Robbar

শরীর শরীর, তোমার মন নেই, মণিকর্ণিকা আছে

Published by: Robbar Digital
  • Posted:October 20, 2025 6:55 pm
  • Updated:October 21, 2025 5:58 pm  

মণিকর্ণিকা নিয়ে দু’চার কথা। মানুষ পুড়ে যাওয়ার তাপ, হাওয়ার কোপ। একজন-দু’জন নয়। একসঙ্গে অনেকে। এলোমেলো এদিক-সেদিক পড়ে আছে জীবনে ব্যবহার করা ‘জরুরি’, হয়তো বা অতিপ্রিয় বস্তুটি। তাকে এই বেলায়-অবেলা-কালবেলায় ছেড়ে যেতে হল। মন পুরোপুরি পুড়ে যাওয়ার পর, এখন শরীরের পালা। এই যে আগুন, বিদায় জানাচ্ছে, দু’হাত নেড়ে। জানাচ্ছে, সদা আনন্দে থাকো।      

সম্বিত বসু

গাছেরা তিরতির করে কাঁপছে। আরও দূরে কাঁপছে একটি ব্রিজ। কাঁপছে গঙ্গার ওপর ভাসমান নৌকাসংসদ। দু’-একজন দেশি-বিদেশি। এক অবিচল উদাসীন ‘ধম্মের’ ষাঁড়, শিঙে কেউ গেরুয়া ছুটকো কাপড় বেঁধে রেখেছে। দেওয়ালে লেখা দেবনাগরী হরফে ‘মণিকর্ণিকা ঘাট’– সে লেখাটাও কাঁপছে। এইসব কাঁপছে, কারণ আগুনের শিখার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। বোঝার চেষ্টা করছি, পৃথিবীর অন্যতম পুরনো জীবিত শহর মৃতের শোক কীভাবে গ্রহণ করে, বা করে না। চিতাকাঠের ডাকে, সাড়া দিয়ে এখন অনেকেই এখানে। পুড়ছে শরীর। হাড়মাংসের ইতিহাস-ভূগোল পুড়ে যাচ্ছে। ওই যে বাঁশের বড় চিমটে, তা দিয়ে একটু আগে, এক মৃতর অবশেষ নাভিকুণ্ড তুলে গঙ্গায় ফেলে দিলেন পুরোহিত। সে জলের দিকে তাকিয়ে রইল প্রিয়জন। জল যতক্ষণ না স্থির হচ্ছে। যদি ভেসে ওঠে নাভি? এমনও কি ভাবে কেউ কেউ? সেই পুরোহিত যদিও পাশের চিতাকাঠ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আবার। নাভির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। হাতে মন্ত্রলেখা বই, গঙ্গাজলের ঘটি। পরনে ঘিয়েরঙা ধুতি। গায়ে কৃষ্ণনাম লেখা হলুদ চাদর। গত মৃতদেহর সামনে তিনি যেরকম ভাবলেশহীন, এই নতুন মৃতদেহর ক্ষেত্রেও তাই। শরীর শরীর, তোমার মন নেই। মণিকর্ণিকা আছে।

মণিকর্ণিকা ঘাট। সূত্র: ইন্টারনেট

এরা কারা? নাম-পরিচয় কী? কী করতেন জীবনে? বেনারসেই থাকতেন? নাকি জীবনের শেষ ক’টা দিন এখানে? কাশী থেকে সরাসরি স্বর্গলাভের আশায়? মুক্তি ভবনে ছিলেন? তারপর? নিরুদ্দেশ সম্পর্কে এষণার মন জেগে ওঠে। বেনারস ঘুরতে ঘুরতে, গলিগলতা পেরিয়ে এই যে এসে পড়লাম এই গঙ্গাপাড়ে, মণিকর্ণিকায়– এখন মৃত মানুষের শ্মশানবন্ধু আমি। একা, কিন্তু ফুরিয়ে যাচ্ছে যে মানুষ, তার ফুরিয়ে যাওয়ার বন্ধু। মুহূর্তের এই আত্মীয়তা, এই পোড়ো ধোঁয়ার জড়িয়ে ধরা, আমি কোথায় রাখব সারাজীবন? সারাজীবন যত বড়, সারামৃত্যু কি তার থেকেও বড়? মৃত্যুর বয়স কি বাড়তে বাড়তে পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত যায়? এইসব প্রশ্ন ঘাই মারতে থাকে মনে। দু’-চারটে কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঘাটের শেষ সিঁড়িতে। আঁচড়ে দেখছে শ্মশানের আবর্জনা। তারপর কী একখানা মুখে করে, দৌড় লাগাল। মানুষেরই কোনও না পোড়া অংশ কি? এতদিন জীব ছিলাম, এখন হলাম প্রত্নজীব। ‘গ্রহণ করো আমাকে শুভ মাটি/গ্রহণ করো, গ্রহণ করো শুভ/ ধাতুরা, শুভ আগুন, শুভ ছাই।’

