Robbar

কেষ্ট একাই এক-শো

Published by: Robbar Digital
  • Posted:August 26, 2025 7:13 pm
  • Updated:August 26, 2025 9:01 pm  

মাতালের ভূমিকায় অনেকেই অভিনয় করেছেন। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই করেছেন। ‘দেবদাস’ ছবির দেবদাস বা চুনিবাবু চরিত্র, ‘শরাবি’, ‘সত্তে পে সত্তা’, ‘হাম’, ‘অমর-আকবর-অ্যান্টনি’ সিনেমায় মাতাল চরিত্রে অভিনয় করা চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অভিনেতারা অসাধারণ। কিন্তু তার পরেও মদ্যপ ভূমিকায় কেষ্ট মুখার্জি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি মদ খেয়ে ভেঙে পড়েন না, নিরীহ অসহায় কমনম্যানের প্রতিনিধি হয়ে পড়েন। তিনি সাতে থাকেন, পাঁচে থাকেন, কিন্তু সাত্তায় থাকেন না, প্যাঁচেও থাকেন না। তিনি পর্দায় সেই সাধারণ মানুষটা, যে হেরে গিয়েছে কিন্তু নিজের হার বুঝতে পারেনি।

আনন্দময় ভট্টাচার্য

অ্যান্টনি হোপ এক কাহিনি লিখলেন। ‘প্রিস্‌নার অফ জেন্দা’। অনুপ্রাণিত শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় দারুণ এক ভারতীয়করণ করলেন কাহিনিটির। ‘ঝিন্দের বন্দী’। সেখানে শঙ্কর সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে কখন যেন গৌরীশঙ্কর নিজেই অভিষিক্ত রাজা হয়ে উঠেছেন। পাঠকের কাছে মনে হচ্ছে না– এ নকল, অভিনয়, প্রক্সি। কখনও কখনও গৌরীশঙ্কর নিজেও কনফিউসড। এমনকী আসল জন উদ্ধারের পরেও মনে হয়, উদ্ধার না হলে বিশাল আকাশ ভেঙে পড়ত না ঝিন্দের মাথায়। এই কাহিনি থেকে যে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল, তার দর্শকেরও অভিজ্ঞতা মোটের ওপর একই রকম।

আবার দেখুন, ১৯৯৮ সালে জার্মানিতে ১৪ জন মানুষকে নির্বাচন করে দুই দলে ভাগ করে কয়েদি ও গার্ড সাজিয়ে বিখ্যাত ‘দাস এক্সপিরিমেন্ট’ করা হয়েছিল। প্রথম প্রথম ঠিকঠাক চললেও ক্রমে দেখা গেল অভিনেতারা ভুলে গিয়েছেন, তাঁরা আসলে মিছিমিছি গার্ড-কয়েদি এইসব সেজে আছেন। দেখা যাচ্ছে, নকল গার্ডরা অত্যাচারী হয়ে উঠছেন, নকল কয়েদিরা আত্মরক্ষায় উদগ্রীব হয়ে উঠছেন। মানুষ কি এইভাবে নিজের আসল ব্যক্তিত্বের খোলস ছেড়ে একটা নকল ব্যক্তিত্বের খোলসে আঁটোসাঁটো হয়ে সেঁধিয়ে যেতে পারে? পারে নিশ্চয়ই। না হলে একজন মানুষ, কেবল চলচ্চিত্রে মাতালের ভূমিকায় অভিনয় করলেন, পরপর করে গেলেন, এবং ভারতবাসী মাতালের রেফারেন্স দিতে গেলে বা ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষণ হিসেবে তাঁর নামটাই বাচনে ঝুলিয়ে দিতে থাকলেন কেন? দেখতে দেখতে কিংবদন্তি মাতাল হয়ে উঠলেন তিনি– প্যান ইন্ডিয়ান সেলুলয়েড ইন্ডাস্ট্রি থেকে রকের আলোচনায়। তিনি কেষ্ট মুখার্জি। রিল লাইফের হেঁচকি সম্রাট! আপামর ভারতীয়র আদরের ‘মালকেষ্ট’। কেষ্ট আছে মানে সেই দৃশ্যে কষ্ট নেই, দুঃখ নেই, এবং দৃশ্যটি মজার। মুখুজ্জে মাতাল, কিন্তু ট্রাজিক নন। কেষ্ট মুখার্জি ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রবহমানতায় এক বিস্ময়কর প্রতিভা এবং একইসঙ্গে অনালোচনার শ্যাওলাচাপা মাইলস্টোন।

কেষ্ট মুখার্জি

১৯৮১ সালে ‘স্টারডাস্ট’ পত্রিকায় কেষ্ট মুখার্জির সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে উঠে আসে অভিনেতার শুরুর দিকের লড়াই। বম্বে এসেছেন ভাগ্য সন্ধানে। এক এঁদো রেল কোয়ার্টারের খুপরি ঘরে বাস করছেন। খাবার জুটছে না নিয়মিত। কিন্তু শ্রমিক পল্লিতে মিলছে সস্তার দেশি দারু। তাই খানিকটা সকাল-রাতে পাকস্থলীতে চালান করে দিচ্ছেন। এতে দু’ রকমের উপকার পাচ্ছেন। প্রথমত খিদে গায়েব। অন্য উপকার হল ঘরের মধ্যে অ্যারোবিক্স করতে থাকা ইঁদুর-ছুঁচো-টিকটিকি-বিড়াল-আরশোলার উৎপাতে ঘুমের দফারফা হচ্ছিল, তার থেকে ফুল রিলিফ। সারই থাকবে না ঘুমের সময়। মজা করে কেষ্ট জানাচ্ছেন, কেবল বিয়ের দিন ছাড়া প্রতিদিন মদ খেয়েছেন তিনি! কিন্তু মদ খাওয়া আর মাতালের অভিনয় করা তো এক জিনিস নয়! কেষ্ট সেটা নিখুঁত করতে পারতেন। শুধু মাতলামি নয়, তাঁর প্রত্যেকটি অনস্ক্রিন অ্যাপিয়ারেন্স ইতিহাস তৈরি করেছে। চোখের মণি দুটো বিপরীত অভিমুখে পাঠিয়ে দিয়ে ঝাপসা স্বগতোক্তির সঙ্গে টলটলে জিভ বেঁকিয়ে মাঝেমাঝে হেঁচকি তুলে তাঁর সংলাপ বলার আইকনিক ঢং তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল।

১৯৫২ সালে যতীনবাবু চরিত্রে ‘নাগরিক’ ছবিতে তিনি ভারতীয় দর্শকের সামনে আবির্ভূত হলেন। পরের ছবি ‘মুসাফির’ ১৯৫৭-তে। ঋত্বিক ঘটক তাঁর মধ্যে একজন মৌলিক অভিনেতাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই ঋত্বিকের ছবিতে বারবার কেষ্টকে নানা ভূমিকা পালন করতে দেখি। একটা বা দুটো ফ্রেমে আসছেন। তারই মধ্যে দর্শককে চ্যালেঞ্জ করছেন। ‘অযান্ত্রিক’ ছবি থেকে ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ বা ‘লুকোচুরি’, ভূমিকা যত ছোটই হোক না কেন, কেষ্ট মুখার্জিকে আলাদা করে চোখে পড়ার কারণ থাকবে সচেতন দর্শকের কাছে।

