
এখনকার ধারণা, হাইব্রিড আর্ট হল শিল্পের ভবিষ্যৎ। কেবল মাধ্যমগুলির মিশ্রণ নয়, বরং সৃজনশীলতা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মিলন। এই আন্দোলন প্রমাণ করবে, শিল্পীরা প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে নতুন এবং অর্থবহ শিল্প অভিজ্ঞতা তৈরি করবে। হাইব্রিড আর্ট হল একটি সমসাময়িক শিল্প আন্দোলন। যেখানে শিল্পীরা বিজ্ঞানের আধুনিক ক্ষেত্র এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। জীববিজ্ঞান, রোবোটিক্স, ভৌত বিজ্ঞান, পরীক্ষামূলক ইন্টারফেস প্রযুক্তি, বক্তৃতা, অঙ্গভঙ্গি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং তথ্য ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মতো ক্ষেত্র নিয়ে কাজ। প্রচলিত শিল্প, যেমন চিত্রকলা, নৃত্য, নাট্য, ভাস্কর্য– সবই এই নতুন শিল্পে এসে মিশেছে। হাইব্রিড আর্ট তাই শ্রেণিবদ্ধ করা কঠিন, কারণ এটি মূলত সীমানা ভাঙার শিল্প।
৯.
আজকাল অনেক দিন বাদে গ্রামের বাড়িতে যাই। মুম্বই থেকে বসিরহাটের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া এই বয়সে আগের মতো অতটা সহজ নেই। আরও একটা কারণ আছে। আগে বাড়ি যাওয়ার একটা টান থাকত। মা-বাবার টান। সেটা এখন আর নেই। যখন কলকাতায় থাকতাম তখন প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে যেতাম এবং গ্রামের নানারকম পরিবর্তন বেশ মজার লাগত। এখনও লাগে। দীর্ঘদিন বাদে পরিবর্তনগুলো ধারণার বাইরেও চলে যায়।
রাস্তাঘাট, বাজার-হাট আগের তুলায় অনেক বেশি চকচকে। আমাদের ছোটবেলায় ছিল হাট। সপ্তাহে একদিন। মানে, ‘হাট বসেছে শুক্রবারে’ মার্কা। তার পরে হল বাজার, একটু শহর অঞ্চলের দিকে। গ্রামে খুব একটা ছিল না, এখন সেখানে পাড়ার বাজার বেড়েছে অনেক। সবজি, মাছ, মিষ্টির দোকান। সকালে বিকেলে চায়ের দোকান, তেলেভাজার দোকান, সান্ধ্য আড্ডা এমনকী পাশাপাশি জামাকাপড়ের দোকান, বালিশ বিছানা, জুতো, দর্জি আর সোনার গয়নার দোকান।

সবজি বাজারে দেখি বেশ কয়েক রকমের টমেটো, বড় বড় মুলো। অনেক রকম পালং শাকের চেহারা। ফুলকপি বিশাল। বড় বড় পটল। সবজিওয়ালা মাছওয়ালা এরা সব আমাদের প্রতিবেশী। ফুলকপি হাতে করে তুললাম, দোকানি বলল এসবের স্বাদ নেই আর। আপনি এই ছোট ছোট ফুলকপিগুলো দিন। সবই ‘হাইবিড’ এখন। মাছের বাজারে অবাক করা সব মাছ, সাত রকমের রুই কাতলা, দশ রকমের পারসে মাছ। ছোট চোখ, মোটা চোখ, ছুঁচলো মুখ। সমান শরীর, পেটমোটা, লম্বা, বেঁটে। পায়রাচাঁদার পাশাপাশি দেখলাম লালচে কালচে একটা মাছ। বলছে, রূপচাঁদা। আমার পাশে দাঁড়ানো বন্ধুটি বলল এটা আসলে পিরানহা। ও বাবারে! সে তো ভয়ানক মাছ! রহস্য গল্পে এ মাছের কথা শুনেছি। যে মাছের সামনে মানুষ পড়লে তাকে কুচি কুচি করে নিমেষে খেয়ে ফেলে।

