বঙ্গদেশে পারিবারিক রীতি অনুসারে বছরের পর বছর ধরে, গৃহস্থরা সরা কিনে পুজো করেন। দেবদেবীর নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে, মা লক্ষ্মীর কোন রূপের পুজো হবে তাও একেকটি পরিবারে নির্দিষ্ট থাকে। কোনও অবস্থাতেই তার পরিবর্তন ঘটে না। যে পরিবারে ‘একচোখো’ দুর্গা ও ‘একচোখো’ লক্ষ্মী অর্থাৎ প্রোফাইল-ফেসের মূর্তি পুজোর বিধান– সেই পরিবার চিরদিন একচোখো সরাই কিনবে। কোথাও বা দু’টি চোখওলা অর্থাৎ পূর্ণমুখের মূর্তির পুজো করার বিধানও রয়েছে। তাঁরা ‘দুচোখো’ সরা কিনে থাকেন। শিল্পীরাও সেই অনুযায়ী পাশফেরা অথবা সোজা চেয়ে থাকা দেবীর সরা আঁকেন; এবং ‘একচোখো’ আর ‘দুচোখো’ নামেই সরাগুলোকে ডাকেন।
চিরদিনই মানুষ সুখের সঙ্গে চেয়েছে সম্পদ। কিন্তু লক্ষ্মী চঞ্চলা, সুখ চিরস্থায়ী নয়, তা জেনেও মানুষ লক্ষ্মীদেবীর উপাসনা করেছে। বছর বছর সৌভাগ্যের হেতুস্বরূপ বাঙালি আহ্বান করে তাঁকেই। গোবর দিয়ে নিকনো উঠোন আলপনায় ভরিয়ে তুলে, জোড়া জোড়া পায়ের চলনে এগিয়ে চলেন ধন ও সৌভাগ্যের দেবী। তাঁরই আসনে গৃহী সাজিয়ে দেন তাঁর উপাসিত শিল্পবস্তু– লক্ষ্মীসরা। সরা বলতে মৃৎপাত্রের ঢাকনা বোঝায়। ‘সরা’ কথাটি এসেছে ‘শরাব’ থেকে। শরাব > শরা > সরা। ‘শরাব’ শব্দটির প্রাচীনতম নিদর্শন রয়েছে ছান্দোগ্য উপনিষদের অষ্টম অধ্যায়ে; বিশেষত আসুরি ভাষ্যে– দেবরাজ ইন্দ্র ও অসুররাজ বিরোচনের আখ্যানে। এরপর ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীতে লেখা ‘সেখশুভোদয়া’ নামক গ্ৰন্থে ‘সরাব’ শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে এইভাবে–
‘তস্মিন্ সময়ে ভাদ্রমাসে সর্ব্বে গ্ৰামিণ্যাং হস্তে কৃত্বা মালসা সরাব ভাজা ইতি খ্যাতঃ গঙ্গায় ত্ত্যক্তুম্।’
লক্ষণ সেনের রাজসভায় না কি এক অধ্যাত্মশক্তি-সম্পন্ন মুসলমান ফকিরের (সেখ) আর্বিভাব হয়েছিল। অমাত্যবর্গের বিরুদ্ধতা সত্ত্বেও, রাজা, ফকিরকে গৌড়ের মসজিদ করার অনুমতি দেন ও প্রচুর ভূসম্পত্তি দান করেন। এই লোকশ্রুতিকে কেন্দ্র করে ‘সেখশুভোদয়া’ রচনা করেছিলেন হলায়ুধ মিশ্র। এ গ্ৰন্থটিতে পাল ও সেন যুগের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় লিখিত হয়েছে গল্পের আকারে। অধ্যাপক সুকুমার সেন সেখশুভোদয়া সম্পাদনা করার সময়ে ‘সরাব’ শব্দটির অর্থ নির্দেশ করেছেন– ‘সরাব: tatsama word, meaning a flat clay pot’। শ্লোকে মালসার সঙ্গে যখন সরাব কথাটি সংযুক্ত হয়েছে তখন বোঝা যায় যে, সরাব হল মালসার ঢাকনা।
