রানিগঞ্জ থেকে আসা সুপারি কিলারদের যেমন ঠেকানো দরকার, তেমনই যদি আবার ব্রহ্মাবাহিনী খবর পেয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে, তাহলে ব্রহ্মাকে ছাড়া নেই। সুনেত্রাকেও পেয়ে যেতে পারি। রাতে জঙ্গলে ঢোকার প্রস্তুতি রাখা ফোর্স চাই।
২০.
ফেরার পথে রেশমি চায়ের দোকানে সুমিতকে দেখতে পেল। একঝলক দেখে মনে হল দুই অল্পবয়সি তরুণের সঙ্গে বসে, হয়তো ছাত্র হবে।
এমনিতেই রাহুলের সঙ্গে কথা বলে মেজাজটা চড়ে ছিল রেশমির। পোস্টমাস্টারকে হালকা মুডে চায়ের দোকানে দেখে রাগ আরও বাড়ল। অপদার্থ মেনিমুখো! ওর প্রতি দুর্বল হয়েছিল ভাবলে নিজের ওপরেও আরও চটে যায় রেশমি।
রাহুলের খোঁচাটা মাথায় ঘুরছিল। কী কথা! প্রতিমার ঘরে কী করছিলেন। তাতে তোর কী রে বাবা!
রেশমি স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রতিমার ঘরে যাওয়া তার কাছে নতুন নয়। মহিলার প্রতি তার পূর্ণ সহানুভূতি আছে। টুকটাক সাহায্য করে। সেদিন গিয়েছিল একটা কাপড় দিতে। মায়ের পুরনো শাড়ি। প্রতিমার কাজে লেগে যাবে।
কিন্তু একটা কথা মিলল না। অফিসার তার যাওয়ার খবর পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু টাইমিং-এ গোলমাল।
রাহুল বলেছে, ‘প্রতিমা তো তখন বাড়িতে ছিলেন না। আপনি বসে কী করছিলেন ওই ভাঙা ঘরে?’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
সুমিত চমকাল না। সাধারণভাবেই বলল, ‘সে তো একদিন না একদিন আবার গোলমাল করতই। তা ওটা ঠেকানোর কাজ তো আমার বা আমাদের নয়। পুলিশকে একটু বলে রাখুন। কিন্তু তাহলে এখন আই ক্যাম্পটা নিয়ে এগোব না বলছেন? এসব গোলমালের মধ্যে..
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
বেদম চটে রেশমি বলেছে, ‘বাজে কথা বলবেন না। ও না থাকলে আমি গিয়ে কী করব? আমি গিয়ে শাড়িটা দিয়ে চলে যাই। তখন তো ও ঘরেই ছিল।’
এই নিয়ে বেশ কিছুটা টানাপোড়েনের পর রাহুল বলেছে, ‘ঠিকঠাক ভেবে রাখুন। পরে আবার কথা বলব।’
এতেই আরও চটেছিল রেশমি। তারপর ফেরার পথে সুমিতকে দেখেছে।
সুমিত রেশমিকে দেখে চায়ের দোকানের ছাউনি ছেড়ে বেরিয়ে এল, হাতে চায়ের কোণভাঙা গ্লাস, মুখে হাসি। অসহ্য! চারপাশে বিপদের গন্ধ, আর উনি হাসছেন! রেশমির একটু ঝগড়া ঝগড়া ভাব আসছিল। ঠিক করল লোকটাকে একটু ঝাড় দিয়ে যাবে।
সুমিত বলল, ‘কেমন আছেন? ভুলেই গিয়েছেন দেখছি।’
রেশমি বলল, ‘কাজকর্ম ফেলে পোস্টমাস্টারবাবু চায়ের দোকানে যে!’ চিমটির সুরে কথাটা গেল।
–‘কাজকর্ম ফেলে নয়, কাজকর্মের ফাঁকে। আসলে ভাবছিলাম, একটা বড় করে আই চেক আপ ক্যাম্প করাব। সেই নিয়েই একটু কথাবার্তা চলছিল। ক্যাম্পের সঙ্গে ছানি অপারেশনের ব্যবস্থাও থাকবে। গরিব মানুষগুলোর সুবিধে হবে। টোটাল ফ্রি অফ কস্ট। সঙ্গে ফলো আপের ওষুধ।’
রেশমি উপেক্ষা করে সরাসরি বলেছে, ‘ওদিকে বিদ্যুৎ কুসুমডিহাতে বদলা নিতে সুপারি কিলার পাঠাচ্ছে। সে খবর রাখেন? ওই বিপদটা এখন অনেক বড়।’
সুমিত চমকাল না। সাধারণভাবেই বলল, ‘সে তো একদিন না একদিন আবার গোলমাল করতই। তা ওটা ঠেকানোর কাজ তো আমার বা আমাদের নয়। পুলিশকে একটু বলে রাখুন। কিন্তু তাহলে এখন আই ক্যাম্পটা নিয়ে এগোব না বলছেন? এসব গোলমালের মধ্যে…’
–‘আপনার কাছে এখন আই ক্যাম্পটা বড় হল! সুপারি কিলার মানে মাধাই বা ওর দলবলের মাথায় বিপদ ঝুলছে।’
–‘আপনি কী করে জানলেন?’
