এই ছবিটা, যা আজকের লেখার সঙ্গে দেখছেন, তা শুট করেছিলাম তখনই। ক্যামেরা সেসময়টায় সারাক্ষণই আমার সঙ্গে থাকত। আমি তখন বেশ কিছু ছবির মধ্যে এই ছবিও তুলেছিলাম। শুটিংয়ের ক’দিন আগে যখন আমার আলাপ হয় আমজাদ আলি খানের সঙ্গে। গৌতম পিতৃপরিচয় দিয়েছিল। আমজাদ আলি খান ও আমার বাবা বসন্ত চৌধুরীর দুটো যোগাযোগ ছিল। একটা হল, হিন্দুস্তানি ক্লাসিকাল মিউজিক। আরেকটা জামেওয়ার। বাবার জামেওয়ার নিয়ে কিছু কথা উঠল, আড্ডা হল অনেক।
২২.
২০০৫ কি ২০০৬ সাল হবে, আমার সিনেমাটোগ্রাফার বন্ধু, অভীক মুখোপাধ্যায় একদিন জানতে চাইল, ‘একটা মিউজিক ভিডিও করবে?’ জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘কার?’ ‘আমন আর আয়ান– ওঁরা উস্তাদ আমজাদ আলির ছেলে। হয়তো আমজাদ আলিও একচিলতে থাকবেন। ছবিটা প্রোডিউস করছেন গৌতম হালদার।’ গৌতম হালদারের কাছ থেকে অনেকবারই আমজাদ আলিকে নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। অবশেষে, শুরু হল লোকেশন দেখা। শহর জুড়ে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং জায়গা– নতুন জায়গা বলতে সিটি সেন্টার মল, নতুন সরকারি অফিস, আর পুরনো বলতে কুমোরটুলি আর বাগবাজার।
শুটিং নিয়ে আলোচনা আর প্রস্তুতি চলেছিল বেশ ক’দিন। আমজাদ আলি আর দুই ছেলেকে নিয়ে শুটিং হল এক স্টুডিওতে। বানানো হয়েছিল চমৎকার একটা সেট। একই সঙ্গে তিনজন মিউজিশিয়ান বাজাচ্ছেন। এই ছবিটা, যা আজকের লেখার সঙ্গে দেখছেন, তা শুট করেছিলাম তখনই। ক্যামেরা সেসময়টায় সারাক্ষণই আমার সঙ্গে থাকত। আমি তখন বেশ কিছু ছবির মধ্যে এই ছবিও তুলেছিলাম। শুটিংয়ের ক’দিন আগে যখন আমার আলাপ হয় আমজাদ আলি খানের সঙ্গে। গৌতম পিতৃপরিচয় দিয়েছিল। আমজাদ আলি খান ও আমার বাবা বসন্ত চৌধুরীর দুটো যোগাযোগ ছিল। একটা হল, হিন্দুস্তানি ক্লাসিকাল মিউজিক, আরেকটা জামেওয়ার। বাবার জামেওয়ার নিয়ে কিছু কথা উঠল, আড্ডা হল অনেক।
আমরা যে-যে জায়গার কথা ভেবে রেখেছিলাম, সেগুলো ছাড়াও অনেক জায়গায় শুটিং হল। তার মধ্যে একটা সল্টলেক স্টেডিয়াম, উত্তর কলকাতার গলি, হলুদ ট্যাক্সি এবং আরও অনেক কিছু। ক’দিন পরে ছবি শেষ। পোস্ট প্রোডাকশন করতে যাচ্ছি মুম্বইতে। গৌতম হালদারের আরেক বন্ধু– অঞ্জন চ্যাটার্জী, দ্যা ফুড টাইকুন– এক বন্ধ ফ্ল্যাট খুলে দিল সেখানে থাকার জন্য। অঞ্জন তখন শিফট করে গিয়েছে এক সুন্দর বাড়িতে।
