ছায়াহীন দিবসের কথা ইতিহাসে প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়, খ্রিস্টজন্মের দুশো বছরেরও বেশি আগে। পৃথিবী যে গোল, তা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিসে প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত পিথাগোরাস। গ্রিক বিজ্ঞানী এরাটোস্থেনিস খুব জরুরি একটা কাজ ছায়াহীন দিবসে করেছিলেন, তা হল তিনিই প্রথম পৃথিবীর পরিধি মেপেছিলেন।
ছোটবেলায় ভূতের গল্পে কায়াহীনদের খুঁজে পেতাম, ইদানীং নতুন শব্দ শিখেছি– ছায়াহীন। কায়াহীন হওয়া খুব ভালো নয়, তবে অনুমান করি, এই লেখা যাঁরা পড়ছেন তাঁদের অনেকেই কর্কটক্রান্তি এবং মকরক্রান্তি রেখার মধ্যের অঞ্চলে বাস করেন; ইচ্ছা করলেই তাঁরা বছরের মধ্যে দুইদিন ছায়াহীন হতে পারবেন। কাজটা শক্ত নয়, শুধু ঠিক দুপুরবেলা খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়াতে হবে। তবে ছায়া হারিয়ে গিয়েছে বলে চিন্তিত হবেন না, শুধু একটু লাফ দিলেই তাকে আপনার পায়ের নিচে দেখতে পাবেন। এই বিশেষ দিনটিকে বলে জিরো শ্যাডো ডে বা ছায়াহীন দিবস।
এতক্ষণে সবাই বুঝতে পেরেছেন, আকাশে সূর্য আপাতচলনের মাধ্যমে যদি ঠিক মাথার উপর আসে, তখন তার কিরণ লম্বভাবে পড়ে। তাই কোনও মানুষ তার নিচে দাঁড়ালে তার ছায়া দেহের বাইরে বেরয় না, তাই দেখা যায় না। যে দিন এই ঘটনা ঘটে, সেই দিনকে আমরা ছায়াহীন দিবস বলি।
বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা দিনে ছায়াহীন দিবস হতে পারে। কোপারনিকাসের সময় থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। তবে পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষটা সেই প্রদক্ষিণ তলের সঙ্গে মোটামুটি সাড়ে তেইশ ডিগ্রি কোণ করে থাকে বলে প্রতিদিন মধ্যাহ্নের সূর্যকে আকাশে একই জায়গায় দেখা যায় না। সূর্য লম্বভাবে কর্কটক্রান্তি রেখার উপর আলো দেয় কর্কট সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ ২০ বা ২১ জুন; ঠিক তেমনি মকর সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ ২১ বা ২২ ডিসেম্বর দেয় মকরক্রান্তি রেখার উপর। (অবশ্য আমরা এখন মকরসংক্রান্তি পালন করি ১৪ বা ১৫ জানুয়ারি, তার কারণ আমাদের দেশের পঞ্জিকাতে অয়নচলনের বিষয়টা ধরা হয়নি; আমাদের পঞ্জিকা সৌর বছর নয়, নাক্ষত্র বছর মেনে চলে। নাক্ষত্র বছরের সময়কাল সৌর বছরের থেকে সামান্য বেশি, ফলে আমাদের পঞ্জিকাতে সংক্রান্তি ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে সে অন্য আলোচনা।) কাজেই এই দুই রেখার মধ্যে যারা বাস করি, উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সময় বছরে দু’দিন সূর্য দুপুরবেলা ঠিক আমাদের মাথার উপরে থাকে। যেমন, কলকাতার অক্ষাংশে এই বছর ছায়াহীন দিবস হবে ৫ জুন ও ৮ জুলাই; সেই দু’দিন ঠিক দুপুরবেলা আপনি আপনার ছায়াকে ঝেড়ে ফেলতেই পারেন। তবে ঘড়িতে কখন ১২টা বাজবে সেই হিসেব করে ঘর থেকে বের হলে কিন্তু ঠকবেন, কারণ আপনার ঘড়ি খুব সম্ভবত ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম মেনে চলে, যেটা হল এলাহাবাদের স্থানীয় সময়। সুতরাং, আপনার ঘড়িতে যখন দুপুর ১২টা, তখন সূর্য এলাহাবাদের উপর লম্বভাবে থাকে। ৫ জুন কলকাতায় ছায়াকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন ঠিক ১১.৩৫ মিনিটে। কলকাতায় না থাকলেও অসুবিধা নেই, এই সমস্ত হিসেব অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির ওয়েবসাইট– https://astron-soc.in/outreach/activities/zero-shadow-day/ থেকে নেওয়া। আপনি সেই সাইট থেকে আপনার এলাকার ‘ছায়াহীন দিবস’-এর খবর দেখে নিতেই পারেন।
