সবাই ভাবলেন হয়তো, কবি রবীন্দ্রনাথ প্রাইমার বা ‘পয়লা পুঁথি’ লেখার সময় একটি শিথিল হাতে ‘বংশী সেন’ লিখেছেন। কোনও বিজ্ঞ সম্পাদক বা প্রুফ রিডার হয়তো ভেবেছেন ‘বশী’ নামে একটু মুদ্রণ প্রমাদ বা লুপ্তাক্ষর আছে। বংশী করে দিলেই মিটে যায়! রবীন্দ্রনাথ যে এত দীর্ঘ অধ্যবসায়ে, এত কুঁদে কুঁদে, ধাপে-ধাপে শিশুপাঠ্য পুস্তক রচনা করছেন, আমাদের সাধারণ স্বাভাবিক প্রতিবেশে ঠিক বিশ্বাসই হয় না।
৬.
শঙ্খ ঘোষের জন্মদিন উপলক্ষে শুরু করেছিলাম এই আলোচনা। তারপর কেটে গেছে কয়েকটি মাস। তাঁর মৃত্যুদিন ২১ এপ্রিল চলে গেল এ বছরের মতো। এসেছে ৮ মে, অর্থাৎ ২৫ বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথের তীব্র দীপ্তি যেন চতুর্দিকে ব্যাপ্ত হয়ে আছে। এই দিনও এগিয়ে যাবে ৭ অগস্ট, অর্থাৎ বাইশে শ্রাবণের দিকে। শঙ্খ ঘোষ এবং তাঁর যত্নবান রবীন্দ্রনাথের রচনা সংকলন গ্রন্থনা প্রসঙ্গে এইসব নশ্বর-অনশ্বর কত প্রসঙ্গ মনে পড়ে গেল। এসব দিনের সঙ্গে মিশে থাকে অজস্র স্মৃতি। সম্পাদনার কাজে তাঁর আশ্চর্য সব অবলোকন ছিল। হয়তো রবীন্দ্রনাথের প্রতি অনিঃশেষ ভালোবাসাই তার কারণ। যুক্তি এবং অর্ন্তদৃষ্টির সুসম ভারসাম্য থেকেই রবিঠাকুরের রচনার সম্পাদনা করতে হয়। বিষয়টি জটিল, আবার একদম সরল। প্রথম যখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম, তখনও পুরোটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারিনি। পরে শুধু চমকিত, রোমাঞ্চিতই নয়, বেশ অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, সম্পাদকের কাজ বহুলাংশে গোয়েন্দার মতো। শান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত পদ্ধতিতে প্রতি মুহূর্তে নানা বিশ্লেষণ চালাতে হয়। যুক্তির ধাপে-ধাপে পা রেখে উঠতে হয় সিদ্ধান্তের দিকে।
এসব কথার কেন্দ্রে আছে এই পর্বে ‘সহজ পাঠ’-এর প্রথম ভাগ। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত এই বইটি, নানা কারণেই বিস্ময়বোধক চিহ্নের মতো। বুদ্ধদেব বসু জানিয়েছিলেন, “যে বয়সে ক-খ চিনলেই যথেষ্ট সেই বয়সেই সাহিত্যরসে দীক্ষা দেয় ‘সহজ পাঠ’, ওই একটি বইয়ের জন্য বাঙালি শিশুর ভাগ্যকে জগতের ঈর্ষাযোগ্য বলে মনে করি।” একদিন স্যর সম্পাদনার কাজকর্মের সূত্রে বললেন, ‘সহজ পাঠের পাণ্ডুলিপি দেখেছ কখনও?’ আমি সঙ্গে সঙ্গেই বললাম, ‘না। কেন? পাণ্ডুলিপিতে কী আছে?’ স্যর হাসলেন। তারপর বললেন, ‘একটা মারাত্মক ভুল আছে বলেই তো মনে হচ্ছে।’ ‘ভুল? কেন? প্রথম ভাগে না দ্বিতীয় ভাগে?’ উনি আবার হাসলেন। ‘সবটা বলে দেব কেন?’ ‘এই নাও দুটো ভাগ। বাড়ি যাও। খুঁজে দেখো।’ আমি যথারীতি চালাকি করে বললাম, ‘নিশ্চয়ই পুরনো বানানবিধি আর নতুন বানানবিধির গোলমাল?’ স্যর মাথা না তুলেই বললেন, ‘না। তার চেয়ে অনেক বড় গোলমাল।’ এসব কথা শুনলে কেমন ভয়-ভয় করে। রবীন্দ্রনাথের বই, তার ভুলভ্রান্তি আমি বের করব, এটা হাস্যকর এবং অসম্ভব একটা ব্যাপার। তবু, স্যর বলেছেন। তন্নতন্ন করে প্রায় প্রতিটি শব্দ এবং যতিচিহ্ন দেখেও কিছু বুঝলাম না। দিন চারেক পর গেলাম স্যরের কাছে। ‘খুঁজে পেলে কিছু?’ ‘না। দেখেছি। পাইনি।’ ‘তাহলে তো মুশকিল। ব্যঞ্জনবর্ণ বলো তো।’ ‘মানে ক,খ,গ,ঘ?’ ‘হুঁ।’ বলে গেলাম। উনি বললেন, ‘অনুস্বর, বিসর্গ, চন্দ্রবিন্দু তো আসে সবার শেষে। তাই না?’ ‘তাই তো জানি স্যর।’ ‘তাহলে এই প্রথম ভাগে ষষ্ঠ পাঠ দেখে বলো তো, কোথায় গোলমাল?’
কিছুই বুঝিনি। আন্দাজে ভর করে বলি, ‘অনুস্বর তো একবার আছে। বংশী সেন নামটায়। গোলমাল কোথায়?’ ‘সে কী! প্রথম ভাগে তো অনুস্বর ষষ্ঠপাঠের আগে শেখানোই হয়নি। পুরো প্রথম ভাগেই নেই। মেঘের রং, ঢং ঢং– এসব তো শেখানো হচ্ছে দ্বিতীয় ভাগের প্রথম পাঠে। তাহলে?’ এইবার আমার বুক কাঁপতে থাকে। আবার বই দুটো উল্টেপাল্টে দেখতে থাকি। কথাটায় তো নিশ্ছিদ্র যুক্তি আছে। অনেক দেখেশুনে বলি, ‘পাণ্ডুলিপি দেখতে হবে। রবীন্দ্রনাথ হয়তো ভুল করেছেন!’ স্যর আবার হাসলেন। বললেন, ‘সেটাই সহজ সমাধান। আজকাল সবাই ধরেই নেন অবশ্য, ভুল নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথেরই!’ ‘আপনি দেখেছেন?’ স্যর কোনও কথা না বলে হাতের বইটি রেখে অন্য ঘরে চলে গেলেন। ফিরে এসে আমাকে দু’টি ফটোকপি করা পাতা দিলেন। সেখানে দেখলাম, স্পষ্ট লেখা আছে, বংশী নয়, বশী সেন। বশী সেন? হ্যাঁ, বশী সেন। এরকম নাম হয় নাকি? স্যর যেন বুঝতেই পারলেন খটকাটা। ‘বশী সেন কে ছিলেন জানো? শান্তিনিকেতনের একজন শিক্ষক। বিজ্ঞান পড়াতেন। তাঁর নাম থেকেই সম্ভবত এই প্রয়োগ!’
আমি এসব শুনতে শুনতে চমকে যাই। সত্যিই তো, প্রথম ভাগের ষষ্ঠ পাঠে বংশী আমরা অনেকেই ছোটবেলায় পড়েছি। অনেক সময় বাড়ির ছোটদের পড়িয়েছি। কোনওভাবেই কোনও সংশয় কখনও উপস্থিত হয়নি। এখানেই সম্ভবত দুঁদে সম্পাদকের বিচার এবং প্রয়োগের নিজস্বতা। এই সমস্যা দীর্ঘদিন রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের ক্ষেত্রে বহমান ছিল। ‘সহজ পাঠ’-এর পূর্ববর্তী সংস্করণে মান্য সম্পাদকেরা প্রশ্নহীন পুনরাবর্তনে ওই পাঠটি পরিবেশন তথা মুদ্রণ করে চলছিলেন। পূর্ববর্তী অসংখ্য সংস্করণে এবং রচনাবলি গ্রন্থনাতেও ‘বংশী সেন’ সগৌরবে উপস্থিত ছিলেন। যেমন ধরুন, বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত সুলভ ‘রবীন্দ্র-রচনাবলী’ পঞ্চদশ খণ্ড। সংস্করণটি রবীন্দ্রনাথের ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছিল। চৈত্র ১৩৯৮, অর্থাৎ ১৯৯২ সালে প্রকাশিত ওই খণ্ডের শেষে সহজ পাঠের প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাগ গ্রন্থিত রয়েছে। সেখানেও স্পষ্ট ছাপা আছে ‘বংশী সেন’ (পৃষ্ঠা ৪৪৮)!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
স্যর কোনও কথা না বলে হাতের বইটি রেখে অন্য ঘরে চলে গেলেন। ফিরে এসে আমাকে দু’টি ফটোকপি করা পাতা দিলেন। সেখানে দেখলাম, স্পষ্ট লেখা আছে, বংশী নয়, বশী সেন। বশী সেন? হ্যাঁ, বশী সেন। এরকম নাম হয় নাকি? স্যর যেন বুঝতেই পারলেন খটকাটা। ‘বশী সেন কে ছিলেন জানো? শান্তিনিকেতনের একজন শিক্ষক। বিজ্ঞান পড়াতেন। তাঁর নাম থেকেই সম্ভবত এই প্রয়োগ!’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
রবীন্দ্রনাথের অত্যাশ্চর্য পরিকল্পনাকেও বলিহারি! অনেক সময় আমরা মনে করি, কবি এবং উদাসী হাওয়ার পথিক, ফলে আদৌ ওঁর ‘স্কিম’ বা কাঠামোকুশলতা বিচ্যুত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। ‘সহজ পাঠ’ দীর্ঘদিন (মাঝখানে ১৯৮০ থেকে বেশ কয়েক বছর বাদ রাখছি) বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক হিসেবে স্বমহিমায় বিরাজমান ছিল। লক্ষ লক্ষ ছাত্র, বেশ কয়েক হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমনকী অভিভাবকদের কারও মনে কোনও সংশয় তৈরি হল না! সবাই ভাবলেন হয়তো, কবি রবীন্দ্রনাথ প্রাইমার বা ‘পয়লা পুঁথি’ লেখার সময় একটি শিথিল হাতে ‘বংশী সেন’ লিখেছেন। কোনও বিজ্ঞ সম্পাদক বা প্রুফ রিডার হয়তো ভেবেছেন ‘বশী’ নামে একটু মুদ্রণ প্রমাদ বা লুপ্তাক্ষর আছে। বংশী করে দিলেই মিটে যায়! রবীন্দ্রনাথ যে এত দীর্ঘ অধ্যবসায়ে, এত কুঁদে কুঁদে, ধাপে-ধাপে শিশুপাঠ্য পুস্তক রচনা করছেন, আমাদের সাধারণ স্বাভাবিক প্রতিবেশে ঠিক বিশ্বাসই হয় না। প্রসঙ্গত মনে রাখা ভালো, ইতিহাসে কোনও নোবেল পুরস্কারে ভূষিত কবি পরিণত বয়সে শিশুপাঠ্য পুস্তক বা ‘পয়লা পুঁথি’ লিখেছেন– এমন খবর আমাদের জানা নেই।
