Robbar

সাইবাবা এবং সাইবাবার স্বপ্নকে একসঙ্গে হত্যা করা যায় না

Published by: Robbar Digital
  • Posted:October 18, 2024 1:41 pm
  • Updated:October 18, 2024 1:41 pm  

দশ বছর নাগপুর জেলের নরক-সম অভিজ্ঞতা সয়েও নিপীড়িত মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতায় অবিচলিত সাইবাবা। কারাযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার অব্যবহিত পরেই এক সাক্ষাৎকারে সরব হয়েছিলেন দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সরকারি শিক্ষানীতি এবং বেসরকারিকরণের ফলে আদিবাসী এবং দলিত ছাত্রছাত্রীরা প্রবল বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। জেলের মধ্যেও বর্ণবৈষম্যের চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটে এবং মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে প্রান্তিক জনজাতির মানুষেরা বিচারহীন অবস্থায় জেলে দিন গুজরান করতে বাধ্য হন। আলোমানুষ সাইবাবা তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সঙ্গে তথ্য-যুক্তি যোগ করে ভারতীয় সমাজব্যবস্থার দুঃখজনক ছবি তুলে ধরেছিলেন। দীর্ঘ জেলজীবনে বিচারের প্রহসন, কর্তৃপক্ষের অত্যাচার এবং শারীরিক সঙ্কট তাঁর অনমনীয় চেতনায় চিড় ধরাতে পারেনি। সসম্মানে অভিযোগমুক্ত হয়ে সাইবাবা আক্ষেপ করেছিলেন তাঁর বিদ্যায়তনিক জীবনের দীর্ঘ দশটি বছর নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রবুদ্ধ ঘোষ

‘স্বপ্ন এবং স্বপ্নদর্শীকে একসঙ্গে হত্যা করা যায় না’– মণিভূষণ ভট্টাচার্যের কবিতার এই রাজনৈতিক বোধ অমলিন। এত দশক পেরিয়ে এসেও তার গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। কারণ, দ্রোহগন্ধী স্বপ্ন দেখার বাস্তবতা এখনও রয়েছে। আর, গোকারাকোন্ডা নাগা সাইবাবার মতো কোনও কোনও শির-উঁচু আলোমানুষ সেইসব স্বপ্ন চারিয়ে দেন সমস্ত নিপীড়িত মানুষের চেতনায়। তাই সাইবাবাকে দমিয়ে রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতন চালায় রাষ্ট্র। অমূলক মামলায় জড়িয়ে তাঁর কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কেড়ে নেয় শাসক। তিলে তিলে তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।

NPRD Condoles the Death of G N Saibaba | Peoples Democracy
গোকারাকোন্ডা নাগা সাইবাবা

তথ্য এবং মেডিক্যাল রিপোর্টে উল্লেখ, বিশেষভাবে সক্ষম সাইবাবার শরীরে ৯০% প্রতিবন্ধকতা ছিল। তিনি হুইলচেয়ারের ওপরে নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু, সাইবাবার বৌদ্ধিক সক্ষমতা, মতাদর্শগত দৃঢ়তা এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তার কাছে এহেন প্রতিবন্ধকতা বরাবরই তুচ্ছ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া, রাজনৈতিক সভা-সম্মেলনে বক্তব্য রাখা, মানবাধিকার রক্ষার একাধিক জনপ্রতিরোধমূলক মঞ্চে সক্রিয় উপস্থিতি, নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার কাজ চালানো সাইবাবা অক্লান্ত। আর, এই সব কাজই তাঁর দায়বদ্ধতা, তাঁর প্রাত্যহিকতার অংশ। সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি তাঁর অফুরান দায়বদ্ধতা। ন্যায় ও সমতার পক্ষে থাকার এবং শোষণহীন সমাজভাবনা প্রচারের দায়বদ্ধতা। তাঁর সচেতন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের শুরু হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই। গবেষণার রসদ সংগ্রহে ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। নীরস তথ্য সংগ্রহ আর বিদ্যায়তনিক স্বার্থসিদ্ধি না, সহমর্মী হয়ে জুড়ে গেছেন সেই মানুষগুলির বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে। বিপ্লবী গণতান্ত্রিক সঙ্ঘের সহ-সম্পাদক থাকার সময়েই ভারতীয় জনতার প্রতিরোধ মঞ্চের হয়ে বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে ঘুরে জনমত সংগ্রহ করেন। লুটেরা কর্পোরেট সংস্থাগুলির হাতে ভারতের জল-জমি-জঙ্গল তুলে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র অপারেশন গ্রিন হান্ট শুরু করেছিল। বিদ্যায়তনিক পরিসরের যে অল্প কিছু মানুষ লেখায় ও বক্তৃতায় প্রকাশ্যে অপারেশন গ্রিন হান্টের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন, সাইবাবা তাঁদের অন্যতম। আদিবাসী-মূলবাসীদের জল-জঙ্গল-জমি লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে তাঁর তথ্যনিষ্ঠ ও যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনা শাসককে অস্বস্তিতে ফেলেছে বারবার। এমনকী, দশ বছর নাগপুর জেলের নরক-সম অভিজ্ঞতা সয়েও নিপীড়িত মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতায় অবিচলিত সাইবাবা। কারাযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার অব্যবহিত পরেই এক সাক্ষাৎকারে সরব হয়েছিলেন দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সরকারি শিক্ষানীতি এবং বেসরকারিকরণের ফলে আদিবাসী এবং দলিত ছাত্রছাত্রীরা প্রবল বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। জেলের মধ্যেও বর্ণবৈষম্যের চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটে এবং মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে প্রান্তিক জনজাতির মানুষেরা বিচারহীন অবস্থায় জেলে দিন গুজরান করতে বাধ্য হন। আলোমানুষ সাইবাবা তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সঙ্গে তথ্য-যুক্তি যোগ করে ভারতীয় সমাজব্যবস্থার দুঃখজনক ছবি তুলে ধরেছিলেন। দীর্ঘ জেলজীবনে বিচারের প্রহসন, কর্তৃপক্ষের অত্যাচার এবং শারীরিক সঙ্কট তাঁর অনমনীয় চেতনায় চিড় ধরাতে পারেনি। সসম্মানে অভিযোগমুক্ত হয়ে সাইবাবা আক্ষেপ করেছিলেন তাঁর বিদ্যায়তনিক জীবনের দীর্ঘ দশটি বছর নষ্ট হয়ে গেছে। দিল্লির বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাঁর কম্পিউটার এবং পেন ড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করেছিল। ওই কম্পিউটার আর পেন ড্রাইভে রক্ষিত ছিল তাঁর দু’দশকের গবেষণার রসদ, সন্দর্ভের খসড়া, গবেষণাপত্র, সম্পাদিত বইয়ের খসড়া, ছাত্রছাত্রীদের জমা-দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট, তাদের এমফিলের সন্দর্ভ, পারিবারিক আলোকচিত্র। উপর্যুক্ত তথ্যগুলি ঘেঁটে পুলিশ আদালতে কোনও অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি, কিন্তু সাইবাবার জীবনের অমূল্য সম্পদগুলি সম্পূর্ণ নষ্ট করে বৈদ্যুতিন যন্ত্রগুলি ফেরত দিয়েছিল।

To, Professor G.N. Saibaba, Anda Cell, Nagpur Central Jail
যৌবনে

২০১১ সালে একটি সর্বভারতীয় ছাত্র সম্মেলনে অতিথি হয়ে কলকাতায় এসেছিলেন সাইবাবা। ভারতে মানবাধিকার রক্ষা আন্দোলনের এবং নিপীড়িতের স্বর উপস্থাপনের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি এসেছিলেন। তাঁর প্রায় আধঘণ্টার বক্তব্যে কোনও জড়তা ছিল না, শারীরিক অস্বস্তির বহিঃপ্রকাশ ছিল না। কোনও অধ্যাপকসুলভ দেখনদারি ও গাম্ভীর্য ছিল না। সর্বোপরি, খ্যাতনামা বিদ্বান হয়েও অহেতুক-ভারি শব্দাবলি এড়িয়ে ছাত্রদের বোধগম্য ভাষায় কথা বলেছিলেন তিনি। অপারেশন গ্রিন হান্টের নামে একদিকে আদিবাসীনিধন, অন্যদিকে গুটিকয়েক কর্পোরেটের স্বার্থে পরিবেশ ও সংশ্লিষ্ট জীবিকাপ্রবাহকে বলি দেওয়া– খুব স্পষ্ট ভাষায় ব্যাখ্যা করেছিলেন সাইবাবা। গণতন্ত্র রক্ষার রাজনৈতিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজের উজ্জ্বল ভূমিকা এবং মেহনতি জনতার সঙ্গে সেতুবন্ধনের সম্ভাব্য কৌশল বিষয়ে তাঁর ভাবনা এত বছর পরেও সমান প্রাসঙ্গিক।

After the police raid at the residence of Delhi University professor GN Saibaba in New Delhi. (Express Photo By Amit Mehra)
দিল্লিতে প্রফেসর সাইবাবা-র বাড়িতে পুলিশের তল্লাশির পর

আদিবাসী ও দলিতদের ওপরে মিথ্যে মামলা চাপিয়ে দিয়ে তাঁদের আর্থিক ও অবস্থানগত অসহায়তার জাঁতাকলে পিষ্ট করার শোষণমূলক পদ্ধতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন আরেক আলোমানুষ– স্ট্যান স্বামী। ঝাড়খণ্ডের জেলগুলিতে বিচারাধীন আদিবাসী ও দলিতদের যন্ত্রণার তথ্যপ্রমাণাদি নিয়ে তাঁর গবেষণা সরকারের চক্ষুশূল ছিল। তাই ২০১৮ সালের ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় স্ট্যানকেও জড়িয়ে নেয় রাষ্ট্র। স্নায়ুর জটিল অসুখে ভোগা অশীতিপর বৃদ্ধকে জেলবন্দি রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল রাষ্ট্র। ২০২১ সালের জুলাই মাসে। পারকিনসন্সে ভোগা বৃদ্ধকে সিপার-স্ট্র দেয়নি অমানবিক জেল কর্তৃপক্ষ। না, স্ট্যানের মৃত্যুর পরেও তাঁর বিরুদ্ধে আনা কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্র। সাইবাবা জানতেন স্ট্যানের মতোই তাঁকে নির্মম নির্যাতনে দগ্ধ করে মারতে চলেছে রাষ্ট্র। নাগপুর জেলের ‘আন্ডা সেল’ থেকে লেখা একাধিক চিঠিতে সাইবাবার উদ্বেগ স্পষ্ট ছিল– প্রবল গরমে ন্যূনতম পরিসেবা পান না, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়ার আবেদনে কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয় না, ‘আন্ডা সেল’-এর প্রতিকূলতা তাঁকে ক্ষইয়ে দিচ্ছে প্রত্যহ। একুশ শতকের ভারতে একজন বিশেষভাবে সক্ষম ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তি কারাগারে অসহায় যন্ত্রণা ভোগ করছেন, বিচারব্যবস্থার পক্ষে এ বড় লজ্জার বিষয়। ২০১৪ সালের মে মাসে অধ্যাপক সাইবাবা গ্রেপ্তার হন ইউএপিএ-তে। অভিযোগ– রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র সঙ্গে সম্পর্করক্ষা এবং নিষিদ্ধ পুস্তকাদি পঠন ও প্রচার। ২০১৭ সালে মহারাষ্ট্রের গড়চিড়ৌলির জেলা-আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় সাইবাবা, হেম মিশ্র সহ পাঁচজনের। ২০২০ সালে জাতিপুঞ্জের স্বাস্থ্যবিভাগের প্রতিনিধি দল তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। তার পরেও বম্বে আদালতে খারিজ হয়ে গেছে তাঁর স্বাস্থ্যভিত্তিক জামিনের আবেদন। ২০২২ সালের অক্টোবরে আইনরক্ষকদের ভর্ৎসনা করে সাইবাবাদের সসম্মানে মুক্তি দেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি। কিন্তু, যতবারই কোনও নিম্ন আদালত তাঁদের মুক্তি দিয়েছে, ততবারই শাসকপক্ষ অন্ধ আক্রোশে উচ্চতর আদালতে মামলা করেছে। সাইবাবার মতাদর্শগত অনুশীলন এবং বৌদ্ধিক আলোকে এতটাই ভয় পায় তারা। সরকারি কলকাঠিতে তাঁর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালে। সরকারি পক্ষ আদালতে সাইবাবাকে কমিউনিস্ট-মাওবাদী পার্টির সদস্য প্রমাণ করতে তাঁর লেখা বিদ্যায়তনিক গবেষণাপত্র ব্যবহার করেছিল। গবেষণাপত্রে ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ’ এবং ‘সাম্রাজ্যবাদ’ শব্দদু’টি ব্যবহার করার জন্য তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসী সাজানোর চেষ্টা করেছিল তারা। এইসব কুচেষ্টা ভারতের বিদ্যায়তনিক গবেষণাক্ষেত্রের স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।

WHY DO YOU FEAR MY WAY SO MUCH? POEMS AND LETTERS FROM PRISON eBook : G.N.  Saibaba: Amazon.in: Kindle Store

……………………………………….

পড়ুন প্রতীকের লেখা: গৌরী লঙ্কেশ এখন অবান্তর স্মৃতি

……………………………………….

অবশেষে ২০২৪ সালের মার্চে সাইবাবা সহ অভিযুক্ত পাঁচজনকে বেকসুর মুক্তি দিতে বাধ্য হয় শীর্ষ আদালত। আশ্চর্যের ব্যাপার, তারপরেও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে অধ্যাপনার চাকরিতে পুনর্বহাল করেনি। বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রে তাঁকে তাঁর ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত রেখেছে সরকার। রাষ্ট্রীয় পেষণে গবেষণার অজস্র অমূল্য সম্পদ হারিয়েছেন তিনি। ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য এই ‘শাস্তি’ই কি তাঁর প্রাপ্য ছিল? ২০১৭ সালে সাইবাবা তাঁর স্ত্রী ভাসান্থাকে লেখা চিঠিতে প্রশ্ন করেছিলেন– ‘আমরা সামান্য মানুষ। সামান্য মানুষের সামান্য অধিকারের জন্য আমাদের সামান্য লড়াই। তবু কেন এই বিশাল ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমাদের আশা, ভালোবাসা, স্বপ্নকে এত ভয় পায়? কারও প্রতি কোনও অপরাধ করেছি? কারও কোনও ক্ষতি করেছি আমরা? কেন আমাদের সামান্য জীবন তছনছ করে দিল ওরা? আমাদের স্বপ্নকে দাগিয়ে দিল? আমাদের আশা-ভরসা সব নির্মমভাবে পিষে দিল?’

তবু, রাষ্ট্রের এই অতি চেনা অমানবিক আচরণের মধ্যেও সাইবাবা যে কীভাবে বাঁচার রসদ, ভালোবাসার জোর খুঁজে পেতেন! নিঃসঙ্গতা আর অনিশ্চয়তা পেরিয়ে বাঁচার জেদ। আন্ডা সেলের ক্ষুদ্রতা ছাপিয়ে তাঁর মনের জানালা দিগন্তপ্রসারী। সে জানালায় ভালোবাসা, দ্রোহেচ্ছা আর জিজীবিষার অক্ষরমালা। বেঁচে থাকার জেদ ব্যক্তিগত ইচ্ছেপূরণে নয়, বরং সমষ্টির স্বার্থে এবং শ্রেণিহীন-বর্ণহীন-লৈঙ্গিকশোষণহীন সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে। ভালোবাসা আর দ্রোহ পরিপূরক। সাম্যের গান আর মানবমুক্তির পথ অভিসারী। ভাসান্থার উদ্দেশে কবিতা লিখেছিলেন-

বিচ্ছেদের গাঢ় ব্যথায়

এই বদ্ধ বেঁচে থাকায়

তোমার বুকের দুরুদুরু আমার কানে বাজে

 

আর একটু সবুর রাখো

সাহসে বুক বাঁধো

দ্যাখো, অমোঘ ভোরের আলো কাছেই

 

আমার মুক্তি, আমার জান,

তোমার হাতের ওই মশাল

আর একটু তুলে ধরো

 

সাইবাবা কমিউনিস্ট। নিপীড়িত মানুষের পক্ষে আজীবন লড়াই করা প্রমিথিউস তিনি।

একদা ভাসান্থাকে চিঠিতে লিখেছিলেন– ‘আমরা কি পারব আমাদের স্বপ্নের ওপরে নেমে আসা সমস্ত নির্মম ও অমানবিক নির্যাতনের প্রতিস্পর্ধী হয়ে আমাদের সামান্য বসতি আমাদের সামান্য দুনিয়াকে সাজিয়ে তুলতে? এই অন্ধকার সময়ে ভেঙে পড়ো না। অন্ধকার চিরকালীন না। এ কোনও ফাঁকা আশাবাদ না, এ কথা ইতিহাসে বারংবার প্রমাণিত সত্য।’ আলোমানুষ সাইবাবা আর নেই। কিন্তু এই অন্ধকার সময়ে ভেঙে না-পড়ার এবং মানুষের দুনিয়াকে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক পরিসর রক্ষার নিরবচ্ছিন্ন ন্যায়-আন্দোলন জারি রাখার মধ্যে দিয়েই তাঁকে ট্রিবিউট জানানো যেতে পারে।

(সাইবাবার কবিতা ও চিঠিগুলির অনুবাদ এ প্রবন্ধের লেখকের। ‘হোয়াই ডু ইউ ফিয়ার মাই ওয়ে সো মাচ’ বই থেকে।)