মুক্তি ভবন। মৃত্যুর আগে এখানে ‘শেষ ঠাঁই’

এদিকে শরীর পুড়ছে, আর মাঝে মাঝে কাঠের খোঁচা। এক চিলতে আগুন বিড়বিড় করে খিস্তি করছে যেন। আগুনের ফাঁকিবাজি ডোমের সহ্য হয় না। সে তো কাঠবালিশে শুইয়ে দিয়েছে মাথা, পরিবারের একজন ঘি-টি মাখিয়ে দিয়ে গিয়েছে দিব্যি, পুরোহিত মন্ত্র পড়েছে, ‘হর হর মহাদেব’ বলে পাত পেড়ে দিয়েছে– তবে? তবুও আগুন খাবে না কেন শরীর? শরীর যখন বলছেই, ‘ও চিরপ্রণম্য অগ্নি, আমাকে পোড়াও’, তারপরও? এইসব দৃশ্যে, ঠোঁটে দীর্ঘক্ষণ যতিচিহ্ন। চোখের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় পলকের। চোখ যতদূর যায়, সেই প্রান্তরেখায় বিষণ্ণতার সঙ্গে উদাসীনতার দেখা হয়। তখনই স্বীকার করে নেওয়া এই জীবনের শেষ সত্যকে। মনে তখন কোনও ক্লান্তি নেই, ক্লেদ নেই, হিংসা নেই। সদা থাকো আনন্দে– গানখানা মাথায় হেঁটে বেড়ায়। কুণ্ডর কাছে, এক অঘোরি বাবা, কাঁধের ঝোলায় উঁকি মারছে নরমুণ্ড। এখন চুপ। একটু আগেই, ছাই মেখে নিয়েছেন হাতে-পায়ে, আবারও। ধূসরতা। যেখানে যেখানে চলে যায় এই রং, আবার ফিরে আসে তার শরীরে। মৃত্যুর প্রিয় রং কি ধূসর? ভাস্কর চক্রবর্তীর ডায়েরির দুটো এন্ট্রি মনে পড়ে যায় হঠাৎ! ‘জীবন: তুমি পুড়ছ আর জানতে পারছ কিছু কিছু। মৃত্যু: তুমি পুড়ছ আর জানতে পারছ না কিছুই।’

অপুর বাবা হরিহরের মৃত্যুর পর পায়রার উড়ান। বেনারস। ‘অপরাজিত’ ছবির দৃশ্য

ভ্রাম্যমাণ চা। দুধ-লিকার-লেবু। পরিবার-পরিজনের পাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কখনও সখনও সে অর্ডার পাচ্ছে। চায়ের স্বাদ কেমন, কেউ বলতে পারে না এখন। বলতে পারে না, লেবু চায়ে আরেকটু মশলা হলে ভালো হত। শুধুই সময় কাটিয়ে যাওয়া। প্রায় সাড়ে ৩-৪ ঘণ্টার দীর্ঘশ্বাস। তবু, এ তেমন চিৎকৃত কান্না নয়। শান্ত এক বিরহদহন। ইতিউতি বিশ্বাসের স্তব: মোক্ষ মিল গ্যায়া। মাথার ওপর তখন সাদা-কালো পায়রার সারি, একজোটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘অপরাজিত’ ছবিতে অপুর বাবা যখন প্রয়াত হচ্ছেন, তখন বেনারসের ঘাট থেকে বহু পায়রার দল একসঙ্গে উড়ে, প্রায় ক্যামেরার আকাশ কালো করে দিচ্ছে। ‌‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর শুরুতেও অবশ্য পায়রারা ছায়া ফেলেছিল সত্যজিৎ রায়ের ক্যালিগ্রাফির ওপর। কিন্তু এখন তার থেকেও বেশি করে মনে পড়ছে, এই ছবির ক্রেডিট অংশের নেপথ্যে থাকা কাশীর মানচিত্রর কথা। যেখানে গোটা বেনারসের নানা উপাদান মিলে তৈরি হয়েছে আস্ত ছবিখানা। সে ছবির একেবারে মাঝখানে মণিকর্ণিকা ঘাট। জ্বলছে চিতা। একটি মৃতদেহও শোয়ানো রয়েছে পাশে।

‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ ছবির শুরুতে ব্যবহার করা কাশীর ম্যাপ

