আমার মনে হয় মেয়েদের মাসল-এ কম জোর থাকতে পারে, ভারী বোঝা হয় ত’ তুলতে পারে না, কিন্তু সহ্য করার বা কাজ করার ক্ষমতা বিন্দুমাত্র কম নয়, বরং বেশিই। কাজেই কেন তাঁরা দাঁড়াবে না? লিখেছিলেন লীলা মজুমদার।
মণিকুন্তলা সেন হোটেলের ক্যাবারেগার্লদের কথাও বলেছেন, ‘এদেরই উপার্জনে হয়তো পিতৃ-পরিবার বা স্বামীর সংসার বাঁচে। কিন্তু এসবের মধ্যে এখন আর কেউ অন্যায় বা অসামাজিক কিছু দেখে না। বরং আমোদ-প্রমোদের অনিবার্য অঙ্গ হিসাবেই এগুলো স্বীকৃত।’
দুধের ডিপোয় অনেক উদ্বাস্তু মেয়ের কাজ মিলেছিল। কলকাতা শিল্পাঞ্চলে ১৯৫১ সালে ভোজ্য তেল এবং দুগ্ধজাত খাদ্যের ব্যবসায় কাজ করতেন ৫২৫ জন মেয়ে।
প্রথম প্রথম ব্যাঙ্কের মহিলা কর্মীদের সঙ্গে ব্যবহারে গ্রাহকদের যেন অস্বস্তি ছিল কিছুটা। ঠিক যেন ভরসা করতে পারতেন না তাঁরা ব্যাঙ্কের মহিলা কর্মীদের।
দীর্ঘ সময়ের কাজ, রাস্তায় অনেকক্ষণ কাটানো, শৌচালয়ের অভাব, পথের নানা বিপদ, চাকরি টেকার অনিশ্চয়তা, পুরুষ সহকর্মীদের শ্লেষ, বসের হাতে হেনস্থার ভয়, কাজটা সহজ ছিল না 'মহিলা সেলসম্যান'দের। বড়লোক কাস্টমারদের মেজাজের ওঠানামাও সামলাতে হত তাঁদের।
১৯৭২-এর ‘মেমসাহেব’-এ উত্তমকুমার নিজেই সাংবাদিক। খুব খুঁটিয়ে দেখেও তাঁর কাগজের অফিসে কোনও মেয়ে চোখে পড়ে না, একজন টেলিফোন অপারেটর ছাড়া।
সরকার অভিভাবকহীন উদ্বাস্তু মেয়েদের চিরকালীন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিল। কারণ সরকার ধরে নিয়েছিল এঁরা উপার্জনে অক্ষম। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, যে সময়ে দলে দলে মেয়েরা চাকরি করতে যাচ্ছেন, সে সময় দাঁড়িয়ে সরকারি চোখে একা মেয়ে মানে বোঝা!
অবশ্য দেশভাগের পরেকার পরিস্থিতিতে, একথা বললে ভুল হবে যে, স্কুল শিক্ষিকাদের সংসার ও চাকরির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হত না। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প ‘ছোটদিদিমণি’তে আমরা পড়ি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তির কথা।
ভাবতে অবাক লাগে, ২০২৩ সালেও দেশের পুলিশের মাত্র ১১.৭৫% মহিলা; আর তাঁদের সিংহভাগই কনস্টেবল পদে রয়েছেন। আর আজও অধিকাংশ সময় তাঁদের ঘাড়ে পড়ে থানার ভিতরের নানা ফাইফরমাশ খাটা, কাগজপত্র সামলানোর কাজ। অন্যদিকে, পুরুষ পুলিশ কাজে ব্যর্থ হলে অবলীলায় মানুষ বলে তাঁদের চুড়ি পরা উচিত।
১৯ শতকের শেষ ও ২০ শতকের শুরুর দিকে, শুধু ব্রিটিশ প্রশাসন নয়, ভারতীয় এলিট পুরুষেরাও এই পেশায় মহিলাদের আসা রীতিমতো সমর্থন করেন। অনুমান করা হত ভারতীয় মহিলারা পুরুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলে আপাতদৃষ্টিতে অন্যান্য অনেক দেশের, বা এ-দেশেই অন্য অনেক পেশার তুলনায় এখানে মহিলাদের ডাক্তারি পড়া বা ডাক্তার হওয়ার পথটা অনেকটা সহজ ছিল।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved