আইপিএল-এ খেলার মাঝে মাঝে একটা জিনিস দেখায় খুব। টুর্নামেন্টের সেরা পাঁচটা ক্যাচ। সেই কঠিন থেকে কঠিনতম ক্যাচের মালিকদের নিয়ে চর্চাও হয় রোজ ধারাভাষ্যকারদের টেবিলে। কিন্তু এ তো গেল মাঠের ভিতরের কথা। খেলা তো কেবল মাঠে নয়, একই স্নায়ুকম্পন ওই বিজ্ঞাপনী ছাপ দেয়া কাগজের বাউন্ডারি লাইনের জীবনেও এসে লাগে।
আচ্ছা, আপনাদের কারও মনে আছে সেই ছোট্ট মেয়েটির নাম? ক্রিস গেইলের বিরাট ছক্কায় যার নাক ফেটে যায় বছর সাতেক আগে? মনে আছে কোনও জমজমাট গ্যালারিতে প্রায় ২০ বছর আগে পোস্টার হাতে হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই কিশোরীর নাম যে পোস্টারে লিখে এনেছিল, ‘জাহির আই লাভ ইউ’? নেই। থাকে না। মাঠের কীর্তির একটা স্কোরকার্ড হয়, ইন্টারনেটের দৌলতে সে খেলার হাইলাইটসও মেলে বহু বছর পরেও। কিন্তু মাঠের বাইরের খেলা? তার হিসেব রাখে কোন অদৃশ্য স্কোরকার্ড?
আইপিএল-এ খেলার মাঝে মাঝে একটা জিনিস দেখায় খুব। টুর্নামেন্টের সেরা পাঁচটা ক্যাচ। সেই কঠিন থেকে কঠিনতম ক্যাচের মালিকদের নিয়ে চর্চাও হয় রোজ ধারাভাষ্যকারদের টেবিলে। কিন্তু এ তো গেল মাঠের ভিতরের কথা। খেলা তো কেবল মাঠে নয়, একই স্নায়ুকম্পন ওই বিজ্ঞাপনী ছাপ দেয়া কাগজের বাউন্ডারি লাইনের জীবনেও এসে লাগে। সেদিন টিভিতে কেকেআর, লখনউ সুপার জায়েন্টের ম্যাচ চলছে। লখনউ-এর হয়ে ব্যাট হাতে ক্রিজে মার্কাস স্টয়নিস।
অজি তারকা বৈভব আরোরার শর্ট বলে আপার কাট শট খেললেন হঠাৎ। বল চলে গেল ডিপ-থার্ড অঞ্চলে বাউন্ডারির বাইরে। শূন্যে ভাসমান ক্যামেরা এরপর চোখ ফেরাবে মাঠের দিকে, তেমনটাই দস্তুর। কিন্তু দেখা গেল বাউন্ডারি লাইনের বাইরে এক বল বয় নিজের ডান দিকে বেশ কিছুটা দৌড়ে এসে ক্যাচ ধরে নেন। অর্থাৎ মাঠের ভেতরের ছক্কা মাঠের বাইরে গিয়ে ধরা পড়ে গেল তথাকথিত এক অতি সাধারণ বল বয়ের হাতে!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
লখনউয়ের ডাগ-আউটে বসে থাকা ফিল্ডিং কোচ জন্টি রোডসের চোখ এড়ায়নি বিষয়টা। ফিল্ডিংয়ের রাজা করতালিতে কুর্নিশ জানান বল বয়ের এমন দক্ষতাকে। সেই সঙ্গে তিনি ডাগ-আউট থেকেই হাতের উপর সই করার ইশারায় বুঝিয়ে দেন যে, অটোগ্রাফ চান বল বয়ের– ব্যস ঘটনা বলতে এটুকুই…
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
লখনউয়ের ডাগ-আউটে বসে থাকা ফিল্ডিং কোচ জন্টি রোডসের চোখ এড়ায়নি বিষয়টা। ফিল্ডিংয়ের রাজা করতালিতে কুর্নিশ জানান বল বয়ের এমন দক্ষতাকে। সেই সঙ্গে তিনি ডাগ-আউট থেকেই হাতের উপর সই করার ইশারায় বুঝিয়ে দেন যে, অটোগ্রাফ চান বল বয়ের– ব্যস ঘটনা বলতে এটুকুই…