এখন ছোট ছোট পুকুর, এমনকী চৌবাচ্চার মধ্যেই মাংসাশী মাছের চাষ বেড়েছে খুব। পিরানহা, শিঙি, মাগুর, আরও কত কী! ওদের যা কিছু মাংস দিলেই গবগব করে খায় আর ক’দিনের মধ্যেই চেহারায় অনেক বেড়ে যায়। দেখতে দেখতে কী সব হয়ে গেল! সবই ‘হাইবিড’, মাছওয়ালাও হাসি হাসি মুখে বলল। ভাবখানা এমন যেন শহরের আমি, গ্রামের কিছুই বুঝি না। আধুনিক এই ‘হাইব্রিড’ শব্দটা যে গ্রামে পৌঁছে গেছে সেটাতেই আমার আনন্দের সীমা নেই। এই হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির মহিমা।
একবার কলকাতার দক্ষিণে নরেন্দ্রপুর পেরিয়ে হরিনাভিতে চাষিদের সবজি, ফলমূলের অদ্ভুত সফলতার প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতা দেখেছিলাম। সেও প্রায় ৫০ বছর আগের কথা। সেখানে শিবুদা নামে এক গবেষক কৃষক, যাঁকে সবাই একডাকে চেনে দেখলাম। তাঁর পছন্দ অদ্ভুত অদ্ভুত সবজি বানানো। যেমন, পালং শাকের পাতা চিবিয়ে খেলে চিনাবাদামের মতো স্বাদ। কোন সবজির পাতায় লেবুর গন্ধ, কোন সবজির রসে বেদানার স্বাদ। দারুন অদ্ভুত রঙের কলা, খেতে বিস্বাদ। আবার ফুলকপির বাইরে ঘেরা সবুজ পাতাগুলো ঠিক আছে, ভেতরের ফুল এলোমেলো ডালপালা ছড়িয়ে উপরে উঠেছে। যেন এক ঝাঁক চন্দ্রমল্লিকা। এইরকমই নানারকম ম্যাজিক মনে পড়ছে। মনে হয়েছিল শিবুদা তো চাষি নয়, কৃষিবিজ্ঞানী। ওঁকে মানুষ ঠিক চিনতে পারল না। অনেকদিন পরে শুনেছিলাম শিবুদাকে কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়েছে।

‘হাইব্রিড’ শব্দটা এখন নানা মাধ্যমে নানা আঙ্গিকে এবং নানা আলোচনায় বেশ শোনা যাচ্ছে। যেন একটা নতুন শব্দ। যেমন নতুন শব্দ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। নতুন শব্দ আমি বলছি বটে, তবে এই দুটো বিষয়ই অতি পুরনো।
শিল্পকলায় রেনেসাঁসের পর থেকে শুরু হয়েছিল নানা শিল্প আন্দোলন। তারপরে নানা ইজম পেরিয়ে, মডার্ন, পোস্ট মডার্ন পেরিয়ে, আউট অফ দ্য ওয়াল, আউট অফ বাউন্ডারি হয়ে ইনস্টলেশন, সাইট স্পেসিফিক পেরিয়ে পৌঁছে গেছিলাম ‘কনসেপচুয়াল আর্ট’ পর্যন্ত। কিন্তু চুপিচুপি এখন আবার নতুন করে শিল্প আন্দোলনের কথা উঠছে। হাইব্রিড আর্ট। শিল্প ও প্রযুক্তির মিলন।

আধুনিক শিল্প আলোচকদের ভাষায়, হাইব্রিড আর্ট আমাদের শেখায়, শিল্প থামতে জানে না। এটা একটা অবিরাম বিবর্তনের ধারা। প্রযুক্তিকে মানবিক আবেগের সঙ্গে যুক্ত করে এমন এক ভাষা সৃষ্টি করছে এখন, যা একাধারে বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক এবং নান্দনিক। আজকের এই যুগে, যখন বাস্তব আর ভার্চুয়ালের সীমা ক্রমেই মুছে যাচ্ছে, হাইব্রিড আর্ট সেই সীমান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের নতুনভাবে প্রশ্ন করতে শেখায়, শিল্প কী? বাস্তবতা কী? আর সৃষ্টির পরিধি কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে?

