Robbar

শুধুই কবি-সাহিত্যিক নয়, জনসাধারণের মিলনক্ষেত্র ছিল অমিতাভ দাশগুপ্তর দেড় কামরার ফ্ল্যাট

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 25, 2025 3:05 pm
  • Updated:November 25, 2025 3:26 pm  

এক অসম্ভব সারল্যময় মেজাজের অধিকারী ছিলেন। যাঁকে বকতেন আবার তাঁকেই বুকে জড়িয়ে ধরতেন তিনি। পছন্দমতো মানুষ ঘরে এলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন আবার অপছন্দের কেউ এলে সঙ্গে সঙ্গে বিদায় দিয়ে দিতেন। সেইসব কথা খুব মনে পড়ে। বাবা, শক্তিকাকা (শক্তি চট্টোপাধ্যায়)  এবং জেঠু (লেখক: সুরজিৎ বসু) যখন প্রবল বর্ষায় জলপাইগুড়িতে সারারাত গান গাইতেন তখন চারপাশ আলোড়িত হয়ে উঠত তাঁদের কণ্ঠস্বর রাতগুলো মিশে যেত আবেগের স্রোতে।

দীপ্ত দাশগুপ্ত

ছোটবেলা থেকে বাবার একটি ছড়া আমার মন কেড়ে নিয়েছিল।
আমার একটা পুকুর ছিল
একটা আমার কুকুর ছিল
এবং আমার খুকুর ছিল
ওজন পুরো চোদ্দো কিলো।
‘ওকে ছু্ঁয়োনা ছুঁয়োনা ছিঃ’ থেকে শুরু করে ‘নারীমেধ’ এবং অজস্র প্রতিবাদী ও সমাজসচেতক কবিতার স্রষ্টা কবি অমিতাভ দাশগুপ্তের এমনতর একটি ছড়া দিয়ে কেন লেখা শুরু করলাম, আশা করি সাহিত্যরস-সম্পন্ন পাঠককুল অনুভব করতে পারবেন। হ্যাঁ, বাবার কল্পনার জগৎ ছিল এমনই প্রসারিত ও অনুভূতিপ্রবণ।
বাবা সারাজীবন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। আমিও কোনও এক অনিবার্য আকর্ষণ অনুভব করেছি কমিউনিজমের সঙ্গে শৈশব থেকে, যা ঘিরে তৈরি হয়েছিল একটি জগৎ। ‘কালান্তর’ দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে বাবার পার্টির সূত্রে ছিল প্রতিদিনের সম্পর্ক। মে দিবসে সব পার্টি কমরেড সপরিবার একসঙ্গে মাংস-ভাত খেতেন। আমরাও বাদ যেতাম না। সে যে কী আনন্দের ছিল, বলে বোঝানো যাবে না। কমিউনিস্ট পার্টির অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় পারিবারিক সম্পর্ক। পিতৃসূত্রে আমি অজান্তেই সেই বৃহৎ পরিবারের সদস্য হয়ে গিয়েছিলাম।
কফি হাউসে অমিতাভ দাশগুপ্ত। সঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অজিত পাণ্ডে, অমরেশ বিশ্বাস, কার্তিক লাহিড়ী ও দেবকুমার বসু
কথাশিল্পী দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, গুরুদাস দাশগুপ্ত, জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল ঘোষ, পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়, মোহিত চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও এক সময়ের প্রচুর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন আমাদের ঘরের মানুষ। শুধু তাই নয়, যে কোনও সাধারণ মানুষের মনেও সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন অমিতাভ দাশগুপ্ত। এক সময় ‘অমৃত’ নামক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ‘সেই লোকটি’ নামক ফিচার লিখতেন। বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নানা মানুষের দিনযাপনের কাহিনির মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের বাস্তব জগৎ ও কাল্পনিক জগতের যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন, তা বাংলা কথাশিল্পে একটি বিশেষ স্থানের দাবি রাখে। তাঁর গদ্য বা পদ্যে মানুষ উঠে আসে সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে যেখানে দৈনন্দিন জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে। তাঁর আবেগ কাঁপিয়ে তোলে আমাদের অনুভূতি ও জীবনবোধ। আমরাও বারবার আলোড়িত হই। তাঁর লেখা পদ্য, ফিচার, নানা গদ্য ও রচনাসমূহ দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে।
অনুরাধা দাশগুপ্ত, পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায় ও অমিতাভ দাশগুপ্ত
তাঁর লেখার নেপথ্যে যে আবেগ ও জীবনবোধ সরাসরি দেখেছি, তাই নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। যদিও বাবার প্রসঙ্গে আমি বেশ কিছু লেখা লিখেছি, তবুও মনে হয় আরও কত কথাই না বাকি আছে। আমার মতে, কোনও ক্ষমতাসম্পন্ন কবি বা লেখক কখনই বাউন্ডুলে নন, জীবনের বিভিন্ন স্রোত তাঁদের অনুভূতিকে আলোড়িত করে ও তাঁরাও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে জীবনকে অনুভব করতে থাকেন– যা তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একটি সময় শিল্প-সাহিত্যের সবকটি বিভাগে বাবার বন্ধুরাই পশ্চিমবঙ্গে বিরাজ করতেন এবং তাঁরা ছিলেন একই মালায় গাঁথা এক একটি রত্ন।
অমিতাভ দাশগুপ্ত

সারাজীবন নানা সমস্যার ভেতর নিজেকে ছুড়ে দিয়ে কলমকে তরোয়ালের মতো ব্যবহার করেছেন কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত। শৈশবে জলপাইগুড়ির কাঠের বাড়ির কথা মনে হয়, বাবা আনন্দচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা করতেন আর পার্টির কাজে বিভিন্ন জমায়েতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন। তখন জলপাইগুড়ি শহরে বেশি লোক দেখা যেত না। মা আমাকে ও দিদিকে নিয়ে টিমটিমে আলোয় সংসারের কাজ করতেন। লেখাপড়াও করাতেন। জানলার বাইরে জোনাকির আলো নীরবতাকে আরও বাঙ্ময় করে তুলত। আমরা বাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠতাম। বাবা এলে আনন্দের ঢেউ বয়ে যেত। তারপর ছিল সারাদিনের গল্প শোনা। অধ্যাপকরা সামান্য মাইনে পেতেন সেই সময়ে। বাবা অল্প বয়সেই জনপ্রিয় হলেও বেশি অর্থ হাতে ছিল না। তবুও আমরা চারজনের পরিবারে প্রত্যেকেই ছিলাম তৃপ্ত। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মাইনে পেয়েও যেদিন মিষ্টি হাতে ঘরে ফিরতেন বাবা, আমরা কী যে আনন্দ পেতাম! কোনও অভাব ছিল না আমাদের। বাবা-মা তাঁদের হৃদয়ের প্রসারতা দিয়ে ধনী করে তুলেছিলেন। ১৯৬৮ সালের উত্তরবঙ্গের প্রবল বন্যার অভিজ্ঞতা বাবার কলমে মূর্ত হয়ে ওঠে–

ওর মা মরেছে আটষট্টির বানায়
আর বাপ এ’সনের খরায়
ওকে ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা ছি
ও যে যমের অরুচি।
এমন অনেক কবিতার স্রষ্টা অমিতাভ দাশগুপ্ত জীবনযাপন ও কবিতার মধ্যে কোনও ফাঁক রাখেননি। পুজোর ছুটিতে কলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে ফিরে ঘরে ঢুকতে পারিনি সেদিন। দরজা পলিতে আটকে গিয়েছিল। জলমগ্ন বন্যায় বই ও ঘরের সব জিনিস নষ্ট হয়েছিল। বাবা কয়েকজনের সহায়তায় পলি থেকে বাসস্থান উদ্ধার করেন। রাজনৈতিক কারণে প্রাণের আশায় জলপাইগুড়ি ছেড়ে আমরা কলকাতাতেই একেবারে চলে আসি। কলকাতার সেন্ট পলস কলেজে অধ্যাপনার সুযোগ পান ও কমিউনিস্ট পার্টির কাগজ ‘কালান্তর’ দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জলপাইগুড়ি যাওয়ার আগে ও কলকাতায় স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকেও অসম্ভব গোলযোগের মধ্যেও কলম চালিয়ে গিয়েছিলেন এবং জীবনের বৈচিত্রময় দিনগুলো স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কলমে নানা সময়ের বাস্তব চিত্ররূপে আমাদের কাছে ফুটে ওঠে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দীর্ঘকাল ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী কমিউনিস্ট পার্টির সাহিত্য পত্রিকা ‘পরিচয়’-এর ছিলেন সফল সম্পাদক।
অমিতাভ দাশগুপ্ত

এক অসম্ভব সারল্যময় মেজাজের অধিকারী ছিলেন। যাঁকে বকতেন, তাঁকেই আবার বুকে জড়িয়ে ধরতেন তিনি। পছন্দমতো মানুষ ঘরে এলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন আবার অপছন্দের কেউ এলে সঙ্গে সঙ্গে বিদায় দিয়ে দিতেন। সেইসব কথা খুব মনে পড়ে। বাবা, শক্তিকাকা এবং জেঠু (লেখক সুরজিৎ বসু) যখন প্রবল বর্ষায় জলপাইগুড়িতে সারারাত গান গাইতেন তখন চারপাশ আলোড়িত হয়ে উঠত তাঁদের কণ্ঠস্বর রাতগুলো মিশে যেত আবেগের স্রোতে।

অমিতাভ দাশগুপ্ত ও অনুরাধা দাশগুপ্ত

বিচ্ছিন্ন কত ঘটনাই যে মনে পড়ে বাবাকে ঘিরে। কিছু বলি এই অবসরে। নিজস্ব লেখা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বাবার ছিল আগ্রহ। ঘূর্ণায়মাণ মঞ্চের রূপকার সতু সেন ছিলেন আমার দাদু– মায়ের বাবা। শারীরিক অক্ষমতার জন্য সতু সেনের স্মৃতিকথার অনুলিখন করেছিলেন বাবা। সঙ্গে ছিল সতু সেনের কিছু গবেষণামূলক কাজের অনুবাদও। যা রয়েছে অমিতাভ দাশগুপ্তর ‘সতু সেন: আত্মস্মৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ বইটিতে। যদিও পরবর্তীকালে আমি ও মামা (পার্থ সেন, সতু সেনের ছেলে) বেশ কিছু লেখা অনুবাদ করি, যা দেবেশ চট্টোপাধ্যায় যত্ন নিয়ে ছেপেছেন। আবার নট ও নাট্যকার মহেন্দ্র গুপ্ত ছিলেন বাবার মামা। অজিতেশকাকা, মানে অজিতেশ বন্দোপাধ্যায়কে দেখেছি দাদু মহেন্দ্র গুপ্তের কাছে স্বরক্ষেপণের পাঠ নিতে। আমার ঠাকুরমা অসম্ভব ভালো কবিতা লিখতেন। তাই আমরা যেমন বাবাকে পেয়েছিলাম, বাবাও এঁদের পেয়েছিলেন শৈশব থেকে। বাবা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও কম জনপ্রিয় ছিলেন না। আমাদের কলেজ জীবনে অন্য কলেজ থেকেও এসে ভালো শিক্ষকদের থেকে পাঠগ্রহণের জন্য ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত থাকত। শিক্ষকরা আপত্তি করতেন না। অসম্ভব ভালো পড়াতেন তিনি। অধ্যাপক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল প্রচুর। বাবাকে নিয়ে লিখতে গেলে যে কত কথাই না মনে আসে বোঝানো মুশকিল! বাবার সব ছেলেমানুষিকে মানিয়ে চলা এবং সব কাজে সহায়তা করা মা ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব ছিল কি না, জানি না। মা ছিলেন সতু সেনের প্রিয় সন্তান, অঙ্কে ছিল দারুণ মাথা। রুশ ভাষার শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। বাবা ও মায়ের জগতে যে সংস্কৃতি ও কমিউনিজমের পরিমণ্ডল শৈশব থেকে উপলব্ধি করেছি, তা কোনও তাত্ত্বিক আলোচনার দ্বারা বোঝানো যাবে না। প্রসঙ্গত মনে পড়ে, শৈশবে আমরা সপরিবার দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। একটি লোকাল স্টেশনে কোনও কারণে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলাম। স্থানটির নাম আজ আর মনে নেই! অপরিচিত স্থানে শুধু বাবার পার্টি কার্ড দেখে আমাদের কিছু লোক যে আতিথেয়তা করেছিল, তা আমি আজও ভুলিনি। স্থানীয় পার্টি অফিসে নিয়ে খাবার দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করে আবার যথাসময়ে পরবর্তী ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন পার্টি কমরেডরা। আজ কত বছর হয়ে গেল কমরেডদের এই আত্মীয়তা আমার মনে আছে।

সপরিবার অমিতাভ দাশগুপ্ত
রাজনৈতিক কারণে এক সময় কলকাতায় বারবার বাড়ি বদল করতে হয়েছে। বাবাকে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। এক সময় বেশ কিছু বছর বাগবাজারে একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে ছিলাম। কলকাতায় সকল কবি সাহিত্যিক ও বিশেষ ব্যাক্তিত্ব থেকে সাধারণ মানুষের মিলনক্ষেত্র ছিল ওই দেড় কামরার ফ্ল্যাটটি। সামনে ছিল আর একটি ফ্ল্যাটবাড়ি। দুই  ফ্ল্যাটের মধ্যে সরু বাঁধানো গলিতে সারা বছর চলত খেলা। ক্রিকেট, ফুটবল– আরও কত কী। ইডেন উদ্যানের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়! বাবার ছিল খেলায় বিরাট উৎসাহ। নিজে যৌবনে ভালো লেগস্পিনার ছিলেন এবং খেলেছেন কলকাতার উল্লেখযোগ্য টিমে। কলেজে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে খেলায় তিনি শিক্ষক দলের অধিনায়ক হতেন। কিছুকাল সেন্ট পলস কলেজে আমি ছিলাম বাবার ছাত্র। তাই ‘শিক্ষক’ অমিতাভ দাশগুপ্তকে ছাত্র হিসেবে অনুভব করার সৌভাগ্য হয়েছিল। কলেজে বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী ছাত্রদের মধ্যে বিপজ্জনক গোলযোগ শুরু হলে বাবাকে সাহস নিয়ে মাঝখানে গিয়ে ঝামেলা থামাতে দেখেছি, যখন অন্য অনেক শিক্ষক এগতে ভয় পেয়েছেন। তাঁর এই তেজ ও সাহসী মনের ছাপ তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যে সহজেই ধরা পড়ে। তবে এমনতর সাহসী মানুষও সবক্ষেত্রেই সমান সাহসী হবে– একথা ভাবা ঠিক নয়। এমন অনেক সময় দেখা যায় যে, প্রবল সাহসী মানুষরাও অনেক ক্ষেত্রে বেশ ভীতু এবং পরনির্ভর। আমার বাবাও বাড়িতে মায়ের ওপর এবং কিছুটা আমাদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাই মা অসময়ে চলে যাওয়ার পর মনে হত বাবাকেই আমাদের দেখতে হবে। এমন আবেগপ্রবণ ও অস্থির মানুষতো পাঁচ জনের মতো লাভ-ক্ষতির হিসেব করে দিন চালাতে পারেন না, আর বাবার ভগ্ন শরীরের যত্ন নেওয়াও আমাদেরই কাজ। তাই সেইদিন মনে হয়েছিল তিনি আমাদের বাবা নন এবং মা আমাদের কাছে বাবাকে রেখে গিয়েছেন যেন আমাদের অনেক ছোট ভাই। মনে পড়ে, বাবা একদিন বিষণ্ণ চিত্তে প্রবল বর্ষার মধ্যে চুপচাপ ঘরে বসে আছেন বিশেষ কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করে মনখারাপ নিয়ে।আমি জলে সম্পূর্ণ কাক ভিজে হয়ে ঘরে ফিরেছি তখন। আমাকে দেখেই বললেন, কী বৃষ্টি, ভাবতে পারবি না। বললাম, ‘ভিজলাম আমি আর তুমি বৃষ্টি কতখানি আমাকে বোঝাচ্ছ।’
স্কেচ: লেখক
আসলে নিজেকেই মনে হয় কবি বলেছেন, ‘তোমার সার্ট কি বৃষ্টির চেয়ে দামি?’ বৃষ্টিকে কবি ভয় পেলেও তাঁর আবেগ কিন্তু আমাদের জয় করে নেয়। এটাই বোধহয় কবিতার জয়। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো দাপুটে কবিও একা রাতে শুতে পারতেন না। রাতে যখন আমাদের বাড়িতে থাকতেন আমাকে ডেকে নিতেন মনে আছে। আবার বাবার সঙ্গে বাইরে কোনও কবি সম্মেলনে গেলে বাবার ঘরে চলে যেতেন ভূতের ভয়ে। তাই বলে কি তাঁর কবিতায় সাহসী শব্দ প্রয়োগের ব্যবহার কিছু কম ছিল? দু’জনে একদিনেই জন্মেছিলেন। মিল তো থাকতেই পারে। তাঁদের ভেতর যেই শিশুরা বিচরণ করে তাদের অস্বীকার করা যায় না। আজ অনেক কিছু আমি পেয়েছি। কিন্তু বাবাকে কেন্দ্র করে যে জগৎ আমি পেয়েছিলাম আশা করব আগামী দিনের কমরেডরা সেই জগৎ আবার আমাকে ফিরিয়ে দেবে।