না। স্টইনিস আউট হননি। ছক্কা হাঁকিয়ে স্কোরবোর্ডকে এগিয়েই নিয়ে গেছেন বরং। কিন্তু সেই বল বয়ের চোখ এক বিরাট বড় লেন্স, যার ভেতর দিয়ে আমরা দেখি অন্য এক মাঠ– বহু চেষ্টাতেও যেখানে বদলায় না স্কোরবোর্ড, সমস্ত ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইটের বাইরে তারা খেলে, কদাচিৎ জিতেও যায়– এমন নিরবচ্ছিন্ন লড়াই জুড়ে জুড়ে মাঠের বাইরে সেজে ওঠা বৃহত্তর কোনও মাঠ- যেখানে লক্ষ লক্ষ দ্বাদশ ব্যক্তি একেকজন নায়ক-প্রতিনায়ক। আষাঢ়ের আচমকা বৃষ্টিতে ভেজে এসব ম্যাচ– কোনও কৃত্রিম পিচ কভার নেই, থেমে যাওয়া নেই, এমনকী ডাকওয়ার্থ লুইসের মতো কেসি নাগ-সুলভ জটিল অঙ্কও নেই। এই ম্যাচের ওপর বাজি ধরে না কোনও বেটিং অ্যাপ, প্রথম একাদশ সাজিয়ে বাজিমাত করার রোমাঞ্চ নেই– সমস্ত গ্যালারিই যেন একটা ফার্স্ট ইলেভেন। প্রতি মুহূর্তে কিছু জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়ার অপেক্ষারা হাত বাড়িয়ে লুফে নিতে চায় অবিশ্বাস্য কোনও ক্যাচ– এক-আধবার যদি নজরে পড়া যায় কাচের দেয়ালের ভেতর বসে থাকা জন্টি রোডসের!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: ‘ফিক্সার’-রা ছিল, আছে, থাকবে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের আরশোলা-র মতো
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আচ্ছা, সে অখ্যাত বল বয়, যে কিনা বাউন্ডারির বাইরে ওই অসম্ভব ক্যাচ লুফে বাহবা কুড়লেন কয়েক মুহূর্তের জন্য– তাঁর নাম কি জানি আমরা? টিভিতে দেখিয়েছিল। একবারই। ম্যাচের শেষে। কোনও নিউজপ্রিন্ট কি কয়েকটা শব্দ বরাদ্দ করেছে সে ছেলেটির নাম লিখতে? জানা নেই। সেই নাম অথরওয়া কে গুপ্তা। কিন্তু সেই নাম গুপ্ত রয়ে যাবে। কোনও দিনই তাকে কিনে নিতে আগ্রহী হবে না কোনও আইপিএল ফ্যাঞ্চাইজি। সেই নাম, আপনার, আমার মন থেকেও উবে যাবে খুব দ্রুত, এই ডিজিটাল দুনিয়ায়। তবুও পচনশীল নয় এমন কাল্পনিক সাদা স্ট্রিপ পেপারে মনে মনে আপনি বা আমি বসিয়ে নিতে পারি আমাদের নাম, আমাদের অখ্যাত গলির কোনও একটা খেলায় যেদিন আমরা একটা মিডব্যাট করেছিলাম, কিংবা আচমকা ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতে কিনে এনেছিলাম কড়াপাকের সন্দেশ– আমাদের সব্বার নাম লেখার জন্য ওই সাদা পাতা পড়ে থাকে। ডিজিটাল বোর্ডের স্কোরকার্ডে না থাকলেও তার ঠিক পাশটাতেই দ্বাদশ ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাট হেলান দিয়ে রাখা চিরকাল…