ‘সাহিত্য, নৃত্য, লোকসাহিত্য, অন্যান্য শিল্পমাধ্যম– সবকিছুরই নেপথ্যে সরাসরি স্বাধীনভাবে দেখা জীবন এবং শিল্পীর নিজস্বতা, তবেই তার শিল্প কর্মটি রসোত্তীর্ণ হয়ে উঠবে।’ তাই শিল্পীর শিল্পকর্মকে জানতে হলে, জানতে হবে শিল্পীর জীবন এবং অবশ্যই শিল্পীর সময়। তাই ‘শিল্পী ও শিল্পকথা’ বইটিতে লেখক মনসিজ মজুমদার সোজাসাপটা লিখেছেন, “মহৎ শিল্পীর ছবিতে সমকাল নানাভাবে উপস্থিত থাকে, তা কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও তির্যক। এবং প্রতিটি যুগে শিল্পীর সমকালের বাস্তবতায় এবং শিল্পীর ব্যক্তিজীবনে এমন সব ঘটনা ও ‘দুর্ঘটনা’ ঘটে যা তাঁকে শুধু গোইয়া বা গণেশ পাইন নয়, মাতিস বা যামিনী রায়ও করতে পারে।”
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
জীবন, জীবনের জটিলতা, প্রেম-বিদ্বেষ– একাকীত্ব এই নানা স্তর পেরিয়ে জীবন ও সমাজকে দেখা এবং তাকে প্রকাশ করা নিজস্ব শৈলীতে। প্রবন্ধ-পাঠের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে লেখকের শিল্পের প্রতি অপরিসীম ভালবাসার আঁচ টের পাওয়া যায়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
‘শিল্প ও শিল্পীকথা’ বইটি পড়তে বসে প্রথম যে কথাটি উপলব্ধি হয়, শিল্পসৃষ্টি যেমন সহজ কাজ নয়, অনেকগুলো শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম ও অনুশীলনের স্তর পেরিয়ে সেখানে পৌঁছনো যায়, তেমনই শিল্পের রসাস্বাদন করা বা প্রকৃত শিল্পরসিক হয়ে ওঠার পথও খুব সহজ, মসৃণ নয়। শিল্পীর জীবন, শিল্পীর সময়, সমাজ, সমাজের টানাপোড়েন সমস্ত কিছু জানা থাকলে প্রাথমিক ভালোলাগার স্তরটি পেরিয়ে আরও গভীরে পৌঁছনো যায়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন: শান্তিনিকেতন প্রেস প্রতিষ্ঠার সময়ে বইয়ের নিখুঁত নির্মাণকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
লেখক মনসিজ মজুমদার নিজে একজন বিদগ্ধ শিল্পরসিক হয়ে সেই রসাস্বাদনের রাস্তাটি সুগম করে দিয়েছেন আগ্রহী পাঠকদের সামনে। লেখকের বাল্যবয়সে শিল্পচর্চায় আগ্রহ ছিল, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে প্রথাগত শিক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। হৃদয়ের গভীরে ভালোবাসা সযত্নে রক্ষিত ছিল, তাই শিল্পকলা পড়া ও লেখা ছিল তাঁর জীবনের সমান্তরাল অস্তিত্ব। ‘শিল্প ও শিল্পীকথা’ লেখকের এমনই বেশ অনেকগুলো মনোজ্ঞ প্রবন্ধ সংকলন, যেগুলোর বিষয় কখনও শিল্পের আঙ্গিক, শিল্পীর জীবন বা কখনও শিল্প সম্পর্কে শিল্পীর একান্ত দর্শন কিংবা পরিপ্রেক্ষিত। আসলে এই সমস্ত লেখার বিষয় ও তাদের বিস্তৃতির মধ্যে আছে সেই অন্বেষণ, যা একজন শিল্পীর থাকে– অন্তত কৌতূহল, অন্তত রোমাঞ্চ। জীবন, জীবনের জটিলতা, প্রেম-বিদ্বেষ– একাকিত্ব এই নানা স্তর পেরিয়ে জীবন ও সমাজকে দেখা এবং তাকে প্রকাশ করা নিজস্ব শৈলীতে। প্রবন্ধ-পাঠের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে লেখকের শিল্পের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার আঁচ টের পাওয়া যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাতের প্রথিতযশা শিল্পীদের শিল্প, শিল্পভাবনা এবং ভাবনার নেপথ্যে শিল্পী-জীবন ও তৎকালীন সমাজ– এ সমস্ত কিছু নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা খুব দরকারি। বিশেষ করে তাঁদের পক্ষে খুব দরকারি, যাঁরা শিল্পে রসাস্বাদনের সেই বিশেষ স্তরটিতে পৌঁছতে চান বা নিজে শিল্প সৃষ্টি করতে চান। ‘রাবণ’ -এর কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাতে হয় এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। অরিন্দম নন্দীর চিত্রিত প্রচ্ছদটিও প্রশংসার দাবি রাখে। নান্দনিক দিক থেকে অত্যন্ত অর্থপূর্ণ এবং বই-এর বাঁধাই এবং পাতার মান ‘আন্তর্জাতিক’ বললে অত্যুক্তি হবে না।
শিল্পী ও শিল্পকথা
মনসিজ মজুমদার
রাবণ
৪৫০
কাদম্বরী দেবীকে নিয়ে আমার যে গবেষণা কাজটি আছে শঙ্খ ঘোষের তত্ত্বাবধানে, সেটির শিরোনাম ‘শ্রীমতী হে’, মঞ্চে এই অনুষ্ঠান বারে বারে করে থাকি, একটি সিডিও বেরিয়েছিল ওই নামে হিন্দুস্থানের রেকর্ডস থেকে। সেটি আবার করেছিলাম দূরদর্শনের জন্য।