সাধারণত সরার উপর যে চিত্র অঙ্কন করা হয় তাকেই সরাচিত্র বলে। সরাচিত্র মূলত ধর্মীয় বা উপাসনামূলক শিল্পবস্তু হিসেবেই পরিচিত। আমাদের দেশে ঐতিহাসিক উৎখননে জানা গেছে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর লোকেরা মৃৎপাত্রাদির ঢাকনির উপরে ছবি আঁকতেন। ঐ সমস্ত ছবিতে মাছ, পদ্মফুল, কলমি শাক, অশ্বত্থপাতা-সহ বিভিন্ন লতার নকশা ইত্যাদি আঁকা থাকত। এ সমস্ত নিদর্শনগুলোকে সরাচিত্রের প্রাকপর্ব হিসেবে ধরা যায়। সিন্ধু সভ্যতায় প্রাপ্ত মৃৎপাত্রাদির ঢাকনায় একইরকম মোটিফের দেখা মেলে। এগুলি মূলত কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার পরিচায়ক। এই কৃষিভিত্তিক প্রতীকের উপরই অধিষ্ঠিত দেবী লক্ষ্মীর চিত্রকল্প বা মূর্তি কল্পনা। তবে বাংলায় সরার উপর দেবদেবীর চিত্র অঙ্কনের উদ্ভব ঘটেছে সম্ভবত পালযুগ থেকে। পালযুগে রচিত ‘সাধনমালা’ নামক গ্ৰন্থেও সরাচিত্রের উল্লেখ মেলে–
‘শরাবে খদ্বিকায়াৎভিলিখ্য দ্বারে লম্বাবয়েৎ।’
বঙ্গদেশে একসময় বৌদ্ধতান্ত্রিক উপাসনা যে সরাচিত্রের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হত, তা এ উল্লেখ থেকে বেশ স্পষ্ট হয়। বোধকরি এইসময় থেকেই সরার উপর দেবদেবীর চিত্র আঁকার প্রচলন হয়। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রে চণ্ডীর কোনও পুরুষ রূপ নেই, ‘চণ্ড’ নামে অপদেবতা আছে। কিন্তু বৌদ্ধতন্ত্রে চণ্ডীর পুরুষ রূপ রয়েছে– চণ্ড-মহারোষণ (নামান্তর অচল)। ইনি অতসীপুষ্পকান্তি– দেহবর্ণ নীল, দু’ হাত, একটি মুখ, তির্যক লাল চোখ, মহাঘোর, মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে থাকেন। মাথায় রত্নমুকুট, ডান হাতে খড়ম,বাম হাতের তর্জনীতে পাশ। ইনি বিঘ্নহন্তা, যথেচ্ছা পরিপূরক, সর্বপাপ দহন করেন ও সর্বত্র রক্ষা করেন। সরায় খড়ি দিয়ে মূর্তি এঁকে দরজায় টাঙিয়ে দিলে নবপ্রসূতিদের শিশুকে রক্ষা করেন। লক্ষণীয় চণ্ডের স্ত্রীরূপ হলেন চণ্ডী অর্থাৎ দুর্গা; তাঁর ছবি আবার সরাচিত্রে আঁকা হয়ে থাকে। সেই সরা ‘আচার্য’ বা ‘গণকা’ সরা নামে পরিচিত। গণক সম্প্রদায় বা আচার্যেরা এই সরার ছবি আঁকতেন বলে এমন নাম হয়েছে। আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়, ‘আচার্য’ বা ‘গণক’ মানে শুধু ব্রাহ্মণ বোঝায় এমনও কিন্তু নয়। আবার দুর্গাপুজোর ধ্যানমন্ত্রে দুর্গাদেবীর গায়ের রং ‘অতসীপুষ্পবর্ণ’ উল্লেখিত হয়েছে। কাজেই এখানে চণ্ড ও চণ্ডীর একপ্রকার সংযোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।
অনুমান করা যায়, পালযুগেই সরাচিত্রে দুর্গার চিত্রকল্পনা নির্মাণ হয়ে গিয়েছিল। তাই সরাচিত্র লোকশিল্প হলেও তার ভিত ঐতিহ্যবাহী শিল্পের মধ্যে প্রোথিত হয়ে রয়েছে। শাক্ত ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে যেমন দুর্গাসরা সরার উদ্ভব ঘটেছিল, তেমনই বৈষ্ণবীয় ইতিহাসকে কেন্দ্র করে রাধাকৃষ্ণ সরারও উদ্ভব হয়েছিল।
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাকে কেন্দ্র করেই পূর্ববঙ্গে লক্ষ্মীসরার উদ্ভব হয়েছিল। বঙ্গদেশে মাটি সহজলভ্য হওয়ায়, লক্ষ্মীসরা, উপাসনার উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে সরাচিত্রে মৃন্ময়ী রূপ নয়, চিত্রকারী রূপের প্রতিফলন ঘটেছে; আর এই চিত্রকারী রূপটি বঙ্গদেশে বহু প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল। লক্ষ্মীই যদিও লক্ষ্মীসরার শিল্পীদের মূল উপজীব্য বিষয়। তবুও অন্যান্য দেবদেবীদেরও লক্ষ্মীর সঙ্গে সরায় টেনে আনতে তাঁরা দ্বিধা করেন না। গোলাকার সরাখানাকে একাধিক প্যানেলে ভাগ করে এই সব দেবদেবীদের পুতলি অর্থাৎ ছবি আঁকা হয়। লক্ষ্মী-সরস্বতী, গণেশ-কার্তিকের সঙ্গে সিংহবাহিনী দশভুজাই অধিকাংশ সরায় থাকেন। কিন্তু সমস্ত সরার নিচেকার প্যানেলটির সর্বস্বত্ব লক্ষ্মীরই জন্যে সংরক্ষিত থাকবে। তিনি সেখানে দু’হাতে ধানের ছড়া নিয়ে, চুল এলিয়ে বসে থাকেন। পাশে থাকে গোলচোখো পেঁচা আর তুলির ক্ষিপ্র টানে আঁকা আর্শি (আয়না), চিরুনি, সিঁদুর কৌটো, শাঁখ-কড়ি। কখনও কখনও দু’-পাশে সখি কিংবা ভক্তও থাকেন।
চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মঙ্গলকাব্যেও লক্ষ্মীপূজা ও প্রতিমার নানা প্রসঙ্গ ধরা পড়েছে। সরায় লক্ষ্মীপূজা মূলত পূর্ববঙ্গে অনুষ্ঠিত হত; কিন্তু দেশভাগ, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে পূর্ববঙ্গের বহু শিল্পী এপার বাংলায় চলে আসেন। ফলত এই বঙ্গেও সরাপট নির্মাণ ও পুজো শুরু হয়। শিল্পীরা সরাপটের ঐতিহ্য ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় নিয়ে আসেন। সেইসঙ্গে এপার বাংলার বেশ কিছু আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও চালচিত্রের শৈলীও সরাচিত্রে মিশে যায়। পূর্ববঙ্গে প্রধানত চাররকমের সরা নির্মিত হত– ১. ফরিদপুরী, ২. সুরেশ্বরী, ৩. আচার্যী বা গণকা ও ৪. ঢাকাই সরা। পরে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের নিরিখে আরও কতগুলি আঞ্চলিক শৈলীর বিকাশ ঘটেছে। যেমন কলকাতার কুমোরটুলির সরা, নদিয়ার তাহেরপুরের সরা, অসম-ধুপগুরি-দিনাজপুর-শৈলী (রিলিফের সরা) ইত্যাদি। কিন্তু লক্ষ্মীসরা অঙ্কনের ক্ষেত্রে শিল্পীদের নিজস্ব ভাষায় কিছু ধরন রয়েছে। সেখানে পাওয়া যাবে একলক্ষ্মী সরা বা একপুতলি সরা, দুইপুতলি সরা বা জোড়া লক্ষ্মী সরা, তিনপুতলা বা পুতলি সরা, চারপুতলি বা যুগল সরা, পাঁচপুতলি লক্ষ্মী বা পাঁচপুতলি সরা, গজলক্ষ্মী সরা, সাতপুতলি লক্ষ্মীসরা, আটপূজারিনি-সহ লক্ষ্মী ইত্যাদি। এছাড়া রাধাকৃষ্ণ-সহ লক্ষ্মীর দেখাও মেলে।
