এমন কথা আগে শুনিনি। বুঝি অনেককাল ধরে শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিল আমার ‘মন’। আমার সুরের দেবতা কিংবা প্রেমিক আমার সামনে দেখা দিয়েছেন। তাঁকে ভালোবাসাই আমার ধর্ম। কবীরের কাছে গান শেখার জন্য কোনও পরীক্ষা (চলতি ভাষায় ‘অডিশন’) দিতে হয় না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক হোমো সেপিয়েন্স হলেই চলবে (যদিও আমার বিশ্বাস যাঁরা হোমো সেপিয়েন্স নন, কবীর তাঁদেরও গান শেখানোর ক্ষমতা রাখেন। অন্য কোনও ফ্রিকুয়েন্সিতে কিছু একটা করবেনই করবেন। পাথরও মাথা দুলিয়ে উঠতে পারে তাঁর গানের ক্লাসে, অনুসন্ধানহীন জড় মানবহৃদয়ের চেয়ে বড় পাথর আর কী-বা আছে!)।
যৌথ পরিবারে বাড়ির বাথরুমে গান গাইলেও প্যাক খেতে হত। এমনই প্রতিভা নিয়ে জন্মেছি আমি। যাকে বলে ‘গানের গলা’– তার ধারে-কাছেও আমার কিছু নেই। গলায় সুর, গায়কি ইত্যাদি-প্রভৃতি আর যা যা কিছু হয়– নেই, নেই, নেই। গান গাইতে গেলে থেমে যাওয়াই শ্রোতার কাছে সবচেয়ে বড় নিষ্পত্তি। গান শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল ছোটবেলায় একবার, সম্ভবত আমি নিজেই শিখতে চেয়েছিলাম, যখন ক্লাস ফোরে পড়ি। যিনি শেখাতে আসতেন তিনি সম্পর্কে আমার ছোটমামা। যথার্থই সহজ-সরল সেই মানুষটি আমায় গান শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন মাস ছয়েক। কিন্তু নিরন্তর ‘সা-সা-গা-গা-মা-মা-পা-পা’র ভিড়ে ‘গান কোথায়’, তা নিয়ে আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি। একসময় বিদ্রোহ শুরু করি। আমায় ‘গান’ শেখাতে হবে। অবশেষে গান এল, ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর/ তুমি তাই এসেছ নীচে/ আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর/ তোমার প্রেম হত যে মিছে।’ সেইদিন আমার বিদ্রোহ বেয়াদপিতে পরিণত হয়। এতই অপছন্দ হয় গানটা আমার যে আমি হাত-পা ছুঁড়ে কান্নাকাটি, চেঁচামেচি জুড়ে দিই, সর্বোপরি গানের খাতায় (ডায়েরিতে) একটা লাল কালির পেন দিয়ে গানটা বার বার কেটে দিই। আমার মাটির মানুষ শিক্ষক নীরবে বিদায় নেন। আমার গান শেখার পর্ব মোটের ওপর মিটে যায়।
জারি থাকে আমার গান শোনার প্রতি আকর্ষণ। ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে টেপ-রেকর্ডারে যেসব গান চলত তার বেশিরভাগ আমার তেমন পছন্দসই ছিল না। বড় হওয়ার পথে বন্ধুদের সহায়তায় আমি খুঁজে পেতে শুরু করি আমার পছন্দের গান, যার মূলে ছিল ‘সুমনের গান’। সেই সময়টা ছিল ক্যাসেটের। সবচেয়ে প্রিয় গানগুলো ফরোয়ার্ড বা রিওয়াইন্ড করে বার বার শুনতে শুনতে ক্যাসেটের টেপের সেই অংশটা ঘষটা খেয়ে খেয়ে সাদা হয়ে যেত, ভালোবাসার চিহ্ন নিয়ে। কলেজে উঠে আমার প্রিয়তম শিল্পীর অনুষ্ঠানে যাওয়া শুরু হলে খুঁজে পাই আমার ভালোলাগার আরও অনেক গান। যাঁরা শুনেছেন তাঁরা জানেন কবীরের একক অনুষ্ঠানে তাঁর নিজের গান ছাড়াও থাকে আরও অনেক গানের ভাণ্ডার। কবীরের এককেই আমি প্রথম শুনেছিলাম দিলীপ কুমার রায়ের গান ‘যদি দিয়েছ দিয়েছ দিয়েছ বঁধুয়া।’ দিলীপ কুমার রায়ের গানের একটা সিডি জোগাড় করেছিলাম তারপর, শেয়ালদা ফ্লাইওভারের নীচে ‘মডার্ন’ থেকে। ছাদের পাশে আমার আড়াইতলার ঘরের আবহাওয়া জুড়ে কতদিন কতবার বেজেছিল সেই সিডি। কবীরের কাছে একে একে শুনি বাণী ঘোষালের গাওয়া ‘তুমি সেই তুমি’, ইলা বসুর ‘এত কাছে পেয়েছি তোমায়’, দিলীপ সরকারের সুর ‘কোন দূর বনের পাখি’, অলোকনাথ দে-র সুরে ‘দূরে ওই পিয়াল শাখে লাগল যে দোল’, গায়ত্রী বসুর গাওয়া ‘এই ফাল্গুন হোক অবসান’ [একটি বিরল, হয়তো-বা প্রথম মহিলাকণ্ঠের বাংলা গান যার শুরুতে একটি পুরুষকণ্ঠের (শ্যামল মিত্র) হামিং আছে]। শুনি চেনা শিল্পীদের অচেনা গান– নির্মলা মিশ্রর ‘চেয়ে বসে থাকি’ কিংবা শ্যামল মিত্রের ‘আমার এই বেভুল প্রাণের সঙ্গোপনে’। শুনি কবীরের গলায় চেনা গানের অচেনা অবয়ব, ছোটবেলা থেকে অজস্রবার শোনা গান তাঁর গলায় শুনে মনে হয় বাপের জন্মে এই গান শুনিনি– যেমন চিরপরিচিত ‘তোমার হল শুরু, আমার হল সারা’। বাড়তে থাকে আমার গান শোনার পরিধি। সুর-তাল-ছন্দ-লয়ে-গায়কিতে নেচে ওঠে আমার মন। নতুন নতুন বন্ধু এসেছেন জীবনে, কখনও তাঁরাও নিয়ে এসেছেন নতুন নতুন গান। কিন্তু আমার সেই জন্মগত প্রতিভা। যাকে বলে ‘গানের গলা’ বা ‘গলায় সুর’– কোনওটাই আমার নেই। বাড়ির বাথরুমে গান গাইলেও…
এহেন আমার বয়স যখন ৩৪, আমি যোগ দিই কবীরের সুমনের গানের ক্লাসে। নেহাতই ভাগ্যক্রমে তার কয়েক বছর আগে আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় ঘটে তাঁর। কবীর বলেন, ‘গলা যদি নাই-বা থাকে তাহলে যা দিয়ে গাওয়া যায় তা হল ‘মন’। আমি গান গাইছি, তুমি তোমার মনটা দিয়ে গানটার ওপরে সওয়ার করো। একটা বয়সে এসে (১৪/১৫) প্রতিটা মানুষের গান গাওয়ার অধিকার জন্মায়। সে-গান হেমন্ত মুখুজ্জে বা লতা মঙ্গেশকরের মতো হবে না হয়তো। হয়তো আদৌ কাউকে শোনানোর মতো হবে না সেই গান। কিন্তু তা গেয়ে মানুষ আনন্দ পাবে।’ এমন কথা আগে শুনিনি। বুঝি অনেককাল ধরে শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিল আমার ‘মন’। আমার সুরের দেবতা কিংবা প্রেমিক আমার সামনে দেখা দিয়েছেন। তাঁকে ভালোবাসাই আমার ধর্ম। কবীরের কাছে গান শেখার জন্য কোনও পরীক্ষা (চলতি ভাষায় ‘অডিশন’) দিতে হয় না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক হোমো সেপিয়েন্স হলেই চলবে (যদিও আমার বিশ্বাস যাঁরা হোমো সেপিয়েন্স নন, কবীর তাঁদেরও গান শেখানোর ক্ষমতা রাখেন। অন্য কোনও ফ্রিকুয়েন্সিতে কিছু একটা করবেনই করবেন। পাথরও মাথা দুলিয়ে উঠতে পারে তাঁর গানের ক্লাসে, অনুসন্ধানহীন জড় মানবহৃদয়ের চেয়ে বড় পাথর আর কী-বা আছে!)। যাঁরা শুনেছি তাঁরা জানি, ছোটদের জন্যও গান বানিয়েছেন তিনি। ছোটদের দিয়ে সেসব রেকর্ড করানোর সময়ে তাঁদের ট্রেন করেছেন।
তো যা বলছিলাম, রবিবার সকালবেলা আমরা জনা ১৫ ছাত্রছাত্রী জড়ো হই ১৯জি বৈষ্ণবঘাটা বাইলেনে তাঁর বাড়িতে। তাঁদের কারও বয়স ১৮ কিংবা ৭৫। প্রত্যেকেরই নিজস্ব পেশা, অবসর, বা কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কবীর নানারকম গান শেখান। সদ্য বানানো তাঁর নিজের গান থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আধুনিক, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ইত্যাদি ইত্যাদি। বাংলা খেয়ালের বন্দিশে দ্বিতীয় অন্তরা যোগ করে বানানো তাঁর গান এবং মনমাতানো হিন্দি গানের সুরে বাংলা কথা বসিয়ে বানানো তাঁর গান এই লিস্টে নবতম সংযোজন। যেমন রাগেশ্রীতে ‘সন্ধে মিশলে রাতের অঙ্গে/ দেখা হয়ে যাবে তোমার সঙ্গে।’ (কবীর মনে করেন খেয়াল গানের বন্দিশ যদি একটি স্ট্যান্ড-অ্যালোন গান হতে না পারে তাহলে তা মানুষের কাছে পৌঁছবে না।) যেমন ‘বোম্বে মেরি জান’-এর সুরে ‘কে কী বলল কী আসে-যায়/ আমি আছি, ভালো আছি আমাদের কোলকাতায়।’ ক্লাসের শুরুতে কবীর প্রথমে গানটি বেশ কয়েকবার গান। সচরাচর কিবোর্ড বাজিয়ে। আমরা শুনতে থাকি। তৃতীয় বা চতুর্থবার গাওয়ার সময় আমাদের গুনগুন করে গলা মেলাতে বলেন। তারপর আমরা প্রত্যেকে একসঙ্গে স্বাভাবিক স্বরে গাই। কবীর সংশোধন করতে করতে যান। সংশোধনের সময়ে আরও নানা গান এবং জীবনের নানার পরিস্থিতির রেফারেন্স দেন। বেলা পড়ে আসে। আমরা শেষে আরও এক-দু’বার গানটা গাই। একসঙ্গে। কাউকে আলাদা আলাদা করে গাইতে বলেন না। কিন্তু ওই কোরাস শুনেই উনি কারও একার বা একসঙ্গে অনেকের ভুল ধরিয়ে দেন। বাংলা খেয়ালগান শেখানোর সময়ে প্রথমে উনি রাগের রূপটা চিনিয়ে দেন। ওঁকে অনুসরণ করে আমাদের কোরাসে কিছু সরগম করতে দেন। মোটের ওপর এইভাবে গানের ক্লাসটা হয়।