পরীক্ষামূলক শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংস্থা আর্স ইলেকট্রনিকা, ২০১০ সালের আগে কোনও এক সময়ে এই ধরনের শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি নতুন বিভাগ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রতি বছর তারা এই পরীক্ষামূলক ক্ষেত্রে কাজ করা শিল্পীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। তারা ‘হাইব্রিড আর্ট’ নামটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী শিল্পী, তাত্ত্বিক এবং সাংবাদিকদেরা এই শব্দটি ব্যবহার করে।
এখনকার ধারণা, হাইব্রিড আর্ট হল শিল্পের ভবিষ্যৎ। কেবল মাধ্যমগুলির মিশ্রণ নয়, বরং সৃজনশীলতা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মিলন। এই আন্দোলন প্রমাণ করবে, শিল্পীরা প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে নতুন এবং অর্থবহ শিল্প অভিজ্ঞতা তৈরি করবে। হাইব্রিড আর্ট হল একটি সমসাময়িক শিল্প আন্দোলন। যেখানে শিল্পীরা বিজ্ঞানের আধুনিক ক্ষেত্র এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। জীববিজ্ঞান, রোবোটিক্স, ভৌতবিজ্ঞান, পরীক্ষামূলক ইন্টারফেস প্রযুক্তি, বক্তৃতা, অঙ্গভঙ্গি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং তথ্য ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মতো ক্ষেত্র নিয়ে কাজ। প্রচলিত শিল্প, যেমন চিত্রকলা, নৃত্য, নাট্য, ভাস্কর্য– সবই এই নতুন শিল্পে এসে মিশেছে। হাইব্রিড আর্ট তাই শ্রেণিবদ্ধ করা কঠিন, কারণ এটি মূলত সীমানা ভাঙার শিল্প।

এবারে একটু প্রসঙ্গ বদলাই। হাইব্রিডের চূড়ান্ত আধুনিকতা থেকে আমরা কিছুটা সময় পিছিয়ে যাই অথবা অনেকটা সময় পিছিয়ে যাই বরং।
বাংলা সাহিত্যে ছোটদের জন্য কলম ধরলেও বড়দেরও মাথা বারবার ঘুরিয়ে দিয়েছেন সুকুমার রায়। একের শরীরে অন্যের মুণ্ডু জুড়ে দিয়ে কিম্ভূতকিমাকার কিংবা চমৎকার জন্তু বানানোয় সুকুমার ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এ যেন তাঁর গবেষণালব্ধ ফসল। কিন্তু তাঁর চিত্রকরণ কি শুধুমাত্র খেয়ালখুশি মতো করা সম্ভব হয়েছিল? শৈল্পিক সৌন্দর্যের দিক থেকে তা মোটেই হয়নি।

হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে— “বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।”
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা–
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা?
ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি…

শব্দের খাতিরে হাতির সঙ্গে তিমিকে জুড়ে দিলে সে জলে যাবে না জঙ্গলে, ভেবে পায় না। কিন্তু ছবির খাতিরে ধড়-মুড়ো জোড়ার ব্যাপারে কার ধড় আর কার মুড়ো নিতে হবে– তা ভাবার কথা। তিমির ধড়ে হাতির মাথা তিনি জুড়েছেন। হাতির ধড়ে তিমির মাথা জুড়লে কিন্তু ছবির মজা মোটেই হয় না, পাঠক লক্ষ করবেন। গরুর শরীরে মোরগের মাথা, বকের দেহে কচ্ছপের মুখ, জিরাফের শরীরে ফড়িঙের মুণ্ডু বসালে, কল্পনা করুন, তা আজগুবি হয় ঠিকই, তবে এমন ধারা ছবির মজা হয় কি? এখানেই শিল্পী সুকুমারের কারসাজি পুরোদস্তুর। চমৎকার বলতে ট্যাঁশগরুর ছবিটাও আমার দারুণ লাগে।