আমাদের কাজ তাড়তাড়ি শেষ হলে আমরা অঞ্জনদার বাড়ি যেতাম। যদিও এই ‘তাড়াতাড়ি শেষ’ হয়েছে খুব কমই। এক-দু’বার। সেই এক-দু’বারই আড্ডা হয়েছিল বিভিন্ন রকমের জিনিস নিয়ে। রেস্তোরাঁ, খাবার, আপ্যায়ন ইত্যাদি নিয়ে। তখন যে-কথাটা বলেছিলেন অঞ্জনদা, মনে পড়ল, একটা নতুন করে খাবারের বই হওয়া দরকার। বাংলার খাবার, কিন্তু ভাষাটা ইংরেজিতে। সে কাজটা অবশেষে হল, বেরচ্ছে দ্রুতই। মাঝে যদিও ২০টা বছর কেটে গিয়েছে।
আজ যদি এই ধরনের একটা মিউজিক ভিডিও করতে হত, তাহলে আর দু’-পুরুষ নয়, কাজটা তিন পুরুষ নিয়ে করতে হত। কেন না আমজাদ আলির দুই নাতি– জোহান আলি এবং আবীর আলিও এখন বাজাতে শুরু করেছে।
…পড়ুন ফ্রেমকাহিনি-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ২১। তপতীর বই পড়েই প্রিন্টের প্রতি আমার উৎসাহ বেড়ে গেল
পর্ব ২০। মৃত্যুর ২২ বছর পর বসন্ত চৌধুরীর ওপর বই হয়েছিল শুভাদার জন্যই
পর্ব ১৯। মৃণালদার মুদ্রাদোষগুলো আবারও দেখতে পেলাম অঞ্জন দত্তর সৌজন্যে
পর্ব ১৮। ১৭টা রাজ্য ঘুরে ১০৫৫টা পুরনো সিনেমা হলের ছবি তুলেছে হেমন্ত
পর্ব ১৭। এক বাঙালি বাড়ি আসবে বলে দু’রকমের মাছ রেঁধেছিলেন নানা পাটেকর
পর্ব ১৬। সুব্রত মিত্র ও সৌম্যেন্দু রায়ের মধ্যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না
পর্ব ১৫। ১০ বছর বয়সেই ব্রাউনি ক্যামেরায় ছবি তোলা শুরু করেছিল রিনামাসি
পর্ব ১৪। তাল ও সুর দিয়ে তৈরি এক গ্রহে থাকতেন উস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ
পর্ব ১৩। মৃণাল সেনকে এক ডলারেই গল্পের স্বত্ব বিক্রি করবেন, বলেছিলেন মার্কেস
পর্ব ১২: পুরনো বাড়ির বারান্দায় মগ্ন এক শিল্পী
পর্ব ১১। প্রায় নির্বাক গণেশ পাইন আড্ডা মারতেন বসন্ত কেবিনে
পর্ব ১০। আজাদ হিন্দ হোটেল আর সুব্রত মিত্রর বাড়ির মধ্যে মিল কোথায়?
পর্ব ৯। শান্তিনিকেতনের রাস্তায় রিকশা চালাতেন শর্বরী রায়চৌধুরী
পর্ব ৮। পুরনো বইয়ের খোঁজে গোয়েন্দা হয়ে উঠেছিলেন ইন্দ্রনাথ মজুমদার
পর্ব ৭। কলকাতার জন্মদিনে উত্তম-সুচিত্রার ছবি আঁকতে দেখেছি মকবুলকে
পর্ব ৬। বিয়ের দিন রঞ্জা আর স্যমন্তককে দেখে মনে হচ্ছিল উনিশ শতকের পেইন্টিং করা পোর্ট্রেট
পর্ব ৫। আলো ক্রমে আসিতেছে ও আমার ছবি তোলার শুরু
পর্ব ৪। মুম্বইয়ের অলৌকিক ভোর ও সাদাটে শার্ট পরা হুমা কুরেশির বন্ধুত্ব
পর্ব ৩। রণেন আয়ন দত্তর বাড়ি থেকে রাত দুটোয় ছবি নিয়ে বেপাত্তা হয়েছিলেন বসন্ত চৌধুরী
পর্ব ২। ইশকুল পার হইনি, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত একটা ছোট্ট রামের পেগ তুলে দিয়েছিল হাতে
পর্ব ১। ঋতুর ভেতর সবসময় একজন শিল্প-নির্দেশক সজাগ ছিল