মমতা শঙ্করের বক্তব্যে বারবার আসে স্যানিটারি প্যাড, লাল রক্ত, এবং ‘লজ্জা’-র কথা– স্যানিটারি প্যাডের বিজ্ঞাপনে রক্ত দেখালে তার লজ্জা লাগে, তিনি বাবা বা ভাইকে দিয়ে কিনতে পাঠাতে পারেননি। তিনি হয়তো জানেন না যে, এই লজ্জার সংস্কারটাই আজও ভারতবর্ষের লক্ষ লক্ষ কিশোরীর স্কুল ছাড়ার কারণ। এই লজ্জা নারী শরীরকে অপরাধী করে, তার প্রজনন ক্ষমতাকে গোপন করে, তার পরিচ্ছন্নতার অধিকারকে সংকুচিত করে। এই লজ্জার সংস্কৃতি ভেঙে ফেলতে দরকার বিজ্ঞাপনেই লাল রঙের ব্যবহার– যা রক্তকে রক্ত বলে চেনায়, এবং তা কেমিস্ট্রি ল্যাবের কেমিক্যালের মতো নীল নয়। ওঁর কাছে নারী স্বাধীনতা, আত্মসম্মান, সম্মতি– সবই এগুলো ‘বাইরের জিনিস’, ‘বিলেতের আমদানি’। মমতা শঙ্কর যখন বলেন, এই ধারণাগুলো ‘বিদেশি’, ‘আমাদের সমাজে মানায় না’– আমাদের সেই ঔপনিবেশিক মানসিকতার কথা মনে পড়ে, যেখানে স্বাধীনতা মানে ‘পশ্চিমী প্রভাব’, আর আনুগত্য মানে ‘সংস্কৃতি’।
সম্প্রতি এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে, মমতাশঙ্কর মহিলাদের অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন, তা শুনে শুধু হতাশা বা রাগ হয় না, তুমুল অসহায়ও লাগে। একজন শিল্পী, নারী এবং সমাজে দীর্ঘদিন ধরে সম্মানিত অবস্থানে থাকা কারও মুখ থেকে যখন নারী-বিদ্বেষ, শ্রেণি ঘৃণা এবং লিঙ্গ বৈচিত্র নিয়ে এভাবে বিক্ষিপ্ত বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে অহরহ, তখন বোঝা যায়– শিক্ষা ও সচেতনতাকে বহু দূর ফেলে এসেছে মানুষ।
ওঁর প্রতিটা কথায় ছয়ের দশকের রক্ষণশীল, পিছিয়ে পড়া এক সমাজের ছায়া ফিরে আসে, যেখানে মেয়েদের শরীরকে শত্রু ভাবা হয়, স্বাধীনতাই পাপ, খেটে খাওয়া মানুষের বুদ্ধি আসলে ধূর্ততা, আর ভালোবাসা মানে নিজেকে বিসর্জন দেওয়া।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই উনি বলছেন, ‘আমি পলিটিক্স বুঝি না… আমি শুধু বাড়ির কাজের লোকের পলিটিক্স বুঝি।’ কী গভীর শ্রেণিবিভাজন! উনি স্পষ্ট করে দিচ্ছেন, গরিব মানুষদের রাজনীতি মানে কেবল সুবিধা পাওয়ার খেলা। অথচ ভারতের লাখ লাখ গৃহকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, পরিচারিকা, প্রতিদিনের জীবনে অসম্ভব শ্রম দিয়ে আমাদের বাড়ি পরিষ্কার রাখেন এবং তাদের গোটা জীবনটাই আসলে রাজনীতি– নিশ্চিত কাজ নেই, পয়সা নেই, নিরাপত্তা নেই, জমায়েতে না গেলে রেহাই নেই। অথচ তাদের থেকেই ‘কাজের লোকের পলিটিক্স বোঝা যায়’?