কবীরের গান শেখানোর কয়েকটা লক্ষণীয় দিকের কথা এবারে বলি। যতটুকু আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়েছে। কিছু ভুল হলে আগেভাগে ক্ষমা চেয়ে রাখছি।
১। কবীর যখন কোনও একটি গান শেখান শুধুমাত্র সেই গানটাই শেখাচ্ছেন এমন নয়, সামগ্রিকভাবে গান বিষয়টাকে কীভাবে দেখব, জীবনে গ্রহণ করব, গাইব– তার একটা ধারণা দেন।
২। দরদ দিয়ে গাওয়া, আবেগ দিয়ে গাওয়া– ছোটবেলা থেকে এইসব কথাগুলো শুনে এসেছি বারবার। কিন্তু কবীর বলেন যা আবেগ তা গানের সুর-তাল-ছন্দ-লয়-ধ্বনির মধ্যেই নিহিত আছে। গায়ককে আলাদা করে আবেগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁর কাজ গানটা গাওয়া।
৩। গান গাইতে হলে গানের বাণীর অর্থ আগে বুঝতে হবে– এমন কথাও ছোট থেকে শুনেছি অনেক। কবীর আমাদের গানের বাণীর অর্থে আলাদা করে মনঃসংযোগ করতে বারণ করেন। আমাদের ভ্রম ভাঙতে মাঝে মাঝে অন্য অন্য কথা বসিয়েও গাওয়ান (কথার অর্থের আবেগে আমাদের বাঙালি-মন যাতে ভেসে না যায়)।
৪। গানের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল কীভাবে গানটা ধরতে হবে, অর্থাৎ কীভাবে গানটা শুরু করব। গান শুরু করার সময় আমরা অনেকসময় অনাবশ্যক জোর দিয়ে ফেলি, উনি বলেন বাকি অংশের মতো শুরুটাতেও গলার ওজন সমান দিতে। কখনও কখনও নতুন স্তবকের শুরুতে গলার ওজন সামান্য বাড়াতে বলেন।
৫। গান শুরু করার সময় আমরা অনেকসময় খানিক এলিয়ে শুরু করি। কবীর বারবার জোর দেন আমরা যেন স্ট্রেট নোটটা ধরি। যেমন ‘আকাশ আমায় ভরল আলোয়’ গানের শুরুতে অনেকসময় ‘আকাশ’-এর ‘আ’-এ আমরা ঢেউ খেলাই। কবীর বলেন সোজা ‘আ’ গাইতে। এই স্ট্রেট নোট লাগানোর ব্যাপারটা শুধু গানের শুরুতে নয়, গোটা গানেই প্রযোজ্য।
৬। গানের কোথাও প্রেম, ভালোবাসা, হৃদয়, বেদনা, মালা ইত্যাদি শব্দ থাকলে আমরা আবেগবশত জোরে গাই, বা কোমল করে দিই, ঢেউ খেলাই, ভেসে যাই, লয় ধীর করে ফেলি। কবীর এ-বিষয়ে আমাদের সাবধান করেন।
৭। গান, বিশেষ করে প্রেমের গান বিশেষ কাউকে (প্রেমিক, প্রেমিকা, বন্ধু) শোনাচ্ছি এই ভেবে যেন না গাই। নিজের জন্য বা নিজে নিজে গানটা যেন গাইছি।
৮। গানের কোনও অংশে যদি কাজ থাকে তবে সুবিধেমতো সেটা স্বরবর্ণের ওপরে না করে ব্যঞ্জনবর্ণের ওপরে করতে বলেন কবীর। যেমন, ‘নয়ন মেলে দেখি আমায় বাঁধন বেঁধেছে’ গানে ‘বাঁধন’ শব্দে যে কাজ আছে তা ‘ধ’-এর পরে ‘ও’-এর ওপরে না করে ‘ন’-এর ওপরে করা। আর সেই কাজটির ওপরে বেশি মনোনিবেশ করে গানের লয় কমিয়ে না ফেলে ইমিডিয়েট পরের অংশটাকে টার্গেট করা। কাজগুলো যেন অনাবশ্যক বড় না করি।
৯। স্বরবর্ণের উচ্চারণ নিয়ে বিশেষভাবে ভাবেন কবীর। ‘আ’ স্বরবর্ণটিকে যেন ছোট করে উচ্চারণ করি। ‘আকাশ আমায় ভরল আলোয়’ গান ধরার সময় ‘আকাশ’ উচ্চারণ করার আগেই যদি আমরা মুখটাকে ‘আ’ উচ্চারণ করার মতো করে খুলে দিই তাহলে ‘আ’ ছোটো করে উচ্চারিত হবে। আবার ‘এ’ স্বরবর্ণটিকে বড় করে উচ্চারণ করতে বলেন।
১০। লাইন/স্তবকের শেষ অংশের কাজ খুব বেশি কমপ্লিট করতে গিয়ে পরের লাইন/স্তবক ধরতে যেন দেরি করে না খেলি। লয়-ছন্দ বজার রেখে একটা লাইনের পরে আরেকটা লাইনে দেরি না করে ঠিক সময়ে ধরায় ওপর বিশেষ জোর দেন।
১১। তাল, ছন্দ, আর লয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন কবীর। সুর সামান্য এদিক-ওদিক হয়ে গেলেও তাল-ছন্দ-লয় যেন ভুল না হয়।
১২। গানের বাণীর অর্থকে বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও ধ্বনি আর উচ্চারণকে খুবই গুরুত্ব দেন।
১৩। তাঁর অনুষ্ঠানের মতোই কবীরের গানের ক্লাসের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিউমার। গানে প্রেম, ভালোবাসা, হৃদয় ইত্যাদি শব্দে বেশি জোর দিয়ে দিলে কবীর বলেন, ‘‘কারও সামনে গিয়ে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলে চেঁচিয়ে উঠলে সে পালাবে।’’ আমরা সবাই হেসে উঠি না, এমন খুবই কম দিন হয়।
১৪। একটা গান শিখতে গিয়ে আরও অনেক গান, সংগীত এবং মানুষের ইতিহাস, ভূগোল, জীবন, প্রেম, রাজনীতি ইত্যাদি অনেক কিছু শুনে ফেলি আমরা। আমাদের উপমহাদেশ তথা বিশ্বভ্রমণ হয়।
সব মিলিয়ে বড় আনন্দ করে কাটে রবিবারের সকালটা।
বৃষ্টিস্নাত কিংবা বৃষ্টিহীন রাত্তিরের পরে সকালে উঠে ঝলমলে রোদ দেখতে পাওয়ার মতোই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত গান গাওয়ার আনন্দ। হঠাৎ করে বা না-করে আকাশে মেঘ বা আলোর নানা রং দেখতে পাওয়ার মতো। হঠাৎ করে ছুটি পাওয়ার মতো। কিংবা হঠাৎ কয়েক পশলা বৃষ্টি ভেজা। জীবনে একটা ভালো খবর আসা। বন্ধুর দেখা পাওয়া। বাসে-ট্রেনে জানলার ধারে সিট পাওয়া, প্রিয় খাবারের ঘ্রাণ পাওয়া, প্রিয়জনের স্পর্শ পাওয়া, দু’কলি সুর শুনে নেচে ওঠা, অথবা জীবনে প্রেম আসার আনন্দের মতোই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত গান গাওয়ার আনন্দ। কার না সেই আনন্দের অধিকার আছে! কার না আছে আনন্দ করে বেঁচে নেওয়ার অধিকার! রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘কবি কহে কে লইবে আনন্দ আমার।’ দূষণ, যুদ্ধ, ব্যস্ততা, মনোঃসংযোগহীনতা, অধৈর্য, অসহিষ্ণুতা, অসহমর্মিতার এই বেখাপ্পা যুগে সুরের ‘পানসি’ বাইয়ে যিনি আমাদের ভরপুর আনন্দ করে বেঁচে নিতে শেখান, আবারও বলব, তাঁকে ভালোবাসাই আমার পরম ধর্ম।