সেবার গিয়েছিলাম দোলের দিন। তাই বাতাসে আবিরের ওড়াওড়ি। মানমন্দির পেরিয়ে কচৌরি গলিতে প্রথমেই। তারপর শ্রীরামভাণ্ডারের ও সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে স্বাদবদল। ভাং মেশানো মিষ্টি এক টুকরো, বিনামূল্যে, প্রত্যুত্তরে হাসি বিনিময়। ব্লু লস্যি শপের সরু গলির পাশ দিয়ে এক রঙিন মৃতদেহ চলে গেল। শুধুই ফুল-মালা নয়। সাদা-কমলা-বেগুনি বেলুন লাগানো তারই সঙ্গে। হাঁটতে হাঁটতে ঘাটে পৌঁছে দেখি সিঁড়িও হলুদ-গোলাপি। কিছুক্ষণ আগেই নাকি খেলা হয়ে গিয়েছে অঘোরিদের– শ্মশানের ছাই নিয়ে হোলি। সঙ্গে ডুগডুগি বাজিয়ে নাচ! কেউ কেউ বাঘছাল পরা। এদের মধ্যে এসে পড়েছে পাঁড় বেনারসের আলগা কিছু লোকজন। কখনও নানারকম মুখোশ পরে ছেলেপুলের দল, পিছনে পিছনে, নাচে-গানে হাত-পা মেলাতে মেলাতে। এসেছি খানিক পরে, আধ-বিকেলে। মণিকর্ণিকায় দাঁড়িয়ে এই সমস্ত খবরই উড়ছে। কিছুই ‘ব্রেকিং’ নয়। কিছুই নতুন নয়। অতি পুরাতন সব। এক বালক লাফিয়ে লাফিয়ে চিতার পাশ দিয়ে দিয়ে প্রজাপতির মতো ঘুরে ঘুরে ঘাট থেকে নৌকায় লাফ। তারপর আরেক নৌকায়। তারপর আরও এক। সেই শেষ নৌকা থেকে, বের করে আনে প্রদীপ। দৌড়য় দশাশ্বমেধের দিকে। বেচলে, কিছু আয় হবে তার। মনটা, সেই বালককে দেখে হঠাৎ জীবনের দিকে ঘুরে যায়।

মণিকর্ণিকা ঘাট। ১৮৮০। সূত্র: ইন্টারনেট

নীরজ ঘেওয়ানের ‘মসান’। দুষ্যন্ত কুমারের লেখা ওই অসামান্য গান ‘তু কিসি রেল সি গুজরতি হ্যায়/ ম্যায় কিসি পুল সা থরথরাতা হুঁ’। মণিকর্ণিকার প্রসঙ্গ এলে এ গান ভাসতে ভাসতে না এসে পারে! প্রেমিক পেশায় ডোম। পেশা লুকিয়ে রেখেছিল প্রেমিকার কাছে। পরে জানিয়েছিল, এইখানে, এইভাবেই সে বড় হয়ে উঠেছে। এই তার কাজ– কাঠ বয়ে আনা, বডি ঠিক করে পুড়ছে কি না, সেসব তদ্বির করা। ছবিতে দেখা যায়, মণিকর্ণিকায় এ ছবির প্রেমও পুড়ে যায়। প্রেমিকের দীর্ঘকালের এই যে মড়া পোড়ানোর কাজ, তাতে কোনও মন ছিল না, ভয় ছিল না। শরীরটুকু ছিল। দিনগত পাপক্ষয়। কিন্তু একদিন একটি শরীর পুড়ে যাওয়ার পর সে চিনতে পারে অক্ষত এক আংটিকে। প্রেমিকার। পুরাণের কানের অলংকার পড়ে গিয়ে যে ঘাটের ‘মণিকর্ণিকা’ নামমাহাত্ম্য– মাসান-এ সেই অলংকার হয়ে উঠল হাতের আংটি।‌ ‘মাসান’ ছবির লোগোও তো মণিকর্ণিকাকে কেন্দ্র করেই। ‘MASAAN’-এর ‘M’ বাদ দিয়ে পুরো অংশটিতেই আগুন ধরে গিয়েছে। চিড়চিড় করে সেই আগুন উড়ছে এদিক-সেদিক। শ্মশান আর মসানের দূরত্ব কতটুকু আর?