মমতাশঙ্কর বারবার একটা শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন: ‘ভালো ঘরের মেয়ে’। আমার ওপরের ফ্ল্যাটের কূপমণ্ডূক, পুরুষতান্ত্রিক, প্যাঁচাল সর্বস্ব কাকিমার মতো; ওঁর মতেও সমাজে কে আদরণীয়, কে নিন্দার যোগ্য– সেটা ঠিক করে দেয় মানুষের পোশাক, চেহারা, আচরণ– এবং অবশ্যই তার সামাজিক শ্রেণি।
যে মেয়ে স্প্যাগেটি পরে ছাদে দাঁড়িয়ে চুল শুকায়, চায়ের দোকানে ছেলেদের সামনে সিগারেট খায়, অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনের ব্যানারে দাঁড়িয়ে থাকে হাসিমুখে, অথবা শাড়ি পরলে মমতাশঙ্কর নির্দিষ্ট শরীরের অংশের চেয়ে বেশি দেখিয়ে ফেলে– সে ‘ভালো ঘরের মেয়ে’ নয়। অথচ মদ খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা পুরুষ, যার অর্ধনগ্ন অবস্থা দেখে চোখ ফিরিয়ে নিতে হয়, তার সামাজিক অবস্থান বা চরিত্র কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। একবারের জন্যেও কথা হয় না রাস্তার দেওয়ালে যেখানে-সেখানে প্রস্রাব করার মতো পুরুষের কদর্য অভ্যাস নিয়ে।
তা এই ‘ভালো-খারাপ’ নির্ধারণের অধিকার কাদের? শুধুমাত্র সেইসব তামাম পিতৃতান্ত্রিক, নারীবিদ্বেষী, সচেতনতাবোধহীন কাকিমাদের (এবং জেঠুদের), যারা ‘লজ্জা’ নামক অস্ত্র দিয়ে অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। একই কাজ ছেলে করলে ‘ঠিকাচে’, মেয়ে করলে ‘characterless’ বা ‘চরিত্রহীন’– এই দ্বৈত নৈতিকতাই পুরুষতন্ত্রের বুনিয়াদ। এবং যখন একজন নারী নিজেই এই মানদণ্ড ব্যবহার করে অন্য নারীকে ছোট করে– তখন বোঝা যায়, পুরুষতন্ত্র কেবল পুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
মমতাশঙ্করের সবচেয়ে বিপজ্জনক মন্তব্যগুলির মধ্যে একটি ছিল: ‘একজন মানসিকভাবে অসুস্থ পুরুষ একটি শহুরে মেয়ের খোলামেলা পোশাক দেখে উত্তেজিত হয়ে গ্রামে গিয়ে ধর্ষণ করতে পারে।’
আশ্চর্য যে, এখানে ধর্ষণের দায় কোনও পুরুষের নয়, তার অপরাধী মানসিকতার নয়– দায় চাপানো হল মেয়েদের পোশাকের ওপর। এই বক্তব্য সাঙ্ঘাতিক, কারণ এটা victim-blaming-কে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। ধর্ষকের পক্ষে একটি সম্ভাব্য ‘trigger’ খুঁজে পাওয়ার ছুতোয় মূল অপরাধটাই ঢাকা পড়ে যায়। অথচ ধর্ষণ কখনওই পোশাকের ফল নয়– ধর্ষণ ক্ষমতার অপব্যবহার, যৌন দৃষ্টিভঙ্গির বিকৃতি এবং পুরুষতান্ত্রিক মস্তিষ্কের ফসল।
তিনি বলেছেন, ‘মেয়েরা মনে করে, আমি ওইরকম পোশাক পরব, কিন্তু কেউ তাকাবে না– তাহলে পরছি কেন?’ অর্থাৎ, নারীর সাজগোজ শুধুই ‘তাকানো’-র জন্য। অথচ বহু নারী এখন নিজের শরীর, রুচি, আরাম– এই তিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক পরে। তাদের সেই নিজস্ব স্বাচ্ছন্দ্যকে যদি কেউ যৌন কামনায় পরিণত করে, সেটা অপরাধীর মনোবৃত্তির সমস্যা, পোশাকের নয়।
ঠান্ডা ঘরে, দামি লাল তন্তুজ পরিহিতা পরামর্শ দিয়েছেন, বাবা-মাকে সাবধান থাকতে হবে, সন্তানকে একলা যেতে দেওয়া যাবে না এদিক-সেদিক। কিন্তু প্রশ্ন হল– একজন দিনমজুর, একজন সিঙ্গল মাদার, একজন পরিচারিকার জীবন কি তাকে এই ‘সারাক্ষণ আগলে রাখা’-র বিলাসিতা দেয়? ভারতের শ্রমজীবী শ্রেণির মা-বাবারা যদি সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে নিজের রুজির ব্যবস্থা না করে, তবে কি তাদের সংসার ইনি চালাবেন? শিশু যদি একা দোকানে যায়, রাস্তায় খেলে– সেটা অক্ষমতার প্রতীক, না বাস্তবতা?
যে মহিলা সকাল ৬টায় নিজের সন্তানকে একা ঘরে রেখে ৪-৫টা বাড়িতে কাজে যাবেন, তিনি কী করে সারাক্ষণ সন্তানের পাশে বসে তাকে আগলে রাখবেন? তার নাবালক সন্তানকে ‘গুড টাচ-ব্যাড টাচ’ বোঝানোর জন্য ইনস্টিংকটকে ভরসা করতে হবেই, কারণ সময়, নিরাপত্তা, এবং শিক্ষা– এই তিনটিই তার কাছে বিলাসিতা! ভারতের সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষেরা যখন সন্তানদের একা বাড়িতে রেখে, যা হোক একটা মুখে গুঁজে কাজে যান, তখন তারা সন্তানকে নিয়ে যেতে পারেন? না। তারা বাধ্য হন ভরসা করতে সাহসের ওপর, যার অন্য নাম প্রয়োজন। এটাই বাস্তবতা– যেটা আবার মমতাশঙ্করের চোখে পড়ে না, কারণ তার ঘরের কাজের লোকেরা শুধুই ‘সুযোগসন্ধানী’।
এটা বোঝা অত্যন্ত জরুরি যে, যৌন নিপীড়নের দায় সামাজিক কাঠামোর, যে মা সামর্থ না-থাকায় সন্তানের পাশে থাকতে পারেননি, তাঁর নয়। খেটে খাওয়া, গরিব, এমনকী মধ্যবিত্ত পরিবারেও নিরাপত্তার সংজ্ঞাই আলাদা। সেইখানে সন্তানকে আত্মরক্ষা শেখাতে হয়, কনসেন্ট বুঝিয়ে দিতে হয়– ‘ইনস্টিংকট’-এ না; বরং শিক্ষায়, কথায়, স্পর্শে, সাহসে।
তিনি বলেছেন ‘তৃতীয় লিঙ্গের সম্মান নিশ্চয় প্রাপ্য, তবে তাদেরও নিজেকে সম্মানযোগ্য রাখতে হবে’– এবার এই শর্তযুক্ত সম্মানটা একটু নেড়ে দেখি! এই বক্তব্যে গভীর ট্রান্সফোবিয়া আছে। সম্মান যদি ‘যোগ্যতা’ দিয়ে অর্জিত হয়, তবে সেটা আর মানবিক অধিকার থাকে না। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘ভদ্র ভাবে’ থাকতে হবে, ‘ভদ্রলোকের চোখে’ দৃষ্টিনন্দন হতে হবে– না হলে তাদের সম্মান দেওয়া যাবে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মুখোশ দেখুন– সম্মান দিচ্ছি, তবে আমার নিয়মে। সম্মান দিচ্ছি, কিন্তু ‘আমার ভাষায় ভদ্র’ হলে তবেই। কিন্তু মানুষের অধিকার কি শর্তসাপেক্ষে প্রাপ্য? নাকি তা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত হওয়ার কথা; গায়ের রং, পোশাক, আচরণ বা লিঙ্গ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে হওয়ার কথা?
