ছোটবেলায় মহাজাতি সদনে ম্যাজিক দেখতে যাওয়া হোক, বা ব্যস্ত কলকাতার মাঝেই হঠাৎ একটা মাঠের তাঁবুতে ঢুকে পড়া আফ্রিকান বা অজন্তা সার্কাস দেখতে, যে রোমাঞ্চ দিত, সেই রোমাঞ্চ কি লুমিয়ের ব্রাদার্সের ট্রেন দেখে হল ছেড়ে পালানো দর্শকের উত্তরাধিকার? দর্শকেরও কি আদতে পুনর্জন্ম হয় না? এই যে ‘জনতা সিনেমাহল’-এর নাতিদীর্ঘ সফর, তা তো কখনও মনমরা কোনও পানশালায়, কখনও রাতের হলুদ ট্যাক্সিতে তৈরি হয়েছে, কখনও আগের প্রজন্মের বলা গল্পকথায় খুলে গেছে রূপকথার ডালি। আজ শেষ কিস্তি।
৪২.
২০০৭-এর ১৪ মার্চ আমাদের ক্লাস সেভেনের অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। সেই দিন বিকেলে খেলাধুলো সেরে ফেরার সময় থেকেই হঠাৎ খবর এসে পৌঁছতে থাকে, নন্দীগ্রামে গোলাগুলি চলেছে। আমরা বুঝতে পারি, রাজ্যের অবস্থা বদলাচ্ছে। বনধ, মিছিল চলতে থাকল। ফাঁকা রাস্তায় খেলনা পিস্তল রেখে আমরা পুলিশকে চমকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝেছিলাম, নকলনবিশি মস্তানি করে কোনও লাভ নেই। আর কয়েক মাসের মধ্যেই ২৬/১১-র সন্ত্রাসী হামলা। মজার বিষয়, তার ঠিক কয়েকমাস আগেই মুক্তি পেয়েছিল নীরজ পাণ্ডের ‘আ ওয়েডনেসডে’।
আমাদের তখন সদ্য মার্কিন উচ্চারণে পেয়েছে, ক্লাসরুম পুরুষতান্ত্রিক, কোচিং তো কো-এড, সেখানে একটু দর বাড়ে ‘ম্যারিকান অ্যাকসেন্ট’ উচ্চারণ করতে পারলে। ভবিষ্যতে নাকি এই উচ্চারণ কদর দেবে। মনে মনে আমেরিকাকে অপছন্দ করার রাজনৈতিক অভিজ্ঞান তখনও আসেনি, তাই কথায় কথায় ‘ওয়েনেসডে’ বলা প্র্যাকটিস করতাম। সেই ছবিতে নাসিরুদ্দিন শাহ ও অনুপম খেরের এক দীর্ঘ কথোপকথনে তুলে ধরা হল, সন্ত্রাসবাদ বনাম রাষ্ট্র দ্বন্দ্বের মাঝে আর. কে. লক্ষ্মণের সেই ‘কমন ম্যান’-এর অসহায়তা। নাসিরুদ্দিনের চরিত্রের নাম শেষাবধি চাপা থাকে, অথচ বিভিন্ন লব্জ ও শব্দচয়নে বোঝা যায়, সেই চরিত্র হিন্দু নয়।
এর এক বছর পর কবির খানের ‘নিউ ইয়র্ক’-এ ইরফান খান অভিনীত রোশন একটি সংলাপে বলে, যে দাগ মুসলিমদের গায়ে লেগেছে, তা তাদেরই মুছতে হবে। করণ জোহরের ‘মাই নেম ইজ খান’ আরও একবছর পর, সেখানে খোদ শাহরুখ খান বলছেন, ‘মাই নেম ইজ খান, আই অ্যাম নট আ টেররিস্ট’। এর আশপাশেই এক আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেন, একজন ‘এক্সট্রিমিস্ট’ আদতে ‘এক্সট্রিমিস্ট’-ই। তার গায়ে হিন্দু বা মুসলিম তকমা জোড়ার মানে নেই। বলিউড তখন যে ‘গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম’ আখ্যান তুলে ধরতে ব্যস্ত, এবং মুসলিম পরিচালক অভিনেতাদের সেই আখ্যান নির্মাণে অংশ নিতে হচ্ছে, খানিক বাধ্যতই, তাতে কিছুটা ইঙ্গিত হয়তো লুকিয়ে ছিল, ২৬/১১ ও তার আশপাশের নানা ঘটনা কেন্দ্র করে এবার নতুন ভারতীয় মন তৈরি হবে। ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’-র মতো ছবি তাকে আর ছোঁবে না। ওদিকে লেম্যান ব্রাদার্সের পতন ও সেই তিনের দশকের মহামন্দার পরের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও বেকারত্বর ঢেউ যে ত্রাসের জন্ম দিল, তা ওয়াল স্ট্রিট থেকে ছড়িয়ে পড়ল সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত। চুপিসারে চাকরিছাড়া হল অনেকেই। ওদিকে রাজ্যে শিল্প ও কৃষি নিয়ে চরম উতরোল, দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে নাগরিক সমাজ, আর গ্রামবাংলায় সলতে পাকছে অশান্তির।
