অসীম রায়ের গল্প তুলে ধরেছে বাঙালি মধ্যবিত্তের নিরন্তর বদলে যাওয়া। আপাত নিরাপত্তার অলীক অশ্বাসে তার ডুবে থাকার কথা। আবার সেই গল্পই বারবার ভেঙে চুরমার করে নস্যাৎ করে দিয়েছে তার বেঁচে সেই মিথ্যে কুহক। তাকে দাঁড় করিয়েছে আয়নার সামনে। তার প্রকৃত আত্মোপলব্ধিতে। তাঁর গল্প আসলে তার সময়কেই দেখে যাওয়া। সময়ের আস্ত একটা দলিল। সময়ের রিপোর্টাজ।
অসীম রায়কে কেউ চেনে না। কেউ মানে আজকের বাঙালি পাঠক। বইয়ের কনজিউমার। বই বাজারের নিয়ন্তা।
চেনার কারণও কি আছে? আজকের বাঙালি পাঠক সাসপেন্স খোঁজে। থ্রিল খোঁজে। ক্রাইম হোক বা তন্ত্রমন্ত্র ঘেঁষা অলৌকিক– স্নায়ুতন্ত্রে শিরশিরানি ধরানো থ্রিলারই তার মনপসন্দ। তার এন্টারটেনমেন্ট। অবশ্য তাতে ভুলই বা কী? সকাল ন’টা থেকে রাত ন’টার চূড়ান্ত কর্মব্যস্ততা, স্ট্রেস, বেঁচে থাকার তীব্র একঘেয়েমির পর থ্রিলই তো খুঁজবে সে। নিজেকে ভোলার জন্য। জীবনের চূড়ান্ত অর্থহীনতা সরিয়ে রাখার জন্য। ভিডিও গেম, ওটিটির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া থ্রিল। সহজপাচ্য এবং সুলভ। আত্মোপলব্ধি সে চায় না। কারণ চাইলেই নিজের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
অসীম রায় সাসপেন্সে বিশ্বাস করতেন না। ‘গল্প কেন’ নামের লেখায় তিনি নিজেই বলেছেন সে কথা। লিখেছেন, ‘ইউরোপ আমেরিকায় সাসপেন্স ক্রাইম থ্রিলারের উপজীব্য, সিরিয়াস লেখকের বিষয় নয়। সিরিয়াস লেখকের বিষয় আত্মোপলব্ধি।’
১৯২৭ সালে জন্ম অসীম রায়ের। নামী ইংরাজি দৈনিকের সাংবাদিক। বামপন্থী। লেখালেখির শুরু কবিতার হাত ধরে। তারপর সোজা ঝাঁপিয়ে পড়া উপন্যাসে। গল্প লিখতে শুরু করেছেন চল্লিশ পেরনোর পর। খান-সতেরো উপন্যাস আর ৬৪টা ছোটগল্প– কথাসাহিত্যিক হিসেবে এই তাঁর ‘বডি অফ ওয়ার্ক’।
অসীম রায়ের শেষ ছোটগল্প ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’। এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র এক সাংবাদিক। অফিস ফেরতা ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে সে। ডাইভার বৃদ্ধ। বয়স ৭০। জানা যায়, এক সময় স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন তিনি। এক ছেলে ডাকবিভাগে সামান্য চাকরি করে। অন্যজন স্কুল ফাইনালে ফেল করে বাড়িতে বসে আছে। মেয়ের বিয়ে বাকি। সংসার চালাতে অবসরের পর তাই ট্যাক্সি চালানোর পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি। তাঁর ছাত্রই এখন মন্ত্রী। সেই ছাত্রের লেখাপড়ার সব ভার নিয়েছিলেন তিনিই। অথচ সেই ছাত্রের সঙ্গেই বারবার দেখা করতে চেয়ে ব্যর্থ তিনি।
ট্যাক্সিতে যেতে যেতেই পঞ্চাশোর্ধ সাংবাদিক দেখে তার চেনা শহরটাকে। আর তার ভাবনার মধ্যে অসীম রায় বুনে দেন আশ্চর্য এই সন্দর্ভ– ‘পঞ্চাশের কাছাকাছি এসে আর চমকাতে ভালো লাগে না। এখন মোটামুটি সে মেনে নিয়েছে বাকি জীবনটা কী কী ঘটবে। বাসট্রামে এইরকমই ঝুলবে মানুষ, তরুণ-তরুণীরা হামলাবে চাকরির জন্যে, গরমে মশায় বিদ্যুতের অভাবে মানুষ কষ্ট পাবে, হাসপাতালের এক বিছানায় দু-তিনজন আর তার নীচে মেঝেতে আরও দু-তিনজন গড়াবে, আর কলকাতার যত ভালো জায়গা সেগুলো ধীরে ধীরে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা কব্জা করে নেবে। এর মাঝখানে কিছু পণ্ডিত লোক