এবার খিচুড়ির শব্দগুলোর ডিজাইন দেখুন। সেখানেও শব্দগুলোর ল্যাজা-মুড়ো জোড়ার ব্যাপারে কোন শব্দ আগে আর কোন শব্দ পরে সেটা লক্ষ করার মতো। যেন শব্দ দিয়ে জোড়া জন্তুগুলোর চেহারা আঁকা হয়েছে। এটাও একটা সাংঘাতিক আর্ট। শুধু ছবি নয় শব্দগুলোকেও অসীম দক্ষতায় ক্রাফটিং করা হয়েছে।
পৌরাণিক কাহিনিতে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই হাইব্রিডের ছড়াছড়ি। শিল্পে সাহিত্যে বিশেষ করে দেব দেবতাদের রূপকল্পনায়। আমাদের দেশে যেমন গণেশ ঠাকুর, দুর্গা, ব্রহ্মা, নৃসিংহ মূর্তি, হনুমান, রাবণ ইত্যাদি। মিশরে শিয়াল দেবতা কিংবা গ্রিক দেবদেবী। নানা রূপ। মানুষে পশুতে, পশুতে পশুতে, মানুষে মানুষে হাইব্রিড। গ্রিক এবং হিন্দু পুরাণের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, উভয় সংস্কৃতিতেই দেব-দেবীদের ক্ষমতা ও চরিত্র বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। মিশ্রণ শিল্প ও সাহিত্যের এ নতুন দিক।

দেবতা অথবা অপদেবতা। গ্রিক পুরাণের দুটো ছোট গল্প বলি। ‘প্যান’ আর ‘কাইমেরা’। প্যান, গ্রিকদের এক দেবতা। তাঁর শরীরের ওপরের অংশ বলিষ্ঠ মানুষের, নিচের অংশ ছাগলের। তিনি পশুপালকের এবং প্রকৃতির দেবতা। প্যানের চেহারার পরিকল্পনা অসম্ভব শৈল্পিক। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরবর্তী শিল্পীরা প্যানের শরীরে কিছু কিছু পরির্তন ঘটিয়েছেন। যেন মূর্তি থেকে মূর্তির তর্জমা। এই রূপান্তর অনিবার্য। আজও কাজ হচ্ছে, চমকে দেওয়ার মতো দারুণ সব অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি হয়েছে। মজার কথা কী জানেন, এই প্যান শব্দটাও বহুল ব্যবহৃত। প্যান-অ্যাম, প্যান-এশিয়া তো আকছার শোনা যায়। ‘প্যানিক’ শব্দটাও এই প্যান থেকে।

গ্রিক পুরানে কাইমেরা এক মিশ্র ভয়ংকর প্রাণী। একে অপদেবতা বলাই ভালো। সামনের অংশ সিংহের, মাঝের অংশ ছাগলের এবং লেজের জায়গায় সাপের মাথা। এই দানব, সাপের মুখের দিক থেকে আগুন বার করতে পারত। হোমারের ‘ইলিয়াড’ গ্রন্থেও কাইমেরার উল্লেখ আছে। এর বেলাতেও শিল্পীরা নানাভাবে ছবি, মূর্তি বানিয়েছে, সিনেমা তৈরি হয়েছে। বেলরোফন নামক বীর এই দানবকে হত্যা করেন তার পাখাওয়ালা ঘোড়া পেগেসাসের সাহায্যে। সে ওদের গল্প। আমাদেরও শৈশবের আছে পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প।

