Robbar

রসুইঘরে ঝাঁজ কিছু কম পড়িয়াছে!

Published by: Robbar Digital
  • Posted:February 26, 2025 8:18 pm
  • Updated:February 26, 2025 8:18 pm  

মেয়েটি কী করতে চেয়েছিল, আর তাকে কী করতে হচ্ছে– এ দুয়ের বৈপরীত্য যে অসহ পরিস্থিতি তৈরি করে, সেই দম-আটকানো আঁধারকে প্রতিস্থাপন করার মতো জোরালো স্মৃতির লেশমাত্র নেই দ্বিতীয় সংস্করণে। সেখানে নায়িকা হেডফোনে গান শুনতে শুনতে একলা রসুইঘরে নেচে বেড়ায়, আর পুরুষ অভিভাবকটির উপস্থিতি অগ্রাহ্য করে ফেলে সেই অমনোযোগের অবসরে। একটা ছবি জুড়ে একের পর এক ফুটে উঠতে থাকে চাবুকের মার, আর অন্য ছবি জুড়ে জ্বলজ্বল করতে থাকে আলগা অস্বস্তি। ক্ষত আর যন্ত্রণার হিসেব দাখিল হল দুই ছবিতেই, কিন্তু এই মিলিয়ে দেওয়ার নিদানটুকু সরিয়ে রাখলে দুই ছবির ধার শানানোতে আকাশপাতাল প্রভেদ। চোখের সামনে একটা খুন হতে দেখা, আর নিষ্প্রাণ শরীরটুকু শুধু পড়ে থাকতে দেখার মধ্যে যে তফাত, সে তফাতের মাপকাঠি যত লম্বা, এই দুই ছবির দূরত্বও ততদূর।

অরুন্ধতী দাশ

‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’ দেখার পর আমি সত্যিই, একেবারে আক্ষরিক অর্থেই তিনদিন রান্নাঘরে ঢুকতে পারিনি। আমার রান্নাঘর আমার নিজের সুবিধেমতো মাপেই কাটছাঁট করা– এয়ার ফ্রায়ার, ব্লেন্ডার, ইলেকট্রিক কেটল, মাইক্রোআভন কিংবা রাইস কুকারের সহজ সমন্বয়ে সাজানো। সেখানে বাটা-মশলার সুগন্ধ নেই কেন, কিংবা আঁচ থেকে সদ্য পেড়ে আনা খাবার পাতে পড়ল না কেন– এসব কথা বলার উপসর্গ হয়তো আগাগোড়াই নেই। এমনকী, আচমকা কেউ গরহাজির না হলে, দৈনদিন ডালঝোলের প্রয়োজনও আমাকে মেটাতে হয় না। কিন্তু এই সিনেমা মগজে এমন হরতাল ডেকে দিয়েছিল যে, গায়েগতরে খেটে কতটুকু কাজ উতরোতে হচ্ছে, সে প্রশ্নের চেয়েও দপদপিয়ে উঠছিল এই জিজ্ঞাসা যে, কেন আমাকেই করতে হবে? এই ঝাঁজটা সম্পূর্ণ উবে গেছে ‘মিসেস’ দেখার পর। রান্নাঘরের ভয়ানক দম-বন্ধ-করা একাকিত্ব আর বমি-উগরে-আসা অপরিচ্ছন্ন অন্ধকারের যাবতীয় তীব্রতা ম্লান হয়ে গেছে। মেয়েদের আর্থিক স্বনির্ভরতার প্রশ্ন এত তীব্র আর জোরদার হয়ে উঠেছে ছবিতে যে, সমস্ত নজরটান কেড়ে নিয়েছে ওই ‘সেলফ-আইডেনটিটি’-র প্রশ্নটা। যেন, আর্থিক নিরাপত্তা থাকলেই রান্নাঘরের ওই বিরাট হাঁ থেকে স্বঘোষিত মুক্তি মিলে যায়, যেন নিজের রোজগারের জোর থাকলে সেই মেয়েকে রান্নাঘরে ঢুকতে হয় না। পরিসংখ্যান জানে, এসব স্রেফ ‘গালগল্প’।

The Great Indian Kitchen review: Powerful film on patriarchy and men-governed traditions - Hindustan Times
দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন-এর একটি দৃশ্য

সুকান্তর সেই বিখ্যাত কবিতাটা মনে আছে তো, ‘একটি মোরগের কাহিনী’? সেখানে শেষ ছত্রটা ছিল এইরকম– মোরগ সত্যিই তার স্বপ্ন সত্যি করে একদিন প্রাসাদের খাওয়ার টেবিলে পৌঁছে যাচ্ছে, তবে খাবার খেতে নয়, খাবার হিসেবে। আমি ভাবছিলাম, রোজগেরে মেয়েদের দশাও তো ঠিক তাই! প্রচুর লড়াই আর স্বপ্নের হিসেব দাখিল করে শেষ পর্যন্ত না-হয় স্বনির্ভর হওয়া গেল। কিন্তু সারাদিন পর রোজগেরে মেয়েটি বাড়ি ফিরবে রাঁধাবাড়ার তদারক করতে, আর রোজগেরে পুরুষটি বাড়ি ফিরে খাবারটি পাবে ঠিক মুখের সামনে। সমস্যাটা যে মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়ার চেয়েও বেশি পুরুষের স্বনির্ভর হওয়ার ওপরে দাঁড়িয়ে, ‘মিসেস’ খুব আলগোছে সে জবানে দস্তখত করেছে, কিন্তু ঝাঁঝ কিছু কম পড়িয়াছে।

Mrs. OTT release date Zee5: 5 things to know before watching Sanya Malhotra's movie online
‘মিসেস’ ছবির একটি দৃশ্য

ঠিক এই কারণেই গোড়ার দিকে ‘মিসেস’ দেখার খুব একট উৎসাহ মোটেই বোধ করছিলাম না। কারণ বলিউডের একটা আশ্চর্য ক্ষমতা আছে, যে-কোনও অম্ল-কটু-তিক্ত-কষায় সবই সে হজম করে ফেলে, আর ঝাঁঝমিয়োনো চোঁয়াঢেকুরে পরিণত করে ছেড়ে দেয়। ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ছবি ‘অর্জুন রেড্ডি’ থেকে ২০১৯ সালে তৈরি ‘কবীর সিং’-এও যেমন মেয়েচরিত্রগুলো আরও বশংবদ, আরও নরম, আরও মুখচোরা হয়ে হাজির হয়েছিল, একই ঘটনা দেখেছিলাম ২০১৮ সালে ‘ধড়ক’ ছবিটির ক্ষেত্রেও। মূল মরাঠি ছবি ‘সায়রাট’ যেখানে ‘অনার কিলিং’-এর কারণ হিসেবে ভিন্ন জাতে বিয়ের মতো মারাত্মক বৈষম্য নিয়ে কথা বলার সাহস দেখিয়েছিল, বলিউডে সেখানে গোটা শ্রেণিদ্বন্দ্বটা এসে দাঁড়িয়েছে দুই পরিবারের অর্থনৈতিক ফারাকের ওপর। সেই চিরন্তন বড়লোক বাড়ির মেয়ে আর গরিব ঘরের ছেলে, আর তাদের প্রেমের টানাপোড়েন নিয়ে সবাক ছবির আদ্যিকাল থেকে যে সমস্যাগুলো মানুষ দেখে-শুনে-বুঝে, ‘টিপিকাল’ তকমা দিয়ে, গসিপ করে ঝুরঝুরে করে দিয়েছে, তার আর ঝাঁকুনি দিয়ে যাওয়ার মতো কতটুকু শক্তি পড়ে থাকে? একই ঘটনা ঘটেছে ‘মিসেস’-এর ক্ষেত্রেও। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’-এর শুরুর মন্তাজটাই ছিল থরে থরে সাজানো খাবারের অপরিমিত প্রদর্শন দিয়ে, তার খুঁটিনাটি রান্নার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ডিটেলিং থেকে টেবিলে সুসজ্জিত আকারে পেশ করা পর্যন্ত একটা বিরাট বিপুল খাদ্যমেলা যেন! গোটা ছবিটা যে আসলে এই ভারতীয় রসুইঘরের জাঁকালো উপস্থাপনার নেপথ্য শ্রমের ঘামঝরানো গল্পটার দিকে মোড় নেবে, তার একটা সূত্রপাত গোড়া থেকেই বাঁধা হচ্ছিল আসলে। তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে বলিউড সেই শীর্ষ মন্তাজের রাশি রাশি খাবারের সঙ্গে জুড়ে দিল নৃত্যপরা নায়িকার নাচের দৃশ্য। নাচের প্রতিটি ভঙ্গিমা যদিও নজরকাড়ার মতো ‘আনঅর্থোডক্স’ এবং উড়ানপ্রিয়, তবু, রান্নাঘরে আটকে পড়া আর নাচের ছন্দে জীবনকে বইয়ে দিতে চাওয়ার মধ্যে আদতে যে কোনও সংঘাত নেই, সেই বার্তাটা বেশ ধোঁয়াশায় ঢেকে গেল না কি?