‘মসান’ ছবির লোগো

ঘাটের কাছেই একটা ছোট্ট গুমটি। ছবি তোলার দোকান। দিঘা-মন্দারমণি সমুদ্রের ধারে ১০ মিনিটে ছবি হাতে-নাতে– প্রযুক্তিটা সেরকমই, কিন্তু বেনারসের এই গুমটির মালিক কাম ফোটোগ্রাফার শুধুই মৃত্যুর ছবি তোলে। শেষযাত্রার ছবি। শেষবার, মালা পরানো মৃতের মুখের ছবি। বা পায়ের। ৪/৬, ৫/৭, ৬/৮– এই তিনরকম সাইজ। প্রিন্ট করে দেওয়া হয়। ছেলেটির বাবা পেশায় নাপিত। কিন্তু কী করে যেন ছেলেটি হয়ে উঠেছিল এমন ক্যামেরাপ্রাণ! কিন্তু সময় বদলাতে থাকে। ফোনেই এখন ছবি তোলা হয়। সময় বদলাতে থাকে দ্রুত। কী কাজ করবে এখন সে? বাবার মৃত্যুর পর, যখন মুখাগ্নি করছে ঘাটে, লক্ষ করে এক বিদেশি ফোটোগ্রাফার তার ছবি তুলছে। পরে, আলাপ করে জানতে পারে, সে-ও এক ডেথ ফোটোগ্রাফারই– তবে শুধু শ্মশানের নয়। পৃথিবীজোড়া যে নরক, যে মৃত্যু, যে যুদ্ধের ফলশ্রুতি, মানুষের নীরব বিয়োজন– সে বড়মাপের শ্মশানের ছবি তুলে রাখে সে। ছবির শেষে দেখা যায়, দিল্লির এক প্রদর্শশালায় একটি ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আমাদের দেশি চিত্রগ্রাহক। দেখে, অনেক ছবির ভিড়ে, একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে সে, তার বাবার মুখাগ্নি করছে। এ-ও এক সিনেমারই কথা। ছবির নাম ‘বারাহ বাই বারাহ’– ১২ ইঞ্চি বাই ১২ ইঞ্চি। পরিচালক গৌরব মদন।

‘বারাহ বাই বারাহ’ ছবির একটি দৃশ্য

‘এসো’। ছোট্ট একটা কবিতার বই। সদ্য যখন লিখতে এসেছি, এদিক-ওদিক থেকে শুনতে পাই এই বইয়ের কথা। দামও খুব সামান্য। বইয়ের কবিতা সংখ্যা ১৫। কিন্তু এইটুকু ‘এসো’ ডাকে, বুঁদ হয়ে গিয়েছে আমার কবিতাপাগল বন্ধুরা। কিনেছিলাম সে বই। কেনার পর, টের পাই, এই ডাক আসলে শ্মশানের। কবিতাগুলোয় জড়িয়ে আছে শ্মশানের ধুলো, মৃত্যুসংবাদ, জীবন, নেশা ও বন্ধুত্ব। কবির নাম অনির্বাণ দাস। দুটো কবিতা রইল এখানে–

চিতা ভস্ম ঘেঁটে
নাভিকুণ্ড।

সিগারেট শেষে
ফিল্টার।

যত্ন ক’রে ফের ঘরে নিয়ে গেলেও কিছু না
আর পথের ধারে ফেলে ছুড়ে দিয়ে গেলেও
শ্মশান মানে এই।

জীবন মানেও…

….

আরেকটি কবিতা–

বেলা প’ড়ে এলো। কুয়াশা-অন্ধকার নেমে আসছে শুনশান
মাঠঘাট আর এই ভাঙা পথে। ইটের ধুলো উড়িয়ে এই সাঁঝ
বেলায় ঘরের পথে একদল গাই বাছুর, ভেড়া, ছাগল আর
কোলে কাঁখে রোগা ন্যাংটো দুটো একটা সিকনি নাকে বাচ্চা
নিয়ে নেমে আসছে আমাদের শ্মশানকালী

মণিকর্ণিকা নয়, শিবপুর শ্মশান লাগোয়া এক দোকান থেকে মাঝেসাঝে তাওয়া রুটি আর ডিমভাজা খেতাম আমি ও আমার এক বন্ধু-ভাই– সুপ্রিয়। সুপ্রিয় বাঁশি বাজিয়েছিল শিবপুর শ্মশানে, এক শীতকালের রাতে। এক ভবঘুরে, সেদিন ওঁর বাঁশির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মৈথিলী ভাষায় গান গেয়েছিল। সিগারেট চেয়ে, একটান দিয়েই ফেলে দিয়েছিল তা। আর আমাদের পিছু পিছু হেঁটেছিল অনেক। জীবনের যেটুকু পুড়ে যাচ্ছিল, হয়তো শ্মশানে জমা রাখতে গিয়েছিলাম আমরা। আর সেই ভবঘুরে আমাদের শ্মশানবন্ধু ছিল নিশ্চিত।