পরে এসেছে ‘কাইমেরা’ শব্দ। যার অর্থ হল মিথ্যে কল্পনা, বাস্তবে যা কখনওই সম্ভব নয়। কাইমেরা শব্দটা উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ইংরেজিতে একটা রূপক অর্থে ব্যবহার শুরু হয়েছে। অর্থ, কল্পনাপ্রসূত, অবাস্তব বা অলৌকিক ধারণা। অতএব যা ছিল কল্পনায়, শিল্পে তা চলে এল শব্দে, সাহিত্যে।
সব থেকে অবাক করা ব্যাপারটা তবে বলি এবার, আধুনিক বিজ্ঞান জীবন্ত মানুষ কাইমেরার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় কাইমেরা হল এমন এক জীব, যার শরীরে দু’-রকমের ডিএনএ থাকে। ‘সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান’ বলছে পৃথিবীতে এমন মানুষ আছে যার দু’-চোখের মণি দুই রঙের। দু’পায়ের রংও কারও কারও আলাদা। বিজ্ঞানে আধুনিক ‘কাইমেরা’ শব্দটি জীববিজ্ঞানে এমন এক জীবনকে বোঝায়, যার শরীরে দু’টি ভিন্ন ডিএনএ রয়েছে।

আধুনিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিজ্ঞানীরা ইচ্ছাকৃত কাইমারা তৈরি করছেন গবেষণার উদ্দেশ্যে। এই ধরনের জীবদের ‘জেনেটিক কাইমেরা’ বলা হয়। যদি দু’টি ভ্রূণ একত্রে মিশে যায় এবং একক দেহ তৈরি করে, তবে সেই ব্যক্তি বা প্রাণী কাইমেরা হয়ে ওঠে। অর্থাৎ তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন জিনগত উপাদান থাকে। মানবকোষ পশুর ভ্রূণে সংযোজন করে গবেষকরা ভবিষ্যতে মানব অঙ্গ তৈরি বা রোগ নিরাময়ের উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে।
তবে এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত আছে নৈতিক প্রশ্নও, কতদূর বিজ্ঞান এগোতে পারে, এবং কোথায় থামা উচিত? মানব-পশু কাইমেরা সৃষ্টি কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য? ফুলে, ফসলে সংকরায়ন তো হয়েইছে, প্রাণীদের ক্ষেত্রেও বাদ যায়নি! প্রিয় পাঠক, দু’-একটা চেনা সংকর জাতের প্রাণীদের নাম আপনার এই মুহূর্তে মনে পড়তেই পারে। মনে করিয়ে দিই, একটার নাম ছিল ‘লাইগার’ বা ‘টাইগন’, আর অপরটা ‘খচ্চর’।

মাছের বাজার থেকে শিল্পকলা হয়ে সুকুমার রায়ের খিচুড়ি। আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনার এখানে ইতি। কল্পনা, শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান সব মিলেমিশে একাকার।
…পড়ুন অল্পবিজ্ঞান-এর অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৮: মগজে না ঢুকলে শিল্পও আবর্জনা
পর্ব ৭: ছবির অসুখ-বিসুখ, ছবির ডাক্তার
পর্ব ৬: বিসর্জনের মতোই একটু একটু করে ফিকে হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর রং ও রূপ
পর্ব ৫: জীবন আসলে ক্যালাইডোস্কোপ, সামান্য ঘোরালেই বদলে যায় একঘেয়ে নকশা
পর্ব ৪: কুকুরেরই জাত ভাই, অথচ শিয়াল সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি?
পর্ব ৩: অন্ধকারে অল্প আলোর মায়া, ফুরয় না কোনওদিন!
পর্ব ২: বজ্রবিদ্যুৎ ভর্তি আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে আমাদের চিরকালের নায়ক হয়ে আছেন বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved