কড়চা। চারপাশে কী হচ্ছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কী কী বদল হচ্ছে, কী কাজ হচ্ছে নাটকে-গানে-কবিতায়। এই কলকাতা এবং কলকাতার বাইরেও, বাঙালির কী হালচাল, তা নিয়েই আমাদের ‘ক্ক’। প্রতি সপ্তাহে নজর রাখুন।
প্রচ্ছদ: অর্ঘ্য চৌধুরী
নীরবিন্দু
কবিতাকেই ‘মাতৃভাষা’ বলে মনে করতেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মনে করতেন, কবিতার থেকে সময় চুরি করে তা ব্যবহার করেছেন গদ্যে। কবিতার তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ‘নীল নির্জন’ (১৯৫৪) কাব্যগ্রন্থর মাধ্যমে। লিখেছেন আত্মজীবনী ‘নীরবিন্দু’। বাংলা কবিতার আবহমান আকাশে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বহু কবিতাই ‘প্রবাদ’ হয়ে গিয়েছে। ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘কলকাতার যিশু’– এছাড়াও বহু। কিন্তু প্রবাদ হয়ে যাওয়া কবিতা-পঙক্তি দিয়েই শুধু একজন কবিকে বিচার করা চলে না। তাঁর মূল্যায়ন আজীবনের লেখালিখিতে, সম্পাদনায়, অনুবাদে, জীবনবোধে। এ বছর তাঁর শতবর্ষ। ‘সাহিত্য অকাদেমি’র পক্ষ থেকে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শতবর্ষ উপলক্ষে দু’দিনের আলোচনা চক্র আয়োজিত হয়েছে। আজ ও আগামিকাল– ডি এল খান রোডে সাহিত্য অকাদেমির প্রেক্ষাগৃহে এই অনুষ্ঠান। স্বাগতভাষণ কে শ্রীনিবাসরাওয়ের। ভূমিকায় ব্রাত্য বসু। আলোচনা সভার উদ্বোধনে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। মুখ্য ভাষণ দেবেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সভামুখ্য মাধব কৌশিক। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবনীর মোড়ক উন্মোচন হবে আজ। আজকে বক্তব্য রাখবেন বারিদবরণ ঘোষ, চিন্ময় গুহ, শেখর বসু, হর্ষ দত্ত, প্রচেত গুপ্ত এবং পবিত্র সরকার। তাঁদের বিষয় ঘোরাফেরা করবে ব্যক্তি নীরেন্দ্রনাথ ও তাঁর সমকালের ওপর ভিত্তি করে। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন, রবিবার– গদ্যকার নীরেন্দ্রনাথ নিয়ে কথা বলবেন রমেনকুমার সর, সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুমিতা চক্রবর্তী। মধুশ্রী সেন সান্যাল, প্রসূন ঘোষ এবং শিউলি সরকার কথা বলবেন কবির গদ্য ও কল্পনার জগৎ নিয়ে। ‘কবি নীরেন্দ্রনাথ’ অংশের বক্তা পিনাকেশ সরকার, তরুণ মুখোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণরূপ চক্রবর্তী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন ক্ষেত্রবাসী নায়ক। সমাপ্তি ভাষণ অভিরূপ সরকারের। দেখানো হবে, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে কেন্দ্র করে বানানো একটি তথ্যচিত্রও।
…………………………………………………………………………………………………………………………..
শরৎকাল আসন্ন
বাংলায় কথাসাহিত্যের ভোজসভায় সাধারণের জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলেন তিনি। আম পাঠকের কাছে ‘কথাশিল্পী’-র সম্মান পেয়েছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আবার তাঁর হাতে বাংলা কথাসাহিত্যের এই ধারাবদলকেই বিশ্লেষণ করে দেখতে চেয়েছেন গবেষক-সমালোচকেরা। সেই উদ্দেশ্যেই আগামী ৯ অগস্ট, শুক্রবার, এক আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছে শরৎ সমিতি। ২৪, অশ্বিনী দত্ত রোডে শরৎচন্দ্রের বাসভবনে সকাল দশটায় শুরু হবে ‘শরৎচন্দ্র ও বাংলা কথাসাহিত্যের রূপান্তর’ শীর্ষক এই আলোচনাপর্ব। শ্যামলকুমার বসুর স্বাগত ভাষণের সঙ্গে সঙ্গেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সতী চট্টোপাধ্যায়। সভামুখ্য রামকুমার মুখোপাধ্যায়। সূচক ভাষণে গোপা দত্তভৌমিক। সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু প্রথম অধিবেশনের সভামুখ্য সুমিতা চক্রবর্তী, বক্তা রুশতী সেন এবং স্বপন পাণ্ডা। দুপুর দুটো থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় অধিবেশন। সেখানে বক্তব্য রাখবেন ছন্দা ঘোষাল এবং সুমন ঘোষ, সভামুখ্য সুনন্দন সেন। সামগ্রিক ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দায়িত্বে দীপেন্দ্রনাথ ঘোষ।
…………………………………………………………………………………………………………………………..
লাইনে আসুন
একাধিক বিন্দু বা রেখার সমন্বয়কেই কি কেবল ছবি বলে? নাকি আর্ট আসলে তা-ই, যা সাজানো আঙ্গিক পেরিয়ে পৌঁছে যায় এক প্রশস্ত দিগন্তে! এডওয়ার্ড ম্যুঙ্খ বলেছিলেন যে ছবির মধ্যে চারিয়ে দিতে হবে কিছু মানবিক উপাদান। একই উচ্চারণ করেছিলেন ভাস্কর হেনরি মুর। আর সেই ইঙ্গিতের পথ ধরেই নির্মাণ সঞ্জয় ঘোষের চিত্র প্রদর্শনী, ‘বিয়ন্ড দ্য লাইনস অ্যান্ড ফর্মস’-এর।
সঞ্জয় ঘোষ স্বশিক্ষিত শিল্পী। প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী করেন ১৯৯৬ সালে। সেই প্রথম স্বাক্ষরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল গণেশ পাইন, বি.আর. পানেসর প্রমুখের। ১৯৯৯ সালে ফের একক প্রদর্শনী, যার ভূয়সী প্রশংসা করেন শিল্পী পরিতোষ সেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালেও দেবভাষা ও অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছিল যোগেন চৌধুরী এবং গণেশ হালুই-এর হাত ধরে। আগামী ৩ আগস্ট শনিবার, সন্ধ্যা সাড়ে ছটায়, চারুবাসনার সুনয়নী চিত্রশালাতে সঞ্জয় ঘোষের একক চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন যোগেন চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন শ্রী গণেশ হালুই, বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকছেন সমীর আইচ ও তাপস কোনার। শিল্পীর পূর্ববতী ছবি নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হবে, ‘Across the darkness; The paintings and drawings of Sanjay Ghosh’। প্রদর্শনী চলবে ১০ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত।
…………………………………………………………………………………………………………………………..
কলকাতা বাসযোগ্য
কলকাতায় এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে বাস চলে না। সহজ করে বললে, কলকাতাবাসীর বাস ছাড়া দিন চলে না। যদিও বাসযাত্রার সঙ্গে অফিস যাওয়ার তাড়াহুড়ো কিংবা দিন শেষের ক্লান্তির নিবিড় সম্পর্ক। সেই ধারণা বদলাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা বাস-ও-পিডিয়া। অফিস ফেরত ক্লান্তি নয়, ফুরফুরে মেজাজে বাসে চড়ে শহর ঘোরার সুযোগ করে দিচ্ছে এই সংস্থা। গত বছরও একইভাবে ‘বাসযাত্রা ১’ আয়োজন করা হয়েছিল। সেই উদ্যোগে সাফল্য পেয়ে বাসযাত্রা ২ আয়োজন করেছে এই সংস্থা। মোট তিনটি রুটের বাস এই যাত্রায় যোগ করা হয়েছে। থাকছে সল্টলেকের সবথেকে পুরনো 44A, বছর চারেক আগে নতুন করে ফিরে আসা 239, এবং জনপ্রিয় 47। এইসব বাস প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর গল্প সঙ্গে নিয়ে ছুটে বেড়ায় শহরের ইতিউতি। কিন্তু বাসের গল্প জানে কজন? ‘বাসযাত্রা ২’ সেই খোঁজই করবে। ২৭ তারিখ দুপুর ২ থেকে কসবায় শুরু হবে ‘বাসযাত্রা ২’। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করবেন বাস-ও-পিডিয়ার সদস্যরা। যে কোনও বাসপ্রেমী এই উদ্যোগে শামিল হতে পারেন। প্রথমে সল্টলেক ১২ নম্বর ট্যাঙ্ক, সেখান থেকে সল্টলেকের বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে ১২ নম্বর ট্যাঙ্ক স্টপেজেই বাসযাত্রা শেষ হবে। ঘণ্টা চারেকের অনুষ্ঠানে মূলত মনে করা হবে হারিয়ে যাওয়া বাস রুটগুলিকে। একসময় রীতিমতো জনপ্রিয় হলেও, পরিকাঠামোর অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু বাস। চিরতরে হারিয়েছে সেইসব বাসের রুট। বিকল্পও তৈরি হয়ে বেশ কিছু জায়গায়। কিন্তু যারা নিয়মিত বাসের ভরসায় দিন কাটাতেন তাঁদের মনে এখনও রয়ে গিয়েছে এইসব বাস। সেই গল্প মনে করাতেই বাস-ও-পিডিয়ার উদ্যোগে আয়জিত হতে চলেছে ‘বাসযাত্রা ২’।
বাদল অধিবেশন
‘‘বাদল সরকার, তাঁর চর্চা, চিন্তা, দর্শনকে কেন্দ্রে রেখে বৃত্ত বানিয়ে তোলা। এ বৃত্ত বানাতে লাগবে না কোনও এজেন্ট। লাগবে না ফুল-চন্দন-উপঢৌকন। চাই কেবল সতত গতিশীল চলমানতা। চাই হাত ধরার আশ্বাস, চোখ বন্ধ করে এনার্জি ‘পাস’ করে দিতে পারার ও ক্রমশ সেই এনার্জিকে বড় ও বৃহৎ করার প্রতিজ্ঞা।’’– রোববার.ইন-এর পাতায় একথা লিখেছিলেন রজত দাস, বাদল সরকারের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে, এক গদ্যে। বাদল সরকারকে চিনে নেওয়া, বুঝে নেওয়ার উপায় তাঁর লেখা, তাঁর সাক্ষাৎকার ও নাট্য প্রযোজনা। কিন্তু তার বাইরে? সম্ভবত বাদল সরকারকে স্পর্শ করা, বাদল-চিন্তা স্পর্শ করা কিছু মানুষ যদি দু’চার কথা বলেন। ধরিয়ে দেন, একদিন এই শিল্পভূমিতে বাদল এসেছিলেন। বাংলা নাটকে সেই চেয়ারটি এখন মহাকালের দখলে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের লড়াইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শান্তিপুর সাংস্কৃতিক আয়োজন করেছে ‘শতবর্ষে বাদল সরকার’ নামাঙ্কিত এক অনুষ্ঠান। ‘শতবাদল’ সংস্থা পরিবেশনা করবে পটের গান ‘পালাবদল’। শান্তিপুর সাংস্কৃতিক-এর পরিবেশনায় দেখা যাবে নাটক ‘প্রমিথিউস বাউন্ড’। এদিনের বক্তা রজত দাস বলবেন বাদল সরকার নিয়ে। ২৮ জুলাই শিল্পাঙ্গন রক্তকরবী-তে এই অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। প্রবেশ অবাধ।
জীবনজোড়া নৃতাল
জীবনের সবেতেই আছে ছন্দ। তবুও নাচ-গান-কবিতা আরও ছন্দোময়, আরও বাঙ্ময়। নিজেদের চলার পথে নাচের ছন্দকে আশ্রয় করে ২৮ বছর পার করে ফেলেছে ‘নৃতাল ছন্দ ডান্স সেন্টার’। তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগামীকাল ২৮ জুলাই চাঁদের হাট বসতে চলেছে পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে। অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন সৌরভ চন্দ। উপস্থিত থাকবেন ইন্দ্রাণী দত্ত, মালবিকা সেন, কোহিনুর সেন বরাট, সোনালী চৌধুরী-সহ আরও অনেকে। উদ্বোধন করবেন, রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, তাঁর সঙ্গে থাকবেন মদন মিত্র-সহ আরও অনেকে। বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠানের সূচনা। নৃতালের সদস্যরাই মূলত অনুষ্ঠান করবেন। নাচে-গানে জমাটি সন্ধ্যার সাক্ষী থাকতে চলেছে পাইকপাড়ার প্রেক্ষাগৃহ।
সহায়তা: রণিতা চট্টোপাধ্যায়, শুভদীপ রায়, সম্বিত বসু