সেমিনার করবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর, সত্যজিৎ রায়ের ফিল্মের ওপর আলোচনা হবে, কোন ফিকিরে জীবনটাকে পালটানো যাবে এই আশায় নতুন নতুন খবরের কাগজ আর ম্যাগাজিনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে মানুষ। কিন্তু জীবনটা এইভাবেই চলবে। যারা নতুন শতাব্দীর স্বপ্ন দেখেছে তাদের মুখে ছাই দিয়ে নেংচাতে নেংচাতে একইভাবে জীবন এগোবে। ভাগ্য ভালো এরই মধ্যে সে বাঙালি মধ্যবিত্তের মোক্ষে পৌছে গেছে, হাইরাইজের একটা ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে। বাকি আট-দশ বছর দেনা শুধতে শুধতে কেটে যাবে।’ তারপরেই ‘হঠাৎ সে খেয়াল করে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, ইঞ্জিন বন্ধ।’ ঠিক যেন বাঙালির জীবন আর তার অন্তর্নিহিত অর্থহীনতা। বন্ধ ইঞ্জিনের মতো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
গল্পের শেষে ট্যাক্সি পোঁছায় তার গন্তব্যে। খুচরো নেওয়ার অছিলায় আরও কিছুক্ষণ কথা হয় দু’জনের। বাড়ি ফেরার পর, সাংবাদিকের স্ত্রী তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘ট্যাক্সি ড্রাইভারের সঙ্গে এত কী গল্প। মিছিমিছি এত রাত করলে।’ আপনমনে সাংবাদিক বলে, ‘মিছিমিছি এত রাত করলাম।’
এই মনোলগের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে মধ্যবিত্তের নির্বিকার নির্লিপ্তিও। যা কিছুই ঘটুক তার কাছে নিজেরটুকুই সব। বাকি কোনও কিছুই আর আলোড়ন ফেলবে না তার জীবনে।
১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়েছিল ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’। সোভিয়েত রাশিয়ার তখনও পতন হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে তখন বামফ্রন্ট সরকার মধ্যগগনে। তখনও লিবারালাইজেশন হয়নি ভারতে। তৈরি হয়নি গ্লোবালাইজেশনের ক্ষীর খাওয়া নব্যধনীরা। অথচ প্রায় প্রফেটিক দক্ষতায় অসীম রায় লিখে গিয়েছেন বাঙালি জীবনের কথা। তার সর্বংসহা হয়ে ওঠার কথা। কিংবা শুধু নিজের জীবনটাকে নিয়েই মিথ্যে ভালো থাকার আছিলার কথা। যে প্রবণতা পরের তিন দশকে একটুও বদলায়নি। বরং বেড়েছে শুধুই।
অসীম রায়ের প্রথম গল্প ‘আরম্ভের রাত’। এই গল্পের প্রেক্ষাপট ’৬৭ সালের সেই রাতটা – যেদিন যুক্তফ্রন্ট সরকার ভোটে জিতেছে। শহর জুড়েই তুমুল হুল্লোড়। উদ্দাম জনতা। আটকে গিয়েছে সব। আর তার মধ্যেই উত্তর কলকাতার এক চায়ের দোকানে কথা বলছে তিনজন। একজন তরুণ বামপন্থী বিজু– যার কথার মধ্যে প্রবল আশাবাদ, উদ্দীপনা, সব বদলে ফেলার আকাঙ্ক্ষা। দ্বিতীয়জন বৃদ্ধ। কমিউনিস্ট পার্টির দীর্ঘদিনের কর্মী। বিপ্লব করতে চাওয়া পার্টির নির্বাচনে জিতে আশা তাকে উদ্বেলিত করে না। বরং তার মনে প্রশ্ন জাগে পার্টিলাইন নিয়েই। এই দু’জনের কথার মধ্যে উঠে আসে কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শ গত সংঘাতগুলো। আদর্শ নয়, তত্ত্ব নয়, শ্রেণিদ্বন্দ্বের অবসানও নয় বরং বাস্তবের রিয়ালপলিটিকে জেতাই যে তাদের উদ্দেশ্য হয়ে গিয়েছে। আর সস্তা রাজনৈতিক সুবিধের জন্য যে পার্টি গ্রাম্য সাঁওতালদের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে গুলির মুখে এগিয়ে দিয়েছে।
আর ঠিক এই দু’জনের মাঝে রাজনীতি বিমুখ হীরক সেন। কলকাতায় চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছে সে। বিপ্লব, মানবমুক্তির কোনও মহৎ আদর্শ নয়, যার চাওয়া জীবনে স্বচ্ছল ভাবে বেঁচে থাকা।
‘আরম্ভের রাত’ প্রকাশিত হয়েছিল ’৬৮ সালে। সদ্য স্বাধীন হয়েছে দেশ। আর তার অভিঘাতে কলকাতা জুড়ে রিফিউজিদের ঢাল। দারিদ্র, তীব্র দারিদ্র চারদিকে। আর তার মধ্যেই যেন আশাবাদ খুঁজছে বাঙালি মধ্যবিত্ত। দেখছে দিনবদলের খোয়াব। তারপর পাঁচ দশক কেটে গিয়েছে। সেদিনের বৃদ্ধ পানুদার মধ্যে বামপন্থা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল তাই যেন ক্রমশ বিস্তৃত হয়েছে আপামরের কৌমচেতনায়। আর ঠিক হীরকের মতোই শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত। কিন্তু তার নিজস্ব পরিসর কবে যেন খুব ছোট হয়ে গিয়েছে।
ছয় ও সাতের দশকের অশান্ত রাজনীতি, বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আস্থা হারানোর কথাও উঠে এসেছে অসীম রায়ের বেশ কিছু গল্পে। যেমন ‘ধোঁয়া ধুলো নক্ষত্র।’ এক রাতে খুন হয় কলোনি এলাকার ওয়াগান ব্রেকার ফেলু। খুনি ওই অঞ্চলেরই কুখ্যাত গুন্ডা বেণু। খুনের খবর দিয়ে বাড়িতে এসেই শাসিয়ে যায় সে। পুলিশে গেলে বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। ফেলুর জন্যই কলোনির ঝুপড়ি দালান হয়েছে। তাই ফেলুর ওয়াগান ব্রেকার হওয়ায় সায় ছিল তার মায়ের। ফেলুর মৃত্যুতে মূহ্যমান মা ছোটছেলে রতনকে বলে বাড়িতে রাখা বোম বেণুর ওপর ছুঁড়ে মারতে। এমনকী তাকে মেয়েমানুষ বলেও গাল পাড়ে।
শেষ অবধি রতন বেরিয়ে পড়ে বাড়ি থেকে। এদিক ওদিক ঘুরে অতিকষ্টে পৌঁছায় থানায়। থানার অফিসার নির্বিকার। বেণুর হাত অনেক ওপর অবধি। তাকে ধরা অফিসারের নাগালের বাইরে। রতন রাজনৈতিক কর্মী। সে তাই পোঁছে যায় দলের স্থানীয় নেতার বাড়ি। তাকে নিরাশ করেন নেতাও। বলেন, বিপ্লব হলে বেণুর মতো লোকেরাই অস্ত্র ধরবে। তাই বেণু তার দলের সম্পদ। ফিরে আসে রতন। পথে দেখা হয় বেণুর সঙ্গে। নির্বিকার বেণু তাকে বলে ফেলুর লাশ শেয়ালে খাচ্ছে। ফেলুর নিথর লাশের সামনে দাঁড়ায় রতন। তারপর একসময় ঝাঁপিয়ে পড়ে বেণুর দিকে।
’৭০ সালে লেখা ‘ধোঁয়া ধুলো নক্ষত্র’-এর এই আবহ, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্বৃত্তের রাজনৈতিক হয়ে ওঠাই তো বাঙালির গত পাঁচ দশকের ইতিহাস। রাজনীতির মহৎ আদর্শের বুকনিকে ঢপবাজি বলে চিনতে পারার আখ্যান।
বিক্ষুব্ধ সাতের দশকে লেখা অসীম রায়ের গল্পগুলোর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য ‘অনি’। ছেলে অনিকে নিয়ে ভয় পায় একদা কমিউনিস্ট পার্টিকর্মী বাবা। অনি যেন নতুনের ইঙ্গিতবাহী। সে সব সময় তর্ক করে বাবার সঙ্গে। কথা বলে পার্টিলাইন নিয়ে। এক সময় বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা বাবা ভয় পায় অনির কথা শুনে। বিপ্লবের স্বপ্ন বাবা অনেকদিন আগে ছেড়ে এসেছে মধ্যবিত্তের সাধারণ বেঁচে থাকার জন্য। অনির মধ্যেই নিজেকে দেখতে পায় সে। দেখতে পায় ছেড়ে আসা নিজের স্বপ্নকে। আবার অবাকও হয় অনির কাছে ‘রূপসী বাংলা’ বই পেয়ে। জীবনানন্দ দাশের নাম প্রথম সে শোনে অনির কাছেই। একদিন পাড়ার মোড়ে বোমা ফাটার ঘটনায় অকারণেই নির্দোষ অনিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বদলে যায় অনি। জড়িয়ে পড়ে নকশালপন্থী আন্দোলনে। অনিকে খুন করতে অস্ত্র নিয়ে বাড়িতেই হানা দেয় গুন্ডারা। বাবা বুঝতে পারেন, তারাও বামপন্থী দলেরই অনুগামী। সেই দল যা বাবা নিজে এক সময় করত।
অনি লাশ হয়ে যায় একদিন। মৃত অনিকে খুঁজতে মর্গে যেতে হয় বাবাকে। সেখানে অনির নাম বদলে গিয়েছে। রাষ্ট্র তার নতুন নাম দিয়েছে ‘চোর অনি।’
ছেলের মৃতদেহের সামনে দাঁড়ায় বাবা। যেন নিজেরই মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। দাঁড়িয়ে আছে নিজের আদর্শ, নিজের স্বপ্নেরই মৃত্যুর সামনে। দিনবদলের স্বপ্ন দেখা যে ঝুটো, আসলে যে ব্যক্তির বেঁচে থাকাই সব বাঙালির এই বুঝতে পারাও যে আসলে নিহিত আছে অশান্ত সেই সত্তরেই।
কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক হলেই কি স্বস্তি পাওয়া যায়? বেঁচে থাকা যায়? বিক্ষুব্ধ সেই সময় পেরিয়ে ঠিক ১১ বছর পর ঘোষিত শান্ত অবস্থায় অসীম রায় লিখছেন ‘চংক্রমণ’। এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হাসপাতালের এক ক্যাশিয়ার। লাল ফিতের ফাঁসে যে ক্যাশ রাখার কোনও নিরাপদ জায়গা পায়নি কর্মক্ষেত্রে। বরং তাকেই হাসপাতালের ক্যাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় প্রতিদিন। একদিন হাসপাতালের গেটে তার টাকা ছিনতাই করতে আসে তিনজন। প্রথমে বোমা মারে। তারপর কাচের বোতল এবং পাইপগান হাতে নিয়ে তাড়া করে তাকে। আর প্রাণে বাঁচতে টাকা ভরা ব্যাগ হাতে হাসপাতালের এ-বিল্ডিং থেকে ও-বিল্ডিং-এর অনন্ত গোলকধাঁধায় দৌড়তে থাকে লোকটা। কেউ এগিয়ে আসে না তাকে বাঁচাতে। বরং দোতলার বারান্দার নিরাপদ দূরত্ব থেকে হাততালি দেয় প্রাণভয়ে পালানো লোকটার দৌঁড় দেখে। কেউ আবার উৎসাহ দেয়, ‘আরো জোরে’! ডেড হয়ে যাওয়া একটা টেলিফোন রিসিভার তুলে পুলিশকে ফোন করার ব্যর্থ চেষ্টা করে কয়েকজন। আর দু’-চারজন যুবক যারা সহকর্মীর এই অবস্থা দেখে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছিল, তাদের নিরস্ত করে।
পেছনে সশস্ত্র আততায়ী। ছুঁয়ে ফেললেই মেরে ফেলবে যারা। আর তাদের সামনে প্রাণ বাঁচাতে উদ্দাম দৌড়নো একজন সাধারণ মানুষ। এ যেন প্রতীক মধ্যবিত্ত সাধারণ বাঙালি জীবনের। আবার প্রাণ যেতে পারে, তবু অফিসের টাকা ভরা ব্যাগটা কিছুতেই হাতছাড়া করবে না সে। একি শুধুই কর্তব্যবোধে? নাকি ওই ব্যাগটাই আসলে নিরাপত্তা– চাকরির, কোনওক্রমে বেঁচে থাকার?
’৬৮ থেকে ’৮৬– অসীম রায়ের গল্প তুলে ধরেছে বাঙালি মধ্যবিত্তের নিরন্তর বদলে যাওয়া। আপাত নিরাপত্তার অলীক আশ্বাসে তার ডুবে থাকার কথা। আবার সেই গল্পই বারবার ভেঙে চুরমার করে নস্যাৎ করে দিয়েছে তার বেঁচে সেই মিথ্যে কুহক। তাকে দাঁড় করিয়েছে আয়নার সামনে। তার প্রকৃত আত্মোপলব্ধিতে। তাঁর গল্প আসলে তার সময়কেই দেখে যাওয়া। সময়ের আস্ত একটা দলিল। সময়ের রিপোর্টাজ।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জীবনের অর্থহীন বেঁচে থাকাকেই বারবার ধরেছেন তিনি। কোনও তত্ত্বকথার অলীক আলোয় নয়। শ্লেষের তীব্র কষাঘাতেও নয়। মানুষকে গৌরবান্বিত করার হাততালি কুড়নো চটকবাজিতেও নয়। নিরাসক্ত দার্শনিকের মতো, জীবনের অর্থহীনতাকে দেখে যাওয়া স্বকীয় উপলব্ধির প্রজ্ঞায়।
……………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………