জনি ওয়াকারের সঙ্গে কেষ্ট মুখার্জি

মাতালের ভূমিকায় অনেকেই অভিনয় করেছেন। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই করেছেন। ‘দেবদাস’ ছবির দেবদাস বা চুনিবাবু চরিত্র, ‘শরাবি’, ‘সত্তে পে সত্তা’, ‘হাম’, ‘অমর-আকবর-অ্যান্টনি’ সিনেমায় মাতাল চরিত্রে অভিনয় করা চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অভিনেতারা অসাধারণ। কিন্তু তার পরেও মদ্যপ ভূমিকায় কেষ্ট মুখার্জি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি মদ খেয়ে ভেঙে পড়েন না, নিরীহ অসহায় কমনম্যানের প্রতিনিধি হয়ে পড়েন। তিনি সাতে থাকেন, পাঁচে থাকেন, কিন্তু সাত্তায় থাকেন না, প্যাঁচেও থাকেন না। তিনি পর্দায় সেই সাধারণ মানুষটা, যে হেরে গিয়েছে কিন্তু নিজের হার বুঝতে পারেনি। সেই মানুষটা যে সব ঠিক আছে ভেবে নিজেকে বিশৃঙ্খলায় ডুবিয়ে রেখেছে। যে বিভ্রান্ত, কিন্তু বিশ্বাস করে সে সেয়ানা। ‘বম্বে টু গোয়া’ ছবিতে তাঁর চরিত্রে কোনও সংলাপ নেই। শুধু ঘুমিয়ে পড়তে হত তাঁকে। সেটাই করেছেন, দর্শক স্বীকার করেছেন তাঁর চরিত্রটা না যোগ করলে যাত্রাপথের মজাটা কোনওভাবেই ষোল আনা জমত না। ঘুম থেকে উঠে এক চোখ খুলে সাপের মুখোমুখি হওয়া এবং কিছুই বিশেষ করা সম্ভব হবে না ভেবে সেই চোখ আবার বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়া, জাস্ট মাস্টারক্লাস। তিনি প্রায় কোনও চলচ্চিত্রেই কেন্দ্রীয় চরিত্র নন। কিন্তু তাঁকে ছেড়ে দৃশ্যগুলোও সম্পূর্ণ হয় না। কথার মাঝে ধীর লয়ে চোখের পলক ফেলা, এলোমেলো যুক্তি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যক্ত করার মতো শটগুলো এত নিখুঁত যে, আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না, তিনি মনোবিজ্ঞানের একজন নিষ্ঠ ছাত্র ছিলেন; এবং অবশ্যই ছিলেন প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই টাইপ চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ওস্তাদ।

‘বম্বে টু গোয়া’ ছবিতে ‘ঘুমন্ত’ কেষ্ট মুখার্জি

‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ ছবিতে মিনিট পাঁচেক সব মিলিয়ে কেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু তাঁর চরিত্রের ইমপ্যাক্ট পাঁচ মিনিটের নয়। জাদুকর কেষ্ট যেন শহরের নোংরা রাস্তা আর ধান্ধাবাজ মনের মুখোশটা দেখিয়ে দিচ্ছেন। চমৎকার কুযুক্তিময় দার্শনিকতা চরিত্রটিকে আলাদা মাত্রা দিচ্ছে। ‘অযান্ত্রিক’-এ কেষ্ট এক পাগল, যাঁকে আনাই হয়েছে বিমলের ভিতরের পাগলামিটাকে একটা বাহিরাঙ্গিক স্ক্রিন প্রেজেন্স দিতে।

……………………….

মজা করে কেষ্ট জানাচ্ছেন, কেবল বিয়ের দিন ছাড়া প্রতিদিন মদ খেয়েছেন তিনি! কিন্তু মদ খাওয়া আর মাতালের অভিনয় করা তো এক জিনিস নয়! কেষ্ট সেটা নিখুঁত করতে পারতেন। শুধু মাতলামি নয়, তাঁর প্রত্যেকটি অনস্ক্রিন অ্যাপিয়ারেন্স ইতিহাস তৈরি করেছে। চোখের মণি দুটো বিপরীত অভিমুখে পাঠিয়ে দিয়ে ঝাপসা স্বগোতোক্তির সঙ্গে টলটলে জিভ বেঁকিয়ে মাঝেমাঝে হেঁচকি তুলে তাঁর সংলাপ বলার আইকনিক ঢং তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল।

……………………….

সেই কেষ্ট মুখার্জিকেই দেখি ব্যতিক্রমী নেগেটিভ রোলে ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জঞ্জির’ ছবিতে। ছোট্ট রোলে একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে সমস্যায় পড়লেই নীতিজ্ঞান হারিয়ে বিশ্বাসঘাতক হয়ে উঠতে পারেন, কেষ্ট মুখার্জির থেকে কেউ এই বিষয়টা ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বেশি উপযুক্ত হতে পারতেন বলে আমাদের মনে হয় না। আবার হৃষীকেশ মুখার্জির ১৯৭৫ সালের ছবি ‘চুপকে চুপকে’-তে কেষ্ট কবিতাভক্ত গাড়িচালক জেমস্‌ ডি’কোস্টা। অন্তমিলযুক্ত ইংরেজি আর হিন্দি শব্দে সুরার মাদকীয়তা গুঁজে আওড়ে চলা সংলাপ, জুতসই শব্দ না পেলে বিরক্ত অথচ অধৈর্য না হয়ে বারবার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একই কথা বলে যাওয়া এবং বরাবরের মতো অননুকরণীয় বাচনভঙ্গির জন্যে দর্শক ভুলতে পারবেন না এই কবিতা-পাওয়া জেমস্‌-কে।