মূল মালয়ালম ছবিটিতে নায়িকার প্রত্যেক দিনের রান্নাঘর সামলানোর পুনরাবৃত্তি বোঝাতে কিন্তু কোনও শর্টকাটের পথে হাঁটেননি পরিচালক। একই খাবার প্রতিদিন বানিয়ে চলা, একই শিলপাটায় প্রতিদিন পিষে চাটনি বানানো, একইভাবে রোজ দ্রুত হাতে ঘষঘষ শব্দে নারকেল কুরিয়ে যাওয়া, প্রতি রাতে সিঙ্কভর্তি পাঁজা পাঁজা বাসন মেজে, রান্নাঘর ঝাঁট দিয়ে ধুয়ে তবে মুক্তি পাওয়া– এই বিষচক্রের দৈনন্দিনতার গ্লানি আর ক্লেদ দর্শককে একেবারে ‘ক্লস্ট্রোফোবিক’ করে তোলে। কারণ, বারবার একই দৃশ্য দেখার ক্লান্তি আর বিরক্তি দর্শককে সইতে হয়। আবারও, আবারও, আবারও রান্নাঘর আর রান্নার অপরিবর্তনীয় এই চাকায় পিষতে পিষতে যে মেয়ে ফুঁসে উঠবে, তার সমস্ত রাগ আর জ্বালার তীব্রতা টের পাওয়ানোর জন্য এটুকু কসরত তো দর্শককে দিয়ে করাতেই হত! বলিউড কিন্তু ঘটনাক্রম নয়, বরং অনেক বেশি জোর দিয়েছে সংলাপ আর নায়িকার অভিব্যক্তির ওপরে। সানিয়া মলহোত্রা অভিনয় করেছেন অসাধারণ, বিশেষত নির্বাক অসহায়তা আর গুমরে-মরা ক্ষোভের দৃশ্যে তাঁর চরিত্র চিত্রায়ণ সমালোচনার ঊর্ধ্বে। কিন্তু মুশকিলটা হল, নিষ্পেষণের যন্ত্রটাই যদি দর্শক ভালোভাবে দেখতে না পান, তাহলে নিষ্পেষিতের প্রতিক্রিয়া বহু ক্ষেত্রেই একটু অধিকন্তু মনে হয় বই কী! তাই মূল ছবিতে স্ক্রিপ্টের কাছ থেকে যে মস্ত বড় সাহায্যটা নিমিষা সজৈন পেয়েছিলেন, তার পাঁচ আনা মাত্র নিয়ে পর্দায় লড়তে হল সানিয়াকে। ঘটনার মধ্যে যতটা জটিলতা দেখানো গেলে চরিত্রের প্রতিবাদ ন্যায়সংগত মনে হয়, তা না দেখিয়ে শুধু মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার ওপর এতটা জোর দেওয়ায় একটা মস্ত বড় ভুল হয়ে বসল। মেয়েরাও মুখ খুলছে, এটুকু হয়তো বোঝা গেল, কিন্তু প্রকারান্তরে মুখ খোলার কারণটার জোর গেল অনেক কমে। একটি মেয়ে যে শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চায় বলেই রান্নাঘরের বেড়ি ভাঙতে চায়, তা তো নয়! রান্নাঘরের মতো অস্তিত্ব গিলে-খাওয়া একাকিত্বের হাতকড়া যে এমনিতেই জীবন জুড়ে দগদগে ঘায়ের মতো বয়ে বেড়াতে হয়, তা বোঝানোর দায়টা কে নেবে?

One scene that showcases how bad we treat our women in South Asia! Mrs. Streaming now! An okay remake but a fabulous job done by Sanya Malhotra! : r/BollyBlindsNGossip
‘মিসেস’ছবির একটি দৃশ্য

বেশ কিছু অস্বস্তিকর দৃশ্যও একইভাবে অনুপস্থিত হিন্দি ছবির বয়ানে। নোংরা জল জমা এঁটোভরা সিঙ্কের ভেতর হাত ডুবিয়ে সানিয়া যখন তোলার ময়লা তুলে আনেন, তখন গা ঘিনঘিন করে ঠিকই, কিন্তু এই একই দৃশ্যে নিমিষা যখন থকথকে হলুদ রঙের জলের মধ্যে হাতড়ে তুলে আনেন তাঁর শ্বশুরের চিবিয়ে-চুষে ছিবড়ে করে ফেলে রাখা মাংসের হাড়, তখন মেয়েটির উদ্গত বমি চাপা দেওয়ার ভঙ্গি আমাদেরও ছিটকে দেয়। রান্নাঘর নামক সদাসচল কারখানাটির ভেতরের জান্তব চরিত্রটা মুহূর্তেই উলঙ্গ হয়ে পড়ে চোখের সামনে, শত জারিজুরিতেও তার দাঁতনখ চাপা থাকে না। দুটো ছবিতে সেট আর আলোর ব্যবহারের তফাতও চোখে পড়ার মতো বিপরীত। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’-এর মূল কালার প্যালেট কালো, নীল, গাঢ় সবুজ– শ্যাওলাধরা একটা কদর্য অন্ধকার যেন লেগে আছে ছবির ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, উঠোন সর্বত্র। বলিউডি সংস্করণটি কিন্তু বেশ আলোজ্বালা, ঝকঝকে। ঝাঁ-চকচকে ঘরদোর, সাজানো পরিপাটি আধুনিক গৃহকোণের একটা আলগা ছাপ সর্বত্র, লেবুরঙা রোদ সেখানে কথায় কথায় এসে পড়ছে চরিত্রদের মুখে, হলদে-কমলা-সাদা-গোলাপিতে ভরপুর ‘হ্যাপি কালার্স’-এর ছড়াছড়ি সর্বত্র। সবচেয়ে বড় কথা, ছবির বসতবাড়ি থেকে সাজানো সেটের কৃত্রিমতা মোটেই মুছে ফেলা যায়নি, যেখানে মালয়ালম ছবির বাড়িটা দেখতে দেখতে একথা বিশ্বাস করতে অসুবিধে হয় না যে, এখানেই সত্যিকারের মানুষ তার রোজের নুনঘামমাখা দিনগুলো টেনেহিঁচড়ে কাটিয়ে চলে।

……………………………..

‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’-এর মূল কালার প্যালেট কালো, নীল, গাঢ় সবুজ– শ্যাওলাধরা একটা কদর্য অন্ধকার যেন লেগে আছে ছবির ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, উঠোন সর্বত্র। বলিউডি সংস্করণটি কিন্তু বেশ আলোজ্বালা, ঝকঝকে। ঝাঁ-চকচকে ঘরদোর, সাজানো পরিপাটি আধুনিক গৃহকোণের একটা আলগা ছাপ সর্বত্র, লেবুরঙা রোদ সেখানে কথায় কথায় এসে পড়ছে চরিত্রদের মুখে, হলদে-কমলা-সাদা-গোলাপিতে ভরপুর ‘হ্যাপি কালার্স’-এর ছড়াছড়ি সর্বত্র। সবচেয়ে বড় কথা, ছবির বসতবাড়ি থেকে সাজানো সেটের কৃত্রিমতা মোটেই মুছে ফেলা যায়নি, যেখানে মালয়ালম ছবির বাড়িটা দেখতে দেখতে একথা বিশ্বাস করতে অসুবিধে হয় না যে, এখানেই সত্যিকারের মানুষ তার রোজের নুনঘামমাখা দিনগুলো টেনেহিঁচড়ে কাটিয়ে চলে।

……………………………..

খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু রেফারেন্স সম্ভবত রাজনৈতিক শুদ্ধতা বজায় রেখে নির্বিবাদে বাদ পড়েছে। শবরীমালা সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে গলা-ফাটানো মিছিলের মুখোমুখি হচ্ছে নায়িকা, আর তার বাড়িতে সেই শবরীমালা যাত্রারই প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরুষপ্রবররা। নারীনিষিদ্ধ সেই মন্দিরযাত্রায় নারীস্পর্শ নারীসঙ্গ নির্মম অনুশাসনে বর্জন করেছে তারা, অথচ সেই মেয়ের হেঁশেলঠেলা খাবার গলা দিয়ে নামাতে সে নিয়মে কোনও চিড় ধরছে না। ঠিক এই পরিস্থিতিতে একদিন তীব্র ঘৃণায় ওই ধর্মীয় শুচিবায়ুর মুখে আগুন জ্বেলে পচা এঁটো জল সে গিলতে পাঠাবে ধর্মযাত্রীদের, ছুড়ে মারবে জবাবদিহি চাইতে-আসা ধর্মপথিকদের পবিত্র পোশাক-আঁটা গায়ের ওপরে। হিন্দি ছবি কিন্তু ধর্মের আঙিনায় ব্রাত্য মেয়েদের কথা বলার ধারকাছও মাড়ায়নি। সেখানে বাড়িভর্তি আত্মীয়সমাগম সামলাতে সামলাতে আর তাদের আপ্যায়ন করতে করতে তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠে নায়িকা। সে রাগ দেখায় অবশ্য একই পথে, কিন্তু দুটো রাগের আগুন একই ইন্ধনে জ্বলেনি। বাড়িতে আসা অতিথির খিদমত খাটতে খাটতে খেপে ওঠা আর শবরীমালাগামী পুরুষদের ক্রিয়াকাজে অচ্ছুৎ করে-রাখা মেয়েটির ফুঁসে ওঠার নিক্তি তো কোনওভাবেই এক দাঁড়িপাল্লায় মাপা যায় না!

What's cooking in your Indian Kitchen, the Great? — The ArmChair Journal
রোজকার রান্নাঘর। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’-এর একটি দৃশ্য

রজস্বলা মেয়েকে রান্নাঘরে ঢুকতে না দেওয়া আর শোওয়ার ঘর থেকে আলাদা করে রাখার পচাগলা নিয়মের ভয়াবহতাটাও নেহাত ম্যাড়মেড়ে হয়ে গেছে, ‘মিসেস’-কে কমজোরি শরীর নিয়ে আর রাঁধাবাড়ার কাজ করতে হবে না– এই লঘু অজুহাতের দাক্ষিণ্যে। কিছুতেই ভুলতে পারি না সেই দৃশ্য, মূল ছবিতে নায়িকা যখন লুকিয়েচুরিয়ে চাকরির জন্য দরখাস্ত ঠুকছে নিরালা ল্যাপটপে, তখন তার আবহে কাঠের জ্বালে চড়বড়ে আগুনের ধোঁয়ায় ভাত ফুটছে টগবগ করে, যেহেতু কুকারে রাঁধা ভাত বাড়ির ছেলেদের গলা দিয়ে নামে না। মেয়েটি কী করতে চেয়েছিল, আর তাকে কী করতে হচ্ছে– এ দুয়ের বৈপরীত্য যে অসহ পরিস্থিতি তৈরি করে, সেই দম-আটকানো আঁধারকে প্রতিস্থাপন করার মতো জোরালো স্মৃতির লেশমাত্র নেই দ্বিতীয় সংস্করণে। সেখানে নায়িকা হেডফোনে গান শুনতে শুনতে একলা রসুইঘরে নেচে বেড়ায়, আর পুরুষ অভিভাবকটির উপস্থিতি অগ্রাহ্য করে ফেলে সেই অমনোযোগের অবসরে। একটা ছবি জুড়ে একের পর এক ফুটে উঠতে থাকে চাবুকের মার, আর অন্য ছবি জুড়ে জ্বলজ্বল করতে থাকে আলগা অস্বস্তি। ক্ষত আর যন্ত্রণার হিসেব দাখিল হল দুই ছবিতেই, কিন্তু এই মিলিয়ে দেওয়ার নিদানটুকু সরিয়ে রাখলে দুই ছবির ধার শানানোতে আকাশপাতাল প্রভেদ। চোখের সামনে একটা খুন হতে দেখা, আর নিষ্প্রাণ শরীরটুকু শুধু পড়ে থাকতে দেখার মধ্যে যে তফাত, সে তফাতের মাপকাঠি যত লম্বা, এই দুই ছবির দূরত্বও ততদূর। সবশেষে নায়িকার মুক্তিবিজয়ের হাসিখানা দিয়ে ‘মেলাবেন তিনি মেলাবেন’-এর জয়ধ্বনি করে সে পার্থক্য মোটেই মুছে ফেলা যাচ্ছে না।

………………………………………..

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

………………………………………..