স্টার থিয়েটারের ওই গাড়ি-বারান্দার ছাদে এসে গলার স্বর তুলে জনতাকে বলতে শুরু করেছেন, ‘ভাইসব, আপনারা একটু শান্ত হোন, উত্তমদা এক্ষুনি এসে যাবেন, বাড়ি থেকে রওনা হয়েছেন–’, কিন্তু সেই চ্যাংড়াদের জনতা তাঁকে কথা শেষ করতে দিলে তো! তাদের এক তীব্রকণ্ঠ নেতা, প্রবল পরাক্রমী শঙ্খচিলের কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল, ‘তোকে চাই না, গুরুকে চাই। তুই কে? তুই ফোট!’ শুনে সেই তরুণ নায়ক রক্তিম মুখে শশব্যস্তে পশ্চাদপসরণ করলেন।
‘ফ্যান’ কথাটির দ্বিভাষিক ‘বিনির্মাণ”
একটা স্বর্গীয় সময় ছিল, যখন ইংরেজি ভাষার জগতে ঢুকিনি, সেই পুব বাংলার গ্রামের শৈশবে। তখন ‘ফ্যান’ কথাটার এক ও অবিকল্প মানে ছিল– পশ্চিমবাংলায় যাকে ভাতের ‘মাড়’ বলা হয়। একভাষী সেই পৃথিবীতে আমাদের ভাতের ফ্যান মেশানো ‘ফ্যানা ভাত’ খেতে দেওয়া হত প্রাতরাশ হিসেবে, সামান্য একটু নুন আর ঘিয়ের ছিটে দিয়ে, তা খেয়ে আমরা স্বর্গীয় সুখ পেয়েছি, নিশ্চয়ই অনেক পাঠকও তাই পেয়েছেন।
সেই সুখের সময় বেশিদিন টেকেনি। এক সময় ওই গ্রামেই এসে হানা দিল সেই অবিস্মরণীয় পঞ্চাশের মন্বন্তর, তখন বাড়ির দরজায় ক্ষুধার্ত মানুষের সারি আর তাদের ‘মা, একটু ফ্যান দাও গো’ বলে আর্তনাদের কথাও মনে আছে। সেসময় বোধহয় পাঠশালায় আমরা দ্বিভাষী বিশ্বে ঢুকতে বাধ্য হয়েছি। অন্য একটা ভাষায় ‘ফ্যান’ মানে যে পাখা, তাও শিখেছি, কারণ, ‘ক্যান, ফ্যান, প্যান, ম্যান’– এইসব লিস্টি আমাদের বইয়ে ছিল। কিন্তু একটু বেশি অ্যাকাডেমিক হয়ে পাঠকদের এই সাংস্কৃতিক খবরটাও দিই যে, তখন ইংরেজি ‘ফ্যান’ মানে, সেই গ্রামে, আমাদের কাছে ছিল হাতপাখা। তবে পাঠক নাক কোঁচকানোর আগেই বলি যে, হাতপাখার নমুনা হিসেবে আমাদের যেমন তালপাতার পাখা ছিল, তেমনই মা-মাসিদের সুন্দর হাতে-বোনা নকশিদার সুন্দর সুতো বা উলের পাখাও ছিল। জমিদারি সেরেস্তায় ঘরের ছাদে ঝোলানো টানা-পাখাও দেখেছি, কিন্তু সেটাকে ‘ফ্যান’ বলার সাহস কেন যেন হয়নি।
দেশভাগের পর শহরে এসে বিদ্যুৎ-চালিত ফ্যান দেখলাম এবং তখন যেন ইংরেজি কথাটা আমাদের কাছে সার্থক হয়ে উঠল। কিন্তু ও মা, তখন একটু লায়েক হয়েছি, শহরের সিনেমাহলে অভিভাবকদের লুকিয়ে সিনেমা-টিনেমা দেখছি, আর আরও লায়েকদের যেটা কাজ– সেই সিনেমা-পত্রিকারও পাতা ওলটাচ্ছি। তখন দেখি, আমাদের চেনা ‘ফ্যান’ কথাটাকে নিয়ে আর একটা অর্থ টানাটানি শুরু করেছে। সেটা কোনও ঘুরে ঘুরে বাতাস উৎপাদনের যন্ত্র নয়, সে একদল হাত-পাওয়ালা মানুষ, বিশেষত চ্যাংড়া আর চেংড়ির দল, যারা নাকি ফিলমের নায়ক-নায়িকাদের পিছনে ধাওয়া করে, অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে বা না-নিয়ে, কখনও হিংস্রও হয়ে উঠে তাঁদের জামাটামা ধরে টানাটানি করে (তাতে কখনও বিচ্ছিরি ব্যাপারও হয়), নায়ক-নায়িকারা তাদের নিয়ে কী করবেন, ভেবে পান না। কখনও তাদের সমাদর উপভোগ করেন, কখনও তাদের কাছ থেকে পালান। কখনও দূর থেকে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দেন। পরে দেখলাম যে শুধু নায়ক-নায়িকা বা অভিনেতাদের নয় (মনে রাখতে হবে, নায়ক-নায়িকা শুধু সিনেমার হয় না, নাটকের বিশেষ করে যাত্রাজগতেরও হতে পারে, তাঁদেরও ‘ফ্যান’ হয় বলেই জানি), গায়ক-গায়িকাদের, অন্যান্য শিল্পীর, খেলোয়াড়দের, কবি ও সাহিত্যিকদের, এমনকী, রাজনৈতিক নেতানেত্রীদেরও ফ্যান হয়। গ্ল্যামার জগতের ফ্যানদের মতো বাকিরা অত হিংস্র হয় না বোধহয়। ইদানীং দেখছি, ফেসবুক-ব্যক্তিত্বদেরও ফ্যান হয়, তবে তাদের বোধহয় আর-একটা ইংরেজি শব্দ ‘ফলোয়ার’ বা অনুগামী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ দুয়ের চরিত্র কতটা আলাদা তা নিয়ে নিশ্চয়ই গবেষণা চলবে। তবে ‘ফ্যান’রা ব্যক্তির চেয়ে গোষ্ঠী হিসেবেই বেশি পরিচিত, কারণ তাদের আচরণের একটা যৌথ, সাধারণ প্যাটার্ন আছে।
গ্ল্যামার জগতের ফ্যানরা: তাদের কর্তব্য ও আচরণ
গ্ল্যামার-জগৎ বলতে আমি মোটামুটিভাবে এবং আপাতত চলচ্চিত্রের জগৎ বুঝছি। এখানে আমার একটা আপাত দুর্বলতা হল, আমি এখনকার সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের কথা কিছুই বলতে পারব না, কারণ গত ৫০ বছরের সিনেমাজগৎ আমার কাছে এক অপরিচিত মহাদেশ। এই সময়ে আমি দশ-বারোখানা সিনেমা দেখেছি কি না, বলা কঠিন। আর এখনকার মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখতে আমার মোটেই ভালো লাগে না। আমি তিন আনার লাইন মারপিট করে ভেঙে লাইনে ঢুকে সিনেমা দেখার লোক। সিনেমাহলের টিকিটঘরের সামনে বিশাল লাইন হবে, লাইন ঠেলাঠেলিতে ঢেউয়ের বা সাপের শরীরের মতো দুলবে, ভাঙবে, মারপিট করে গঠিত পুনর্গঠিত হবে। ওই হল ফ্যানশিপের বা ফ্যানহুডের চিহ্ন। আমাদের সময় ফিল্মের নায়ক-নায়িকাদের ফ্যান হওয়ার ওই ছিল ধর্মীয় কর্তব্য, সিনেমাহলের লাইনে মারামারি করে জামা ছিঁড়ে টিকিট কেটে ঢোকা। আমাদের একদিককার প্রিয় ফাইটিং পিকচারের নায়ক-নায়িকা ছিলেন ফিয়রলেস নাদিয়া আর জন কাওয়াস (আমাদের মুখে জান কাবাস), রোমান্টিক সিনেমার নায়করা ছিলেন অশোককুমার, দিলীপকুমার, রাজ কাপুর, দেব আনন্দ, আর নায়িকারা ছিলেন সুরাইয়া, নার্গিস, মধুবালা, মীনাকুমারী, বা পরের দিকে বৈজয়ন্তীমালা, নূতন, সায়রা বানু। বাংলায় একমাত্র উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনই এই তারকাদের সমকক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। এঁদেরই জন্যে সিনেমার লাইনে আমাদের জামা ছিঁড়ত, মাথা ফাটত, কবজি ভাঙত। চর্মচক্ষে কাউকে না দেখেই এই দশা। তখনকার বোম্বাই বা কলকাতায় ওঁদের চর্মচক্ষে যারা দেখতে পেত, তাদের যে আমরা কী ঈর্ষা করতাম কহতব্য নয়।
ওই ভাগ্যবান ফ্যানদের কথা আমরা পড়তাম সিনেমা পত্রিকায়, যা আমি নিয়মিত পড়তাম, ইংরেজি, বাংলা দুই ভাষাতেই। বম্বের একটা পুরনো ফিল্ম ম্যাগাজিন ছিল ‘ফিল্মইন্ডিয়া’, সম্পাদক বাবুরাও প্যাটেল। সেটা আর্ট পেপারে ছাপা হত, বোধহয় বাবুরাওয়ের মৃত্যুর পর উঠে যায়। আর বেরত টাইমস গ্রুপের ‘ফিল্মফেয়ার’, সেটা খুব চলত। তাতে পুরস্কার-টুরস্কারে তারকা-সমাবেশের ছবি আর ফ্যানদের নানা কীর্তিকলাপের ছবি থাকত। বাংলায় সমান দরের কাগজ ছিল না, কিন্তু কালীশ মুখোপাধ্যায়ের ‘রূপমঞ্চ’, হাতে ছাতা আর চোখে কালো চশমা, ধুতি-পাঞ্জাবি পরা সুধাংশু বকসীর ‘রূপাঞ্জলি’ ছিল, পরে এল ‘উল্টোরথ’, ‘প্রসাদ’ ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘প্রসাদ’ পুনরুজ্জীবিত। আর দৈনিক কাগজেরও ফিল্মের পাতায় আমাদের চোখ লেপ্টে থাকত শুক্রবার শুক্রবার। এসবের কথা বলছি, কারণ ফ্যানরাই ছিল এসব কাগজের বিশেষ ক্রেতা ও সমঝদার।
এদের এক পাতি সদস্যের পুরস্কারেরই একটি নিজের চোখে দেখা ঘটনা মনে আছে। সেটা বোধহয় ১৯৫৯ সালের শেষ হবে, স্টার থিয়েটারে ‘রূপাঞ্জলি’ পত্রিকার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। তখন এইসব পত্রিকাগুলোর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে চিত্রতারকারা আসতেন, মানুষও প্রচুর ভিড় করত। তখন উত্তম কুমারের ‘বসু পরিবার’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ বেরিয়ে গিয়েছে, তিনি তখনই একশ্রেণির ফ্যানের ‘গুরু’ হয়ে উঠেছেন। তাঁর আসার কথা, কাজেই ফুটপাথ ছাপিয়ে তখনকার কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটের ট্রাম রাস্তাতেও ভিড় জমেছে তাঁর ফ্যানদের, ‘গুরু’কে দেখবে বলে। ট্রাম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ‘গুরু’র আসতে দেরি হচ্ছে, আর এই অপেক্ষমাণ কমবয়সি জনতার ভিড়ের আয়তন আর অস্থিরতা দুই-ই বাড়ছে, তারা আমন্ত্রিত অন্য লঘুদের আর বৈধ দর্শকদের হলে প্রবেশ কঠিন করে তুলছে, হলের দরজা প্রায় অবরোধ করে। ‘গুরু’কে দাবি করছে।
গুরু তখনও আসেননি, কিন্তু এসেছেন আর-একজন তরুণ অভিনেতা, যিনি তখন সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে নায়ক হিসেবে প্রথম আবির্ভাবেই বাঙালিকে মুগ্ধ করেছেন। কিন্তু তখনও ‘তারকা’ হয়ে ওঠেননি, কোনও দিনই হয়ে উঠবেন না। কারণ তিনি কফি হাউসে নিয়মিত প্রতি রবিবার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার জন্য স্কটিশ চার্চ কলেজের দরজায় অপেক্ষা করবেন, কখনওই মাথায় হ্যাট বা চোখে কালো চশমা পরবেন না বা কালো কাচের জানলা বন্ধ গাড়িতে চলাফেরা করবেন না। শুনেছি যাঁদের প্রচুর ফ্যান তাঁদের এসব না করলে চলে না।
তিনি ঠিক সময়ে এসে গিয়েছেন, কারণ তিনি স্টার নন, স্টারদের যে কোনও অনুষ্ঠানে, মন্ত্রী ও অন্যান্য ভিআইপির মতো বেশ দেরি করে যাওয়া অবশ্যকর্তব্য, এটা তিনি আয়ত্ত করতে পারেননি। উদ্যোক্তারা তখন তাঁকে গিয়ে ধরলেন, যদি তিনি ওই উত্তেজিত জনতাকে একটু শান্ত করতে পারেন কিছু বলে। তিনি সৌজন্যবশত চলে এলেন স্টার থিয়েটারের ওই গাড়ি-বারান্দার ছাদে এসে গলার স্বর তুলে জনতাকে বলতে শুরু করেছেন, ‘ভাইসব, আপনারা একটু শান্ত হোন, উত্তমদা এক্ষুনি এসে যাবেন, বাড়ি থেকে রওনা হয়েছেন–’, কিন্তু সেই চ্যাংড়াদের জনতা তাঁকে কথা শেষ করতে দিলে তো! তাদের এক তীব্রকণ্ঠ নেতা, প্রবল পরাক্রমী শঙ্খচিলের কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল, ‘তোকে চাই না, গুরুকে চাই। তুই কে? তুই ফোট!’ শুনে সেই তরুণ নায়ক রক্তিম মুখে শশব্যস্তে পশ্চাদপসরণ করলেন।
এ আমার নিজের চোখে দেখা আখ্যান। কারণ আমিও উল্টোদিকের একটা বাড়ির দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিত্রতারকাদের দর্শনস্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
বিগ্রহরা কী করেন ফ্যানদের জন্য
সব ফ্যানরা যে তাদের ‘বিগ্রহ’ বা আইডলদের ‘তুই-তোকরি’ করে তা হয়তো নয়। একদল ‘গুরু’ হয়ে যান, ওই সম্ভাষণ বোধহয় তাঁদেরই জন্যে। বিশেষত, যাঁরা কৌতুকাভিনেতা, তাঁদের জন্যে বোধহয় এক শ্রেণির দর্শকের ওই অন্তরঙ্গ সম্ভাষণ সংরক্ষিত থাকে, তাতে কিছু প্রিয় গালাগালও যুক্ত হতে পারে। আমি আমার প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শুনেছি (কোনও এক জলসার গ্রিনরুমে সংক্ষিপ্ত আলাপে) তাঁরা এর জন্যে প্রস্তুত থাকেন, কারণ এটা সর্বভারতীয় সংস্কৃতি। ইংরেজি ভাষা ভারতীয় ভাষার কাছে গো-হারান হেরে বসে আছে যে, তাতে ‘তুই-তোকরি’র চমৎকার ব্যবস্থা নেই।
ফিল্মের ওই প্রখর আর দুর্ধর্ষ গ্ল্যামার-বিশ্বের বাইরে এলে অবশ্য ওই ভয়াবহ অন্তরঙ্গতার আক্রমণ কমে আসে। যেমন গায়কদের বেলায় আমি অতটা দেখিনি, তবু আমার দেখা সীমাবদ্ধ হতেই পারে। গায়কদের কাছে আমরা নানারকম আবদার করি অবশ্য, গানের আবদার। সেখানে খানিকটা সৌজন্য বজায় থাকে। ওই আবদারে গায়কেরা খুব একটা বিব্রত হন বলে মনে হয় না। একবার বিদেশে এক আড্ডায়, মঞ্চে নয়, শ্রীমতী সুচিত্রা মিত্রকে গান গাওয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি করছিল কিছু ফ্যান, যাদের মধ্যে এই লেখকও ছিল। তিনি সহজেই গাইলেন, বিনা যন্ত্রে, খালি গলায়। গানের শেষে তাঁকে কুণ্ঠিতভাবে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এই যে আপনাকে আমাদের মধ্যে পেয়ে আমরা গান গাওয়ার জন্য আবদার করি, তাতে আপনার খারাপ লাগে না ?’ সুচিত্রাদি মিটিমিটি হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আবদার না করলেই একটু খারাপ লাগে !’ জানি না, সব গায়ক সব অবস্থায় এরকম উদার হবেন কি না।
না, সাক্ষাতের বাইরে ফ্যানটা তাদের বিগ্রহকে প্রচুর চিঠি লেখে বা লিখত বলে শুনেছি। এবং বিগ্রহেরা সেক্রেটারি রেখে সেসব চিঠির উত্তর দিতেন, তাতে ফ্যানের আকাঙ্ক্ষামতো নিজেদের ফোটোগ্রাম ভরে দিতেন পিছনে সই করে, তাও শুনেছি।
ফ্যানদের সংকট
ফ্যান কীর্তিগাথা সহজে শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু লেখা তো শব্দ হিসেব করে শেষ করতে হয়। আমি এ লেখা শেষ করব ফ্যানদের সংকট দিয়ে। তা হল, ধরুন আমি একজন গায়কের ফ্যান। তিনি অসাধারণ, বাংলা গানে এক অসামান্য বিপ্লব এনেছেন, বহু স্মরণীয় গান রচনা করেছেন। কিন্তু নানা প্রোগ্রামে তিনি শ্রোতাদের প্রচুর ‘বকাবকি’ করেন, (‘বকাবকি’ কথাটা একটু নরম করেই বললাম), তাঁর জীবন আর আচরণেও তথাকথিত ‘ভদ্রলোকেরা’ কী ভাবল তার তোয়াক্কা করেন না। তাঁর মুখে আটকায় এমন শব্দ বা প্রসঙ্গ খুব কম আছে। তাঁর গান থেকে বাঙালি বেরতে পারবে না কোনও দিন, হঠাৎ তিনি রাজনৈতিক মত পাল্টে ফেললেন। কবিদের ক্ষেত্রেও এমন হতেই পারে।
তখন ফ্যানমশাই বা মহাশয়া গভীর গাড্ডায় দেখতে পান নিজেকে। সংশ্লিষ্ট বিগ্রহের কতটা ফ্যান থাকবেন তিনি, কতটা বর্জন করবেন তাকে? বর্জন করলে কি তাঁকে আর ফ্যান বলা যাবে? ওই বিগ্রহের সৃষ্টিকে অভিকরণ বা পরিবেশনকে কতটা ভালোবাসবেন, আর ব্যক্তিটিকে কতটা দূরত্বে রাখবেন, এই নিয়ে একটা সংকট তৈরি হয় ফ্যানটির মধ্যে। যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ-লসাগু-গসাগু করে তিনি কীভাবে আর কতটা সমাধান করতে পারেন তা জানি না।
না, জীবন তো এই রকমই– তা আপনাকে কখনও ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে কিছু দেবে না। ওই যে ইংরেজিতে একটা কথা আছে না, You win some, you lose some. ফ্যানদের বেলায় তার ব্যতিক্রম হবে কেন ?
কিন্তু কেন আমরা এত হিংস্র হয়ে উঠলাম? কেন তাকে পিটিয়ে মারার আগে খেতে দিলাম? কী জানি, একেক সময় মনে হয়, পথের ধারে যে মাংসর দোকানের সামনে দিয়ে আমরা যাতায়াত করি আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি, সেখানেও কাটার আগে পাঁঠাকে কাঁঠাল পাতা খেতে দেওয়া হয়।