–‘সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল এর পাল্টা আমরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
–‘আমরা!’ সুমিতের গলায় বিস্ময়, ‘আমরা কী করব? করবে তো পুলিশ। এসব আমাদের দায়িত্ব নাকি?’
কথাটা ঠিক। কিন্তু রেশমির কাজে এটা দায় এড়ানো সুবিধাবাদ বলে মনে হল। কথায় ইতি টেনে বলল, ‘থাকুন আপনি আপনার আই ক্যাম্প নিয়ে। মানুষকে আমরাই একজোট করব।’
‘মানুষকে একজোট করব’– কথাটায় দম ছিল।
রেশমি এগিয়ে গেল। একটু তাকিয়ে থেকে আবার চায়ের দোকানের চালায় ঢুকল সুমিত। মুখে হালকা হাসি।
সেদিন রাতে রাহুল, ত্রিপাঠীসাহেবকে বলল, ‘স্যর, বাড়তি ফোর্স রেডি রাখতে হবে। রানিগঞ্জ থেকে আসা সুপারি কিলারদের যেমন ঠেকানো দরকার, তেমনই যদি আবার ব্রহ্মাবাহিনী খবর পেয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে, তাহলে ব্রহ্মাকে ছাড়া নেই। সুনেত্রাকেও পেয়ে যেতে পারি। রাতে জঙ্গলে ঢোকার প্রস্তুতি রাখা ফোর্স চাই।’
ত্রিপাঠী বললেন, ‘ঠিক। রঞ্জন, লিপিকারাও এই রিপোর্ট পাঠিয়েছে।’
রাহুল ওদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। প্রতিমার ঘরে রেশমির যাওয়ার ইনফর্মেশনটা লিপিকারই দেওয়া। ওরা ওদের মতো কাজ করে যাচ্ছে।
রাহুল গোটা টিমকে বলেছে মাধাইয়ের নিরাপত্তায় নজর রাখতে। রাতে টহল বেড়েছে। রানিগঞ্জ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রেড হয়েছে। কিন্তু ঘাতক টিমটা বোধহয় রওনা হয়ে গিয়েছে। রানিগঞ্জের ঠেকে কেউ নেই।
(চলবে)
…পড়ুন কুসুমডিহার কাব্য-এর অন্যান্য পর্ব…
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৯: দূত এবং দূতের দূত মারফত খবর গিয়েছে কুসুমডিহায়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৮: টিলার ওপরের মহিলাদের নিয়ে পুলিশের কৌতূহল প্রবল
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৭: পল্টু জবার পিছনে খরচ বাড়িয়ে ইদানীং এদিক-ওদিক হাত পেতে ফেলছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৬: কমরেড ব্রহ্মা কতদিন পালিয়ে বেড়াবে?
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৫: প্রতিমাকে পাওয়া গেল কুসুমডিহায়, মিথ্যে ধর্ষণের মামলায় ফাঁসি হয়েছে তাঁর বরের
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৪: এখন খবরের শীর্ষে কুসুমডিহায় মাওবাদী হামলা আর কমরেড ব্রহ্মা
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৩: কমরেড ব্রহ্মা তাহলে যেখানেই থাকুন, কুসুমডিহার ওপর নজর রেখেছেন
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১২: থমথমে কুসুমডিহাতে টহল দিচ্ছে পুলিশ
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১১: ছদ্মপরিচয়ে কুসুমডিহাতে প্রবেশ পুলিশ ফোর্সের
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১০: শান্ত কুসুমডিহা এখন হিংস্র হয়ে ফুঁসছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৯: কুসুমডিহাতে পুলিশ, নেতা, বুদ্ধিজীবী, মহিলা কমিশন, মিডিয়ার ভিড়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৮: জঙ্গলমহলের তল্লাট থেকে উত্তাপ ছড়াল কলকাতার মিডিয়াগুলির স্টুডিওতেও
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৭: কুসুমডিহাতেই দেখিয়ে দেব আমরা মরে যাইনি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৬: পরিচয় যত বাড়ছে, সুমিত অনুভব করছে এলাকা গরম হচ্ছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৫: পশ্চিমগড়ের মৃতদেহর খবর এখনও কলকাতা সংস্করণে জায়গা পায়নি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৪: সভা আর প্রচার মানেই বন্দুক ধরা নয়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৩: ‘বন্দুক হাতে নেওয়া প্রত্যেকটা মেয়েকে সমর্থন করি’
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ২: সিস্টেমের দোষেই কুসমডিহাতে ফের অমঙ্গলের পদধ্বনি, সুমিতকে বোঝাল রেশমি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১: জঙ্গলমহলের কুসুমডিহার নতুন পোস্টমাস্টার সুমিত, জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে পারবে!
বছর খানেক আগে হাওড়ায় রাম নবমীর মিছিলে কিশোর সুমিত শা-এর ছবি ভেসে ওঠে, যে বন্দুক উঁচিয়ে হুংকার দিচ্ছিল ‘জয় শ্রী রাম’। মনে পড়ে যায় পহেলু খানকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত দুই কিশোরের কথা যারা অ্যাডোলেসেন্সের জেমির চরিত্রের মতোই সাজা কাটাচ্ছে বিশেষ সংশোধনাগারে।