ক্লাস এইটে আমরা স্কুলের বেঞ্চে বসে পাকছি, টিফিনের সময় চট করে স্কুলের পাশের গলিতে গিয়ে যারা দু’টান দিয়ে আসছে, তাদের সমীহও করছি, মুখ একটু ঘুরিয়েও রাখছি। নানাবিধ নিষিদ্ধ নিয়েই তো বয়ঃসন্ধি, কৈশোর কেটে যায়। বিভিন্ন নিষিদ্ধর মধ্যেই তালিকায় ছিল রাজনীতি নিয়ে চর্চাও। যতই বাড়িতে দিনরাত আলোচনা হোক জমি অধিগ্রহণ নিয়ে, পলিটব্যুরো কী বলছে তাই নিয়ে যতই কাটাছেঁড়া চলুক, স্কুলের সামনের রোয়াক থেকে স্টাফরুমে, আমরা নাবালক সেজে বসে থাকব, দস্তুর ছিল এমনটাই! কিন্তু সময়ের স্রোতে সব নিষেধ ভেসে যাচ্ছিল। দুম করে ঘটে গেল লালগড়। সেই সাতের দশকের অস্থির সময়ের আঁচ এসে লাগল আমাদের মনে, মাথায়। তখনকার মতো শহরজোড়া টেনশন নেই, কিন্তু টের পাই, মাঝেমধ্যেই আমাদের টিউশন পড়তে যাওয়ার ফাঁকে, হেদুয়া-কলেজস্ট্রিট থেকে যাদবপুর-বিজয়গড়ে দেওয়াল লিখন চলছে চোরাগোপ্তা। ওদিকে টিভি চ্যানেল থেকে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় তখন গামছা বাঁধা মুখেরা উঁকি দিচ্ছে। কখন কোথায় বিস্ফোরণ ঘটবে, রাষ্ট্রযন্ত্রই জানে না, আমরা কোন ছাড়! কবীর সুমন ‘ছত্রধরের গান’, ‘লালমোহনের লাশ’ গেয়ে উঠছেন, নাট্যমঞ্চে ‘বীরপুরুষ’-এর মতো নাটক করছে ‘স্বপ্নসন্ধানী’, নতুন সময়ের ‘রক্তকরবী’ করছেন সুমন মুখোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসুর ‘রুদ্ধসংগীত’ নিয়ে দানা বাঁধছে বিতর্ক। ‘দামুল’-এর প্রকাশ ঝা, যিনি শতকের শুরু থেকে ‘গঙ্গাজল’, ‘অপহরণ’-এর মতো পরপর ছবি করেছেন অজয় দেবগণকে নায়ক করে, এবং উত্তর ও পশ্চিম ভারতীয় রাজনীতির শাঁস খুঁজে দেখতে চেয়েছেন, বা ভারতের জাতীয় রাজনীতিকে প্রায় মহাভারতীয় লেন্সে ফেলে ‘রাজনীতি’ বানালেন এই সময়ের আশপাশেই, তিনি অনেকটা পরে বানাবেন ‘চক্রব্যুহ’, মনোজ বাজপেয়ী, অভয় দেওল, অর্জুন রামপালদের নিয়ে, এবং রাষ্ট্রীয় ন্যারেটিভকে অনেক পরের ‘বুদ্ধা ইন আ ট্রাফিক জ্যাম’ বা ‘বস্তার’ জাতীয় ছবির মতো হাস্যকর ও অন্ধভাবে অনুসরণ না করেই।
এছাড়াও প্রিয়দর্শনের ‘আক্রোশ’ তার আশপাশে জাতপাতের রাজনীতিকে ধরেছিল মূলধারার ছাঁচেই। আবার ‘আন: মেন অ্যাট ওয়ার্ক’-এর মতো তারকাখচিত ছবিতে যে এনকাউন্টার তত্ত্ব তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছিল, তা আরও প্রতিষ্ঠা পেল অপূর্ব লাখিয়া-র আরও এক তারকাখচিত ছবি ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’-তে। সেই ছবির গানে ‘শামমে দারু, রাত পে লড়কি অউর নিন্দ আ যায়ে’-র মতো সর্বনাশা লিরিক ছিল, স্কুলে সে গান গুনগুন করতে গিয়ে পিটি টিচারের হাতে মার খেল আমাদের এক বন্ধু! কিন্তু সেই ছবি মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডকে অপর মেরুর নিরিখে দেখেও শেষত মান্যতা দিতে চাইল এটিএস-এর মতো মুম্বই পুলিশের খতরনাক ফোর্সকে, যাকে অতি উর জাতীয়তাবাদী টিভি অ্যাঙ্করও ভয় পান। সেসময় বিবিধ টিভি চ্যানেলে বরখা দত্ত, অর্ণব গোস্বামীরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, প্রণয় রায়, এমনকী, শেখর গুপ্তদের শান্ত সাংবাদিকতার দিন ফুরিয়েছে।
করণ থাপার বা রাজদীপ সরদেশাই-রা অন্যদিকে সপ্রশ্ন সাংবাদিকতার এক অন্য চেহারা ফুটিয়ে তুলছেন। বলিউডে বিভিন্ন সময় টিভি চ্যানেলের ডিবেট হয়ে উঠছে ক্লাইম্যাক্স। দ্রুত বিচার চাওয়া, সেই ‘তারিখ পে তারিখ’-এর অসহিষ্ণুতা এক অন্য বিচারের কিস্সা বলতে শুরু করল। রাজকুমার সন্তোষীর ‘হল্লা বোল’ থেকে রাজকুমার গুপ্তর ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’, ফিকশন থেকে জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ডের মতো টাটকা অতীত, বলিউড যা-ই দেখাচ্ছিল, তার মধ্যে সেই সাতের দশকের ভিজিল্যান্টে দ্রোহ বা ভারতীয় নবতরঙ্গের প্রতিরোধ আর ছিল না, ছিল বরং একুশ শতকের গণক্ষোভের এক নতুন দলিল, যেখানে বিচার-বহির্ভূত ন্যায়ের ধারণা যেমন আছে, তেমনই আছে মিডিয়াকে ব্যবহার করে চমস্কি কথিত ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট’-এর এক নতুন রূপ, যা সরকারকে সেভাবে সাহায্য করছে না। মোমবাতি মিছিল বা ওপিনিয়ন পোল হয়ে উঠল বিচারের নতুন ভাষ্য। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরে ‘সাংহাই’-এর মতো ছবি যখন বানাবেন, তখন অবশ্য বোঝা যাবে, সব ন্যায় সহজ পথে আসে না, কখনও কখনও ন্যায়বিচারের রাস্তাও এদেশে ঘোলাটে, গ্রাহাম গ্রিনের উপন্যাস থেকে কোস্তা গাভরার ‘জেড’, সব মিলিয়ে পলিটিকাল থ্রিলারের পুরনো বয়ানকেই নতুন রাজনীতির আলোয় প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি।
এই দিবাকরই বানিয়েছেন ‘লাভ সেক্স অউর ধোঁকা’, বা ‘এলএসডি’ গোপন ক্যামেরা বা হ্যান্ডিক্যামের ভয়্যার অস্তিত্বকে অনার কিলিং, এমএমএস, স্টিং অপারেশনের মতো ঘটনাপ্রবাহে বেঁধে ফেললেন তিনি সেই ছবিতে। সব মিলিয়ে দৃশ্য-রাজনীতির বদল আসছে, তা স্পষ্ট করছিলেন দিবাকর। আমরা তখন খেলার ফাঁকে বিকেলে ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড হাফ ব্লাড প্রিন্স’-এর সিডি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছি, খোঁজ করছি, কার বাড়ির কম্পিউটারে দেখা যায় সে বস্তু! আবার, সাইবার ক্যাফে-তে চুপিচুপি ভাইস সিটি আর প্রোজেক্ট আইজিআই খেলার ফাঁকে সিডি ড্রাইভে ঢুকিয়ে দিচ্ছি ‘মার্ডার’, ‘রাজ’, ‘জন্নত’, ‘আশিক বনায়া আপনে’-র হলপ্রিন্ট। এই যে হল থেকে সরাসরি গোপনে ভিডিও করে পাচার করা সিডিগুলো, তার বাইরেও ছিল আরেক গোপন সিডির বাজার, তার কোড নাম ছিল ‘ছাব্বিশ’। সেখানে পানুর নাম করে লোকানো থাকে মাল্লু বি গ্রেড। আর সদ্য আসা মোবাইলে গোপন এমএমএস যে খুঁজে পায়, সে তো রাজা! তার কিছু বছর পর ‘রাগিনী এমএমএস’ যখন এসেছে, তখন তো ছটফট করে উঠল অনেকের মন। একটা গোটা ছবিই নাকি এমএমএস! প্যারানর্মালের থেকেও সে ধুকপুকুনির মাত্রা বেশি।
অন্যদিকে, ‘স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী/ আমরা কি আর বইতে পারি’ শুনে ছোটবেলায় যে ভরসা আমরা পেয়েছিলাম, তা বড়পর্দায় রূপান্তরিত হল ‘তারে জমিন পার’-এ। আমির খান এলেন নতুন অবতারে। অমন শিক্ষক আমরা কে না চেয়েছি তখন! এক স্কুলপড়ুয়া অপরাধবোধে ভুগে বলল, ইশান অবস্থির মাকে (টিস্কা চোপড়া) আমার না হেভি লেগেছে, ব্যাপারটা কি খারাপ? ইদিপাস কমপ্লেক্সের গল্প তখনও আমরা হজম করিনি, জানিও না এসব জটিল কেচ্ছা। অন্যদিকে রাজকুমার হিরানি ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ বানিয়ে নব্য কেরিয়ারকামীদের যে বার্তা দিয়েছিলেন, ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ এসে তা পূর্ণতা পেল। ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চাপে চিঁড়েচ্যাপটা প্রজন্মকে তার ‘প্যাশন ফলো’ করার পরামর্শ দিল।
বিধুবিনোদ-রাজকুমারের যৌথ প্রোডাক্ট, সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘মুন্নাভাই’ ততদিনে কাল্ট এবং একুশ শতকের লোফার নায়ক হয়ে উঠেছেন বটেই, একইসঙ্গে গান্ধীবাদের নতুন প্রচারকও হয়ে উঠলেন ‘লাগে রহো মুন্নাভাই’-তে এসে। সেই ছবি হলে গিয়ে দেখার অনুমতি ছিল, কারণ তৎকালীন হিন্দি ছবি-মার্কা খুল্লমখুল্লা ব্যাপারস্যাপার তাতে ছিল না। লগে রহো হিট তো হলই, সে-ছবি থেকে লব্জ জন্ম নিল অজস্র। কিন্তু গান্ধীগিরির ওই তত্ত্ব ধূলিসাৎ হল শিগগিরই যখন টাডা আইনে অস্ত্রমামলায় জেলে গেলেন সঞ্জয় দত্ত। আমরা ততদিনে জেনেছিলাম, মুন্নাভাইয়ের পরবর্তী গন্তব্য আমেরিকা। সেই উত্তেজনায় জল ঢালল ভারতীয় আইন। আর ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর রাঞ্চোর প্রতি ঝুঁকে গেল একটা গোটা প্রজন্ম। ওই ছবি হয়ে উঠল নতুন ‘মোটিভেশন’, কেরিয়ার সংক্রান্ত নানা আলাপে উঠে আসতে লাগল ওই ছবির সংলাপ, দৃশ্যের উদাহরণ। এর আশপাশেই, রণবীর কাপুর অভিনীত সীমিত আমিনের ‘রকেট সিং’ আবার ওই ভয়াবহ রিসেশন পেরিয়ে আসা সময়ে কর্পোরেট চাকুরেদের নতুন দিশা দেখাবে, যা এত বছর পর স্টার্ট আপ-মুখর সমাজের প্রথম সংকেত হয়ে থাকবে হয়তো।
এই আমির খানই নতুন প্রেমের গল্প আমদানি করেছিলেন ইমরান খান ও জেনেলিয়া ডি’সুজা অভিনীত ‘জানে তু ইয়া জানে না’ মারফত। বন্ধুত্ব ও প্রেমের সূক্ষ্ম ভেদাভেদে দাঁড়িয়ে থাকে এই ছবির গল্প, যা এতদিন কিঞ্চিৎ অনাবিষ্কৃতই ছিল অনেকের কাছে। শেষে এয়ারপোর্টের দৃশ্য যদিও বছর কুড়ি আগের ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-কে কিছুটা নেকনজরে রাখল, কিন্তু নব্বই যে এক অলীক প্রেমের উপাখ্যান, এবং নতুন প্রজন্ম যে সেই পেয়ার-মোহব্বতের কাছে পৌঁছতে পারবে না সহজে, তা দেখিয়ে দিল এই ছবি। আরও বছর কুড়ি পরের জন্য রসদও রেখে গেল বটে। ওদিকে ‘বাচনা এ হাসিনো’-র রণবীর কাপুররাও প্লেবয় হয়ে ওঠা নায়ক তখন, কিন্তু সেইসব নষ্টামির শেষেও প্রেমের চিরন্তনতা অন্তত সেই ছবির উপকরণ ছিল। আর বাংলায় রাজ চক্রবর্তী তখনই নিয়ে এসেছেন ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, আগের প্রজন্মকে যে ছবি ‘এক দু জে কে লিয়ে’-র কথা মনে করাচ্ছে।
এরপর ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘প্রেম আমার’, উত্তর কলকাতা নিয়ে তাঁরই খানিক বিষণ্ণ টেলিছবি (পদ্মনাভ দাশগুপ্তর চিত্রনাট্যে) ‘নগর বসন্ত’ থেকে ঝাকানাকা ‘লে ছক্কা’, একের পর এক ছবি দিয়ে স্কুলপেরনো, বিভিন্ন তথাকথিত অনভিজাত কলেজে ওঠা ছেলেমেয়েদের কাছে সহজে পৌঁছে গেলেন রাজ। না হওয়া প্রেম থেকে সাহসী প্রেম, সবকিছুই সেসব ছবির মারপিট-মেলোড্রামার মধ্য দিয়ে সেঁধিয়ে গেল গঙ্গাপারের সাইকেল আরোহী যুগলের মনে। বাতাসে গুনগুন বা দেখেছি তোমাকে শ্রাবণে শুনলে তখন কী আশ্চর্য উত্তেজনা! যদিও মৈনাক বিশ্বাস যাকে ‘নিও ভদ্রলোক’-দের ছবি বলছেন, সেই ছবির রাজত্ব শুরু হবে শিগগিরই, ‘অটোগ্রাফ’ নামক একটি ছবির সূত্রে, অনুপম রায়ের গান হঠাৎই ঘুরতে শুরু করল ক্যাম্পাসে-কমনরুমে। আরও কিছুকাল পর ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘গানের ওপারে’ যে গোরা-পুপের প্রেমের গল্প বলবে, তা কিন্তু ওই বড়লোক-ছোটলোক দ্বন্দ্বেরই কাহিনি, কেবল সেখানে বিভাজনটা সাংস্কৃতিক। অস্বীকার করে লাভ নেই, সেই জুটিও তখন প্রজন্মের কাছে বেশ অভিনব হয়ে উঠেছিল।
‘হেরাফেরি’, ‘গোলমাল’ থেকে ‘ধামাল’, ‘ওয়েলকাম’, ‘ভাগম ভাগ’, ‘নো এন্ট্রি’– একের পর এক কমেডি ও অ্যাকশন কমেডি তখন কাঁপাচ্ছে বাজার। যদিও রজত কাপুরের ‘ভেজা ফ্রাই’ বা পরবর্তীর ‘ডেলহি বেলি’-র মতো কোয়ার্কি কমেডি সেসব ছিল না। অন্যদিকে ভূতের সিনেমার ঢল নেমেছিল ২০০০-এর পর থেকেই।
রামসে ব্রাদার্স বা ‘পুরানা মন্দির’, ‘খুনি পাঞ্জা’, ‘জখমি রুহ’, ‘পেয়াসি আত্মা’ গোছের ছবি পেরিয়ে, বি গ্রেডকে জহর, প্রদীপের মতো হলের গণ্ডি থেকে বের করে এনে যেসব হরেক্স ছবি রমরমিয়ে চলছিল সিঙ্গল স্ক্রিন ও সদ্য গজিয়ে ওঠা মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে, তাতে ভূত আসলে কী? যৌনতার হারাকিরি? রামগোপাল ভার্মার ‘রাত’, ‘কউন’ (হরর নয়) বা ‘ভূত’-এর মতো হাড়হিম ছবি ততটা চর্চিত হয়নি, যতটা হয়েছিল বিক্রম ভাটের ছবি, ‘রাজ’। হলিউড ছবি ‘হোয়াট লাইজ বিনিথ’-এর আপাদমস্তক রিমেক সেই ছবিতে ভূত আদতে কলেজের বেড়াতে যাওয়া ছেলেমেয়ের দল থেকে শুরু করে তথাকথিত আধুনিক দাম্পত্যের অন্দরমহল অবধি পৌঁছে যায়। ‘বাস্তুশাস্ত্র’ বা ‘রুদ্রাক্ষ’ বা ‘কৃষ্ণা কটেজ’-এর মতো ছবি ‘দ্য একজরসিস্ট’, “চাইল্ড’স প্লে” বা পরবর্তীর ‘কনজিউরিং’, ‘ইনসিডিয়াস’, ‘অ্যানাবেল’, ‘নান’-এর মতো পশ্চিমি ছবির আদলেই এক দেশজ ন্যারেটিভ তৈরি করল। পুরোহিত, যজ্ঞ এসবের মধ্যে ভূতের ভয়ংকরতাকে ধরা হল বিশ্বায়িত ভারতের সামনে প্রাচীন ভারতের ভয় হিসেবে।
আবার মণি কাউলের ‘দুবিধা’ অমল পালেকরের পরিচালনায় ‘পহেলি’ হয়ে উঠল, গ্রামভারতের লোকায়ত ভয় যেখানে গুরুত্ব পেল। তার সূত্র ধরেই দেখা যাবে প্রিয়দর্শনের ‘ভুলভুলাইয়া’-কে। পরবর্তীতে অমর কৌশিকের ‘স্ত্রী’-র পূর্বসূত্র সেই ছবিতে রয়ে গিয়েছিল বটে। ‘হরেকৃষ্ণ হরেরাম’-এর সেই পাঙ্ক ভার্সন তখন ডিস্কোতে ডিস্কোতে বাজল, পাশাপাশি মঞ্জুলিকাও হয়ে উঠল জনসংস্কৃতিতে চর্চিত। বিদ্যা বালান প্রবাসফেরত নায়িকা, তার মধ্যে রাজবাড়ির পুরনো ভূত ঢুকে পড়ার গল্প, বিজ্ঞান ও ভূতবিদ্যার মিশেলে সাইকিয়াট্রি-কে নতুন করেই প্রতিষ্ঠা করা, ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিজঅর্ডারকে অতীত ও আনক্যানির সঙ্গে মেলানো, সব মিলিয়ে যে জটিল আখ্যান এই ছবি ধরেছিল, তা আরও বেশি ভারতীয় হয়ে উঠেছিল কমেডির ছোঁয়ায়।
‘ভূতনাথ’-এর মতো ভালো ও শিশুতোষ ভূতের গল্পও আসছে। বৃদ্ধ অমিতাভ বচ্চন তখন ‘ভিরুধ’-এর মতো ছবিও করছেন, যেখানে প্রবাসী পুত্র (জন আব্রাহাম) দেশে ফিরে মন্ত্রীর ছেলের হাতে নিহত হলে তার প্রতিশোধ নেন তিনি। এই ধরনের ছবি সেসময়ের প্রবাসী পুত্রকন্যার সাফল্যে মগ্ন মধ্যবিত্ত প্রৌঢ়দের মনে খানিক নাড়া দিতেই তৈরি। আবার তারাশি তার মধ্যেই ভালো ভূত হয়ে এলেন বচ্চন, শাহরুখ খান সেখানে ক্যামিও-মাত্র। বচ্চন-শাহরুখ দ্বন্দ্ব সেই কবে থেকেই চলছিল, কিন্তু ‘ভূতনাথ’ সেসব অতিক্রম করল। আর শাহরুখ খান যে ভূতের সিনেমা নিয়ে এলেন আমাদের সেই বয়ঃসন্ধির এক হঠাৎ হেমন্তে, তা এইসব ভূতেদের পেরিয়ে হয়ে উঠল ভারতীয় সিনেমার আত্মার ধারকবাহক।
আমরা বড় হতে হতেই তো দর্পণায় ঝুল পড়ছিল। মিনার গরিমা হারাচ্ছিল। ছবিঘরের নাম আর দেখা যেত না পোস্টারে। ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’ দেখতে গিয়ে আশুতোষ গোয়ারিকরের ‘যোধা আকবর’-এর ট্রেলার দেখে ফেলে, ওই ছবি দেখতে যাওয়ার বায়না ধরেছিলাম আমরা যে হলে বসে, সেই ‘মিত্রা’ যে একদিন ভ্যানিশ হয়ে যাবে, তা কি পি সি সরকারও জানতেন? রূপবাণীর ভূতের পাশে স্টার হয়তো জীবন্ত হয়ে উঠল, কিন্তু তখন সল্টলেক আর নিউটাউনের সিটি সেন্টার হয়ে উঠছে চুম্বক। আইনক্সের নামের চমকের পাশেই উঁকি দিচ্ছে পিভিআর। আর পাইরেটেড সিডির দোকান ঝলমলিয়ে উঠছে হলপ্রিন্টে, কেউ কেউ শিখে নিচ্ছে টরেন্টের দৌলতে ডাউনলোড নামে এক জাদুর মন্ত্রগুপ্তি। তখনও আমরা জানি না, একদিন এমন অসুখ আসবে, যা কামড়ে ধরবে ওই মাল্টিপ্লেক্সের জমককেও, স্বপ্নেও ভাবিনি, হাতের মোবাইলে দেখা যাবে সিনেমা, শ্যামবাজারের সিডির ওই সাজানো বাগানে গেরস্থালির নানা জিনিস বিকোবে, আর সেই দোকান তুলে রাত ন’টায় বিষাদে ফিরবে আমাদের প্রিয় রমেশদা, যে এককালে হাতসাফাইয়ে বের করে আনত অসম্ভব সব ছবির ভালো প্রিন্ট, যা নাকি ‘হলপ্রিন্ট’ বলে মনেই হবে না। পাইরেসি নিয়ে হুলাবিলার সেই বাজারে, ওই নৈরাজ্যটুকু জ্যান্ত তো ছিল! ওয়ার্নার হেরজগের সেই কথা, ‘পাইরেসিই ডিস্ট্রিবিউশনের শ্রেষ্ঠ ফর্ম’, সেই ভিসিআর-এর আমল থেকে, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট থেকে হাতিবাগান বা পাঁচমাথার মোড়ের চশমা গলি সেই বচনকে সত্যি প্রমাণিত করে গেছে বারবার।
‘ওম শান্তি ওম’ এসেছিল সিডিতেই। তখন নাক সিঁটকেছিলাম ঠিকই, কিন্তু ফারহা খান ‘মধুমতী’, বিমল রায় বা ঋত্বিক ঘটকের কাছে ঋণস্বীকার করুন না করুন, ওই ছবির সূত্র ধরেই ‘ওম শান্তি ওম’ রচনা করেছিল বলিউডের পুনর্জন্ম, বলিউডের প্রতিশোধ ও বলিউডের শাশ্বত এক ভূতকে। বম্বের সিনেমাই আদতে এই ছবির ওম, এবং শান্তি। তাই সাতের দশকের ঝলমলে সেট, ঋষি কাপুর থেকে একরাশ রেট্রো গান, মনোজ কুমারের ম্যানারিজম নিয়ে তামাশা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সংলাপ চুরি করে সুরজ বরজাতিয়ার নব্বইয়ের বলিউডের প্রায়-রূপকার হয়ে ওঠা, সেসময় দক্ষিণী ছবির চাপা ও কিঞ্চিৎ তুচ্ছ সর্বভারতীয় বাজার থেকে একলপ্তে তিন দশক পেরিয়ে এসে নব্য বলিউডের সিরিয়ালমার্কা গাবজাল থেকে সুপারহিরোমার্কা আজগুবি– সবকিছুই আদতে ম্লান হয়ে যায় বিশ্বাসঘাতকতা ও জীবন কবুল করা প্রেমের আখ্যানের কাছে। ‘আঁখো মে তেরি’, ‘তুমকো পায়া হ্যায় তো’, বা ক্লাইম্যাক্সে দেশজ কথনের আবহমানতা বয়ে নিয়ে ‘দাস্তান-এ ওম শান্তি ওম’– এসব গান তখন পুজো ফুরনোর আলো, বাজির টরেটক্কা, ভাসানের আবহে আমাদের মনে থেকে যাচ্ছে। দীপিকা পাড়ুকোন নতুন নায়িকা হিসেবে সেই ছবিতেই চমকে দিলেন। আর স্টারডমের সেই শেষ মহাকাব্য রচিত হল এই লার্জার দ্যান লাইফ ভূতের ছবির মধ্যে। শাহরুখও তখন বুঝেছেন, এতাবৎকাল তিনি যা করেছেন, তাই তাঁকে অমর করবে। তাই এই ছবিতেও পদে পদে তিনি নিজেকে নিয়ে মজা করলেন, ট্রিবিউট দিলেন। ফিল্মফেয়ারের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য ঘিরে বলিউডের চূড়ান্ত স্পুফ হল বটে, কিন্তু বোম্বাইয়ের ছবিমহলের প্রতি মমতায় ভরে উঠেছিল সেই ছবি, যেন সেই ডিডিএলজে-তে সময় স্থবির করে রাখা মারাঠা মন্দিরই ওই ছবির আত্মায় জ্যান্ত, আইনক্সের অডি নয়।
ছোটবেলায় মহাজাতি সদনে ম্যাজিক দেখতে যাওয়া হোক, বা ব্যস্ত কলকাতার মাঝেই হঠাৎ একটা মাঠের তাঁবুতে ঢুকে পড়া আফ্রিকান বা অজন্তা সার্কাস দেখতে, যে রোমাঞ্চ দিত, সেই রোমাঞ্চ কি লুমিয়ের ব্রাদার্সের ট্রেন দেখে হল ছেড়ে পালানো দর্শকের উত্তরাধিকার? দর্শকেরও কি আদতে পুনর্জন্ম হয় না? এই যে ‘জনতা সিনেমাহল’-এর নাতিদীর্ঘ সফর, তা তো কখনও মনমরা কোনও পানশালায়, কখনও রাতের হলুদ ট্যাক্সিতে তৈরি হয়েছে, কখনও আগের প্রজন্মের বলা গল্পকথায় খুলে গেছে রূপকথার ডালি। সেইসব রূপকথা দশকের পর দশক ধরে তৈরি হয়েই চলেছে। আজ ভারতীয় সিনেমার শরীরে যখন বাসা বাঁধছে গোয়েবেলসীয় প্রোপাগান্ডা, তখন সেই ছয়-সাতের দশক থেকে কারণে-অকারণে, প্রেমে-বিরহে, স্কুলকলেজ বা অফিস কাটিয়ে বা পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সিনেমা হলের আশ্রয় যারা নিয়েছে, তারা জানে সেই অন্ধকারের মহিমা। রাস্তার মাঝের একটা বাড়ি, তার মধ্যে ব্যালকনি, রিয়ার স্টল, ড্রেস সার্কলের সিংহাসন, আর পর্দাজুড়ে অন্য জগৎ, এই আনন্দ চারটে স্ক্রিনের বাহারি মাল্টিপ্লেক্স দেবেই বা কীভাবে? তাই আমাদের বেড়ে ওঠা আর সিনেমাহলের ভূত জন্ম নেওয়াও একসঙ্গে ঘটল। চাঁদনি চকের সত্যিকারের জনতা সিনেমাহলও এখন ভূত, প্রবীণ দর্শকের স্মৃতিতে আছে, সেই হলে শোভা পেত ‘পিয়াসা’-র পোস্টার।
সেসব ভূতেরা একদিন কি বেঁচে উঠবে কবর থেকে? একদিন কি সব ঝকমকি হাপিশ হয়ে ফিরে আসবে পোস্টারে মোড়া সেসব সিঙ্গল স্ক্রিনের জাদুঘর, ম্যাজিক-তাঁবু? বাঘ-সিংহর খেলা দেখানো সংগত কারণেই বন্ধ হয়েছিল। পশুসুরক্ষা ছাড়াও, অজন্তা সার্কাসে সিংহীর আক্রমণে তরুণীর মৃত্যুও খবরে হইচই ফেলেছিল তখন। সার্কাস দেখার উত্তেজনাও স্তিমিত হল একদিন। কথায় কথায় আমরা যে কোনও ক্যাডাভারাস কেচ্ছাকেই সার্কাস বলে মজা করতে ছাড়িনি। কিন্তু ওইসব তাঁবু আর সিনেমাহল গর্ভে যে অন্য বাস্তবতা ধারণ করে এসেছে, জীবনের সঙ্গে তো মিশেই ছিল তা! ফোটো তোলার স্টুডিওতে ভিড় কমেছে, পর্দা আর টানা থাকে না, বড়জোর গান চলে কোনও ম্রিয়মান রেডিওতে। আমাদের স্কুলের ভাঙা বেঞ্চ জোড়া লাগে। গলিপথ ফাঁকা হয়ে যায়। বন্ধু, কী খবর বল বলে আমরাও চোখ রাখি ভিডিও কলে। রিল আর লাইভে আমরা নিজেরাই হয়ে ওঠে সিনেমা। বড়দিনের গাছ লাগে মিত্রাকে হঠিয়ে তৈরি হওয়া নতুন মলে, খান্না সিনেমা পড়ে থাকে পোড়ো বাড়ি হয়ে, দর্পণার দিকে তাকিয়ে আর চেনা যায় না।
সেইসব ভূত, ভূতের গল্পদের কাছে ঋণ নিয়েই এই ছোটখাটো রূপকথার পর্দা পড়ল। জনতা সিনেমাহল লেখায় নশ্বর, মৃতসঞ্জীবনী তাকে জোগাবে কি সিনেমার মতোই কোনও পরাবাস্তব?
… (সমাপ্ত) …
…পড়ুন জনতা সিনেমাহল-এর অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৪১। ‘ডিডিএলজে’-র যুগ পেরিয়ে এসে নতুন প্রেমের গল্প বলল ‘জব উই মেট’
পর্ব ৪০। থিয়েটারের লড়াকু ছেলেমেয়েদের চোখে স্বপ্ন হয়ে উঠেছিলেন ইরফান খান
পর্ব ৩৯। ‘মস্তি কা পাঠশালা’ পাল্টে গেল বিদ্রোহে
পর্ব ৩৮। শাহরুখের পাশেই শরৎচন্দ্রর তাসা! গ্ল্যামারে কেউই কম যাননি
পর্ব ৩৭। টুইন টাওয়ার ভাঙছে, ভাঙছে পরম্পরা, প্রতিষ্ঠা, অনুশাসনও…
পর্ব ৩৬। একদিকে মনকেমন, অন্যদিকে খুনখারাপি! বলিউডের আলো-অন্ধকারে ফুরল শতাব্দী
পর্ব ৩৫। অ্যাংরি ইয়ংম্যান থেকে বিলেতফেরত মাচো নায়ক, বদলাচ্ছিল নব্বইয়ের হিরোরা
পর্ব ৩৪। বিস্ফোরণ আর বিভেদের নো ম্যানস ল্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন মহব্বত ম্যান
পর্ব ৩৩। অমর চিত্রকথা, চাচা চৌধুরী ও ইরোটিকার পৃথিবীতে এসে পড়ল তরুণ বেপরোয়া নায়কদের দিন
পর্ব ৩২। নব্বইয়ের শুরু থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড ঢাকা পড়ল বলিউডের তাজমহলে
পর্ব ৩১। ফুলন দেবীর বন্দুক ও ‘মির্চ মসালা’-র প্রতিরোধ
পর্ব ৩০। স্কুল থেকে শ্মশান, সর্বত্র শোনা গেছে ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’
পর্ব ২৯। ‘ক্যায়ামত’ না আসুক, বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ঠিক বুঝেছে এসটিডি বুথ, একা অ্যান্টেনা
পর্ব ২৮। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের দিন জনশূন্য কলকাতায় পকেটমারি
পর্ব ২৭। মাস্টারমশাইরা কি আজও কিচ্ছু না দেখেই থাকবে?
পর্ব ২৬। ‘হাওয়া হাওয়াই’য়ের আপত্তি জোটেনি কিন্তু ‘উরি উরি বাবা’ নাকি অপসংস্কৃতি
পর্ব ২৫। চুল কাটলেই মাথার পিছনে জ্যোতির মতো বাজবে ‘শান’-এর গান!
পর্ব ২৪। মরণোত্তর উত্তমকুমার হয়ে উঠলেন সিরিয়াল কিলার
পর্ব ২৩। স্কুল পালানো ছেলেটা শহিদ হলে টিকিট কাউন্টার, ব্ল্যাকাররা তা টের পেত
পর্ব ২২। ক্যাবলা অমল পালেকরের চোস্ত প্রেমিক হয়ে ওঠাও দর্শকেরই জয়
পর্ব ২১। বন্দুকধারী জিনাতকে ছাপিয়ে প্রতিরোধের মুখ হয়ে উঠলেন স্মিতা পাতিল
পর্ব ২০। হকার, হোটেল, হল! যে কলকাতার মন ছিল অনেকটা বড়
পর্ব ১৯। দেওয়ালে সাঁটা পোস্টারে আঁকা মধুবালাকে দেখে মুগ্ধ হত স্কুলপড়ুয়া মেয়েরাও
পর্ব ১৮। পানশালায় তখন ‘কহি দূর যব’ বেজে উঠলে কান্নায় ভেঙে পড়ত পেঁচো মাতাল
পর্ব ১৭। গানই ভেঙেছিল দেশজোড়া সিনেমাহলের সীমান্ত
পর্ব ১৬। পুলিশের কাছেও ‘আইকনিক’ ছিল গব্বরের ডায়লগ
পর্ব ১৫। ‘শোলে’-র চোরডাকাতরা এল কোথা থেকে?
পর্ব ১৪। ‘শোলে’-তে কি ভারত আরও আদিম হয়ে উঠল না?
পর্ব ১৩। ‘জঞ্জির’ দেখে ছেলেটা ঠিক করেছিল, প্রতিশোধ নেবে
পর্ব ১২। ‘মেরে পাস মা হ্যায়?’-এর রহস্যটা কী?
পর্ব ১১। ইন্দ্রজাল কমিকস-এর গ্রামীণ নায়ক বাহাদুর পাল্পে এসে রংচঙে হল
পর্ব ১০। দু’টাকা পঁচিশের টিকিটে জমে হিরোইনের অজানা ফ্যানের স্মৃতি
পর্ব ৯। খান্না সিনেমায় নাকি পৌরাণিক সিনেমা চলছে
পর্ব ৮। পাড়াতুতো ট্র্যাজেডিতে মিলে গেলেন উত্তমকুমার আর রাজেশ খান্না
পর্ব ৭। পাড়ার রবিদা কেঁদেছিল ‘কাটি পতঙ্গ’ আর ‘দিওয়ার’ দেখে, সাক্ষী ছিল পাড়ার মেয়েরা
পর্ব ৬। যে কলকাতায় পুলিশ-পকেটমার মিলেমিশে গেছে, সেখানে দেব আনন্দ আর নতুন করে কী শিরশিরানি দেবেন?
পর্ব ৫। হিন্দি ছবির পাপ ও একটি অ্যাডাল্ট বাড়ির গল্প
পর্ব ৪। দেব আনন্দ, একটি বোমা ও অন্ধকারে হাত ধরতে চাওয়ারা
পর্ব ৩। অন্ধকারে ঢাকা পড়ল কান্না থেকে নিষিদ্ধ স্বপ্ন!
পর্ব ২। ‘জিনা ইঁয়াহা মরনা ইঁয়াহা’ উত্তর কলকাতার কবিতা হল না কেন?
পর্ব ১। সিনেমা হলে সন্ত্রাস ও জনগণমন-র দলিল
বাংলা ভাষা সেই পাঁচের দশকে যদি বারীন ঘোষের ‘ছিন্নমূল’, সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’, ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’-এর (যেহেতু ‘নাগরিক’-এর মুক্তি পরে) জন্ম দিয়ে থাকে, তাহলে ১৯৬৯ সালে মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’ ভারতীয় নববসন্তের অস্তিত্ব জানান দিল।