এবার একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। ছায়াহীন দিবসের কথা ইতিহাসে প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়, খ্রিস্টজন্মের দুশো বছরেরও বেশি আগে। পৃথিবী যে গোল, তা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিসে প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত পিথাগোরাস। গ্রিক বিজ্ঞানী এরাটোস্থেনিস খুব জরুরি একটা কাজ ছায়াহীন দিবসে করেছিলেন, তা হল তিনিই প্রথম পৃথিবীর পরিধি মেপেছিলেন। তিনি থাকতেন আলেকজান্দ্রিয়াতে, আলেকজান্ডার প্রতিষ্ঠিত মিশরের সেই শহর সেই যুগে ছিল গ্রিক জ্ঞানবিজ্ঞানের কেন্দ্র। এরাটোস্থেনিস জানতেন, সিয়েন শহরে বছরের এক বিশেষ দিন ছায়াহীন দিবস, অর্থাৎ মধ্যাহ্নে সূর্য সিয়েন-এর উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। আলেকজান্দ্রিয়া সিয়েনের উত্তরদিকে, সেখানে সেই দিন দুপুরবেলা একটা লাঠি সোজা দাঁড় করালেও তার ছায়া দেখা যায়। এরাটোস্থেনিস সেই ছায়ার কোণ মেপে বের করলেন সেই দিন সূর্য আলেকজান্দ্রিয়ার উপর লম্ব দিকের সঙ্গে ৭.২ ডিগ্রি কোণ করে আছে। পায়ে হেঁটে সিয়েন ও আলেকজান্দ্রিয়ার দূরত্ব মেপে পাওয়া গেল ৫,০০০ স্টেডিয়া। (স্টেডিয়ন হল প্রাচীন গ্রিসে ব্যবহৃত দৈর্ঘ্যের একক, বহুবচনে স্টেডিয়া; স্টেডিয়াম কথাটা তার থেকেই এসেছে।)
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
কলকাতার অক্ষাংশে এই বছর ছায়াহীন দিবস হবে ৫ জুন ও ৮ জুলাই; সেই দু’দিন ঠিক দুপুরবেলা আপনি আপনার ছায়াকে ঝেড়ে ফেলতেই পারেন। তবে ঘড়িতে কখন ১২টা বাজবে সেই হিসেব করে ঘর থেকে বের হলে কিন্তু ঠকবেন, কারণ আপনার ঘড়ি খুব সম্ভবত ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম মেনে চলে, যেটা হল এলাহাবাদের স্থানীয় সময়। সুতরাং, আপনার ঘড়িতে যখন দুপুর ১২টা, তখন সূর্য এলাহাবাদের উপর লম্বভাবে থাকে। ৫ জুন কলকাতায় ছায়াকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন ঠিক ১১.৩৫ মিনিটে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
এরাটোস্থেনিস জানতেন, কোনও বিন্দুর চারদিকে মোট ৩৬০ ডিগ্রি কোণ হয়। তাহলে, পৃথিবীর পরিধি = ৫,০০০´ ৩৬০/৭.২ = ২৫০,০০০ স্টেডিয়া। এরাটোস্থেনেসের লেখা মূল বইটি পাওয়া যায়নি, কিন্তু পরবর্তীকালে জ্যোতির্বিদদের লেখাতে তার বিবরণ পাওয়া যায়। এই হিসেব আছে ক্লিওমেডেসের লেখাতে, স্ট্রাবো লিখেছেন যে, এরাটোস্থেনিস পরিধি মেপে পেয়েছিলেন ২,৫২,০০০ স্টেডিয়া। এঁরা দুজনেই এরাটোস্থেনিসের দুই শতাব্দী পরের মানুষ।
পাঠক নিশ্চয় বিরক্ত হয়ে ভাবছেন স্টেডিয়ন কেন, মাইল বা কিলোমিটারে বললেই তো হত। এক স্টেডিয়ন হল ছ’শো ফুট, কিন্তু সমস্যা হল প্রাচীন গ্রিসে বিভিন্ন শহরে ফুটের মাপ আলাদা আলাদা হত। প্রথম শতাব্দীর বিখ্যাত বিশ্বকোষ ‘ন্যাচারালিস হিস্টরিয়া’-তে তার লেখক প্লিনি দ্য এল্ডার (অর্থাৎ বড় প্লিনি, একজন ছোট প্লিনিও ছিলেন, তিনি বড় প্লিনির ভাগনে) এরাটোস্থেনিসের স্টেডিয়নের সঙ্গে মিশরে সেই সময় প্রচলিত মাপের সম্পর্ক দিয়েছিলেন। তার থেকে হিসেব করে পাই, এক স্টেডিয়ন = ১৫৭.৫ মিটার। স্ট্রাবোর দেওয়া পরিধির মাপকে কিলোমিটারে লিখলে হয় ৩৯,৬৯০ কিলোমিটার। উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর পৃথিবীর পরিধি হল ৪০,০০৮ কিলোমিটার, মানে এরাটোস্থেনিসের মাপে ভুল ছিল এক শতাংশেরও কম! ক্লিওমেডেসের হিসেব নিলেও ত্রুটি দুই শতাংশের কম থাকবে। সে যুগের হিসেবে এই মাপকে খুবই নিখুঁত বলতে হবে। সুতরাং, বিজ্ঞানের ইতিহাসে ছায়াহীন দিবসের তাৎপর্য কম নয়।
ক্রিকেট তো আসলে জীবনের কথাই বলে। যে জীবন লড়তে জানে। লড়ে জিততে জানে। এমন লড়াইয়ের মঞ্চে কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ মেলবন্ধন– এমনটাই তো চেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। চেয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। কৈশোরের স্বপ্নের মাঠে সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে পরিণত করলেন বাভুমা।
বসন্তপঞ্চমীর প্রথম পর্ব ছিল বসন্ত চৌধুরীর পোশাকআশাক নিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে, তাঁর বাড়ির পোষ্য জীবজন্তু। কখনও পপি নামের আহ্লাদী কুকুর, কখনও-বা রোজি নামের কচ্ছপ। দুম করে অন্দরমহলে ঢুকে পড়া বিদেশি একটি বিড়াল, অথচ যার ততটা বিড়ালপ্রেম নেই– এহেন বসন্ত চৌধুরীরও একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।