অনেকেই ‘সত্যজিৎ রায়ের ছবি’ বলতে সুব্রত মিত্র ও সৌম্যেন্দু রায়ের কথা আওড়ে থাকেন। তার মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন ওই দু’জনের মধ্যে বেশ একটা চাপা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। একবার আমি উপস্থিত রয়েছি, এক দক্ষিণী ক্যামেরাম্যান সৌম্যেন্দু রায়কে জিজ্ঞেস করেছেন সুব্রত মিত্রকে নিয়ে। প্রশ্নটার মধ্যে ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারটা লুকিয়ে ছিল। সৌম্যেন্দু রায় উত্তরে এটুকু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, সুব্রত মিত্র তাঁর কাছে ঈশ্বরপ্রতিম।
১৬.
আমি যখন ছোট, তখন ভাবতাম সত্যজিৎ রায়ের ক্যামেরাম্যান (সিনেমাটোগ্রাফার) সৌম্যেন্দু রায়। একটু বড় হতে বুঝলাম একজন নয়, দু’জন– সুব্রত মিত্র আর সৌম্যেন্দু রায়। আরও একটু বড় হওয়াতে দু’জনের কাজ আবার আবার করে দেখে পার্থক্যটা চোখে পড়তে লাগল।
আমার প্রথম যোগাযোগ রায়দার সঙ্গে ‘গুপিগাইন বাঘাবাইন’-এ (১৯৬৯)। এই ছবির প্রোডিউসার ছিল নেপাল দত্ত ও অসীম দত্ত। আমার কাছে, বেবিমাসির (পূর্ণিমা দত্ত) ছবি। দত্তরা ছিলেন প্রিয়া সিনেমার প্রতিষ্ঠাতা। আমাদের পুরনো পারিবারিক বন্ধু। প্রায়শই সারাদিন মিলে একসঙ্গে থাকা হত। দত্তরা থাকতেন প্রিয়া সিনেমার ওপরের তলায়।
বেবিমাসির ছেলে দাদুল আমার থেকে একটু বড়। ও সারাদিন কোন সিনটা বা কোন গানটা চলবে– সেগুলোর একটা যোগাযোগ রাখত। এই সুপারহিট ছবিটা চলেছিল বহু দিন। আমারও ছবিটা একাধিকবার দেখা হয়েছিল তাই। ‘সোনার কেল্লা’ (১৯৭৪) আবারও রায়দার সঙ্গে দেখা হয়। রায়দা ‘অশনি সংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। আজকেও আমার চোখে রায়দার কাজ করা প্রিয় ছবি হল ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’।
আমি যখন বিজ্ঞাপনের ছবি করছি, রায়দার সঙ্গে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করত, কী শুট করছি? কী প্রোডাক্ট? আর প্রশংসা করত আমার সিনেমাটোগ্রাফার অভীক মুখোপাধ্যায়ের। রায়দার দীর্ঘ কর্মজীবন। এবং ওঁর জীবনের ওপর বেশ কিছু তথ্যচিত্রও রয়েছে। ওঁর লেখা অনেকগুলো বইও রয়েছে। ফলে রায়দার কাজ অনেক বেশি ডকুমেন্টেড ভবিষ্যতের কাছে, এটা একটা ভালো ব্যাপার।
অনেকেই ‘সত্যজিৎ রায়ের ছবি’ বলতে সুব্রত মিত্র ও সৌম্যেন্দু রায়ের কথা আওড়ে থাকেন। তার মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন ওই দু’জনের মধ্যে বেশ একটা চাপা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। একবার আমি উপস্থিত রয়েছি, এক দক্ষিণী ক্যামেরাম্যান সৌম্যেন্দু রায়কে জিজ্ঞেস করেছেন সুব্রত মিত্রকে নিয়ে। প্রশ্নটার মধ্যে ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারটা লুকিয়ে ছিল। সৌম্যেন্দু রায় উত্তরে এটুকু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, সুব্রত মিত্র তাঁর কাছে ঈশ্বরপ্রতিম।
আমার এই ছবিটা সৌম্যেন্দু রায়ের বসার ঘরে তোলা। একদিন আড্ডা মারছি। রায়দা ‘আঁধারে আলো’, ‘বসন্ত বাহার’, ‘আলোর পিপাসা’, আর ‘অভয়া ও শ্রীকান্ত’র গল্প বলছিল। যাতে আমার বাবা বসন্ত চৌধুরী ও সৌম্যেন্দু রায় একসঙ্গে কাজ করেছে।
…পড়ুন ফ্রেমকাহিনি-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ১৫। ১০ বছর বয়সেই ব্রাউনি ক্যামেরায় ছবি তোলা শুরু করেছিল রিনামাসি
পর্ব ১৪। তাল ও সুর দিয়ে তৈরি এক গ্রহে থাকতেন উস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ
পর্ব ১৩। মৃণাল সেনকে এক ডলারেই গল্পের স্বত্ব বিক্রি করবেন, বলেছিলেন মার্কেস
পর্ব ১২: পুরনো বাড়ির বারান্দায় মগ্ন এক শিল্পী
পর্ব ১১। প্রায় নির্বাক গণেশ পাইন আড্ডা মারতেন বসন্ত কেবিনে
পর্ব ১০। আজাদ হিন্দ হোটেল আর সুব্রত মিত্রর বাড়ির মধ্যে মিল কোথায়?
পর্ব ৯। শান্তিনিকেতনের রাস্তায় রিকশা চালাতেন শর্বরী রায়চৌধুরী
পর্ব ৮। পুরনো বইয়ের খোঁজে গোয়েন্দা হয়ে উঠেছিলেন ইন্দ্রনাথ মজুমদার
পর্ব ৭। কলকাতার জন্মদিনে উত্তম-সুচিত্রার ছবি আঁকতে দেখেছি মকবুলকে
পর্ব ৬। বিয়ের দিন রঞ্জা আর স্যমন্তককে দেখে মনে হচ্ছিল উনিশ শতকের পেইন্টিং করা পোর্ট্রেট
পর্ব ৫। আলো ক্রমে আসিতেছে ও আমার ছবি তোলার শুরু
পর্ব ৪। মুম্বইয়ের অলৌকিক ভোর ও সাদাটে শার্ট পরা হুমা কুরেশির বন্ধুত্ব
পর্ব ৩। রণেন আয়ন দত্তর বাড়ি থেকে রাত দুটোয় ছবি নিয়ে বেপাত্তা হয়েছিলেন বসন্ত চৌধুরী
পর্ব ২। ইশকুল পার হইনি, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত একটা ছোট্ট রামের পেগ তুলে দিয়েছিল হাতে
পর্ব ১। ঋতুর ভেতর সবসময় একজন শিল্প-নির্দেশক সজাগ ছিল