‘জঞ্জির’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কেষ্ট মুখার্জি

১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় দমফাটা হাসির ছবি ‘গোলমাল’। যথারীতি কেষ্ট মুখার্জি সেখানে এক বোতলপ্রেমী সুঁড়ি। জেলের মধ্যে উৎপল দত্তর সঙ্গে তাঁর দৃশ্যটি দেখলে মনে হয় বড় মাপের দুই অভিনেতা যেন একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার ডুয়েল লড়ছেন। কেষ্ট হেরে যাবেন, উৎপল জিতে যাবেন– নির্দেশক আর চুক্তির সৌজন্যে। কারণ তিনি মানেই অলিখিত ছোট রোল। কোনওদিন তাঁকে আর এক বাঙালি উৎপল দত্তের মতো লম্বা চরিত্রে ভাববে না ইন্ডাস্ট্রি। সেই দুঃখই যেন পুলিশকে করা শেষ অনুরোধে মাখিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। বেচারা দত্তকে যেন নরম করে দেখা হয়। অথচ মদ্যপ এবং মজাদার স্ট্যান্ড থেকে একটুও সরছেন না। তলিয়ে ভাবলে রক্ত জুড়িয়ে আসবে সহমর্মী দর্শকের। ওদিকে ট্রেডমার্ক মাতাল চরিত্র থেকে খানিকটা সরে গিয়ে কেষ্ট যখন আশরফি লাল, ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খুবসুরাত’ ছবিতে, সেখানে সংলাপের মধ্যে যে কমিক টাইমিং রাখছেন, জাত অভিনেতা ছাড়া সেইসব বিষয় প্রত্যাশা করাও পাপ।

‘গোলমাল’ ছবিতে উৎপল দত্তর সঙ্গে কেষ্ট মুখার্জি

মাতাল, পাগল, ড্রাইভার, টানাওয়ালা, ঠেলাদার, ক্যানভাসার, সুঁড়িখানার অবৈধ মদবিক্রেতা, রাস্তার সাধারণ মানুষ, সস্তার জাদুকর এইসব চরিত্রেই কেষ্ট মুখার্জিকে ভাবা হয়েছে বেশি। আর এইসব চরিত্রের জামা গলিয়ে অনস্ক্রিনে মনের সুখে স্টিরিওটাইপ ভেঙেছেন কেষ্ট। তিনি মাতাল, কিন্তু বেশি টলেন না, বরং ওভারডোজ আর হজমের সমস্যায় হেঁচকি তুলে যান ক্রমাগত। তিনি ড্রাইভার, কিন্তু কবিতা ভালোবাসেন। তিনি টানাওয়ালা, কিন্তু স্বপ্ন দেখেন বড়লোকির। তিনি অভিনেতা হিসেবে সবসময় পার্শ্ব কিন্তু তীক্ষ্ণ। প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাধারণের, কিন্তু প্রতিনিধিত্ব করেছেন অসাধারণ। তিনি টলেছেন কম, টলিয়েছেন বেশি। ভারতীয় সিনেমায় তিনি একটা যুগ, যেখানে ক্ষুদ্র ভূমিকা তুচ্ছতার সঙ্গে পরিকল্পিত হত না।

১৯২৫ সালের ৭ আগস্ট কেষ্ট মুখার্জি আমাদের মধ্যে প্রথম হেঁচকি তুলেছিলেন। ১০০ বছর আগে সেটা অনেকটা এক কমেডি মহীরুহের কান্নার মতো শুনেছিল কলকাতা। সে কান্না আগামীতে কোনও বড় ভূমিকায় তাঁকে ভাবা হবে না, এই অভিমানে। সে কান্না সবাইকে মজার সারাংশ খাইয়ে নিজে গৌণচরিত হয়ে থাকার। সে কান্না ১০০ বছর পরেও অচর্চার উইংসের আড়ালে থাকার ভবিতব্যে। কলকাতা সেই কান্না শুনেছিল। কলকাতা সে কান্না শুনছে আজও। অভিনেতা কেষ্ট মুখার্জির জন্মশতবর্ষ। অভিনেতা কেষ্ট মুখার্জির ১০০। এবং অভিনেতা কেষ্ট মুখার্জি একাই এক শো।

অতঃপর, চিয়ার্স!

……………………………..

ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার.ইন

……………………………..