বঙ্গদেশে পারিবারিক রীতি অনুসারে বছরের পর বছর ধরে, গৃহস্থরা সরা কিনে পুজো করেন। দেবদেবীর নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে, মা লক্ষ্মীর কোন রূপের পুজো হবে তাও একেকটি পরিবারে নির্দিষ্ট থাকে। কোনও অবস্থাতেই তার পরিবর্তন ঘটে না। যে পরিবারে ‘একচোখো’ দুর্গা ও ‘একচোখো’ লক্ষ্মী অর্থাৎ প্রোফাইল-ফেসের মূর্তি পুজোর বিধান– সেই পরিবার চিরদিন একচোখো সরাই কিনবে। কোথাও বা দু’টি চোখওলা অর্থাৎ পূর্ণমুখের মূর্তির পুজো করার বিধানও রয়েছে। তাঁরা ‘দুচোখো’ সরা কিনে থাকেন। শিল্পীরাও সেই অনুযায়ী পাশফেরা অথবা সোজা চেয়ে থাকা দেবীর সরা আঁকেন; এবং ‘একচোখো’ আর ‘দুচোখো’ নামেই সরাগুলোকে ডাকেন। একই জাতির ভেতরে আদিম কৌম-সমাজ থেকে উত্থিত ধর্মচর্যা ও রীতির রেশটুকুই এ বিষয়ে রয়ে গেছে বলে মনে হয়। বিভিন্ন ঘরানার শিল্পরূপায়ণের বিভিন্ন রকম রীতি, বিভিন্ন মেজাজ, বিভিন্ন সৃষ্টিপ্রকরণের মধ্য দিয়ে এসবের উদ্ভব ঘটেছে। লক্ষ্মীসরাতেও ঠিক সেইরকম বিভিন্ন ঘরানার অস্তিত্বের সন্ধান মেলে।
লক্ষ্মী বিষ্ণুপত্নী– জগতের মাতা, নারায়ণী। দুর্বাসার অভিশাপে তিনি ত্রিভুবন ত্যাগ করে ক্ষীরান্ধিতলে আত্মগোপন করেন। তাঁর অন্তর্ধানের ফলে পৃথিবী শস্যশ্রী-শূন্য হয়ে গেলে, পরে সমুদ্রমন্থনকালে তিনি অপূর্ব রূপে পুনরুত্থিত হন। শেষের এই দু’টি আখ্যান সরাশিল্পীরা বোধ হয় গ্ৰহণ করেছেন তাঁদের চিত্রকল্প নির্মাণ করতে। তাই সরার উপরিভাগেও লক্ষ্মী সপরিবারে বিরাজমান। আবার সমুদ্রমন্থনকালে পাতাল থেকে উত্থিত হয়েছিলেন বলে, সরার নিম্নভাগে তাঁকে আঁকার রেওয়াজ। যদিও বাস্তবে শিল্পীদের সরায় লক্ষ্মীমূর্তি অঙ্কনের হেতু হল, সরাটি দুর্গা ও লক্ষ্মী– দুই পুজোতেই ব্যবহার করা যাবে।
তবে সরাশিল্পীরা কিন্তু একটা-দু’টো সরা আঁকেন না, আঁকেন হাজার-হাজার সরা– চাহিদার জন্যেই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বাড়ির এক কোণে বসে, এঁটেল মাটি ছেনে, নরম কাঁকড়বিহীন মোলায়েম করে, তা দিয়ে ময়দার রুটির মতো বড় বড় লেই তৈরি করেন। এগুলি ‘চরা’ নামে পরিচিত। ‘চরা’ খানিক শুকিয়ে, অর্ধবৃত্তাকার সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ভোটের উপর রেখে কাঠের পিটুনি দিয়ে