এত কথার সূত্রে আবার লক্ষ করতে বলব, ‘সহজ পাঠ’ প্রথম ভাগে যে অসামান্য কবিতাগুলি বাংলা কবিতার তথা সাহিত্যের অনশ্বর সম্পদ, তার সবক’টিই যুক্তাক্ষরবর্জিত। এত সরল, সমুজ্জ্বল, দ্রুতগামী, কল্পমায়াময় কাব্যরূপ বিশ্বে বিরল। এই অনবদ্য রূপদক্ষতার প্রতিভায় ঝলমল করছে ‘সহজ পাঠ’। আমরা যে বইয়ের নির্মাণ বা গ্রন্থনাকে সম্ভবত একটু তাচ্ছিল্য বা লঘু দৃষ্টিতে দেখি। রবীন্দ্রনাথ আমাদের নির্বুদ্ধিতায় এবং তাঁকে লঘুমূল্যায়নের প্রবণতা দেখে হাসেন হয়তো। শঙ্খ ঘোষের হাত ধরে এইভাবে আমার পরিচয় হল বশী সেন মহাশয়ের সঙ্গে। চোখের সামনে তিনি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেন।
এই বিষয়ে অনেক কথা হয়েছিল স্যরের সঙ্গে। তখনই জানতে পারি রবীন্দ্র কবিতার ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ (বিভ্রম এড়াতে ‘গীতাঞ্জলি’ নামটি ব্যবহার করছি না। দু’টি দু’-ভাষায় সম্পূর্ণ আলাদা গ্রন্থ।) সংকলনটিতে চলে আসা দীর্ঘদিনের একটি প্রমাদের কথা। সেই গল্পটির মধ্যেও হয়তো লুকিয়ে আছে সম্পাদনা এবং গ্রন্থনাকর্মে লিপ্ত যে কোনও শিক্ষানবিশের প্রতি উপদেশ এবং পরামর্শ। রবীন্দ্রনাথের ‘Song Offerings’-এর ৭৬ সংখ্যক রচনাটির দিকে তাকানো যাক। ‘Day after day, O lord of my life, shall I stand before thee face of face’, বাক্যটি সকলেই জানেন, ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘প্রতিদিন আমি হে জীবনস্বামী, দাঁড়াব তোমারি সম্মুখে’ লেখাটির ইংরেজি তর্জমা। জন রাট্রে (John Rathray) নামের এক ইংরেজ সমালোচক ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথের নজরে আনেন, পাণ্ডুলিপি থেকে ভুলবশত ছাপা হচ্ছে শেষের যতিচিহ্ন। স্বাভাবিক ঝোঁকে এই বাক্যের শেষে থাকার কথা ফুলস্টপ। পাণ্ডুলিপিতেও সেরকমই আছে। কিন্তু, ম্যাকমিলান কোম্পানি পাঁচ-পাঁচটি বাক্যে ছেপেছেন কবিতাজুড়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন! রবীন্দ্রনাথ নাকি মুদ্রণ প্রমাদটি ক্রমাগত ছাপা হয়ে চলেছে দেখে বেশ বিড়ম্বিত, বিরক্ত বোধ করেন। রাট্রেকে বারবার ধন্যবাদ দেন এবং অমিয় চক্রবর্তীকে বিস্মিত গলায় বলেন যে, বাংলাভাষা না জেনেও রাট্রে রচনার অন্তর্লীন ভাববস্তুকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন!
কথাটা এর বেশি স্পষ্ট করেননি রবীন্দ্রনাথ। নিহিতার্থ হল, যে কোনও রচনার যতিচিহ্নটিও বড় কবির হাতে ভিন্ন এক সুরে গাঁথা থাকে। সে সুর অন্তর্নিহিত ভাববস্তুর সমন্বয়ে গ্রথিত। ফলে যতিচিহ্ন বিষয়েও সম্পাদক বা গ্রন্থনাকারীকে অত্যন্ত সতর্ক এবং মনোযোগী থাকতে হবে!
যোড়শ খণ্ড জুড়ে বারেবারে দেখি, সম্পাদক শুধু সংশোধনের জন্য জাগ্রতই নন, তিনি রবীন্দ্ররচনার পাঠককে প্রাসঙ্গিক নানা তথ্য বা প্রয়োজনীয় সূত্র কিংবা উল্লেখযোগ্য মন্তব্য সরবরাহ করতে সদাব্যস্ত। এই ভাবেই ‘বলাকা’ প্রসঙ্গে সম্পাদক শঙ্খ ঘোষ জানিয়ে দেন, “বলাকার কবিতাগুলির মধ্যে তিনটি আছে গান।
৬. ছবি (‘তুমি কি কেবলি ছবি’)
২০. যাত্রাগান (‘আনন্দ গান উঠুক তবে বাজি’)
৩৫. মানসী (‘আজ প্রভাতের আকাশটি এই ’)…”
তারপর দিয়েছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র। কাব্যরূপ এবং গীতিরূপের পার্থক্য যেখানে, সেটিও সযত্নে পরিবেশিত।
‘এই সময় ও জীবনানন্দ’ জুড়ে এই ধরনের কত যে সম্পাদকীয় তথ্য-জোগান দেওয়া হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বিশেষ ক্ষেত্রটি হল ‘সভাবিবরণ’ অংশ। মনে রাখা ভালো, এই প্রবন্ধ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সেই সময় বাংলা সাহিত্য জগতের বহু কীর্তিমান যশস্বী, মহারথী জীবিত। ‘সভাবিবরণ’ অংশে তাঁদের নানা মন্তব্য এবং পরস্পরকে আক্রমণ, বিতর্ক এবং সমর্থনের জমজমাট উপস্থাপনা আছে। বছর তিরিশেক বয়সের আমি সেই সভায় থাকার সৌভাগ্যে গর্বিত। আজও। এখন স্মৃতি মিলিয়ে বিস্তারিত বিবরণ পড়ি। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘যখন উনি (জীবনানন্দ) লিখছিলেন– কাফকার সমসাময়িক কালে লিখছেন প্রায়…’। এখানে পাদটীকায় সঙ্গে-সঙ্গে সম্পাদকের মন্তব্য– ‘কাফকার মৃত্যুর (১৯২৪) পরে পর-পর দুবছরে (২৫, ২৬) ছাপা হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস দুটি। ইংরেজি অনুবাদে The Castle প্রথম ছাপা হয় ১৯৩০ সালে, The Trial ১৯৩৭-এ। জীবনানন্দের গল্প-উপন্যাসগুলি ১৯৩১ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রচিত বলে অনুমিত।’
এই সম্পাদকীয় অনুপ্রবেশ এবং তথ্যের পরিপূরণ পুরো বইটির নতুন এক মাত্রা বা তল নির্মাণ করে। যে কোনও সিরিয়াস সাহিত্য পাঠকের জন্য অপরিহার্য গ্রন্থনা!
(চলবে)
…পড়ুন ভাষ্য শব্দের তর্জনী-র অন্যান্য লেখা…
পর্ব ১. কত কম বলতে হবে, মুখের কথায়, সভায়, কবিতায় কিংবা ক্রোধে– সে এক সম্পাদনারই ভাষ্য
পর্ব ২. তথ্যমূলক তথাকথিত নীরস কাজে শঙ্খ ঘোষের ফুর্তির অন্ত ছিল না
পর্ব ৩. কোনও সংকলনই গ্রন্থনার পূর্ণচ্ছেদ হতে পারে না, ভাবতেন শঙ্খ ঘোষ
পর্ব ৪. শঙ্খ ঘোষ বলতেন, অদৃশ্যে কেউ একজন আছেন, যিনি লক্ষ রাখেন এবং মূল্যায়ন করেন প্রতিটি কাজের
পর্ব ৫: অনিশ্চয়তার কারণেই কি রবীন্দ্রনাথের গানে ও পাণ্ডুলিপিতে এত পাঠান্তর?