মমতাশঙ্করের বক্তব্যে বারবার আসে স্যানিটারি প্যাড, লাল রক্ত, এবং ‘লজ্জা’-র কথা– স্যানিটারি প্যাডের বিজ্ঞাপনে রক্ত দেখালে তার লজ্জা লাগে, তিনি বাবা বা ভাইকে দিয়ে কিনতে পাঠাতে পারেননি। তিনি হয়তো জানেন না যে, এই লজ্জার সংস্কারটাই আজও ভারতের লক্ষ লক্ষ কিশোরীর স্কুল ছাড়ার কারণ। এই লজ্জা নারী শরীরকে অপরাধী করে, তার প্রজনন ক্ষমতাকে গোপন করে, তার পরিচ্ছন্নতার অধিকারকে সংকুচিত করে। এই লজ্জার সংস্কৃতি ভেঙে ফেলতে দরকার বিজ্ঞাপনেই লাল রঙের ব্যবহার– যা রক্তকে রক্ত বলে চেনায়, এবং তা কেমিস্ট্রি ল্যাবের কেমিক্যালের মতো নীল নয়।
ওঁর কাছে নারীবাদ, আত্মসম্মান, সম্মতি– সবই এগুলো ‘বাইরের জিনিস’, ‘বিলেতের আমদানি’। মমতাশঙ্কর যখন বলেন, এই ধারণাগুলো ‘বিদেশি’, ‘আমাদের সমাজে মানায় না’– আমাদের সেই ঔপনিবেশিক মানসিকতার কথা মনে পড়ে, যেখানে স্বাধীনতা মানে ‘পশ্চিমি প্রভাব’, আর আনুগত্য মানে ‘সংস্কৃতি’। অথচ, ভারতের প্রাচীনতম কবিতায়, লোকগানে, মঙ্গলে, বৈষ্ণব পদে– নারী স্বাধীনতা, শরীরচর্চা, আত্মপ্রেমের অসংখ্য উদাহরণ আছে।
‘সেলফ্ লাভ’ মানে শুধুই নিজেকে ভালোবাসা নয়, বরং নিজের সীমানা নির্ধারণ করা– কাকে কখন কাছে আসতে দেব, কাকে দেব না। আর ‘কনসেন্ট’ মানে সম্মতির অধিকার, যা আমাদের সবার মৌলিক মানবাধিকার। দাম্পত্যে, লিভ ইনে, সম্পর্কের যে অবস্থান থেকে উনি এবং ‘বাপিদা’ (ওঁর স্বামী) পাঁচ মিনিটে মনোমালিন্যের অবসান ঘটিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন– সেই অবস্থান অন্য মানুষের কাছে স্বর্গের সমানও হতে পারে, এটা তিনি নির্বিকারে ভুলে রইলেন।
তিনি ধর্ষণের সাজা হিসেবে বললেন: ‘ইট দিয়ে পিটিয়ে মারা উচিত এবং তারপর দৃষ্টান্ত হিসেবে তাকে ঝুলিয়ে রাখা উচিত’। বক্তব্য অনুভূতির তীব্রতা বোঝালেও, আইনহীন সমাজের এই প্রতিচ্ছবি বরং আরও বৈধতা দেয় হিংসাকে। আমাদের দরকার এমন বিচারব্যবস্থা যেখানে নারী-শিশু-প্রান্তিক মানুষ সুবিচার পায়, বদলা নয়। ধর্ষণ নিঃসন্দেহে ভয়াবহ অপরাধ। কিন্তু তার প্রতিকারে আইনের বদলে যদি প্রতিশোধ হয়– তবে আমাদের সমাজ কেমন হবে? ওঁর পাকা বাড়ির, নীরব দেওয়ালের মধ্যে বসে তিনি এই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান হানবেন, তবে এই শাস্তি এড়াতে ধর্ষক যে প্রাণে মেরে দেহ হাপিস করে দেবে মেয়েটির, তা বিবেচনা করার দায় ওঁর নয়।
আমার বাড়ির ওপরতলার যে কাকিমার কথা বললাম, তাদের একটা ভাবনার বাঁধা চলন আছে দেখেছি: ‘ভদ্রলোক’ পুরুষ বনাম ‘অশালীন’ নারী। মমতাশঙ্করের বক্তব্যগুলিতেও বারবার পুরুষদের হালকা করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে– তারা বড়দের সামনে সিগারেট লুকিয়ে খায়, তারা গোপনে গালাগাল দেয়– যেন সেই লজ্জাই যথেষ্ট শালীনতা। অথচ ওঁর কাছে নারীরা সবসময় প্রকাশ্যে বিচারাধীন। এই দ্বৈত নৈতিক মানদণ্ডই আমাদের সমস্যার মূল।
আসলে মমতাশঙ্করের বক্তব্য একটি সময়ের, একটি শ্রেণির, একটি পুরুষতান্ত্রিক শিক্ষার প্রতিফলন– যেখানে নারীর স্বাধীনতা মানেই অশ্লীলতা, দরিদ্র মানুষের কৌশল মানেই ষড়যন্ত্র, আর প্রান্তিক লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের জায়গা শুধুই করুণার, অধিকারের নয়।
এই মমতাশঙ্কর ‘আগন্তুক’–এ মৃণাল সেনের সিনেমার পরিচিত মুখ– সেইসব চলচ্চিত্রে, যা সমাজের ভাঙন, শোষণ, ও নিপীড়নকে উল্টেপাল্টে প্রশ্ন করেছে বারবার। আর আজ সেই একই মানুষ নিজের মুখে স্পষ্টভাবে নারীবিদ্বেষ, শ্রেণি-ঘৃণা ও পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সুর করে গেয়ে চলেছেন, নানা মুখভঙ্গি সহযোগে।
শুরু থেকে শেষ অবধি কুসংস্কারাছন্ন, পুরুষতান্ত্রিক পরপর উক্তির পরেও যেটা লক্ষণীয়– সেটা এই যে, এই দ্বিচারিতা শুধু একজন ব্যক্তির নয়, এক বৃহৎ শ্রেণির– যারা নিজেদের ‘ভদ্রলোক সংস্কৃতি’-র রেশমগুটির ভেতরে থেকে বাকিদের যাপনকে অপমান করে, অচ্ছুৎ ভাবে, লজ্জা দেয়, নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ওঁর জীবন, ওঁর যাপন, ওঁর আর্থ-সামাজিক অবস্থান ওঁকে এই অকারণ লজ্জা, অতিরিক্ত আব্রু, বাসস্থান ও জীবনের নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষমতায় রেখেছে। কিন্তু তা বলে যাপনের এই স্বচ্ছলতার ওপর দাঁড়িয়ে, তাঁর চেয়ে কঠিন, বা নিম্নরুজির যাপনের, মানুষের জীবনের কথা না ভেবে এতগুলো বেফাঁস মন্তব্য উপহাসের।
আমাদেরও এর থেকে বোঝা দরকার যে, শিল্পে থাকা মানেই প্রগতিশীল হওয়া নয়। শিল্প আমাদের যা শেখায়, সেটিকে কে নিজের ভেতরে গ্রহণ করবেন আর কে ব্যবহার করবেন শুধু রোজগারের সিঁড়ি হিসেবে– সেটাই আসল ফারাক। তাই মমতাশঙ্করের বক্তব্য শুধুই বিতর্ক নয়, এক সামাজিক শিক্ষাও– যাতে আমরা যেন আর কাউকে শুধু ‘শিল্পী’ বলেই নির্ভুল ভেবে না নিই।
……………………………..
ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার ডিজিটাল
……………………………..
একলা মানুষ অপার বিস্ময়ে চলতে চলতে দেখছেন নালসো পিঁপড়েদের জীবনবৃত্তান্ত ও আচার আচরণ। পিঁপড়ে, মৌমাছি, বোলতাদের সমাজবদ্ধ জীবন দেখতে দেখতে তাঁর মনে পড়ছে রাজতন্ত্র, দাসপ্রথা ও পুঁজিবাদী সমাজে মানুষের অবস্থা। বিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের মৃত্যুদিনে রোববারের বিশেষ প্রতিবেদন।
মেলিয়ের ছবির সময় থেকেই সিনেমার পর্দার সামনে এই বিস্ময়ে হাঁ করে তাকিয়ে থেকেছি যে, অ-বাস্তব নিজেকে মেলে ধরেছে– ঠিক যেন তা বাস্তব। সায়েন্স ফিকশন, ফ্যান্টাসি, হরর– এই তিনটে জঁরই অবাস্তবকে, অসম্ভবকে, কল্পিতকে বাস্তব করে তোলে। স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্ন, দুই-ই তাই সিনেমার খুব আপন।
আমি ভেবেছিলাম, একটা কাল্পনিক রেলপথের কথা। কেওনঝড়ে পাথরের মধ্যে অনেক লোহার পাহাড় রয়েছে। কল্পনা করেছিলাম এই পাহাড়ের মধ্য দিয়েই রেললাইন যাচ্ছে, এবং তা ঢুকে পড়ছে আদিবাসী গ্রামের মধ্যে। তাঁদের যে ‘মিথ’, রেলপথ আসায় তা একটু একটু করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।