পিটিয়ে সরার আকার দেওয়া হয়। এরপর আবার রোদে শুকিয়ে ভাটি বা পুয়ানঘরে পোড়ানো হয়। পোড়ানো লালরঙের সরার শক্ত উপরিতল ঘষে খড়িমাটি দিয়ে চিত্রিকরণের কাজ হয়। সরা আঁকার বিষয়টা শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে এঁকে থাকেন। কেউ সরায় খড়ি মাখান; কেউ দেবদেবীর গায়ে নীল-লাল-হলুদ-সবুজ ইত্যাদি রং দিয়ে পুতলি আঁকেন; তুলনামূলক দক্ষ শিল্পী দেবদেবীর শরীরের রেখাঙ্কন ও চোখ আঁকেন; কেউ পুতলির গায়ে নীল রঙের কাপড় আঁকেন; শেষে মহিলারা গয়না বা আভরণ এঁকে দেন সরার মধ্যে। সবশেষে সকল শিল্পী মিলে সরাগুলির উপরে তেঁতুলবিচি বা সাবুর আঠা মাখিয়ে একপ্রকার পালিশ বা বার্নিশ করে দেন, যাতে সরাচিত্রটি স্থায়ী হয়। এভাবে, একক শিল্প নয়, বরং সম্মিলিত শিল্পকলার নিদর্শন হিসেবেই সরাচিত্র গড়ে ওঠে।
সরার উৎপত্তি মূলত বাংলাদেশের ঢাকা, ফরিদপুর, বড়িশাল জেলায়। সরা তৈরি করেন কুম্ভকার, পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা। বাংলাদেশের যশোর জেলার কুম্ভকাররা নানা আকৃতির সরা বানান। আবার চিত্রকর হিসাবে বড়িশালের খলিশাকোটা অঞ্চলের নামডাক রয়েছে। ফরিদপুরের সুরেশ্বরী সরা রঙের বিন্যাস ও সরু রেখার জন্য বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে। দেশভাগের পর বেশ কিছু সরাশিল্পী পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। নদিয়ার তাহেরপুর, পানিহাটি, সোদপুর, দত্তপুকুর জুড়ে তাঁদের দেখা মেলে। তাহেরপুর গ্ৰামের ১২-১৫টি পরিবার তো গত তিন-চার প্রজন্ম ধরে সরাচিত্র এঁকে চলেছেন।
লোক থেকেই উদ্ভূত হয় যে শিল্প, তা সাধারণত এককভাবে গড়ে ওঠে না। তার মধ্যে মিশে থাকে সমাজের নানা বিষয়, জীবনের প্রয়োজনীয় নানা উপকরণ। গোষ্ঠীজীবন থেকে উঠে আসে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহিত শিল্পবোধ, জন্মার্জিত সংস্কার আর সারল্যের আত্মপ্রত্যয়। সারল্যই সরাপটের চিত্রণশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য, বাঙালির অন্যতম লোকজ সম্পদ। আর এই সম্পদ ও সমৃদ্ধির প্রতীক হলেন মা লক্ষ্মী। শুয়ে থাকলে যে সম্পদের নাশ হয়– কে জাগে, কে জাগে পূর্ণিমা নিশিতে? এই রাতে দরজা খোলো, সম্পদ নিয়ে যাও। তাই তো গৃহী, কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে ঘুমন না; জেগে থাকেন, প্রতীক্ষায় থাকেন– কখন আসবেন তিনি! আর সেই পরমপ্রেমময় প্রতীক্ষার কল্পনাস্বরূপ নিজ গৃহের আসনে বসান দেবীর সরাচিত্র, লক্ষ্মীসরা।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved